E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব হউক বাঙ্গালীর অনুপ্রেরণা 

২০২০ আগস্ট ২৫ ২৩:১৭:৩৩
মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব হউক বাঙ্গালীর অনুপ্রেরণা 

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


বন্ধুবান্ধবরা বলে, “তোমার জীবনী লেখ।” সহকর্মীরা বলে, “রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাবলি লিখে রাখ, ভবিষৎতে কাজে লাগবে।” আমার সহধর্মিনী একদিন জেল গেটে বসে বলল, “ বসেইতো আছ, লেখ তোমার জীবনের কাহিনী।” বললাম লিখতে যে পারিনা; আর এমন কি করেছি যা লেখা যায় ! আমার জীবনের ঘটনাগুলি জেনে জনসাধারণের কি কোনো কাজে লাগবে ? কিছুইতো করতে পারলাম না। শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করছি।” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে নেয়া সেই অসামান্য কথা মালা। যা কত স্বাভাবিক ও সহজভাবে বলা। হৃদয় গাঁথা অসামান্য উক্তি। আগস্ট মাস বাঙ্গালীর শোকের মাস যে মাসে বাঙ্গালি হারিয়েছে কাছের এক রাস্ট্রনায়ককে। যার চিন্তা চেতনা ধ্যানে ছিল বাঙ্গালীর মুক্তি। যে ব্যক্তিটি সারাজীবন কাজ করে গেছেন এদেশের মানুষের জন্য। তারপরও বলা এমনকি করেছি আমি যা লেখা যায় ? কিন্তু যা হয়েছে এদেশের মানুষের জন্য মুজিবের কল্যাণে তা পাতার পর লিখে গেলেও শেষ হবে না। মুজিব মানে অনুপ্রেরণা মুজিব মানে জাতির উৎসাহের স্থল।

পৃথিবীতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুজিব। মুজিবের মতো আর কোনো নেতাই এভাবে মানুষের আবেগের প্রয়োজনীয় ভাষাটা বুঝতে পারেনি। মানুষ কি চায় সেটা জানা ছিল বলেই আমাদের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছে। জনসাধরণের জন্য কাজ করার যে আগ্রহ তার ছিল তা তার নিজস্ব উক্তি থেকেই বুঝা যায়। আশা আকাক্সক্ষা বিলিয়ে দিয়ে জীবনের বেশির ভাগ সময় মানুষের অধিকার আদায়ে জেল হাজতে থাকার পরও যখন বলে কিছুইতো করতে পারলাম না এই উক্তি থেকেই বুঝা যায় তার দেশের মানুষের জন্য কাজ করার আগ্রহ। অসীম সাহসী মুজিব মৃত্যুর দরজায় দাঁড়িয়েও বলে গেছেন বাঙ্গালীর অধিকারের কথা।

আশা ও আলোর অভিযাত্রী হয়ে বেড়ে উঠা টুঙ্গিপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেয়া শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি শুধু একজন সুদক্ষ রাজনীতিবিদই নন বরং এমন একজন রাষ্ট্রনেতা যিনি নেতৃত্বের গুণে ছিলেন বলীয়ান। বাংলার পথে প্রান্তরে এপার থেকে ওপার এমন কোনো স্থান নেই যেখানে তার ছোঁয়া লাগেনি। জাতি বর্ণ গোত্রেনির্বিশেষে সকলের ভালোবাসায় তিনি তার নামকে অতিক্রম করে হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এদেশের মানুষকে যেমন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তেমনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলার মানুষের হারানো অধিকার ফিরিয়ে এনেছিলেন। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তিনি পেয়েছিলেন কিংবদন্তীর খেতাব। যার নামের শ্লোগানে আজও কাঁপে বাংলা শিহরিত হয় ধমনী। যার নামে পৃথিবীতে পরিচিতি হয়েছিল স্বাধীন বাংলা।

তিনি ছিলেন বাঙ্গালীর জাতি সত্বার শক্তির উৎস। তাঁর জীবনের যাবতীয় কার্যাবলীই গড়ে উঠেছে এই বাংলাকে নিয়ে। কিন্তু বাঙ্গালী ছাড়াও তিনি কথা বলেছেন গরীব মেহনতি মানুষের অধিকার নিয়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন ফোরামে অবহেলিত মানুষের অধিকার প্রশ্নে তিনি ছিলেন সোচ্চার। নীতি ও আর্দশের প্রতীক হয়ে উঠা বঙ্গবন্ধু মাথা নত করেনি অন্যায় কোনো প্রশ্নে। তাহার মাথা উঁচু হয়েছিল পাহাড়সম। শত প্রতিকূলতার মাঝেও অন্যায়ের প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। মানুষের জন্য কাজ করাই ছিল যার ধ্যান জ্ঞান ও নেশা। সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে ধর্ম নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল, বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক একটি দেশ হিসেবে গড়ে উঠছিল তখনই নেমে আসে অন্ধকার। উন্নয়নের পথ হয় বাধাগ্রস্থ থেমে যায় সব উন্নয়ন পরিকল্পনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বাঙ্গালী হারায় তাদের অতি প্রিয়জন রাস্ট্রনেতাকে। সামরিক বাহিনীর কতিপয় ক্ষমতা লোভী আওয়ামী দলীয় কিছু লোকের সাহায্যে হত্যা করে এদেশের স্বপ্নকে। পট পরিবর্তনের পর পরই বদলে যায় এদেশের চিত্র। সামরিক বাহিনীর থাবায় মানুষ হারায় তাদের অধিকার।

তৎকালীন শাসকদের শোষণ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এদেশের সকল মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীকে পরিণত হয়। ১৯৬৯ সালেল গণ-অভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এদেশের আপামর জনতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সত্যিকার অর্থে এত ম্যাজিক পাওয়ার সমৃদ্ধ নেতৃত্ব কোনো জাতির কপালে জোটে হাজার বছরে আবার জোঁটেও না । রাষ্ট্রনেতা হয়েও সাদাসিধেভাবে জনগণের সাথে থেকে অবিসংবাদিত নেতা হয়েছেন। ক্ষমতার সর্বোচ্চ স্থান থেকে সাধারণ মানুষকে ভালোবেসেছিলেন নিবিড়ভাবে। বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড জন ফ্রস্ট প্রশ্ন করেছিলেন “ একাত্তরের ২৬ মার্চ আপনার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি থেকে যখন আপনি বেরিয়ে এলেন, তখন কি ভেবেছিলেন আর কোন দিন আপনি এখানে ফিরে আসতে পারবেন ?”

এ প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “না, আমি তা কল্পনা করতে পারিনি। কিন্তু আমার মনের কথা ছিল, আজ যদি আমি আমার দেশের নেতা হিসেবে মাথা উঁচু রেখে মরতে পারি, তাহলে আমার দেশের মানুষের অন্তত লজ্জার কোন কারন থাকবে না। কিন্তু আমি ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে আমার দেশবাসী পৃথিবীর সামনে আর মাথা তুলে তাকাতে পারবে না। আমি মরি, তাও ভালো। তবু আমার দেশবাসীর যেন মর্যাদার কোন হানি না ঘটে”।

সাক্ষাতকারের উত্তরের মাঝে বঙ্গবন্ধুর দেশ প্রেম এবং দেশের মানুষের প্রতি তার যে কমিটমেন্ট প্রকাশ পেয়েছে তা জাতি তথা বিশ্ববাসীর কাছে বঙ্গবন্ধুকে করে তুলেছে মহান। দেশের মানুষকে মাথা উঁচু করে পৃথিবীর দরবারে বাঁচার যে অঙ্গীকার তিনি ব্যক্ত করেছেন তা পৃথিবীর নেতৃত্বের মাঝে বিরল। নেতৃত্বের অবিচলতা এবং জনগণকে ভালোবাসা চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল বঙ্গবন্ধুর। তিনি বাঙ্গালীর পাশাপাশি বিশ্বের অবহেলিত মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার কারণে তিনি কেবল বাঙ্গালীর মুজিব নয় তিনি সারা পৃথিবীর শোষিত মানুষের মুজিব হয়ে উঠেছিলেন। তাই আমাদের মাঝে চিরভাস্মর হওয়া প্রয়োজন মুজিব চেতনা।


লেখক : শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test