E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ডা: জাফরুল্ল্যাহ চৌধুরী ভার্সেস স্মৃতিকণা বিশ্বাস 

২০২০ সেপ্টেম্বর ০৮ ১১:৩৮:২০
ডা: জাফরুল্ল্যাহ চৌধুরী ভার্সেস স্মৃতিকণা বিশ্বাস 

শিতাংশু গুহ


গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার জাফরুল্ল্যাহ চৌধুরীর  বিরুদ্ধে ঢাকায় একটি মামলা হয়েছে। এমনিতে কারো বিরুদ্ধে মামলা হবে, এতে  আশ্চর্য্য হবার কিছু নেই, হতেই পারে। কিন্তু এ মামলার একটি বিশেষত্ব আছে; মামলাটি হয়েছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার জন্যে। ডঃ জাফরুল্লাহ মুসলমান; যিনি মামলা করেছেন, তিনি হিন্দু, নাম স্মৃতিকণা বিশ্বাস। ভদ্রমহিলার সাহস আছে বটে! কোন পুরুষ বা কোন হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন যখন এগিয়ে আসেনি, তখন তিনি সাহস করে মামলাটি করেছেন। মিডিয়া বলছে, স্মৃতিকণা ঢাকা ভার্সিটি ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী। জানা যায়, ১৯৯৪ সালে তিনি বরিশালে বিএনপি-জামাত কর্তৃক নিগৃহীত হয়েছিলেন? ডাক্তার জাফরুল্ল্যাহ চৌধুরীর মামলা খেয়ে অভ্যাস আছে, এতে তিনি ঘাবড়ে যাবার পাত্র নন! দেখা যাক, ডাক্তার জাফরুল্ল্যাহ চৌধুরী ভার্সেস স্মৃতিকণা বিশ্বাস  মামলার শেষ কি দাঁড়ায়?

কেন এই মামলা? ৯ই আগস্ট রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড: জাফরুল্ল্যাহ বলেছেন, ভারতের মুসলমানরা গত ঈদে গরুর মাংস খেতে পারেনি। অথচ নরেন্দ্র মোদীর পূর্বপুরুষরা গরুর মাংস খেতো? তিনি আরো বলেছেন, রাম চরিত্রটি কাল্পনিক। মহাভারত ও রামায়ণ মিথ্যাচারের কল্পকাহিনী। এখানেই তিনি থেমে যাননি, বরং আরো একধাপ এগিয়ে বিদেশমন্ত্রীর একটি কথার প্রেক্ষিতে বলেছেন, বাংলদেশ-ভারত সম্পর্ক রক্তের ঠিকই, তবে এ রক্ত দূষিত, তা পরিচ্ছন্ন করা দরকার। স্পষ্টত: ডাক্তার চৌধুরীর বক্তব্য হিন্দু ও ভারত বিদ্বেষ থেকে উৎসারিত। কোন হিন্দু বা এমনকি কোন মুসলমান যদি ইসলাম নিয়ে এ ধরণের আপত্তিকর কথাবার্তা বলতেন, তাহলে নির্ঘাত ডিজিটাল আইনে জেলে থাকতেন এবং মোল্লারা ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় নামতেন?

দেশের হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুরা প্রায়শ: অভিযোগ করেন যে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত শুধু একটি ধর্মের মানুষের লাগে, অন্যদের লাগতে নেই? নইলে ডাঃ জাফরুল্ল্যাহ চৌধুরীর এ বক্তব্যের জন্যে জেলে যেতেন। কিন্ত তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। সরকার নির্বিকার, ডিজিটাল আইন এখানে প্রযোজ্য নয়! সরকার মামলা না করার ফলে একজন নারী সরকারের এ দায়িত্বটি পালন করেছেন। আদালত মামলাটি নিতে চাননি, সরকারের অনুমতি আনতে বলেছিলেন? একদিন পর মামলা গৃহীত হয়েছে। আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ডিবি তদন্ত করছেন। এখন দেখার বিষয় তাঁরা মামলা কোনদিকে নিয়ে যান! এ সময়ে কোন সংস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কম, ঠিকমত তদন্ত হবে তো? হওয়া উচিত। সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনাটা দরকার। আইনকে আপন নিয়মে চলতে দেয়া প্রয়োজন। হোক না ডাক্তার চৌধুরী স্বনামধন্য ব্যক্তি।

ডাক্তার চৌধুরীকে কিছু লোক পাগল বলে। অতি মেধাবী এবং স্মার্টরা অনেক সময় তাই হ’ন! তবে তিনি ‘জাতে পাগল তালে ঠিক’। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিন মুর্ক্তি ভাঙ্গে, পুলিশ মাঝে-মধ্যে এদের ধরে এবং পরে ‘পাগল’ সার্টিফিকেট দিয়ে ছেড়ে দেয়? এই পাগলদের মত ডাক্তার জাফরুল্ল্যাহ চৌধুরীর মত পাগলের যথেষ্ট মিল আছে! সাধারণ পাগলরা মুর্ক্তি ভাঙ্গে, মন্দির ভাঙ্গে কিন্তু মসজিদ ভাঙ্গেনা, কারণ তাঁরা জানে, তাহলে ‘কিলঘুষি’ একটাও মাটিতে পড়বে না? জাফরুল্ল্যাহ চৌধুরীও তা জানেন, তাই সুযোগ বুঝে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে বলেছেন। সাধারণত: হিন্দুরা সুবোধ বালক, কাউকে মারতে যায়না। মামলা করেনা। এবার ব্যতিক্রম, ড: চৌধুরীর কপাল খারাপ, মামলা হয়েছে। চট্টগ্রামেও একটি মামলা হয়েছে। যেকেউ স্বীকার করবেন, ডাক্তার জাফরুল্ল্যাহ চৌধুরীর বক্তব্যটি সাম্প্রদায়িক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মামলাটি তাই যথার্থ।

অতীতে ডাক্তার চৌধুরী জাসদ-র রাজনীতি করতেন। তিনি বিএনপি ঘরানার মানুষ। জাসদের জন্ম বঙ্গবন্ধু’র বিরোধিতার জন্যে। অথচ বঙ্গবন্ধু’র আশীর্বাদেই ডাক্তার চৌধুরী প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। জন্মলগ্নে জাসদে সকল রাজাকার, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর ঠাঁই হয়, ডাঃ চৌধুরী সেই গ্রূপের মানুষ ছিলেন না? যদিও কিছু মুক্তিযোদ্ধা সময়ের ব্যবধানে রাজাকার হয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত ভুরিভুরি? হয়তো তাই তিনি, ভাসানী গ্ৰুপের প্রধান অতিথি ছিলেন। আর এই গ্রূপ অসম্প্রদায়িক তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় বৈকি? ডাক্তার চৌধুরী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র দিয়ে বিখ্যাত। গণস্বাস্থ্য নামটি বঙ্গবন্ধু’র পছন্দ এবং ১৯৭২ সালে তিনি ২৩ একর জমি দিয়েছেন। ডাক্তার চৌধুরী কি ‘রাষ্ট্রের ধনে’ পোদ্দারি করছেন না? স্বীকার্য যে, স্বাধীনতা যুদ্ধে তার ভূমিকা উজ্জ্বল। পরবর্তীতে তাঁর রাজনৈতিক অধ:পতন ঘটেছে। বর্তমানে তিনি হয়তো ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত এবং ইসলামীতন্ত্র’ একত্রে গুলিয়ে ফেলেছেন।

একদা তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছিলো, তিনি ক্ষমা চেয়ে বেঁচেছেন। ২০১৫-তে আইসিটি কোর্ট তাঁকে এক ঘন্টার দণ্ডাদেশ দেন্, সাথে ৫হাজার টাকা জরিমানা। এবার কি হবে? আমার ধারণায়, “যারা ভারত বিরোধী তাঁরা হিন্দু বিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক”। এটি কাউকে মানতে হবে এমন নয়, তবে মিলিয়ে দেখতে পারেন। এরা ভারত ও হিন্দুকে সমান্তরাল লাইনে দেখেন! ড: জাফরউল্ল্যাহ চৌধুরী কি তাই? তিনি হিন্দুদের বিরুদ্ধে বললে কিচ্ছু আসতো-যেতো না, দুই হাজার বছর ধরে তা অনেকেই বলছেন। সমস্যা হচ্ছে, তিনি এসব কথা বলে একটি ধর্মান্ধ গ্রূপকে সুড়সুড়ি দিতে চেয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে যারা তাঁর পক্ষে সাফাই গাইছেন, তাঁরা মোটামুটি সবাই এন্টি-আওয়ামী লীগ এবং অনেকে স্বাধীনতা বিরোধী। সঙ্গত কারণেই এঁরা স্মৃতিকনা বিশ্বাসকে ভারত ও আওয়ামী দালাল বলে অভিহিত করছেন।

জানা যায়, স্মৃতিকণা বিশ্বাসকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাকে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্যে চাপ দেয়া হচ্ছে। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাহায্য চেয়েছেন। যেকোন আইনমান্যকারী নাগরিক চাইবেন, এই মামলার সুষ্ঠূ তদন্ত হউক। মামলা আদালতে উঠুক। ডাক্তার জাফরুল্ল্যাহ চৌধুরী ভার্সেস স্মৃতিকণা বিশ্বাস মামলা জনগণ দেখুক। বিবাদী আত্মপক্ষ সমর্থন করে কথা বলুক এবং দোষ স্বীকার করে আদালতের কাছে ‘ক্ষমা’ ভিক্ষে করুক। আদালত তাঁকে ক্ষমা করে দিতেও পারেন। বাদী নিশ্চয় এই ৭৮ বছরের বৃদ্ধ ভদ্রলোকের প্রতি সুহানুভূতিশীল হবেন। এই মামলায় ডাক্তার চৌধুরীর শাস্তি হলে অন্যরা ভবিষ্যতে ধর্ম নিয়ে গালাগালি করতে সাহস পাবেন না? বাদী স্মৃতিকণা বিশ্বাসও হয়তো তাই চাচ্ছেন, দেশে ধর্ম নিয়ে আবোলতাবোল কথাবার্তা বন্ধ হোক? বিলাতে পড়াশোনা করা একজন বিজ্ঞ ডাক্তার চৌধুরীর কঠিন সাঁজা হোক, তা হয়তো কাম্য নয়, কিন্তু ‘বারবার ঘুঘু খেয়ে যাবে ধান’ তা তো হয়না?

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test