E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

এই মুহূর্তে জরুরী ধর্মনিরপেক্ষতা

২০২১ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৯:১৪:৫০
এই মুহূর্তে জরুরী ধর্মনিরপেক্ষতা

এডভোকেট নিজামুদ্দিন


আমাদের সংবিধানে প্রস্তাবনা- "আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদ দিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল-জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে'।

আমাদের দেশের জনগণ যারা দেশমাতৃকার জন্য প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন, তাদের একজন জাসদের একাংশের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম, বাঙ্গালীর জন্য একটি দেশ করবো বলে, এই বাঙ্গালী হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সব বাঙ্গালী। মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম কি এই ধরনের দেশ চেয়ে? আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দেশ করবো মুজিবনগর সরকারের সেটাই ছিল অভিপ্সা। বঙ্গবন্ধু এই ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই মহান নেতা ধর্মনিরপেক্ষতার একটি অদ্ভুত, সুন্দর ও সাবলীল ব্যাখা দিয়েছেন "আমার বাংলাদেশের আমার মানুষেরা তার তার ধর্ম, নির্বিঘ্নে, নিঃশঙ্কচিত্তে, নির্বিঘ্নে আনন্দের সাথে পালন করবে।"

সংবিধানে প্রস্তাবনা অনুযায়ী সকল মানুষের জন্য একটি রাষ্ট্রের জন্য আমাদের বীরযোদ্ধা, শহীদ জীবনোৎসর্গ করার শপথ নিয়েছিলেন, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা, বর্তমান বিদ্যমন সংবিধানে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক, প্রস্তাবনা অনুয়ায়ী বীর জনগনের ইচ্ছা বা বীর শহীদদের ইচ্ছার বাহিরে কিছু প্রনয়ন করা হইবে অসাংবিধানিক, যা বাতিল বা বাতিলযোগ্য, অমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার জন্যতো মুক্তিযুদ্ধ করেননি, তাহলে কেন সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হবে?

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও সংবিধানে রাখবেন আবার ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাখবেন, এটা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে।

আমাদের স্বাধীনতা ষোষণাপত্রে তিনটি শব্দ উল্লেখ ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদ ও সামাজিক সুবিচার এর উপর ভিত্তি করে আমাদের জাতির গঠন, রাষ্ট্রের ভিত্তি তদুপরি সংবিধানের ভিত্তি রচিত হয়েছিল, সাম্য বলতে আমরা যা বুঝি মানুষে মানুষে সাম্য সহবস্থান, ধর্মীয় বিবেদ নয় অথ্যাৎ জনগণের প্রজাতন্ত্র (People's Replulic) সকল নাগরিক (হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান সহ সকল ধর্মাবলম্বী তথা সকল জনগণ) আইনের চোখে সমান।

সবাই যদি আইনের দৃষ্টিতে সমান হয়ে থাকে,প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্ছ আইন হলো সংবিধান, প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্ছ আইন সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম রেখে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান সংবিধানে এই অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক, ধর্মনিরপেক্ষতা কেন সংবিধানে জুরুরী, ধর্মের অপব্যাখা দিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীরা সমাজে রাষ্ট্রে ঘৃণা চড়াচ্ছে, তারা আজ বঙবন্ধু ভাষকর্য নিয়ে সমাজে ধর্মীয় উম্মাদনা তুলতে চাইছে, জাতীয় পতাকা জাতীয় সংগীতকে চ্যালেঞ্জ করছে বা করতে ছাইছে, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেও চ্যালেঞ্জ করবে।

সুতারাং সামাজিক বাস্তবতার নামে আর কালক্ষেপণ নয়, সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে সাংঘর্ষিক বিধান বা শব্দগুলো অনতিবিলম্বে বাতিল করার পদক্ষেপ গ্রহন করা জুরুরী, এইসব সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলো কখনো দেশের গণমানুষের সমর্থন পায়নি, এরা সবসময়ে বাহিরের অপশক্তিগুলোর আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে লালিত পালিত হয়ে বটবৃক্ষে পরিনত হয়েছে, এরা এখন সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় মৌলবাদী অংশটি বাহিরের পুরোনো মিত্রের পাশাপাশি আওয়ামীলীগের ভিতরে এরা মিত্রতা খুজছে, যাতে ভবিষ্যৎ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ করা যায় ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের প্রতি, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক বড় বড় অর্থনৈতিক শক্তির ব্যবসা বাণিজ্যের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু, অদুর ভবিষ্যতে এই বহি:অর্থনৈতিক শক্তিগুলো তাদের বাণিজ্যিক বা ভূরাজনীতির স্বার্থে এই মৌলবাদী অপশক্তিগুলোকে মদদ যে দিবেনা তার নিশ্চয়তা কি?

সুতারাং দেশের অভ্যান্তরীন নিরাপত্তা ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্মগত আদর্শের চেতনা সমুন্নত রাখার স্বার্থে সংবিধানের কালাকানুন গুলো এখনি বাতিল করা জরুরী বলে মনে করছি।

লেখক : আইনজীবী।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test