E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গণহত্যা না হিন্দু-হত্যা? -১

২০২১ মে ১৫ ১৬:২৪:৫৯
গণহত্যা না হিন্দু-হত্যা? -১

শীতাংশু গুহ 


২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস। এই প্রথম দিবসটি দুইভাবে পালিত হয়েছে, এক, ‘গণহত্যা দিবস’, দুই, ‘হিন্দু-গনহত্যা দিবস’। বলা বাহুল্য, হিন্দু-হত্যা দিবস ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এর কারণ মুখ্যত: অর্ধ-শতাব্দী ধরে বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধে হিন্দুদের অবদানকে অস্বীকার করা হচ্ছে। হিন্দুরা নিজদেশে নিপীড়িত-নির্যাতিত-অত্যাচারিত। স্বাধীনতা সুফল সংখ্যালঘুর ঘরে পৌঁছেনি। অথচ ধর্মীয় গ্রূপ হিসাবে হিন্দুদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে, প্রায় সকল হিন্দু বাস্তুচ্যুত বা উৎখাত হয়েছিলো। এক-কোটি হিন্দু শরণার্থী হয়েছিলো। হিন্দুরা বঙ্গবন্ধু’কে একশ’ শতাংশ ভোট দিয়েছিলো, না দিলে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্টতা পেতোনা। প্রতিটি হিন্দু স্বাধীনতার স্বপক্ষে ছিলো। একটি পুরো জনগোষ্ঠীতে একজন ‘রাজাকার’ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এত আত্মত্যাগের পরও আজো হিন্দুদের দেশত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, জনসংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমস’র একটি রিপোর্ট দেখা যাক। নিউইয়র্ক টাইমস, ৪ঠা জুলাই ১৯৭১ ‘পূর্ব-পাকিস্তানে আর্মী সন্ত্রাসের টার্গেট হিন্দুরা’ শীর্ষক একটি নিউজ ছাপায়। সিডনি এইচ সানবার্গ ফরিদপুর থেকে নিউইয়র্ক টাইমস’র জন্যে স্পেশাল এ রিপোর্ট পাঠান ২৯শে জুন ১৯৭১, সেটি ছাপা হয় ৪ঠা জুলাই। এতে বলা হয়. পাকিস্তানী সৈন্যরা হিন্দু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বড়করে ‘এইচ’ লিখে রাখে, যা এখনো এই শহরে দৃশ্যমান, যাতে সহজে হিন্দুদের টার্গেট করা যায়। এই রিপোর্টের পরে এই করেসপন্ডেন্টকে পাকিস্তান থেকে বহিস্কার করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমান পাকিস্তানী সৈন্যদের হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি, কিন্তু হিন্দুদের তুলনায় নিরাপদ ছিলো, তাঁরা তাদের বাড়ী ও ব্যবসায় সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়, ‘মুসলমানের বাড়ী’। ক্ষুদ্র খৃষ্টান সম্প্রদায়, যাঁরা মূলত: ব্যাপ্টিষ্ট, তাঁদের বাড়ীর দরজায় ‘ক্রস’ লাগিয়ে রাখে এবং পরনের কাপড়ে লাল সুতা দিয়ে ‘ক্রস’ লিখে রাখে। ফরিদপুরের ১০হাজার হিন্দুর মধ্যে অগুন্তি সংখ্যক হত্যা করা হয়, বাকিরা ভারতে পালিয়ে যায়।

হিন্দুর বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন ছিলো বা অনেক ক্ষেত্রে এখনো আছে, যা ‘সিষ্টেমেটিক’। সৈন্যরা বস্তুতঃ প্রতিটি গ্রামে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতো, হিন্দু কোথায়? হিন্দু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও বিক্রী করে দেয়া হয় অথবা কোন ‘লয়েল/অনুগত’ নাগরিক, যাঁরা মূলত: বিহারী, তাদের দেয়া হয়। সৈন্যরা বিহারীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, এবং এঁরা হিন্দুদের হত্যা করে। হিন্দুদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়। যদিও হাজারো মুসলমানকে হত্যা করা হয়, তবে ‘স্বায়ত্বশাসন’ দাবীর পক্ষে হিন্দুদের ভারতের এজেন্ট হিসাবে গণ্য করে হত্যা করা হয়। এপ্রিল মাসে দৃষ্টান্তস্বরূপ ফরিদপুরের সেন্ট্রাল স্কয়ারে দুইজন হিন্দুকে গলাকেটে হত্যা করা হয়, এবং তাঁদের মৃতদেহ কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। জীবন বাঁচাতে কিছু হিন্দু ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হতে চাইলেও তাদের অথর্ব, অবিশ্বাসী বলে গুলি করে হত্যা করা হয়। সৈন্যরা মুসলমানদের হিন্দু বাড়ীঘর লুটপাট বা আগুন দিতে বাধ্য করে, ফলে কারো কারো মতে ৯০% হিন্দু বাড়ীঘর ভস্মীভূত হয়। সৈন্যরা তখন হিন্দু-মুসলমান সংঘাত লাগাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test