E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আঁধারে আলো

২০২১ মে ১৯ ১৪:১৪:৩৫
আঁধারে আলো

চৌধুরী আবদুল হান্নান


“মাহাত্মা গান্ধী দর্শনের ভারত পথ হারিয়েছ আগেই, দূষিত সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবৃক্ষটি বিজেপির মদদে এখন ফলবান”

মমতা বন্দোপধ্যায় আবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন, বিধান সবা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বড় বিজয় সহজ ছিল না। সমগ্র ভারত ব্যাপী হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির উথ্থানে দিশেহারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্য থেকে তৃণমূলের এ বিজয় গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির অগ্রযাত্রায় ভারতের জন্য নতুন করে শুভ সূচনা।

পশ্চিমবঙ্গের দিদি খ্যাত মমতার বিজয়ে কেবল পশ্চিমবঙ্গের মানুষই আনন্দ উল্লাসে ভাসছে তাই নয়, সমগ্র ভারতের সচেতন নাগরিকদের জন্য আনন্দ বার্তা এনে দিয়েছে । আনন্দ তো আমাদেরও,তাদের নির্বাচন নিয়ে এদেশের মানুষেরও আগ্রহের অন্ত নেই।আগ্রহ তো থাকবেই, একে তো প্রতিবেশী এবং একই ভাষাভাষী মানুষের দেশ,আমাদের সম্পর্ক সাংস্কৃতিক ও আত্মিক।

ভারতের আর একটি নির্বাচন দেখেছি আমরা, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে ধর্মীয় রাজনীতির উন্মাদনা ছুড়ে ফেলে দিয়ে দিল্লিবাসী আম আদমি পার্টি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে দিল্লি শাসনের ম্যান্ডেট দিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করলো। নির্বাচনে বিজেপির শ্লোগান ছিল হিন্দুত্ববাদ আর কেজরিওয়ালের ছিল নাগরিক সেবা।

মধ্যবিত্ত ব্রাম্মন পরিবারের জন্ম নেয়া একদা জাতীয় কংগ্রেস দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে একটি নতুন দল সর্ব ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করা এ বাগ্মী রাজনীতিকের হাত ধরে সমগ্র ভারত নতুন পথ খুঁজে পাবে, এমন প্রত্যাশা সচেতন নাগরিকদের।

নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর প্রথম সামবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, একদিন পশ্চিমবঙ্গ গোটা ভারতকে পথ দেখাবে, আমি বিরোধীদলীয় সবার সাথে বন্ধু হিসেবে থাকতে চাই।

ভারতের অযোধ্যায় ১৯৯২ সালে হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি, মৌলবাদী সন্ত্রাসী কর্তৃক ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং ভারতের আদালত কর্তৃক ২৮ বছর পর সেই মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মানের অনুমতি দেয়ার ঘটনা মুসলিম বিশ্বকে মর্মাহত করেছে। ভারতীয় মুসলিমদের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল তা আজও শুকায়নি।

ভারতীয় গবেষক ও ইতিহাসবিদ গৌতম রায় বলেন—“ মসজিদের জমিতে রাম মন্দির নির্মানের যে সিদ্ধান্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে ধ্বনিত হলো,সেই সিদ্ধান্ত যুগ যুগ ধরে প্রবাহিত বহুত্ববাদী ভারতবর্ষকে কি আগামী দিনে রক্ষা করতে পারবে ?

এই রায় নিয়ে সাবেক বিচারপতি অশোক কুমার গঙ্গোপধ্যায় আনন্দ বাজার পত্রিকায় লিখেছেন—“ এই রায় কিসের ভিত্তিতে দেয়া হলো, সবটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট একটা রায় দিলে মেনে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না কিন্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি খুঁজে পাচ্ছি না।”

ভারতীয় রাজনীতিক সুধীন্দ্র কুলকার্নি বলেন—বিজেপি রাজনীতিতে যে সাম্প্রদায়িক খেলা খেলছে, এর মাধ্যমে ভারতের গণতন্ত্র ও সভ্যতা লজ্জার মধ্যে পড়েছে।

ভারতীয় গবেষক, ইতিহাসবিদ, বিচারক, বুদ্ধিজীবীরা যখন বিজেপির নোংরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা মুখর হন, তখন অন্যদের আর কিছু বলার প্রয়োজন হয় না।

মা গঙ্গা তার সন্তানদের রক্ষা করবেন—এমন অন্ধবিশ্বাসীরাই বিজেপির মূল শক্তি, তাই উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পন্ন করোনা মহামারীর মধ্যেও গঙ্গাস্নানের অনুমতি।

মাহাত্মা গান্ধী দর্শনের ভারত পথ হারিয়েছে আগেই, দূষিত সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবৃক্ষটি বিজেপির মদদে এখন ফলবান।

এক বাতি থেকে হাজার বাতি জ্বলে, মমতাদিদি লক্ষ বাতি জ্বালাবেন, দূর হবে সাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মান্ধতার অন্ধকার, এ প্রত্যাশা সকলের ।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test