E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৫ আগস্ট, সেদিন যা হওয়ার কথা ছিল!

২০২১ আগস্ট ১৪ ১৮:১৬:০৬
১৫ আগস্ট, সেদিন যা হওয়ার কথা ছিল!

রহিম আব্দুর রহিম


সবে মাত্র ফজরের আজান শেষ, বাড়িতে পতাকা উড়ানো হয়ে গেছে। এর মাঝেই মুর্হুমুহ গুলির বিকট শব্দে আকাশ প্রকম্পিত। এক এক করে সব শেষ। খুনিদের উল্লাসের সাথে সাথে নিষিদ্ধ ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি। স্তব্ধ বিবেক, স্থবির দেশ তথা পৃথিবী। হত্যাকান্ডের দিনটি ছিল শুক্রবার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি, বিধি অনুযায়ী তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। চ্যান্সেলর হিসেবে প্রথম পরিদর্শনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছিল নতুন সাজে। তাঁকে সংবর্ধনা জানাতে উন্মুখ তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র,শিক্ষক, কর্মচারীরা। পরিদর্শন সূচির ডালা পরিপুর্ণ, বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় প্রবেশ করে, প্রথমে স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদ শিক্ষকদের কবর জিয়ারত শেষে পুষ্পমাল্য অর্পন করবেন, তাঁকে গার্ডঅব অনার জানাতে প্রস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউওটিসির ক্যাডেটরা। বঙ্গবন্ধুকে মাল্যভুষিত করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরী স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদ ও বিভাগগুলোর মধ্যে একমাত্র সমাজবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগ পরিদর্শন করবেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জাদুঘর দেখেতিনি সাইন্স এনেক্সভবন অতিক্রম করার পথে পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট এর ডাটা প্রসেসিং ইউনিটও পরিদর্শন করার কথা ছিল। পরে জগন্নাথ হলে ১৯৭১ সালের ২৫ মর্চের রাতে ছাত্র-শিক্ষকদের হত্যা করে যে গণকবর স্থাপিত হয়েছিল, সেখানে পুষ্পমাল্য অর্পন করে কার্জন হলের মুল অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। পরে বেলা ১১.৪০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আয়োজিত ছাত্র-শিক্ষক অফিসার এবং কর্মচারীদের সম্মিলিত সভায় যোগদান করার সূচিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। (তথ্যসূত্র: দৈনিক বাংলা, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে প্রতীকি সম্মান জানানোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম খচিত রূপোর তৈরি একটি ক্রেস্ট তৈয়ার করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ,‘রবীন্দ্রভক্ত জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান’কে দেওয়ার জন্য রবীন্দ্র রচনাবলীর কয়েক খন্ড সংগ্রহ করে রেখেছিলেন।

তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আব্দুল মতিন চৌধুরীর বাসায় বঙ্গবন্ধুর চা-চক্রে মিলিত হতেচেয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর আগমন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীরা ছিলেন জীবন্ত এবং আলোড়িত। ওই সময়ে জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর সহ-সভাপতি শেখ শহীদুল ইসলাম সকল আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং মাহাবুব জামান। বঙ্গবন্ধুকে যেতে হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনুষ্ঠানে যাওয়ার ৫ ঘন্টা আগে ভোর ৬ টায় তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে আত্মস্বীকৃত খুনিরা। পরিবেশ এতটাই দুর্যোগপূর্ণ ছিল যে, জাতির পিতার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করার মত কোন মানুষ ছিল না। কারণ, খুনিদের দরবারে আওয়ামীলীগ এবং বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্তরাও জড়িত। এর মধ্যে খুনি মোস্তাক একজন। হত্যাকান্ডের পরপরই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিক ও তাঁর অনুসারীরা প্রতিবাদ করায়, তাঁদের দেশত্যাগ করতে হয়েছিল। ওইদিন প্রয়াত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহেরা খাতুনের বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা ছিল। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর তিনি আমৃত্যু কুমারীত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ৬৫ দিন পর অর্থাৎ ১৯৭৫ এর ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে এক স্বতঃস্ফুর্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ২১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। (সূত্র: ভোরের কাগজ ১৭ আগস্ট, ১৯৯৬) বঙ্গবন্ধুর প্রিয় প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছিলেন কেউ কবি, কেউ আবার দার্শনিক, কেউ কেউ ছিলেন সমাজবিজ্ঞানী, আবার কেউ বা ছিলেন লেখক। যাঁদের লেখনিকর্ম, চিন্তাভাবনা বাঙালি জাতিকে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে উজ্জীবিত করেছে, যুগিয়েছে প্রেরণা। এই চিন্তার রাজ্যের কবি সাহিত্যিক-শিল্পীরাই সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হন। ১৯৭৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক শিক্ষাসচিব কবির চৌধুরী। (সূত্র: সাইফুল্লাহ মাহামুদ দুলাল, শিল্প সাহিত্যে শেখ মুজিব, ঢাকা, ১৯৯৭) ১৯৭৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির সকালে সামরিক শাসনের কড়া পাহারার মধ্যে অনুষ্ঠিত বাংলা একাডেমির কবিতা পাঠের আসরে কবি নির্মলেন্দু গুণ, বঙ্গবন্ধুর স্মরণে এক ঐতিহাসিক কবিতা পাঠ করে সকলকে সাহসী করে তুলেন। এরপর ১৯৭৭ সালে সমকাল পত্রিকায় কবি মোহাম্মাদ রফিকের কবিতা, ১৯৭৮ সালের ৩ নভেম্বর এই পত্রিকায় প্রকাশিতআবুল ফজলের গল্প ‘মৃতের আত্মহত্যা’তে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের শৈল্পিক প্রতিবাদের চরম ধিক্কার ওঠে আসে। এতে শেষ পর্যন্ত লজ্জায়, ঘৃনায় খুনির স্ত্রী আত্মহত্যাই করেছিল। এই লেখক তৎকালীন জিয়াউর রহমানের সামরিক প্রশাসনের একজন উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ছিলেন। এরপর ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২১ স্মরনিকা ‘জয়ধ্বনি’তে কবি কামাল চৌধুরী ‘জাতীয়তাময় জন্ম-মৃত্যু’সহ হায়াৎ মাহমুদ, অন্নদা শংকর রায়, রাহাত খান, মহাদেব সাহা’রাও তাঁদের শৈল্পিক প্রতিবাদ চালিয়ে যান। বর্তমান শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, লিয়াকত আলী লাকি’র উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জীবন ভিত্তিক নানা কাহিনী বিজড়িত হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনা নিয়ে রচিত বিভিন্ন লেখকের নাটক বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সংগ্রহ শুরু করেছে। এর মধ্যে ‘বাইগাড়পাড়ের বাঙালি’নাটকটিতে বঙ্গবন্ধুর সকল আদর্শ এবং সকল অঙ্গনের নির্যাস ওঠে এসেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচার রহিত হয়েছিল জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে কালো আইনের মাধ্যমে। জাতির পিতা ছিলেন যেমন দেশপ্রেমিক তেমনি ছিলেন মানবদরদি। এ প্রসঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, “শেখ মুজিব আমার পিতা” শিরোনামের এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘দাদির কাছে গল্প শুনেছি, যখন স্কুল ছুটির সময় হতো, তখন আম গাছের নিচে এসে দাঁড়াতেন। খোকা আসবে, দূর থেকে রাস্তার উপর নজর রাখতেন। একদিন দেখেন তাঁর খোকা গায়ে চাদর জড়িয়ে আসছে। পরনে পাজামা-পাঞ্জাবি নেই। কী ব্যাপার? এক গরিব ছেলের শতছিন্ন কাপড় দেখে সবই তাকে দিয়ে এসেছেন।’ তিনি তাঁর এই প্রবন্ধের অন্য অংশে উল্লেখ করেন, ‘১৯৪৯ সালে আমার আব্বা গ্রেফতার হন। আমি তখন খুবই ছোট, আর আমার ছোট ভাই কামাল কেবল জন্মগ্রহণ করেছে। আমার আব্বা ওকে দেখারও সুযোগ পায়নি। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ হল, যুদ্ধকালীন সব ধ্বংস হল, নেই কিছুই, ব্যাংক শুণ্য, সহায় সম্বল লুটেপুটে নিয়ে গেল পাকিস্তানিরা, নিশ্চিহ্ন করেছে কলকারখানা, ভরসা মাত্র কৃষি। নয় মাসের যুদ্ধে তছনছ বাঙালির শস্য ভান্ডার। অনাবাদি হয়ে পরেছিল জায়গা-জমি। ঘর-গৃহস্থালি ফেলে এক কোটি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে। শুণ্য হাতে ফিরে আসা এই মানুষগুলোর পুণর্বাসনে কঠিন অবস্থা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস, অনুপযোগী দেশের সমুদ্র বন্দর। সদ্য স্বাধীন দেশের টগবগে মুক্তিযোদ্ধারা আশাহত। মাত্র চার বছর সাত মাস, পাঁচ দিন ক্ষমতায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপরই তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যে হত্যাকান্ড সভ্য পৃথিবীতে কলঙ্কের মাইলস্টোন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শত ব্যস্ত জীবনের অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন পরিবারের শ্রেষ্ঠ অভিভাবক ও দায়িত্বশীল এবং সন্তানদের পরমবন্ধু। ১৯৫৯ সালের ১৬ এপ্রিল জেলখানা থেকে তিনি তাঁর স্ত্রী ফজিলাতুননেছা মুজিবকে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘রেণু, আমার ভালোবাসা নিয়ো, ঈদের পরে আমার সাথে দেখা করতে এসে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আসো নাই, কারণ তুমি ঈদ করো নাই, ছেলে-মেয়েরাও করে নাই। খুবই অন্যায় করেছ। ছেলে-মেয়েরা ঈদে একটু আনন্দ করতে চায়, কারণ সকলেই করে। তুমি বুঝতে পারো ওরা কত দুঃখ পেয়েছে। আব্বা ও মা শুনলে খুব রাগ করবেন। আগামী দেখার সময় ওদের সকলকে নিয়ে আসিও। কেনো যে চিন্তা করো বুঝিনা। আমার কবে মুক্তি হবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নাই। তোমার একমাত্র কাজ হবে, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখানো। টাকার দরকার হলে আব্বাকে লেখিও, কিছু কিছু মাসে মাসে দিতে পারবেন। হাছিনাকে মন দিযে পড়তে বলিও। কামালের স্বাস্থ্য মোটেই ভাল হচ্ছেনা, ওকে নিয়মিত খেতে বলিও। জামাল যেন মন দিয়ে পড়ে আর ছবি আঁকে। এবার একটা ছবি এঁকে যেন নিয়ে আসে, আমি দেখবো। রেহানা খুব দুষ্ট, ওকে কিছুদিন পর স্কুলে দিও জামালের সাথে। যদি সময় পাও নিজেও একটু লেখাপড়া করিও। একাকী থাকতে কষ্ট প্রথম প্রথম হতো, এখন অভ্যাস হয়ে গেছে, কোন চিন্তা নাই। বসে বসে বই পড়ি। তোমার শরীরের প্রতি যত্ন নিও। ইতি তোমারই মুজিব।’(সূত্র: বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর নিরীক্ষায় প্রকাশিত মোনায়েম সরকারের নিবন্ধ) জেলখানা থেকে প্রেরিত এই পত্রটি প্রমাণ করে তিনি সাহসী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব্যের অধিকারী, দায়িত্বশীল অভিভাবক, একজন মনোবিজ্ঞানী, বিশ্লেষক ও দার্শনিক। শুধু তাই নয়, তিনি একজন শিক্ষানুরাগী মহান শিক্ষকও বটে। যিনি শত যন্ত্রণা, ব্যস্ততা, দুঃখ-কষ্টের মাঝেও তাঁর সহধর্মিনিকে পড়াশোনা করার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।

১৯৯১ সালে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর কাঁটাবন, নীলক্ষেতের অফিসে প্রয়াত ড. আলী আসগর আলোচনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যেদিন মারা যান সেদিন আমি বিদেশ ছিলাম। সকালে একটি হোটেলে নাস্তা করতে গেলে, অন্য একজন গ্রাহক আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বাঙালি? বললাম হ্যা। এটা বলা মাত্রই ওই ব্যক্তি আমার কাছ থেকে ওঠে গেলেন, চোখে-মুখে ঘৃণার ছাঁপ। মুখ দিয়ে অনর্গল বেরিয়ে আসছে, ‘বাঙালিরা বেঈমান, যিনি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ এনে দিলেন, পৃথিবীতে দেশের মানচিত্র অংকন করল, তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হলো!’ এই বক্তব্য স্পষ্ট করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে তারা নিজেরাই শুধু অপরাধী হয়নি, একটি জাতির ঘাড়েও কলঙ্ক মেখেছিল।১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের খবরটি যখন বেতারে ঘোষণা হয়, তখন বিশিষ্ট লেখক আবু জাফর শামসুদ্দিনতাঁর ডায়রিতে লেখেছিলেন, ‘জীবিত বঙ্গবন্ধু, মৃত বঙ্গবন্ধুর চেয়েও শক্তিশালী হয়ে আর্বিভুত হবেন।’ সেটাই হয়েছে। আর এ আর্বিভুত জীবিত বঙ্গবন্ধু’ই হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর অনুসারীদের সমষ্টিগত শক্তিশালী সাহসী হাত। যে হাত বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ সম্পূর্ন করেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, হচ্ছে, পিতার স্বপ্ন উন্নয়ন অব্যাহত চলছে। প্রয়াত বুদ্ধিজীবি জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শিরোনামের একজ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘সংসদীয় রাজনীতির প্রতি নিবেদিত প্রাণ মুজিব, দেশে সামরিক শাসন মেনে নেননি এবং সামরিক শাসকের সঙ্গে আপোস করেননি। এরই ফলে ১৯৬৭ সালের ঐতিহাসিক ৬ দফা। মুজিব যে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে আশ্রয় করেছিলেন, দেখা গেল, দেশের বেশিরভাগ মানুষই তাঁরই পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে। তাঁর প্রতি শাসকশ্রেণির অত্যাচার শুধু তাঁর ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করেনি, তাঁর রাজনৈতিকব কর্মসুচিকেও জনপ্রিয় করেছিল। ১৯৬৯ সালে এই মুজিব হলেন বঙ্গবন্ধু, ১৯৭০ সালে এই পূর্ববঙ্গের মানুষ ঐক্যবদ্ধ ৬ দফার পক্ষে ভোট দিল। মুজিব হলেন বাঙালির একচ্ছত্র নেতা এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবার ও সংবিধান রচনা করার অধিকারী।’

উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের এবার শাহাদত দিবসের ক্ষণগগনায় ৪৬তম। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল উচ্চভিলাসি খুনিরা। বঙ্গবন্ধু জীবনদশায় বহুবার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হয়েছেন। ষড়যন্ত্রের চুড়ান্ত প্রতিক্রিয়ার বলি, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট। রাজনীতির মহাকবি, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, কালজয়ী এই মহাপুরুষ ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ওই রাতে, ১৭ টি তাজা প্রাণ নির্মম হত্যার শিকার হন। এর মধ্যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব, শেখ রাসেল, শেখ কামাল, সুলতানা কামাল, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, শেখ জামাল, পারভীন জামাল রোজী, শেখ ফজলুল হক মনি, বেবী সেরনিয়াবাত, শেখ আবু নাসের, কর্ণেল জামিল উদ্দিন আহমেদ, বেগম আরজুমান সুকান্ত আব্দুল্লাহ, শহীদ সেরনিয়াবাত আব্দুল নঈম খান রিন্টু ও আরিফ সেরনিয়াবাত। ওই সময় বিদেশে থাকায়, বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা, শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা। খুনিরা বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে হত্যা করে ধ্বংস করতে চেয়েছিল কালজয়ী মহাপুরুষের সমুদ্রসম ঐতিহাসিক নিদর্শন। তাহয়নি, বরং সারা বিশ্বে এই মহান নেতার ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়েছে। তিনি বিশ্ব দরবারে কালজয়ী মহীরূহের শেখড়ে স্থান পেয়েছেন।এই ক্ষণে বাঙালি জাতির জন্য আত্মতৃপ্তি, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। যার যোগ্য সন্তান কালের সাহসী শেখ হাসিনার হাতেই তাঁর স্বপ্নস্বাধ উন্নয়নের চাবি গচ্ছিত।

লেখক : রহিম আব্দুর রহিম, শিক্ষক, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও নাট্যকার।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test