E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট : খুনি চক্রের রক্ষকদের ভূমিকা

২০২১ আগস্ট ১৫ ০০:১৫:৪২
১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট : খুনি চক্রের রক্ষকদের ভূমিকা

এম. আব্দুল হাকিম আহমেদ


১৫ই আগস্ট বাঙালী জাতির জীবনে চিরন্তর রক্তক্ষরণ, নিষ্ঠুরতম, বর্বরতম, বেদনা ও দুখের বিষাদ ঘন কলঙ্কময় দিন। শোকাবহ এই দিনে পৃথিবীর সমস্ত সভ্যতাকে হার মানিয়ে সংঘঠিত হয়েছিল ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ড। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি ও তাদের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগীদের ষড়যন্ত্রে গুটি কতক ক্ষমতালোভী বিশৃংখল সেনা অফিসার খুনি মোশতাক-জিয়াউর রহমান গংদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়, আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পরামর্শে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের কালো রাতে নির্মমভাবে হত্যা করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এই নৃশংস হত্যাকান্ডের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার আদর্শ, মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের অগ্রগতিকে স্তব্দ করে দেয়া। প্রগতির চাকাকে স্তব্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্থানী ভাবধারার তাবেদার রাষ্ট্রে পরিনত করার এক গভীর চক্রান্ত থেকেই সংগঠিত হয়েছিল জাতির জনকের এই নৃসংশ হত্যাকান্ড। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, খুনি, রাজাকার-আল বদরদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন ও ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে ধর্মের নামে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে জিয়াউর রহমান যে বিষবৃক্ষের বীজ রোপণ করেছিল পরবর্তীতে এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে বাংলাদেশে উগ্রসাম্প্রদায়িক শক্তির নানামুখী উত্থান তারই ধারাবাহিকতা।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের কালো রাতে খুনি মোশতাক-জিয়ার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় খুনি সর্দার ফারুক-রশিদের নেতৃত্বে ঘাতকেরা প্রায় একই সময় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসায়, ঢাকার অন্যত্র তার ভগ্নীপতি মন্ত্রী সভার সদস্য আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তার ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক যুবনেতা ফজলুল হক মনির বাস ভবনে হামলা চালায়। ঘাতকেরা একটি জাতির পিতাকেই শুধু হত্যা করেনি, হত্যা করেছে একটা পুরো জাতিকে, বাঙালী জাতির আশা-আকাঙ্খার প্রতীক, ভবিষ্যতের চলার পাথেয় জাতির কান্ডারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তারা শুধু এ কাজটি করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা একের পর এক নারকীয় হত্যাকান্ডে মেতে উঠে। এ যেন মানুষ হত্যার মহোৎসব। তারা হত্যা করে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে। হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, ২য় পুত্র শেখ জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্র বধু সুলতানা কামাল, পারভীন জামাল রোজী, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শিশু রাসেল, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও মন্ত্রিসভার সদস্য আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বঙ্গবন্ধুর অতি স্নেহের পুত্রতুল্যভাগ্নে ও আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি, শেখ মনির সন্তান সম্ভবা স্ত্রী বেগম আরজু মনি, সেরনিয়াবাতের কিশোরী কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, শিশু পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভ্রাতুষপুত্র শহীদ সেরনিয়াবাত, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর খালাতো ভাই আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্ণেল জামিল উদ্দিন আহম্মেদ, পুলিশের এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহাবুবুল হক ও ১৫ই আগস্ট খুনীদের গোলায় নিহত মোহম্মদপুরের বস্তিঘরের নিরীহ রিজিয়া বেগম, রাশেদা বেগম, সাবেরা বেগম, আনোয়ারা বেগম, আনোয়ারা বেগম-২, সয়ফুল বিবি, হাবীবুর রহমান, আবদুল্লা, রফিকুল, শাহাবুদ্দিন ও আমিনুদ্দিন। আগস্ট বড় দুঃখ বেদনার মাস, স্বজন হারানোর মাস। ১৫ই আগস্ট বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষ ও বিশ্বের বিবেকবান মানুষ চোখের অশ্রু ঝরায়। আগস্ট এলে আমাদের চোখে ভেসে উঠে শেখ রাসেল, সুকান্ত বাবু, বেবী, আরিফ, রিন্টু ও মোহম্মদপুরের বস্তিঘরের নাসিমার কচি কোমল মুখ।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট মানব সভ্যতার বীভৎস, পৈশাচিক নির্মম হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৎকালীন আবাসিক পি এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মামলার বাদি প্রয়াত আ.ফ.ম. মহিতুল ইসলাম সরকারী কাজে ঝিনাইদহ সার্কিট হাউসে অবস্থান কালে আমরা আওয়ামী লীগের তরুন কর্মীরা তার সঙ্গে সাক্ষাত করে ১৫ই আগস্ট লৌহমর্ষক বঙ্গবন্ধু সহ অন্যান্যদের হত্যাকান্ডের কাহিনী শুনেছিলাম এবং আমি লিপিবদ্ধ করেছিলাম। সেখান থেকে উদ্বৃত করলাম, “১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোররাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটি আক্রান্ত হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আত্মীয় ও মন্ত্রিসভার সদস্য আবদুর রব সেরনিয়াবাতের হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে যান। যে ঘরে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার বাইরের বারান্দায় ঘুমিয়েছিল গৃহকর্মী মোঃ সেলিম (আবদুল) ও আবদুর রহমান শেখ (রমা) উপর থেকেই বঙ্গবন্ধু নিচতলায় তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলামকে টেলিফোন করে বলেন, ‘সেরনিয়াবাতের বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করেছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন লাগা।’ পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে, মহিতুল গণভবন (তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়) এক্সচেঞ্জে চেষ্টা করতে থাকেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির রক্ষীরা বিউগল বাজিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শুরু করা মাত্রই বাড়িটি লক্ষ্য করে দক্ষিণ দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ শুরু হয়। একটু পরেই বঙ্গবন্ধু তাঁর ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে আসেন। ঘুম থেকে ওঠে গৃহকর্মী আবদুল আর রমা। বেগম মুজিবের কথায় রমা নিচে নেমে মেইন গেটের বাইরে এসে দেখেন, সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য গুলি করতে করতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে এগুচ্ছে। রমা বাড়ির ভেতরে ফিরে দেখেন, লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু নিচতলায় নামছেন। দোতলায় গিয়ে দেখেন, বেগম মুজিব আতঙ্কিত অবস্থায় ছোটাছুটি করছেন। রমা আর দোতলায় দাঁড়িয়ে না থেকে তিনতলায় চলে যান এবং বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল ও তাঁর স্ত্রী সুলতানা কামালকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। ঘটনা শুনে শার্ট-প্যান্ট পরে নিচতলায় নামেন শেখ কামাল। সুলতানা কামাল আসেন দোতলা পর্যন্ত। রমা দোতলায় শেখ জামাল ও তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে তোলেন। জামা-কাপড় পরে শেখ জামাল তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে দোতলায় বেগম মুজিবের কক্ষে যান।

ওদিকে গোলাগুলির মধ্যে অভ্যর্থনা কক্ষে বঙ্গবন্ধুর সামনেই বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন মহিতুল। পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও গণভবন এক্সচেঞ্জে চেষ্টার এক পর্যায়ে রিসিভার নিয়ে বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি ।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা শেষ করতে পারেন নি। একঝাঁক গুলি জানালার কাচ ভেঙে অফিসের দেয়ালে লাগে। কাচের এক টুকরায় মহিতুলের ডান হাতের কনুই জখম হয়। ওই জানালা দিয়ে গুলি আসতেই থাকে। বঙ্গবন্ধু টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন এবং মহিতুলের হাত ধরে কাছে টেনে শুইয়ে দেন। এর মধ্যেই গৃহকর্মী আবদুলকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে তাঁর পাঞ্জাবি ও চশমা পাঠিয়ে দেন বেগম মুজিব। কিছুক্ষণ পর গুলি বর্ষণ থেমে গেলে বঙ্গবন্ধু উঠে দাড়িয়ে আবদুলের হাত থেকে পাঞ্জাবি আর চশমা নিয়ে পরেন। নিচতলার ওই ঘর থেকে বারান্দায় বের হয়ে বঙ্গবন্ধু পাহারায় থাকা সেনা ও পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘এত গুলি হচ্ছে, তোমরা কী করছো?’ এ কথা বলেই বঙ্গবন্ধু উপরে চলে যান।

বঙ্গবন্ধু উপরে উঠতে না উঠতেই শেখ কামাল নিচে নেমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আর্মি আর পুলিশ ভাইরা, আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।’ এ সময় শেখ কামালের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান মহিতুল ইসলাম ও পুলিশের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট (ডিএসপি) নুরুল ইসলাম খান। ঠিক তখনই মেজর নূর, মেজর মহিউদ্দিন (ল্যান্সার) এবং ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা সৈন্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢোকে। গেটের ভেতর ঢুকেই তারা ‘হ্যান্ডস আপ’ বলে চিৎকার করতে থাকে। মহিতুল ইসলামকে টেনে ঘরের মধ্যে নিয়ে যান নুরুল ইসলাম খান। কোনো কথা না বলেই শেখ কামালের পায়ে গুলি করে বজলুল হুদা। নিজেকে বাঁচাতে লাফ দিয়ে ঘরের মধ্যে গিয়ে পড়েন শেখ কামাল। মহিতুলকে বলতে থাকেন, ‘আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল। আপনি ওদেরকে বলেন।’ মহিতুল ঘাতকদের বলেন, ‘উনি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।’ এই কথার বলার সঙ্গে সঙ্গে শেখ কামালকে লক্ষ্য করে বজলুল হুদা তার হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে ব্রাশফায়ার করে। সঙ্গে সঙ্গে মারা যান শেখ কামাল। এর মধ্যে একটা গুলি মহিতুলের হাঁটুতে আরেকটা নুরুল ইসলামের পায়ে লাগে। এ অবস্থাতেই মহিতুলকে টেনে নুরুল ইসলাম তার কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তারা দেখেন, পুলিশের বিশেষ শাখার এক সদস্য দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপছে। অস্ত্রটা তার পায়ের কাছে পড়ে আছে। মূহূর্তের মধ্যে ওই ঘরে ঢুকে বজলুল হুদা সবাইকে বাইরে গিয়ে দাঁড়ানোর আদেশ দেয়।

নিচে কী হচ্ছে তার কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি দোতলায় তাঁর ঘরের দরজা বন্ধ করে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ফোনে তাঁর সামরিক সচিব কর্নেল জামিলকে পান। তিনি তাকে বলেন, ‘জামিল, তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আর্মির লোকেরা আমার বাসা অ্যাটাক করেছে। শফিউল্লাহকে ফোর্স পাঠাতে বলো।’ তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহকেও ফোন করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি তাকে বলেন ‘শফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে, কামালকে (শেখ কামাল) বোধ হয় মেরে ফেলেছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।’ এমন কথা বলা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ সম্পর্কে মহিতুল ইসলাম বলেন, যতদূর সম্ভব মনে পড়ে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনার পর কর্নেল জামিল তার ব্যক্তিগত লাল রঙের গাড়ি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন নিজের গাড়িচালক আয়েন উদ্দিন। কিন্তু পথেই সোবহানবাগ মসজিদের কাছে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। পালিয়ে বেঁচে যান আয়েন উদ্দিন।

অপরদিকে ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গেটের সামনে মহিতুল, নুরুল ইসলাম, আবদুল মতিন, পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যসহ অন্য সদস্যদের সারি করে দাঁড় করানো হয়। তখন ঘাতকদের একজন পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যকে গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি পড়ে যান। এরপর ঘাতকরা গুলি করতে করতে উপরে চলে যায়। তারা শেখ জামালের ঘরের বাথরুমে আশ্রয় নেওয়া গৃহকর্মী আবদুলকে গুলি করে। হাতে ও পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতে তিনি সিঁড়ির পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে থাকেন। ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর ঘরে তিনি ছাড়াও ছিলেন বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল, রোজী জামাল। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ঘরের বাইরে অবস্থান নেয়। গোলাগুলি থামলে বঙ্গবন্ধু দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে এলেই ঘাতকরা তাঁকে ঘিরে ধরে। মেজর মহিউদ্দিন ও তার সঙ্গের সৈন্যদের বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘তোরা কী চাস? আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাস? বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের কাছে মহিউদ্দিন ঘাবড়ে যান। এ সময় নিচতলা ও দোতলায় সিঁড়ির মাঝামাঝি অবস্থান নেয় বজলুল হুদা ও নূর। বঙ্গবন্ধুকে নিচে নিয়ে আসার সময় নূর কিছু একটা বললে মহিউদ্দিন সড়ে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে বজলুল হুদা ও নূর তাদের স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। বঙ্গবন্ধুর বুকে ও পেটে ২৮ টি গুলি লাগে। নিথর দেহটা সিঁড়ির মধ্যে পড়ে থাকে। সারা সিঁড়ি ভেসে যায় রক্তে। এই সম্পর্কে মহিতুল বলেন, ঘাতকের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু কথা বলার পর ব্রাশফায়ারের শব্দ শুনা যায়। এরপর তিনি আর বঙ্গবন্ধুর কন্ঠ শুনতে পান নি। ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর পেছন পেছন গৃহকর্মী রমাও যাচ্ছিল। কিন্তু, ঘাতকরা তাকে ঘরের মধ্যে চলে যেতে বলে। দোতলায় শেখ রেহানার ঘরে থাকা তার চাচা শেখ নাসের ওই কক্ষে যান। তার হাতে গুলি লাগার ক্ষত ছিল। রমাই প্রথম বেগম মুজিবকে জানায়, বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়েছে। এ সময় ওই ঘরে আশ্রয় নেন বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, শেখ নাসের ও রমা। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে নিচে নেমে এসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এর পরপরই মেজর আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন তাদের সৈন্যসহ বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আসে। আজিজ পাশা তার সৈন্যদের নিয়ে দোতলায় চলে যায়। তারা বঙ্গবন্ধুর ঘরের দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা দরজায় গুলি করে। তখন বেগম মুজিব দরজা খুলে দেয় এবং ঘরের মধ্যে যারা আছে তাদের না মারার জন্য অনুরোধ করেন। ঘাতকরা বেগম মুজিব, শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও রমাকে নিয়ে আসতে থাকে। সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখেই বেগম মুজিব কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘আমি যাব না, আমাকে এখানেই মেরে ফেলো।’ বেগম মুজিব নিচে নামতে অস্বীকৃতি জানান। ঘাতকরা শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও রমাকে নিচে নিয়ে যায়। আর বেগম মুজিবকে তার ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। বেগম মুজিবসহ বঙ্গবন্ধুর ঘরে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া শেখ জামাল, সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন। বেগম মুজিবের নিথর দেহটি ঘরের দরজায় পড়ে থাকে। বাঁদিকে পড়ে থাকে শেখ জামালের মৃতদেহ। রোজী জামালের মুখে গুলি লাগে। আর রক্তক্ষরণে বিবর্ণ হয়ে যায় সুলতানা কামালের মুখ।

শেখ নাসের, শেখ রাসেল আর রমাকে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের সবাইকে লাইনে দাঁড় করানো হয়। এ সময় শেখ নাসের ঘাতকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি তো রাজনীতি করি না। কোনোরকম ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই।’ এরপর তারা শেখ নাসেরকে বলে, ‘ঠিক আছে, আপনাকে কিছু বলব না। আপনি ওই ঘরে গিয়ে বসেন।’ এই বলে তাকে অফিসের সঙ্গে লাগোয়া বাথরুমে নিয়ে গুলি করে। এরপর শেখ নাসের ‘পানি, পানি’ বলে গোঙাতে থাকেন। তখন শেখ নাসেরের ওপর আরেকবার গুলিবর্ষণ করা হয়।

লাইনে দাঁড়িয়ে শেখ রাসেল প্রথমে রমাকে ও পরে মহিতুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?’ মহিতুল জবাব দেন, ‘না ভাইয়া, তোমাকে মারবে না।’ এ সময় শেখ রাসেল তাঁর মায়ের কাছে যেতে চাইলে আজিজ পাশা মহিতুলের কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নিয়ে যায়। এ সম্পর্কে মহিতুল বলেন, রাসেলকে ঘাতকরা কেড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সে চিৎকার করে কান্নাকাটি করছিল। এরপর তাকে নিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। ঘাতক আজিজ পাশার কথামতো এক হাবিলদার সভ্যতার সব বিধি লঙ্ঘন করে এই নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। গুলিতে রাসেলের চোখ বের হয়ে যায়। আর মাথার পেছনের অংশ থেঁতলে যায়। রাসেলের দেহটি পড়ে থাকে সুলতানা কামালের পাশে। পুরো ঘরের মেঝেতে মোটা রক্তের আস্তর পড়ে গিয়েছিল। এর মাঝেই ঘাতকের দল লুটপাট চালায়। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সেদিন তার দুই মেয়ে ছিলেন না। বড়ো মেয়ে শেখ হাসিনা তার ছোটো বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে স্বামী বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।”

বঙ্গবন্ধু হত্যা কয়েকজন চাকরিচ্যুত ও চাকরিরত সেনা সদস্যদেরকে নিছক বা আকস্মিক কোনো কর্মকান্ড নয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের পতনের লক্ষ্যে, জাসদ, ইসলামের লেবাসধারী পাকিস্তানপন্থী বিভিন্ন দল এবং চীনপন্থী উগ্র বামপন্থী দল-উপদল গুলো দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করতে থাকে। জাসদের রাজনৈতিক আকাঙ্খা কি ছিল তা ইতিহাসের গবেষনার বিষয়। তবে এটি ঐতিহাসিক সত্য যে, বিরোধীতার নামে দেশে অরাজাকতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পতন ঘটানোই ছিল প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে জাসদের মুখপত্র ‘দৈনিক গনকন্ঠ’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তার সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক মিথ্যা খবর ছাপাতো নিয়মিত ভাবে। কর্ণেল (অবঃ) তাহেরের নেতৃত্বে গঠিত জাসদের ‘বিপ্লবী গণবাহিনী’ সারা দেশে স্বশস্ত্র বিপ্লবের নামে ব্যাংক ডাকাতী, থানা-ফাঁড়ি লুট, রাহাজানি, হাইজ্যাকিং, পাটের গুদামে আগুন, খাদ্য গুদামে আগুন, বিভিন্ন সরকারী ও সরকারী স্থাপনায় হামলা করে সারাদেশে আইন শৃংখলা পরিস্থির ব্যাপক অবনতি ঘটায়। জাসদ তাদের তথা কথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের বিপ্লবের নামে সারা বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের নিধন যজ্ঞে মেতে উঠে। তারা আওয়ামী লীগের চারজন গণ পরিষদ সদস্য সহ দশ হাজার নেতা কর্মীকে হত্যা করে। স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা, বাংলাদেশের আদর্শ বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র তথা পাকিস্তানপন্থীরা অর্থ, সম্পদ, সাহায্য ও সহযোগীতা দিয়ে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে জাসদকে ব্যবহার করতে থাকে বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের বিরুদ্ধে। পরিশেষে জাসদ হয়ে দাড়াই আওয়ামী লীগ বিরোধী বহু শ্রেণী ভিত্তিক সংগঠনে। সুকৌশলে জেনারেল জিয়া তার বন্ধু কর্ণেল তাহের কে দিয়ে সেনা বাহিনীর মধ্যে বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা ছড়িয়ে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জাসদের ভূমিকা কি ধরনের ছিল তা গবেষণায় প্রমানিত হবে। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে জাসদের অবলুপ্তি সকলের চোখের সামনে এই সত্য তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর পতন ঘটানোর জন্যই যেন জাসদের জন্ম হয়েছিল। এ কথা প্রমানের জন্য এই একটি ঘটনা যথেষ্ট, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে নভেম্বরের ৩-৭ তারিখে জাসদের বিপ্লবী নেতা কর্ণেল তাহের ক্যান্টনমেন্টে হাজার হাজার লিফলেট বিতরণ করে সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে মুক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রধান মাষ্টার মাইন্ড, বঙ্গবন্ধু হত্যার বড় বেনিফিসিয়ারী তার বন্ধু খুনি জিয়াউর রহমানকে। এসব তারা করেছিলেন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে। যদিও কর্ণেল তাহের তার বন্ধু জেনারেল জিয়ার প্রাণ রক্ষা করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, জেনারেল জিয়ার হাতেই কর্ণেল তাহেরকে ঝুলতে হয়েছিল ফাঁসির দড়িতে।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট তৈরীতে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ভূমিকাও বিতর্কিত ছিল, তিনিও কম নেননি। ১৯৭৪-৭৫ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাজিত দেশদ্রোহী জামাতে ইসলামী, মুসলীম লীগ, নেজামে ইসলাম, পিডিপির নেপথ্য শক্তিকে আড়াল রেখে মাওলানা ভাসানী এই সব অশুভ সাম্প্রদায়িক শক্তির স্বপক্ষে কাজ করার জন্য গঠন করলেন, ‘হুকুমতে রব্বানী’ এর লক্ষ্য হল চরম সাম্প্রদায়িকতা উত্তেজনা সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু ও ভারতের বিরোধীতা। স্বাধীনতা যুদ্ধে বর্ণনাতীত যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুর্নগঠনের কাজে যেখানে প্রয়োজন ছিল সহযোগীতার, সেখানে মাওলানা বিভিন্ন সভা সমিতিতে এদের সমর্থন জানিয়ে দোয়া করলেন। বললেন, মুসলিম বাংলার জন্য যারা কাজ করছে, তাদের আমি দোয়া করছি। আল্লাহর রহমতে তারা জয়যুক্ত হবে। প্রকাশ্য জনসভায় মাওলানা ভাসানী হুংকার দিতে থাকলেন, বললেন, ‘আমি এদেশে প্রতিবিপ্লব ঘটাবো।’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট তৈরীর খুনি মোশতাক চক্রের অন্যতম দিক হলো আওয়ামী লীগের মধ্যে আন্তবিরোধ সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে বহুদলে বিভক্ত করে শক্তিহীন করা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তার বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত সহযোগীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। কুচতুর মোশতাক অতি সন্তপর্ণে বঙ্গবন্ধুর অতি নিকট জনদের দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কানভারী করে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ভারতের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে সফলভাবে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ কালীন সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার দ্বার প্রান্তে পৌছে দিয়ে, সফল কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে নিয়ে এসেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহচর ও তার দক্ষিণ হস্ত সেই তাজউদ্দিন আহমেদ ও বঙ্গবন্ধুর মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি করতে সফল হন। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু তার প্রিয় বিশ্বস্ত অনুসারী ও সহকর্মী তাজউদ্দিন আহমেদ কে মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। স্বাধীনতার পর এ ছিল বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের জন্য একটা বিরাট আত্মঘাতমূলক পদক্ষেপ। বঙ্গবন্ধু সরকারে খুনি মোশতাক-জিয়া-ফারুক-রশিদ-ডালিম গংদের ষড়যন্ত্র আঁচ করে প্রতিহত, প্রতিরোধ ও দমন করার মত তাজউদ্দিন ছাড়া আর কেউ নেয় সেটা খুনি মোশতাক চক্র ১৯৭১ সাল থেকেই জানতেন, কেননা খুনি মোশতাক ও মাহবুব আলম চাষী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের পাকিস্তান-আমেরিকার সাথে যোগসাজস করে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কনফেডারেশন বানানোর ষড়যন্ত্র তাজউদ্দিন আহমেদ ধরে ফেলেন এবং সুকৌশলে মোশতাকের ষড়যন্ত্র রোধ ও দমন করেছিলেন। তাই তাজউদ্দিনকে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সরানোই ছিল খুনি মোশতাক চক্রের অন্যতম লক্ষ্য, যাতে তাদের এই গভীর ষড়যন্ত্র কেউ ধরতে না পারে। তাজউদ্দিনকে সরিয়ে দিয়ে চক্রান্তকারীরা বঙ্গবন্ধুকে মিত্রহীন করে এবার বঙ্গবন্ধুকেই তাদের আক্রমনের প্রধান লক্ষবস্তু বা টার্গেট হিসেবে ঠিক করলো। অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে সর্দোপনে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেল।

এহেন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু হত্যার দেশীয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীদের তৈরী করা প্রেক্ষাপটের সুযোগে স্বাধীনতা বিরোধী আন্তজার্তিক চক্রের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেই দেশীয় ঘাতক বেইমান মোশতাক-জিয়া-রশিদ-ফারুক-ডালিম চক্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুসহ তার স্বজন ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছিল। একাত্তরের পরাজিত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল। অবমুক্ত মার্কিন দলিলে দেখা যায়, হাজার মাইল দুর থেকে ড. কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধু হত্যার রাতে বিনিদ্র রজনী যাপন করে হত্যাকান্ড তদারকি করেন। একাত্তরে স্বাধীনতা বিরোধী সৌদি আরব বঙ্গবন্ধু হত্যার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬ আগস্ট ৭৫ স্বাধীনতার ৪ বছর পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। একই ভাবে আর এক দেশ চীন স্বীকৃতি দেয় আরো একদিন পরে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরপরই খুনি মোশতাক সরকারকে স্বীকৃতি দেয় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার রায়ে ধৃত স্বঘোষিত খুনি ফারুক-বজলুল হুদা সহ ৫ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে ২০১০ সালে ২৮ শে জানুয়ারী। এখনো পাঁচজন ফাঁসির দন্ডাদেশ পাওয়া খুনি পালিয়ে আছে। ইতিমধ্যে পালিয়ে থাকা খুনি মাজেদকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে ফাঁসির দন্ডাদেশ প্রাপ্ত বাকিদের গ্রেফতার করে পূর্ণাঙ্গ রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কুটনৈতিক ও গোয়েন্দা দলিল এবং সাংবাদিকদের কাছে থাকা তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় পরিষ্কার হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্রীড় নকের নাম। ইতিহাসে কখনই সত্য চাপা থাকে না। সেই ধারাবাহিকতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রধান নেপথ্য কুশীলব হিসেবে প্রকাশ হয়ে পড়েছে জেনারেল জিয়াউর রহমানের ভূমিকা। এখন এটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, বেসামরিক মোশতাক গংকে পেছনে থেকে শক্তি ও সাহস দিয়ে এবং জুনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের সামনে রেখে পুরো ঘটনাটি পরিচালনা করেছিল জিয়াউর রহমান।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলার দ্বিতীয় মীর জাফর খন্দকার মোশতাকস্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট থেকে ৫ই নভেম্বর মাত্র ৮৩ দিনের মাথায় বেইমান মোশতাক অপসারিত হন। খুনি মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের জাতির সূর্য সন্তান বলে আক্ষ্যা দেন। তিনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান পরিবর্তন করে এর স্থলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান চালু করে। এসময়ে তিনি বাংলাদেশ বেতার এর নাম পরিবর্তন করে রেডিও পাকিস্তানের আদলে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ চালু করেন। খুনি মোশতাক জাতীয় বেঈমান হিসাবে সর্বজন নিন্দিত। ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর ৬ই নভেম্বর বিচারপতি আবু সাদাত মোঃ সায়েম রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি সংসদ ও মন্ত্রিপরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে সারাদেশে সামরিক আইন জারি করেন এবং নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিয়ে সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিয়োগ করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল তিনি সেনা প্রধান জিয়াউর রহমানের হাতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দিয়ে অবসরে যান। বিচারপতি সায়েম তার দায়িত্ব পালন কালিন সময়ে তার পূর্বসরি খুনি মোশতাকের পদাংক অনুসরণ করেন, খুনি জিয়াউর রহমানের পরামর্শে পুতুল রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের অন্যতম রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সবচেয়ে লাভবান দুই ব্যক্তি হচ্ছেন জিয়াউর রহমান ও এইচ.এম. এরশাদ।

বঙ্গবন্ধু হত্যার ১০ দিনের মাথায় সেনাবাহিনী প্রধান সফিউল্লাহকে সরিয়ে উপপ্রধান জিয়াউর রহমানকে সেনা প্রধান এবং একই সময়ে ভারতে প্রশিক্ষণরত এইচ.এম. এরশাদকে ব্রিগেডিয়ার থেকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে উপ সেনা প্রধান করা হয়। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের পছন্দের লোক বলেই পাকিস্তানপন্থী এরশাদ ভারতে প্রশিক্ষণরত থেকেই জিয়ার রানিংমেট হয়ে গেলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক ও রশিদ একাধিক সাক্ষাৎকারে জানায়, ১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ উপসেনা প্রধান জিয়াউর রহমান সংঙ্গে দেখা করে তাকে অভ্যুস্থানের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এসময় ফারুককে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় জিয়া। বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মাজেদের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, সেনা প্রধান জিয়ার তত্ত্বাবধানে খুনিদের নিরাপদে দেশত্যাগের জন্য দ্রুত কাগজপত্র তৈরীর ব্যবস্থা করা হলেছিল সে সময়। জিয়াউর রহমান ও খুনি মোশতাকের নির্দেশে জাতীয় চার নেতাকে জেল খানায় হত্যা করে এই খুনি চক্র। শুধু তাই নয়, এই খুনিদের সুরক্ষা দিতে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনি খোন্দকার মোশতাক। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে সংবিধান সংশোধন করে এই কালো অধ্যাদেশকে আইনে পরিনত করে খুনিদের বিচারের সব রাস্তা বন্ধ করে স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রের গভীরভাবে যুক্ত তাহের উদ্দিন ঠাকুর স্বীকারোক্তি মূলক জবান বন্দিতে বলেন, “১৯৭৫ সালের জানুয়ারীতে বঙ্গবন্ধু হত্যা কান্ডের প্রথম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ ও উপ সেনাপ্রধান মেজর জেনালে জিয়াউর রহমান। মোশতাক হত্যা পরিকল্পনার রাজনৈতিক দিক আর জিয়া সামরিক দিকটি দেখেন। খুনি মোশতাককে সার্বক্ষনিক এই কাজে সহযোগীতা করেন তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও মাহাবুব আলম চাষী। খুনি মাহাবুব আলম চাষী মোশতাকের প্রতিনিধি হিসাবে খুনি মোশতাক ও খুনি জিয়াউর রহমানের মধ্যে সার্বক্ষনিক যোগাযোগের সমন্বয় করতেন। বঙ্গবন্ধু হত্যায় মার্কিন পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কিসিঞ্জারের ব্লু প্রিন্ট মোতাবেক মাহাবুব আলম চাষীকে কাজে লাগান বাংলাদেশে সি.আই এর প্রধান হয়ে বদলি হয়ে আসা ফিলিপ চেরী। জেনারেল জিয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ১২ খুনিদের বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৯ মাস পর ১৯৭৬ এর ৮ই জুন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কুটনীতিক হিসেবে নিয়োগ দেন। বর্তমান বি.এন.পি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী লিবিয়ায় গিয়ে ঘাতকদের হাতে হাতে তাদের নিয়োগপত্র পৌছেদেন। নিয়োগ প্রাপ্ত খুনিরা হলো ডালিম, আজিজ পাশা, শাহরিয়ার, বজলুল হুদা, রাশেদ চৌধুরী, নুর চৌধুরী, শরিফুল হোসেন, কিসমত হোসেন, খায়রুজ্জামান, নাজমুল হোসেন, আব্দুল মাজেদ। খুনিদের প্রধান দুই সর্দ্দার কর্ণেল রশিদ ও কর্ণেল ফারুক জিয়ার দেওয়া চাকরি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। আত্ম স্বীকৃত খুনিদের উচ্চ পদে চাকুরী দিয়ে পুরস্কৃত করার মাধ্যমে জেনারেল জিয়া প্রমাণ করলেন হত্যাকারীদের সাথে তার পূর্ব থেকেই গভীর সম্পর্ক ছিল। এই সেই জিয়া যে, স্বাধীনতা বিরোধী গোলাম আজমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে এনে নাগরিকতা দিয়ে রাজনীতিতে পূর্নবাসন করেন। এই সেই জিয়া যে, নিজামী, সাইদীদের রাজনীতি করার সুযোগ দেন।

এই সেই জিয়া যিনি স্বাধীনতা বিরোধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী, মশিউর রহমানকে সিনিয়র মন্ত্রী এবং আব্দুল আলিম, মীর্জা গোলাম হাফিজ, শামসুল হুদা চৌধুরীদের লাইম লাইটে নিয়ে আসেন। এই সেই জিয়া যিনি রাজাকার সর্দ্দার শর্ষীনার পীরকে স্বাধীনতা পদক, সবুর খানকে সংসদ ভবনের সামনে কবরের যায়গা করে দেন। এই সেই জিয়া যিনি আইন করে বঙ্গবন্ধুর নাম নিষিদ্ধ করেন। প্রবাসি লেখিকা মিনা ফারাহ ‘হিটলার থেকে জিয়া’ গ্রন্থে ১৭৮ টি কারণ দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, “জিয়া ছিলেন মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশে স্বাধীনতা বিরোধী ‘আইএসআইএ’র এক বিশ্বস্ত খাদেম।” ১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হলে উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপ্রতি সাত্তার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ১৫ই নভেম্বর হতে ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। বিচারপতি সাত্তার তার দায়িত্ব পালনকালে জিয়াউর রহমানের মতোই বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের অন্যতম রক্ষক ছিলেন। শুধু জিয়া নয়, জিয়ার পূর্বসরী খুনি মোশতাক, বিচারপতি সায়েম উত্তর সূরী সাত্তার, এরশাদ, খালেদা জিয়া একই পথের পথিক। জিয়াসহ এই স্বৈরশাসকগণ বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধ রেখেছেন, খুনিদের রাষ্ট্রীয় উচ্চ পদে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসিত করেছেন, রাষ্ট্র চার মূলনীতিকে ক্ষত বিক্ষত করেছেন। স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে খলনায়ককে নায়ক বানাবার অপচেষ্টা করেছেন, স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা ভূলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এক কথায় স্বাধীনতার চাকাকে উল্টে দেয়ার জন্য মোশতাক, সায়েম, জিয়া, সাত্তার, এরশাদ, খালেদা যখন যা প্রয়োজন তাই করেছেন।

মোশতাক, সায়েম, জিয়া, সাত্তারের পর জাতির জনক হত্যার ৭ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ এরশাদ ক্ষমতায় এসে জিয়ার চেয়েও আরও একধাপ এগিয়ে চাকুরিচ্যুত বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শুধু চাকরি ফেরৎ দেননি, তাদের বকেয়া বেতন ভাতাও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পরিশোধের ব্যবস্থা করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রধান দুই খুনি সর্দ্দার রশিদ, ফারুক ও খুনি বজলুল হুদা সহ অন্যান্যদের দেশে ফিরিয়ে এনে ‘ফ্রিডম পার্টি’ নামক একটি রাজনৈতিক দল খুলিয়ে তাদেরকে বাংলার মাটিতে রাজনৈতিক ভাবে পূর্নবাসন করেন। জেনারেল এরশাদ ফ্রিডম পার্টিকে পৃষ্ঠ পোষকতা করে তাদের দিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হামলা করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে একাধিকবার হত্যা চেষ্টা করেন। সারাদেশে খুনি সর্দ্দার ফারুক-রশিদ বজলুল হককে দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে দমন পীড়ন চালান। ১৯৮৬ সালের ও ১৯৮৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ফ্রিডম পার্টি’ কে কুড়াল মার্কা নিয়ে ভোট করার সুযোগ করে দেন এরশাদ। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রধান হত্যাকারী বজলুল হুদাকে মেহেরপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে মহান জাতীয় সংসদকে কুলশিত কলংকময় অপবিত্র করেছিলেন জ্ঞানপাপী স্বৈরাচার এরশাদ। জেনালেল এরশাদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মূলহোতা কর্ণেল ফারুককে ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী হিসেবে ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতি পদে ভোট করা সুযোগ করে দেন।

জিয়া, সাত্তার, এরশাদের পর পর খালেদা জিয়া তিন টার্মে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত ১০ বছরের বেশী সময় দেশ শাসন করেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন খালেদা তার স্বামী খুনি জিয়াউর রহমান ও খুনি চক্রের পৃষ্ঠপোষক স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদের পদাংক অনুসরণ করে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পৃষ্টপোষকতা তোষণ নীতির ক্ষেত্রে তিনি তার স্বামী জেনারেল জিয়াকে হার মানিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রধান খুনি সর্দার কর্ণেল রশিদ কে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারীর ভোটার বিহীন ৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে ‘ফ্রিডম পার্টির’ ব্যানারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দেন। শুধু তাই নয়, খুনি রশিদকে গৃহপালিত বিরোধী দলীয় উপনেতা পর্যন্ত বানিয়ে ছিলেন। বেগম জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার স্বাভাবিক বিচার কার্য্য সুপ্রিম কোর্টের কার্য্য তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বিচার কার্য্য বিলম্বিত করে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ২০০১ সালে বি.এন.পি. ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার স্বাভাবিক কার্য্যক্রম বন্ধ করে দিলে খালেদা জিয়ার আইনমন্ত্রী জ্ঞানপাপী প্রয়াত মওদুদ আহমেদ দম্ভকরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “বি.এন.পি ক্ষমতায় এসেছে শেখ মুজিব হত্যার বিচার করার জন্য নয়।”

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে স্বজন সহ ও ৩রা নভেম্বর জেল খানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে খুনি মোশতাক, সায়েম, জিয়া, সাত্তার, এরশাদ, খালেদা, মওদুদেরা ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন। এখন সময় এসেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তার পরিবার বর্গ, আত্মিয় স্বজন, জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজ উদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান সাহেবের খুনিদের রক্ষক, আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা, জাতির পিতার হত্যার বিচার প্রলম্বিত, বিঘিœত ও বিলম্বকারী মোশতাক, সায়েম, জিয়া, সাত্তার, এরশাদ, খালেদা, মওদুদদের আইনের আওতায় এনে ১৫ই আগস্ট পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকান্ডের পূর্নাঙ্গ বিচার ও মুখোশ উন্মেচন করার।

লেখক : সাংগঠনিক সম্পাদক, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ।

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test