E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৫ আগস্ট বাঙালির অনন্ত কান্নার দিন!

২০২১ আগস্ট ১৫ ১৩:২৮:২৪
১৫ আগস্ট বাঙালির অনন্ত কান্নার দিন!

চৌধুরী আবদুল হান্নান


পরাধীনতার নাগপাশ থেকে যিনি আমাদের মুক্ত করলেন , তাঁকেই আমরা বাঁচাতে পারিনি, এ মর্ম বেদনা আমাদের অনন্তকাল বয়ে বেড়াতে হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের আজন্ম কান্নার দিন, হৃদয়ে রক্তক্ষরণের দিন। বাংলাদেশের জন্মকে যারা মেনে নিতে পারেনি, তারাই রাষ্ট্রের স্হপতিকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করলো, পাকিস্তানের আদলে দেশকে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো, ২১ বছর সেই দু:শাসনের বোঝা বাঙালির বুকে চেপে রইলো।

কবি নির্মলেন্দু গুণের সেই কবিতা অনন্তকাল বাঙালির হৃদয় ছুঁয়ে যাবে— “একুশ বছর তুমি কাঁদতে পারোনি।আজ কাঁদো।আজ প্রাণ ভরে কাঁদো, এসেছে কান্নার দিন।দীর্ঘ দুই দশকের জমানো শোকের ঋণ আজ শেষ করো অনন্ত ক্রন্দনে।”

দুশো বছরের ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর পাকিস্তানের শৃঙ্খলে আবার আটকা পড়লো বাঙালি, চললো শোষণ, বঞ্চনা, অবহেলা আর বাঙালি বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার ২৩ বছরের দিনলিপি। ওদের অনেকে রসিকতা করে, তামাশা করে বিদ্রুপ করতো—“, ওরা বাঙালি হয়েছে তো কি হয়েছে ? ওরা তো মুসলমান, আবার নামাজও পড়ে।”
বাঙালির সম্মান ফিরিয়ে দিয়ে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন বঙ্গবন্ধু।

নির্বাচনে সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচিত হয়েও ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় স্বাধীকার আদায়ের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।দূরদর্শি বঙ্গবন্ধু প্রস্তুত হয়েই ছিলেন , জাতিকেও তৈরি করে রেখেছিলেন।
‘ ৭১ এর ৭ মার্চ তিনি এমনভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিলেন , তাঁর বাঁশিতে এমন এক যাদুর সুর বাজালেন যে বহির্বিশ্বে তাঁকে বিচ্ছিন্নবাদী বলার সুযোগ খুঁজে পেলো না অথচ সকল বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়লো।রাজনীতির কবি পাঠ করলেন তাঁর অমর কবিতাখানি যাতে কেবল বাঙালির মুক্তির বার্তা নয়, বিশ্বের সকল নিপীড়িত মানুষের মুক্তির বার্তা রয়েছে তাঁর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণীতে। শেখ মুজিবের হাতে একটি জালিম রাষ্ট্র পাকিস্তান-বধ, সময় মাত্র ৯ মাস !

স্বাধীনতার মর্ম বুঝে ওঠার আগেই বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিলেন , পাকিস্তানিদের পদতলে নিষ্পেষণ থেকে বাঙালিদের মুক্ত করে আনলেন। জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে, এক নতুন মাত্রায় পৌছেছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত বাঙালিদেরও অকুন্ঠ সমর্থন লাভ করেন; মাহাত্মা গান্ধী কিংবা নেলসন ম্যান্ডেলাও গণমানুষের এমন নিরঙ্কুশ সমর্থন লাভ করেননি।

মাত্র ৫২ বছর বয়সে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি এবং জীবদ্দশায় কিংবদন্তী হয়ে উঠেন।
পদে পদে তাঁ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হয়েছে , অন্যায় অবিচার দেখলেই তিনি তিনি ছোটবেলা থেকেই বই পুস্তক তুলে রেখে প্রতিকারে নেমে পড়েছেন।তাঁর মেধা ব্যয় হয়েছে কেবলই অন্যায়-জুলুমের প্রতিকার, প্রতিবাদে।

বাঙলার মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কোনো তুলনা নেই , বাঙালিদের ভালোবাসার কারণেই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেয়ার পাকিস্তানের পরিকল্পনা সফল হয়নি।

পাকিস্তানের কারাগারে থাকার সময় তাঁর কবর খুড়ে রাখা হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন—“, তোমরা আমাকে ফাঁসি দাও আপত্তি নেই , তবে আমার অনুরোধ তোমরা আমার লাশটা আমার বাঙালির কাছে পাঠিয়ে দিও।”

আর একবার কেঁদেছিল বাঙালি, সেই ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী যেদিন তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তাঁর প্রাণপ্রিয় বাঙালিদের কাছে , সদ্য স্বাধীন দেশে ফিরে এসেছিলেন, সে কান্না ছিল আনন্দের, সকল বাঙালি কেঁদেছিল, বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে কেঁদেছিল , আনন্দের এতো কান্না কেউ দেখেনি কোনোদিন।
যিনি একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করলেন কিন্ত তাঁকে দেশটা গড়ার সময় দেয়া হয়নি। স্বাধীন দেশের এ স্হপতি সম্মৃদ্ধ ও উন্নত দেশেরও কান্ডারি হতে পারতেন, সন্দেহ নেই ।

দেশটিকে বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য সোনার বাংলা গড়ে তোলার মাধ্যমেই হবে জাতির পিতার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ, একদিন সোনার বাংলায় পরিনত হবে এ দেশ—এ প্রত্যাশা আমাদের ।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test