E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিড়ানির সময় এখনই

২০২১ নভেম্বর ৩০ ১৫:৩৯:১৪
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিড়ানির সময় এখনই

মানিক বৈরাগী


ভারতের কংগ্রেস সমগ্র ভারতে জুড়ে টানা ক্ষমতায় ছিল।জওহরলাল নেহেরু, গোলজারি লাল নন্দা,লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, থেকে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী তৎপরবর্তীকালে নরসিমা রাও সোনিয়া গান্ধীর তত্ত্বাবধানে ড. মনমোহন সিং। বৃটিশ থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর থেকে বিশাল একটি সময় ভারতকে শাসন করেছে জাতীয় কংগ্রেস।
সময়ের আবর্তে কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাকালীন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের আদর্শবাদী নেতারা বয়সের কারণে পর্যায়ক্রমে লোকান্তরিত হতে লাগলো। স্নায়ুযুদ্ধ কালের দুই বিশ্ব নব্বই দশকে সোভিয়েতের পতনের পর বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদী পুজিবাদী মার্কিন সাম্রাজ্যের ছত্রছায়ায় অলিখিত এক বিশ্ব। 

কালের আবর্তে কংগ্রেসের সেই আদর্শবাদী নেতারা কংগ্রেস থেকে ক্রমাগত শূন্যের কোটায় নেমে এলো। ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী কে হত্যা করা হলো। রাজীব গান্ধী হত্যার পর থেকে কংগ্রেসের বিভিন্ন প্রদেশের নেতা ও কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের ব্যাক্তিগত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক লোভে সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে ক্রমাগত আপোষ করতে লাগলো। নরসিমা রাও এর সময় বাবরি মসজিদে হামলা হলো, গুজরাট সহ সারা ভারত জুড়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হলো। কংগ্রেস ও তার প্রশাসন নিরব দর্শকের আসনে বসে থাকলো।

ভারতের স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে ভারতের দলিত ও মুসলিম সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র ভোট পেতো ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। সেই ভোট ব্যাংকে ধ্বসে পড়তে লাগলো ধীরে ধীরে। ভারতের বাবরি মসজিদ দখল -বেদখলের রাজনৈতিক খেলা শুরু হলো। ভারতে প্রথম বারের মতো

অটল বিহারি বাজপেয়ী, মধ্যখানে জনতা দল ও সমাজবাদী পার্টির জোট সরকার, এরপর আবার বাজপেয়ী, বাজপেয়ীর সময়ে গুজরাটে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদির তত্বাবধানে মুসলিমদের উপর নারকিয় সন্ত্রাস হলো। বিজেপির এসব সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে বিরুদ্ধে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক সংহিতা মোকাবিলায় কোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। বাজপেয়ীর পরবর্তী কংগ্রেসে ক্ষমতায় আসে, ড. মনমোহন সিং, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী হন।মনমোহন সিং এর সরকারও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।

ভারতের জাতীয় কংগ্রেস কে যেসব ভোটার যুগে যুগে একচ্ছত্র সমর্থন দিয়ে, ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসাত, তাদের বিশ্বাস ভরসা ভালোবাসা, পার্টির নেতাদের কাছ থেকে বঞ্চিত, লাঞ্চিত, প্রতারিত হতে থাকলো। বিশ্বাস ভরসা হারানোর মধ্যদিয়ে মুসলিম ও দলিত সম্প্রদায় কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হলো।

ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা তিন প্রদেশে বারে বারে একটানা তিরিশ বছর শাসন করেছে বাম ফ্রন্ট। পশ্চিম বঙ্গের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতার নেতা কমরেড মোজাফফর আহমদ এর যোগ্য নেতৃত্বে কমরেড জ্যোতি বসু পশ্চিম বঙ্গের রাজ্য সরকারের মুখ্য মন্ত্রী হলেন।তিনি একটানা তেইশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন এবং ভারতের দীর্ঘমেয়াদি মুখ্যমন্ত্রী। ব্যাক্তিগত ভাবে কমরেড জ্যোতি বসু খুবই ন্যায়পরায়ণ, আদর্শ, সততায় অটল হিমালয় ছিলেন।

দুর্নীতি এবং পার্টির আদর্শচ্যুত হওয়া যাকে স্পর্শ করতে পারেনি তিনি হলেন কমরেড জ্যোতি বসু। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে সৎ মহান ছিলেন বটে কিন্তু বামফ্রন্টের অপরাপর নেতারা ক্রমাগত সিপি আই এম কে ব্যবহার করতে করতে, আদর্শচ্যুত হতে হতে, ব্যক্তি স্বার্থে সাম্প্রদায়িক শক্তি,পুঁজির কাছে আত্মসমর্পণ করতে করতে দেউলিয়া হলো । এ-র ফলশ্রুতিতে বামফ্রন্ট পশ্চিম বঙ্গ নির্বাচনে ভূমিধসের মতো পরাজিত হলো। বর্তমানে তারা অনেক আসনে প্রার্থী দেবার লোক পায়না। অনেক কমরেড দলে দলে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছে। তো কমরেড জ্যোতি বসু নিজে একা সৎ ন্যায়নিষ্ঠ ছিলেন কিন্তু তাঁর কমরেডদের তিনি তার মতো করে ধরে রাখতে ব্যার্থ হয়েছিলেন। ঠিক একিভাবে ব্যার্থ হয়েছিলেন কমরেড বসুর উত্তরসূরী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও।

ভারতের স্বাধীনতার রাজনৈতিক দল হচ্ছে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও সি পি আই, সি পি আই এম। তারা দীর্ঘমেয়াদি নিখিল ভারত ও প্রদেশ শাসন করেছে কিন্তু তাদের রাজনৈতিক চেতনা, আদর্শকে সংরক্ষণ করতে পারেনি। বর্তমান ভারতের কংগ্রেস ও সি পি আই এম এর রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের কারণে মোদি ক্ষমতায়। অথচ এ রাজনৈতিক দল তিনটি ভারতের স্বাধীনতার পথিকৃৎ। উপর্যুক্ত বক্তব্য টা লিখলাম এ কারনে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথিকৃৎ রাজনৈতিক দল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্জনের রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামীলীগ গৌরবের, অহংকারের। একিভাবে এ দলটির নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জওহরলাল নেহেরুর কন্যা যেমন ভারতের কংগ্রেসের হাল ধরেছিলেন ঠিক একিভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া শেখ হাসিনা বর্তমান আওয়ামীলীগের হাল ধরে একুশ বছর পরে ক্ষমতায় আসেন। মধ্যখানে সাত বছর পর বর্তমানে একটানা দুইযুগের অধিক সময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী, কমরেড জ্যোতি বসু সততা,ন্যায়নিষ্ঠ, আদর্শের অটল হিমালয় ঠিক একিভাবে আওয়ামী লীগের সভাপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও সততার বিচারে অটল হিমালয়। কিন্তু আওয়ামীলীগের সভাপতির মতো অপরাপর রাজনৈতিক নেতারা কি সৎ ন্যায়নিষ্ঠ, অসাম্প্রদায়িক? যদি তাই হতো এ বছর দুর্গাপূজার সময় থেকে একটানা এক সপ্তাহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পর্যায়ক্রমে কি করে হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয়। এই সরকার ক্ষমতাসীন অবস্থায় হামলা হয়েছে কক্সবাজারের রামু বৌদ্ধবিহার ও পল্লীতে। হামলা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগর সহ দেশের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে। এখনো পর্যন্ত একটার বিচার সম্পন্ন হয়নি উপরন্তু আসামীরা হাইকোর্ট থেকে অগ্রীম জামিন নিয়ে মামলার বাদী, সাক্ষীদের উপর হুমকির উপরে রেখেছে। তাদের হুমকির কারণে এখন অনেক মামলায় প্রাণের ভয়ে সাক্ষী দিতে নারাজ।

প্রশ্ন হচ্ছে এসব সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস মোকাবিলায় অসাম্প্রদায়িক আওয়ামীলীগ নেতারা কি যথাযথ ভূমিকা রাখতে পেরেছেন?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রশাসন কি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস মোকাবিলায় যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে? না তারা সন্ত্রাস পরবর্তী তথাকথিত ডিউটি ও বিবৃতি, শান্তনার বাণী শুনিয়েছে? যদি তাই হয় এই অসাম্প্রদায়িক আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থেকে লাভ কি?

আমরা অহংকার করে বলি সবাইকে কেনা যায় কিন্তু শেখ হাসিনা কে কেনা যায় না।এখন প্রশ্ন হচ্ছে সবাই যদি বিক্রি হয়ে যায় আপনি একা এই পাপের বোঝা কেন বহন করবেন? এই লোভী স্বার্থান্ধ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস মোকাবিলায় ব্যর্থ নেতাদের দায়ভার আপনিইবা কেন একা বহন করবেন?

দুই

সারাদেশে পর্যায় ক্রমে স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচন বিভিন্ন পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচন একদা অরাজনৈতিক ভাবে অনুষ্ঠিত হতো। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশগ্রহণ করতেন। অনেক অরাজনৈতিক দলনিরপেক্ষ সামাজিক নেতারা ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেখেছি।

আপনার সরকার এবারে ক্ষমতায় আসার ও আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনও রাজনৈতিক দল কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান করার। গণতন্ত্র কে প্রাতিষ্ঠানিক করার জন্য অসাধারণ সুন্দর চিন্তা ও পদক্ষেপ।

যেই চিন্তা সেই কাজ বাস্তবায়ন করতে যেয়ে নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ভুমিকা মোটেও সন্তোষজনক নয়।

আপনার প্রাণপ্রিয় রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও তার কর্মকর্তাদের ভূমিকা খুবই নিন্দনীয়। যার কারণে আপনি আপনার দক্ষিণের অনেক জেলায় নৌকা মার্কা বাতিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। উদাহরণ হিসেবে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কা ভোট পেয়েছে শুধুমাত্র ৯৯ ভোট। তাহলে এমন হলো কেন? কেন আপনার মনোনয়ন বোর্ড যাচাই-বাছাই না করে এমন প্রার্থী কে মনোনয়ন দিলো।
কথা হলো মনোয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান কিন্তু আপনি, মনোনয়ন পত্রে স্বাক্ষর কিন্তু আপনার । প্রশ্ন হচ্ছে এসব অযোগ্য লোক আপনার স্বাক্ষরিত মনোনয়ন পত্রে কি করে মনোনয়ন পায়? কিন্তু কথা হলো সব প্রার্থী কে তো আপনার যাচাই-বাছাই করার সময় কই,আপনার বোর্ডের আপনার খুবই বিশ্বস্ত, দলের নির্ভরযোগ্য, দক্ষ,অভিজ্ঞ নেতারাই তো এসব নির্ধারণ করছেন। অলিখিত সত্য যে মনোনয়ন পত্রে আপনার একসাথে অনেক গুলো পত্রে দিয়ে রাখেন।

আপনার সেই অমূল্য মর্যাদাবান স্বাক্ষরের মর্যাদা কি তারা দিচ্ছেন। এমনও দেখা যাচ্ছে ধর্ষণ মামলার আসামি জেলে থাকা অবস্থায় আপনার স্বাক্ষরিত মনোনয়ন পত্রে মনোনয়ন পাচ্ছে, মনোনয়ন পাচ্ছে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সাথে জড়িত, অভিযুক্ত লোকও বাদ যাচ্ছে না। বাদ যাচ্ছেনা যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সন্তানেরা। ফলে কলঙ্কিত হচ্ছে আপনার স্বাক্ষর, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামীলীগ ও তার মার্কা নৌকা। কিন্তু এসবের দায়ভার বহন করতে হচ্ছে আপনাকে আর আমাদের মতো তৃণমূলের নির্যাতিত কলম সৈনিকদের। তো কথা হচ্ছে আপনার পিতা- মাতা ভাই ও স্বজন হারানো আওয়ামিলীগ, পিতা হারানো বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে যেয়ে আপনার উপরও আক্রমণ কম হয়নি। মহান আল্লাহ আপনাকে এই দেশের মঙ্গলের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন, আমিন।কিন্তু আপনার প্রিয় রাজনৈতিক দলটির নেতারা আপনার এই ত্যাগের গুরুত্ব একবারও কি ভেবে দেখেছেন? সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আল্লাহর ওয়াস্তে এই দেশের স্বার্থে, অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগের স্বার্থে নিড়ানির এখনই সময়।

লেখক : কবি ও রাজনৈতিক কর্মী।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test