E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শহর নীলফামারী

২০২২ মে ১৮ ১৫:৫০:৫৪
শহর নীলফামারী

ওয়াজেদুর রহমান কনক


ভোরের আলো ফুটে ওঠার সাথে সাথে জেগে ওঠে একটি জনপদ, ব্যস্ততা বেড়ে যায় মানুষের । এমন শান্ত-স্নিগ্ধ একটি জনপদ একদিনে এমনি এমনিই গড়ে ওঠে না, ওঠেওনি কখন । নীলফামারীকে এখন একটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ স্থান হিসেবে যারা বিবেচনা করছেন, এমন শান্তিপূর্ণ ধারা সব সময় ছিল না । গত দুই দশকে নীলফামারীর এমন শান্তিপূর্ণ ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে, কিন্তু এর আগে এই জনপদটিও ছিল দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লুটতরাজ, হুমকী-ধামকীর এক অভয়ারণ্য । একটি জনপদকে শান্তিপূর্ণ ধারায় চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতার ভূমিকা অপরিসীম । কোন দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, যদি নির্মোহ বিচারের প্রশ্ন আসে, নীলফামারীতে এই শান্তিপূর্ণ ধারার সূচনা করেছেন নীলফামারী-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর । তিনি যদি দুই দশক আগে এই অঞ্চলের রাজনীতিতে না আসতেন, তবে নীলফামারী ডুবে থাকতো এক ঘোর অন্ধকারে । এই অন্ধকারের মধ্যে আশার প্রদীপ তিনিই জ্বালিয়েছেন । 

এক সময়ের সন্ত্রাস কবলিত জনপদ এই নীলফামারী । দুই দশক আগের পটভুমিতে সে সময়কার নেতাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নীলফামারীকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে, একটি শান্তি, স্থিতিশীল অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরকে ছোট একটু ধন্যবাদ দেওয়ার জন্যই লিখছি । তিনি নীলফামারীর মানুষকে এমন একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ উপহার দিয়েছেন ।

‘এ আর এমন কি !’ কেউ যদি এভাবে বিবেচনা করে, তবে তাকে নীলফামারীর পূর্বের রাজনৈতিক ঘটনাচক্রকে একটু স্মরণ করতে বলব । কেমন ছিল সে সময়কার রাজনীতি ? প্রতি নিয়ত সংঘাত-সংঘর্ষ লেগেই ছিল । ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপ, হকিস্টিক, রাম-দা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা - এখানকার মানুষদের এসব কিছু কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না । এই শান্তিপূর্ণ ধারার বিপরীতে ঘাপটি মেরে বসে আছে সে সময়কার সন্ত্রাসের হোতারা এবং তাদের রাজনীতির উত্তরাধীকারেরা । সুযোগ পেলেই এই অশুভ শক্তি নীলফামারীর মানুষের এতোদিনের সব অর্জন ধুলোয় লুটিয়ে দেবে । নীলফামারীতে আসাদুজ্জামান নূরের রাজনীতিকে যারা সমর্থন করেন তাদের দ্বায়িত্বটা একটু বেশি । দুই দশক আগে নীলফামারীতে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজীর অবসান ঘটিয়ে যে নতুন আশার আলো আসাদুজ্জামান নূর উপহার দিয়েছেন, এই আলো জ্বালিয়ে রাখার দ্বায়িত্ব সবার ।

কিভাবে জ্বালিয়ে রাখতে হবে । যে সব সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ নেতৃত্বকে দমন করে নীলফামারীতে আসাদুজ্জামান নূরের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই অশুভ শক্তি যাতে আবার কোন ভাবেই আগের অবস্থা সৃষ্টি করতে না পারে, এজন্য মানুষকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে । এটি কারো একার সমস্যা নয়, এই সমস্যা সমগ্র নীলফামারীর মানুষের ।
একটা বিরুপ রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই যেতে হয়েছে এই অঞ্চলের মানুষদের। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরুপ ছিল নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিভিন্ন ঘটনা চক্রে বিরুপ রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই । এটি রাজনীতির একটা জটিল সমীকরণ । নীলফামারীতে আসাদুজ্জামান নূর সকলের ভরসার কেন্দ্রস্থল । দুই দশক আগে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ফলে বিরুপ যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে এই অঞ্চলের মানুষদের সেই পরিস্থিতির সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। নীলফামারীতে আসাদুজ্জামান নূরের রাজনীতিকে মনে-প্রাণে সমর্থন ও গ্রহণ করার কারণ তিনি জনজীবন থেকে বিরুপ রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবসান করেছেন ।

ভয়, সন্দেহ, আশঙ্কা শুধু একটা জায়গাতে কোন কারণে তাঁর অবস্থান দুর্বল হয়ে গেলে পূর্বের যে বিরুপ রাজনীতি তা আবারো যে মাথাচারা দিয়ে উঠে এতো দিনের সব অর্জনকে ধূলিস্মাৎ করে না দেয় , এই নিশ্চয়তাতো কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না । কেননা, এখন যারা তাকে বেস্টন করে আছে, রাতারাতি ভোল পাল্টিয়ে তাদের পেছনে গিয়ে দাঁড়াতে কোন সংকোচ তারা করবে না । তাঁকে বেস্টন করে রাখা ব্যাক্তিরাই নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের তাঁর কাছে যেতে দেয় না । আমি, তুমি ও সে জাতীয় একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে রেখেছে ।

শত সহস্র বছর বেঁচে থাকুন প্রিয় আসাদুজ্জামান নূর, অনেক অনেক ভালবাসা আপনার জন্য । আপনার হাত ধরেই উন্নয়নের শিখরে পৌঁছাবে অবহেলিত এই জনপদ । নিরন্তন ভালবাসা আপনার জন্য।

আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগের কথা প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সিলেটে শাবিপ্রবির একটি হলের নামকরণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে প্রতিবাদ জানাতে অনশন করেছিলেন। যতদূর মনে পড়ে দিনটি ছিল ২৬ মার্চ। সে সময় পত্র-পত্রিকা গুলো ফলাও করে সেই অনশনের খবর প্রকাশ করেছিল। তিনজন মানুষের কাছে নীলফামারীর মানুষকে চিরকৃতজ্ঞ থাকতে হবে, তাদের একজন হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দ্বিতীয়জন হলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ আর তৃতীয়জন হলেন আসাদুজ্জামান নূর। প্রথম দুই জনের কাছে কৃতজ্ঞতা এজন্য যে তারা এই দেশের মানুষকে একজন আসাদুজ্জামান নূরকে উপহার দিয়েছিলেন।

শাবিপ্রবির হলের নামকরণ নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ 'শহর সিলেট' নামে একটি কলাম লিখেছিলেন, এই কলামেই তিনি কেন অনশনে যাচ্ছেন, সিলেট নিয়ে তাঁর আবেগ অনুভূতি সব কিছুই তিনি লিখেছেন ওই কলামে, দৈনিক প্রথম আলোর প্রথম পাতায় লেখাটি ছাপা হয়েছিল। তাঁর এই অনশন কর্মসূচির প্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান নূর আর একটি কলাম লিখেছিলেন। তাঁর এই কলামের বিষয়বস্তু ছিল হুমায়ূন আহমেদ যে অনশন করলেন, তিনি জেনেও হোক আর না জেনেও হোক একটা পক্ষের তিনি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তিনি যে স্বাধীনতা বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর স্পষ্ট করে সেই কথাই বলেছিলেন। অনলাইনে অনেক ঘেঠেও সেসময়র কোন লেখা খুঁজে পেলাম না। সিলেটে হুমায়ূন আহমেদের অনশনের কথা সচেতন মহলের ভুলে যাওয়ার কথা নয়।

নীলফামারী সদর আসনটি হলো দেশ বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের, ২০০১ সাল থেকে তিনি এই আসনের সংসদ সদস্য। নীলফামারীর সব কিছুই এখন আবর্তিত হচ্ছে তাঁকে কেন্দ্র করে। ২০১৩ সালে ১৪ ডিসেম্বর এক নারকীয় হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়, এই হত্যাকান্ড যে স্বাধীনতাবিরোধীদের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছিল এই অভিযোগ কিন্তু সেসময় সব মহল থেকেই করা হয়েছিল।

প্রশ্ন থেকে যায় স্বাধীনতাবিরোধীদের সেই তৎপরতা কি শেষ হয়ে গেছে, প্রশ্ন থেকে যায় মৌলবাদ সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন কি থেমে গেছে, মুরাদ-ফরহাত-খোরশেদ-লেবুর রক্তস্নাত নীলফামারীতে কি জামায়াত-শিবির নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে?

লেখক : গণমাধ্যম কর্মী।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test