E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগরতলাবাসীর প্রগাঢ় শ্রদ্ধার্ঘ ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মারকগ্রন্থ’

২০২২ জুলাই ২৫ ১৫:২৪:৩৬
আগরতলাবাসীর প্রগাঢ় শ্রদ্ধার্ঘ ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মারকগ্রন্থ’

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু


স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা বাংলাদেশীরা হয়তো যা করে দেখাতে পারিনি, ভারত বাংলাদেশ মৈত্রীকে আরও সুদৃঢ় করতে 'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ'কে নিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার সংস্কৃতিজন খ্যাত, আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু, পরম আত্মীয় ও সুহৃদেরা সাম্প্রতিকালে দুটি অসাধারণ শৈল্পিক কর্মযজ্ঞ করে অনুকরণীয় এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যার একটি কর্মযজ্ঞ ২০১৯ সালে সম্পন্ন হয়, আর বাকী কাজটি আগামি ২৯ জুলাই ২০২২ শুক্রবার ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে বাংলাদেশ ও ভারতের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে  সাড়ম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

ড. দেবব্রত দেবরায় এখন আর একটি নাম নয়, এটি এখন বাংলাদেশ, ভারতের আগরতলা ও কলকাতাসহ বাংলা ভাষাভাষি সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই একটি পরম শ্রদ্ধার নাম, বলা যেতে পারে, তিনি এখন রীতিমত একটি প্রতিষ্ঠান। অসংখ্য গ্রন্থের প্রণেতা, গবেষক বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী, অনলবর্ষী সুবক্তা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. দেবব্রত দেবরায় বর্তমানে আগরতলার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও, তিনি এখন তিন বাংলার (বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা) সংস্কৃতি অনুরাগী মানুষের কাছেই শ্রদ্ধার একজন পাত্র, বহুল সুপরিচিত একটি নাম।

বাংলাদেশ ও ভারতের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ও মৈত্রীকে আরও সুদৃঢ় করতে দুইদেশে যাঁরা সংস্কৃতি অঙ্গনে নি:স্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, ড. দেবব্রত দেবরায় তাঁদের মধ্যে নি:সন্দেহে অন্যতম। ভারতের নাগরিক হওয়া স্বত্বেও এই নির্লোভ, নিরহংকারী মানুষটি আমাদের বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যেভাবে লেখালেখি, গবেষণা ও একের পর এক কর্মযজ্ঞ করে চলেছেন, তা আমরা বাংলাদেশীরা কতটা করতে পেরেছি, সেটি আমার জানা নেই। তবে তিনি তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রেমিদের কাছে আজীবন 'অমর' হয়ে থাকবেন।

এই ড. দেবব্রত দেবরায় আগরতলায় থাকা তাঁর অনুসারী একটি বিশাল সাংস্কৃতিক দলের সহযোগিতায় আমাদের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যে দুটি বিশাল 'মহাযজ্ঞ' করেছেন তার একটি ২০১৯ সালে ঢাকায় সুসম্পন্ন হয়। সেই বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তিনি প্রথম সম্পাদনা করেন প্রায় ৪০০ পৃষ্টার বিশাল আকৃতির গবেষণাধর্মী গ্রন্থ 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জন্মশতবার্ষিকী আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থ'। ঢাকায় ঘটা করে দুই দেশের বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে যে গ্রন্থের সেবছর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

এর রেশ কাটতে না কাটতেই মাত্র তিন বছর পর আবারও এ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ড. দেবব্রত দেবরায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে আরেকটি বিশাল বই 'মুক্তিযুদ্ধ স্মারকগ্রন্থ' রচনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এবার মুক্তিযুদ্ধ স্মারকগ্রন্থের প্রধান সম্পাদক করা হয়, তাঁরই অনুসারী ও সুহৃদ আগরতলার বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ড. মুজাহিদ রহমানকে। ইতিমধ্যে প্রায় চারশ পৃষ্টার ওই বিশাল স্মারকগ্রন্থটির কাজও সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন শুধু মোড়ক উন্মোচনের অপেক্ষায়।

২০১৯ সালের মতো এটিরও আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকাতেই শিল্পকলা একাডেমিতে আগামি ২৯ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৪টায় মোড়ক উন্মোচন করা হবে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধান অতিথি হিসেবে এই মুক্তিযুদ্ধ স্মারকগ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করবেন। অনুষ্ঠানে দুই দেশের বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত থাকবেন।

সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো, ড. দেবব্রত দেবরায়ের নেতৃত্বে আগরতলায় থাকা তাঁর অনুসারীরা নিজেদের পকেট থেকে চাঁদা দিয়ে প্রায় ৬ লক্ষ ভারতীয় রূপী খরচ করে এই দুটি আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থ বের করেন। যেখানে বাংলাদেশ কিংবা ভারত সরকারের কাছ থেকে কোন ধরণের আর্থিক সহযোগিতা তাঁরা নেননি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি কতটা প্রগাঢ় ভালোবাসা আর নিবিড় শ্রদ্ধা থাকলে এমন একটি শিল্পকর্ম নিজেদের পকেটের টাকায় সম্পন্ন করা যায়, সেটি ড. দেবব্রত ও তাঁর অনুসারীরাই বোধয় করে দেখিয়ে দিয়ে এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ রেখে গেলেন। এটি আমাদের বাংলাদেশীদের জন্য একটি অনুকরণীয়, অনুস্মরণীয় শিক্ষা হয়ে থাকলো।

এ উপলক্ষে ড. দেবব্রত দেবরায়ের নেতৃত্বে আগামি ২৬ জুলাই আগরতলা ও কলকাতা থেকে লেখক, গবেষক, কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতশিল্পী, আবৃত্তিশিল্পীসহ ৪৫ জনের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছেন। এঁরা ২৬ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ৫দিন ঢাকায় মোট ১১-টি সাংস্কৃতিক বিষয়ক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দুই দেশের মৈত্রী ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনটাকে আরো সদৃঢ় করে তোলার প্রয়াস নেবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ভারতের এই সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশেও এ দেশের শুদ্ধতার কবি অসীম সাহাকে সভাপতি করে একটি জাতীয় কমিটি ইতিমধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এ কমিটির সমন্য়কের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশের কবি ও লেখক মো. খোরশেদ আলম বিপ্লব। তাঁকে ঢাকার এক ঝাঁক সংস্কৃতকর্মী গত দুমাস ধরে নিরলসভাবে সার্বিক সহযোগিতা করছেন। খোরশেদ আলম বিপ্লব জানিয়েছেন, আমাদের জাতির পিতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ভারতের আগরতলার সুহৃদ বন্ধুদের এমন বিরল উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে তাঁদের দুটি এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষিদের জন্যই এক অনুকরণীয় কর্মযজ্ঞ। আগামি ২৬ জুলাই তাঁরা ঢাকা আসলেও মুক্তিযুদ্ধ স্মারকগ্রন্থ'র প্রকাশনা উৎসবটি হবে ২৯ জুলাই ঢাকার শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। আমরা ইতিমধ্যে তাঁদেরকে স্বাগত জানাতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আশা করছি, ঢাকায় এবার পাঁচদিন ব্যাপী নান্দনিক আয়োজনে নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মৈত্রী ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনটা আরও সুদৃঢ় হবে।'

ভারতীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. দেবব্রত দেবরায় বলেন,'বঙ্গবন্ধু এখন আর কেবল বাংলাদেশের মহান নেতাই নন। তিনি এখন বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু তথা বিশ্বনেতা। তাঁর আদর্শের অন্যতম স্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও শোষনমুক্ত একটা দেশগঠন গোটা বিশ্বকে আলোড়িত করেছে। তাই এমন একজন বিশ্বনেতাকে নিয়ে 'বঙ্গবন্ধু স্মারকগ্রন্থ' এবং তাঁর নেতৃত্বে সংগঠিত বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ স্মারকগ্রন্থ' নামের দুটি আন্তর্জাতিক মানের বিশাল বই সবাইকে উপহার দিতে পেরে আমরা আগরতলাবাসি নিজেরাই ধন্য হয়েছি। কারণ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে আগরতলার রয়েছে একটি নিবিড় সম্পর্ক। আমাদের একই ভাষা, একই কৃষ্টি ও একই ঐতিহ্যকে ধরে রেখে আমরা সেই সুমধুর সম্পর্কটাকে আরও শক্ত ও মজবুত করতে চাই।
সেজন্য চাই সকলের আন্তরিক সহযোগিতা।

এদিকে ভারত বাংলাদেশে মৈত্রীকে আরও সুদৃঢ় করার প্রয়াসে বের হওয়া আন্তর্জাতিক মানের দুটি বই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মারকগ্রন্থকে নিয়ে সোমবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল নবীনগরের কথার নিয়মিত ভার্চুয়াল আয়োজনে একটি প্রাণবন্ত লাইভ টকশোর (পর্ব-১৬১) আয়োজন করা হয়। দৈনিক বাংলা ৭১ এর বিশেষ প্রতিনিধি ও নবীনগরের কথার সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় 'আন্তর্জাতিক মুক্তিযুদ্ধ স্মারকগ্রন্থ ও এর তাৎপর্য ' শিরোনামের ওই লাইভ টকশোতে সরাসরি অংশ নেন ভারতের আগরতলা থেকে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. দেবব্রত দেবরায়, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. মুজাহিদ রহমান, ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু শতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী প্রকাশনা পর্ষদের সমন্বয়ক মো. খোরশেদ আলম বিপ্লব, কলকাতা থেকে বিশিষ্ট লেখক ও বাচিক শিল্পী মৌ পাঠক সিংহ ও ঢাকা থেকে বিশিষ্ট কবি ও বাচিক শিল্পী এডভোকেট শিমুল পারভীন।
প্রায় দেড়ঘন্টা ধরে চলা এই লাইভ আড্ডায় সকল আলোচকেরাই বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বর্তমানে সামগ্রিক বিশ্ব পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোকে একটি উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

লেখক :বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা ৭১।

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test