E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধর্মব্যবসায়ী লতিফ সিদ্দিকী জাতে মাতাল তালে ঠিক !

২০১৪ অক্টোবর ০৬ ১১:৩০:৩০
ধর্মব্যবসায়ী লতিফ সিদ্দিকী জাতে মাতাল তালে ঠিক !

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : মন্ত্রনালয়ে সর্বজনস্বীকৃত বদমেজাজী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে যারা নাস্তিক-মুরতাদ-ধর্মদ্রোহী আখ্যা দিয়েই খালাস, তারা কী আদৌ ভেবে দেখেছেন তিনি কত বড় মাপের ধর্মব্যবসায়ী ? সালমান রুশদী দাউদ হায়দার বা তসলিমা নাসরিনের পদাংক অনুসরণ করার মতো যোগ্যতা টাঙ্গাইলের এই মানুষটির কোনদিনই ছিলো না এবং হবেও না এটা হলফ করেই বলে দেয়া যায়। কারণ হজের মৌসুমে এর মৌলিক ভিত্তিকে ‘লোকদেখানো’ চ্যালেঞ্জ করে লতিফ সিদ্দিকী মূলতঃ মহাদুর্নীতির অভিযোগে নিশ্চিত কারাভোগ থেকে বিশেষ জামিন নিয়েছেন স্বপ্রণোদিত হয়ে।

মহাজোট সরকারের সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুকুরচুরী করে কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়া লতিফ সিদ্দিকী ও তার পরিবারের মাথায় ইদানিং যখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তদন্তটিম ও দুদকের কালোমেঘ ঘনীভূত হয়ে আসছিল, ঠিক তখনই কানাডার আকাশ থেকে একপশলা বৃষ্টির প্রশান্তি পেতে বেছে নেন ধর্মকে। নিউইয়র্কে প্রবাসীদের অনুষ্ঠানে ঠান্ডা মাথায় সাজিয়ে গুছিয়ে তিনি যেভাবে ধর্মের বিষোদগার করেছেন, তা যে শতভাগ পূর্বপরিকল্পিত এটা নিশ্চিত করেছেন যারা ঐদিন স্থানীয় ফার্মেসি থেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঔষধ লতিফ সিদ্দিকীকে কিনে দিয়েছিলেন।

মন্ত্রী হিসেবে কয়েকশ’ কোটি টাকা লুটপাট ছিলো যেমন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার যথার্থ ‘বিজনেস’, ঠিক তেমনি এই কালো টাকার হেফাজত সুনিশ্চিত করতে অত্যন্ত বুদ্ধিমান লতিফ সিদ্দিকীকে আশ্রয় নিতে হয় ধর্মকে পুঁজি করার মতো আরেক সস্তা বিজনেসের। ধর্মব্যবসা যতোটা না ঝুঁকিপূর্ণ তার চাইতে এটা যে অনেক বেশি ফলদায়ক প্রয়োজনের সময় নিজেকে বিশেষ ধরণের ঝুঁকিমুক্ত করতে, তা নিখুঁতভাবে জানা ছিলো লতিফ সিদ্দিকীর মতো ঝানু পলিটিশিয়ানের।

ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার নামে ধর্মকে নিয়ে যেভাবে সফল বিজনেসনটি সেরে ফেললেন তিনি মার্কিন মুল্লুকে, তাতে এযাত্রায় চাঁদে কাউকে দেখা না গেলেও বাংলাদেশের বাঙ্গালদের হাইকোর্ট কিন্তু চমৎকারভাবে দেখিয়ে দিলেন লতিফ সিদ্দিকী। ধর্মকে পুঁজি করার বিজনেসে কামিয়াব হয়ে যিনি বাঙ্গালকে এতো বড় ধোঁকা দিতে পারলেন, তিনি পাগল হতে যাবেন কেন ? দুর্ভাগ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের, লতিফ সিদ্দিকীকে পাগলের বংশধর বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিদ্দিকী পরিবারের পূর্বপূরুষরা পাগল ছিলেন কি ছিলেন না, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নিকট হয়তো বিশেষ কোন তথ্য থাকলেও থাকতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে না হয় ধরেই নিলাম লতিফ সিদ্দিকী পাগলের বংশধর, কিন্তু “জাতে মাতাল তালে ঠিক” কথাটি কিন্তু দু’হাজার ১৪ সালে লতিফ সিদ্দিকীর বেলাতেই সবচাইতে বেশি প্রযোজ্য। বংশ পাগল হোক বা নাই হোক, তিনি যে ‘তালে ঠিকঠাক’ তার প্রমাণ মোবাইল ফোনে বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকার এবং দোসরা অক্টোবর নিউইয়র্ক-ঢাকা রি-কনফার্মড এয়ার টিকিট বাতিল করে নর্থ আমেরিকায় থেকে যাবার সিদ্ধান্ত। নিউইয়র্ক থেকে ফেরার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান লতিফ সিদ্দিকী ইস্যুতে সরকার বেকায়দায় পড়েছি কি-না ? প্রধানমন্ত্রীর সাফ জবাব, “সরকার নয়, লতিফ সিদ্দিকী বেকায়দায় পড়েছেন”।

অপ্রিয় হলেও চরম সত্য এটাই যে, পূর্বপরিকল্পনামাফিক স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করে লতিফ সিদ্দিকী মূলতঃ বেকায়দায় পড়া থেকে জানে বেঁচে গেলেন। প্রধানমন্ত্রী খুব ভালো করেই জানেন, তাঁর কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্তকমিটির অনুসন্ধানেই অর্ধশতাধিক প্রমাণসহ অতি সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে লতিফ সিদ্দিকীর কয়েকশ’ কোটি টাকার মহাদুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই প্রস্তুত নন দুর্নীতির এই মহারাজাকে ‘প্রটেকশন’ দিতে। যদি তাই হবে সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই আজ অনিচ্ছা সত্বেও অনুধাবন করতে হবে, লতিফ সিদ্দিকী পাগলের বংশধর হলেও নিজে পাগল নন এবং বাংলাদেশে থাকলে সহসাই তিনি বেকায়দায় পড়তেন।

সেন্টিমেন্টে আঘাত দেয়ার নামে ধর্মীয় বিজনেসে সফলকাম লতিফ সিদ্দিকীর সহধর্মিনীই বা এখন কোন দুঃখে চাইবেন তার স্বামী দেশে ফিরে কাশিমপুরে সাকা চৌধুরিদের সাথে এক ছাদের নিচে বসবাস করুক। কানাডা প্রবাসী মেয়ে যদি বাবার এই প্রয়োজনের সময় আজ কিছু নাই করতে পারেন তবে বাবার কেমন মেয়ে তিনি ? উত্তর সহজ হলেও এটিও এক কঠিন প্রশ্ন আজ। সবমিলিয়ে জীবনের বাকিটা সময় কানাডায় সুখে-শান্তিতে কাটাতে সিদ্দিকী পরিবারের প্রস্তুতি মন্দ নয়, ঈদের ছুটিতে কান পাতলে এমনটাই শোনা যায় নিউইয়র্ক-ডালাস-টরন্টোতে।

(ওএস/অ/অক্টোবর ০৬, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test