E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চকরিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও আমার কৈফিয়ত

২০২২ সেপ্টেম্বর ০৬ ১৮:১৮:০৭
চকরিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও আমার কৈফিয়ত

মানিক বৈরাগী


আমি সাইফ উদ্দিন আহমেদ মানিক লেখক নাম মানিক বৈরাগী সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা শাখা। সাবেক সিনিয়র সদস্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কক্সবাজার জেলা শাখা। বিগত জামাত-বিএনপি জোট সরকারের সময়ে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমার কারণে ফেরারি দিলাম, ফেরারি থাকে অবস্থায় জন্মদাতা পিতা কে হারিয়েছি,পুলিশের রিমান্ডে মেরুদণ্ড ভেঙেছে, জেলে থাকা অবস্থায় মা'কে হারিয়েছি। আমার বাড়িঘর লুটপাট করা হয়েছে, পুরুষ শূন্য বাড়িতে নারী শিশুকে হামলা করা হয়েছে। আমার থাকার ঘর ভেঙে দিয়েছে, পুড়িয়ে দিয়েছে আমার ব্যাক্তিগত লাইব্রেরি।

জেল থেকে বের হয়ে দেখি আমি সবই শূণ্য পৃথিবী। নিজের জীবন যুদ্ধ চালাতে যেয়ে আর মাঠপর্যায়ের রাজনীতি করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। নিজের দেহের উপর পুলিশি অত্যাচারের ভয়াবহতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে পেতে বর্তমানে প্রতিবন্ধী বেকার জীবন পার করছি। তবুও রাজনৈতিক চেতনা বিচ্যুত হয়নি। যুবদল, জিয়া পরিষদের ক্যাডারেরা যখন তাদের সময়ে আমার থাকার ঘর ভেঙে দিয়েছিল।জেল থেকে বের হয়ে যখন দেখি আমার থাকার ঘর কই,ভাইদের সংসারে ক'দিন বোঝা হয়ে থাকা যায়।আমার এমন কোন আর্থিক সঙ্গতি ছিলো না শূন্য ভিটায় একটা দু'চালা ঘর করে থাকবো। কোন উপয়ান্তর না দেখে কক্সবাজারে চলে আসি, ভাড়া বাসায় থাকি। বলতে গেলে চকরিয়ার মাঠপর্যায়ের রাজনীতি থেকে মোটামুটি বিচ্ছিন্ন।

এখন যারা আওয়ামীলীগ, যুবলীগে নেতৃত্ব দিচ্ছে সিংহভাগই তো আমার কেউ অগ্রজ বন্ধু,অনেকেই বন্ধু,আর নিজ হাতে গড়া কর্মী। রাজনৈতিক পদ- পদবীর জন্য কেন ঘেষাগেষি করতে যাবো বলেন? রাজনীতি করতে চাইলে অনেক ভাবে করা যায়।শুধু আওয়ামীলীগের পদপদবী নিয়েই রাজনীতি করতে হবে এমন কোন কথা নাই। একটু উদাহরণ দিয়ে বলি

আমার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের সিকলঘাটা গ্রামে। বর্তমানে লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম সাধারণ সম্পাদক খ ম আওরঙ্গজেব বুলেট।বুলেট তো বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান। দুজনেই আমার হাতেগড়া কর্মী ও আত্মীয়। এতোদিন পরে যখন আমি চকরিয়া রাজনীতি করতে গেলে আবার অ আ ই ঈ পড়ে শুরু করতে হবে। তখন আমার এ-ই অনুজ কর্মীরা আমাকে যে সম্মান শ্রদ্ধা বর্তমানে করে তখন তারা কি আর আমাকে সেই সম্মান করবে? আপনারাই বলুন।

আত্মসম্মান বোধ সম্পন্ন কোন লোক তা করবে কি-না আমার সন্দেহ। আমার হাতে গড়া কর্মীরাই এখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা। এ-ই সদ্য সমাপ্ত চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে নব নির্বাচিত সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু প্রথমে আমার ছোট ভাই কর্মী ও আমার সাধারণ সম্পাদক, সে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ছিল,বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আলমগীর তাকেও মাস্টার পাড়ায় তাদের ঘরে যেয়ে যেয়ে ব্যাক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ছাত্রলীগের কর্মী বানিয়েছি।কারণ চিরিঙ্গা মাস্টার পাড়া তো জামাত - বিএনপির ক্যান্টনমেন্ট।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, জামাল উদ্দিন জয়নাল ছাড়া অপরাপর নেতারা তো আমার কর্মী ছোট ভাই। নব্বই পরবর্তী কক্সবাজার জেলা আওয়ামিলীগ ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের দুটি ধারা বিদ্যমান ছিলো। একটি ধারার ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্ধারণ, কর্মীগঠন বৃদ্ধি তে একপক্ষের নেতা ছিলো জাতীয় ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি বর্তমানে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম। অপর ধারার নেতা ছিলেন সাবেক চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের (মুজিববাদী) সাবেক ছাত্রনেতা চিত্রশিল্পী এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া। বর্তমানে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য। ঠিক এ-ই মুহুর্তে রেজাউল ভাই ও জিয়া ভাইয়ের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে আমার থেকে আপনারা ভালো জানেন।

তারা দুজনের উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা ছিলো সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মহসিন বাবুল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন জয়নাল। আমি জামাল উদ্দিন জয়নাল পক্ষের ছাত্রলীগের কর্মী। আর আমাদের আওয়ামীলীগের নেতা ছিলেন নুরুল কাদের বি কম ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আমজাদ হোসেন। বর্তমানে দু'জনেই প্রয়াত।আল্লাহ তাঁদের বেহেশতে নসিব করুন।আমিন। তখন বর্তমান চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মাননীয় সংসদ সদস্য জাফর আলম নুরুল কাদের বি কম ও আমজাদ হোসেনের কর্মী হিসাবে চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগ সংগঠিত করছেন।

এর পরপরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাত ধরে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ সি আই পি। এ-র পরে আওয়ামীলীগের নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু হয়। নুরুল কাদের বি কম, এডভোকেট আমজাদ হোসেন, জাফর আলম এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া ও জামাল উদ্দিন জয়নালের নেতৃত্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতিনিধি কে আমরা মেনে নিলাম। ব্যক্তিগত ভাবে জাফর আলম ও সালাউদ্দিন আহমেদ সি আই পি মামা ভাগিনা সম্পর্ক। আমি নিজেও সি আই পি সাহেবের ভদ্রতা,বিনয়,নৈতিকতা কে পছন্দ করি।
রাজনৈতিক পদ পদবি খেলায় এক পর্যায়ে মামা ভাগিনার মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরে।তখনও এখনো আমি সালাউদ্দিন সাহেব কে পছন্দ করি, মামা ভাগিনা ঝগড়াঝাটিতে জড়ায়নি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কক্সবাজার বাসির জন্য সালাউদ্দিন আহমেদ সি আই পির আবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার বাসির জন্য উখিয়ার জনসভায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় টি যখন ম্যানেজমেন্ট, কতৃত্ব নিয়ে গোলমাল বাধে লায়ন মুজিবুর রহমানের সাথে, তখনও আমি এ-ই বিশ্ববিদ্যালয় কে টিকিয়ে রাখা,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মাননা বাঁচানোর জন্য সি আই পির পক্ষে একচেটিয়া লেখালেখি করি, বিভিন্ন জায়গায় যেখানে আমার সুযোগ আছে সেখানে লবিং করি।এসব বিষয় সি আই পি সাহেব জানে।

এরি ফাকে চতুর মুজিব বর্তমান এমপি জাফর কে চেয়ারম্যান করে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে। আমি চিন্তা করলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দুই কমিটির ঠেলাঠেলি পরবর্তী মামলা মোকদ্দমায় ধ্বংস হয়ে যাবে। এটা কে টিকিয়ে রাখা শেখ হাসিনার কর্মী হিসাবে আমার নৈতিক দায়িত্ব। তো
কি করা যায় কি করা যায় ভাবতে ভাবতে মাননীয় এমপির পুত্র তুহিন এর সাথে যোগাযোগ করলাম। তাকে সব বুঝিয়ে বললাম, সেও চিন্তা করে দেখলো, তোমার বাবা ও তোমার নানার মান অভিমানে ধ্বংস হয়ে যাক একটি বিশ্ববিদ্যালয় তা কি তুমি চাও।তুমি মিলিনিয়ামের বিদেশে পড়ালেখা করা মেধাবী ছাত্র। তারা মামা- ভাগিনার মধ্যে যতই পারিবারিক ঠান্ডা লড়াই থাকুক একদিন মিটমাট হয়ে যাবে । তোমার সুযোগ থাকলে তোমার বাবা কে বুঝাও। আমি বললে শুনবে না উল্টো বকা দিবে সি আই পির কর্মী হিসাবে।

এর একদিন তুহিন তার ফেইবুকে ইউনিভার্সিটি সসম্পর্কে তার বাবার সম্পৃক্ততা থেকে সরে আসার জন্য তুহিনের মতো করে একটা পোস্ট দিয়েছে। এর ক'দিন পরে মাননীয় এমপি জাফর আলম সাহেব সেখান থেকে সরেও আসেন। এমনকি এ বিষয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ সি আই পি ও একটা পোস্ট দিয়েছিল। তো বর্তমান চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রেক্ষাপটে সি আই পি র অবস্থান কে আমি মনে করি ওনার ভাগিনা জাফর আলমের উপর একটা রাজনৈতিক প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করছে। তো প্রিয় ভাই আজ যিনি আমাকে ফোন করে একটু ক্ষেপাতে চেয়েছেন তার জন্য এ ইতিহাস টুকু তুলে ধরলাম।

আর শুনুন আমি এখনো সালাউদ্দিন আহমেদ সি আই পি কে ভালোবাসি তার ভদ্রতা,বিনয় ও নৈতিকতা। আমি যেহেতু চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতি মাঠ পর্যায়ে নাই এ-ই ক্রান্তিলগ্নে আমাকে টেনে ক্ষমতার বলির পাঁঠা হতে চাই না।দেখলেন আপনাদের যারা বলির পাঁঠা বানিয়ে অনলবর্ষী বক্তাদের কি অবস্থা। আমার কাউন্সিলর হওয়ার দরকার নাই ভাই।আপনাদের সকলের জন্য শুভ কামনা। আমি মনে করি আওয়ামীলীগের চাইতে আওয়ামীলীগের ভেতরে মুজিবাদী দর্শন, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সর্বাধুনিক রাষ্ট্র চিন্তা কতটুকু চর্চা হচ্ছে। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় চার মুল নীতি কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে এদিকে নজর দেয়া দরকার।

বর্তমান আমার দৈহিক, অর্থনৈতিক যে অবস্থা বিশ্বায়নের বিশ্বে বাংলাদেশ ও তার বাইরে নয়। এমনকি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগের সভাপতি ও। সেখানে আমার মতো নগন্য একজন অসুস্থ ক্ষুদ্র কর্মী ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলে রাজনৈতিক পদপদবীর লড়াইয়ে পেরে উঠবো না।এ-র চাইতে অধিক ভালো আমার হাতে গড়া কর্মীদের সুস্থ সুন্দর রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়া।

তার অর্থ এই নয় যে আমি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনার রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছি তা নয়।
আমার পক্ষে যতটুকু যে কাজ টা সম্ভব সেটাই করছি। আমি আমার সৃজনশীল মেধা যতটুকু আছে সেটা দিয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলন করছি।

মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা, লেখক দার্শনিক শেখ হাসিনার লেখা বই ও মুক্তিযুদ্ধের বই নিয়ে প্রতিবছর শেখ হাসিনা বইমেলা করছি। আমি এমনও অনেক বড়ো বড়ো নেতা দেখেছি যারা শেখ হাসিনার ৫টি বইয়ের নাম পর্যন্ত জানেনা, পড়া তো দূরের কথা। অনেক নেতা অঢেল টাকার মালিক কিন্তু তাদের ড্রয়িং রুমে দামী দামী আসবাবে ঠাসা। কিন্তু একটা বুকসেল্ফ নাই, যেখানে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার বই শোভা পাবে। এ বই গুলো সেল্ফ থেকে নিয়ে তাদের সন্তানেরা না পড়ুক নেড়ে চেড়ে দেখবে।

তো শেখ হাসিনা বইমেলার কারণে অনেকেই বই কিনছে। আবার অতিথি হওয়ার আশায়,রাজনৈতিক গৎবাঁধা বক্তা হতে না পেরে মেলা সফল না হওয়ার ষড়যন্ত্রও আমার মোকাবিলা করতে হয়েছে। কক্সবাজারে গ্রামগঞ্জে স্কুল কলেজর ছাত্রছাত্রী সাধারণ পাঠকের পুরাতন ঝিমিয়ে পড়া পাঠাগার গুলো কে সচল, নতুন পাঠাগার সৃষ্টির লক্ষ্যে পাঠাগার আন্দোলন করছি। প্রতিবছর এসব পাঠাগারে নিজের উদ্যোগে বই বিতরণ করছি। এসব কাজ কি আওয়ামী রাজনীতির বাইরে বলুন, প্রিয় মুজিব সারথি ভাইয়েরা।

আমার আবার চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের নতুন করে এতোদিন পরে ঠেলাঠেলি করে সম্মেলনের জন্য কাউন্সিলর হতে হবে কেন? আমি কোন কোন্দলিয় নেতার সাথে নাই, কোন কোন্দলে ও নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার এখনো পর্যন্ত তিনি যেখানে যাকে যে পদপদবীর দিয়েছেন, প্রতিনিধি বানিয়েছেন তারাই আমার।
শেখ যখন যাকে বানায় আমি তখন তার পক্ষে। মুলত শেখ হাসিনার পক্ষে। এবার আপনারা বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে অবুজপাতা। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক : কবি, সাবেক ছাত্রনেতা, কক্সবাজার।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test