E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এগিয়ে যাচ্ছি প্রগতির পথে!

২০২২ সেপ্টেম্বর ০৮ ১৫:৩৮:৪৪
এগিয়ে যাচ্ছি প্রগতির পথে!

পীযূষ সিকদার ভাবতে ভাবতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। চোখে নানা রকম ছবি হয়ে একের পর এক দৌঁড়ায়। এই ছবির ভাষা আছে। সে ভাষা কেউ বোঝে কেউ বোঝে না! হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লাম। সূর্য উঠার আগেই ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। একটু পরেই দুটি রাম শালিকের দেখা মিললো। ক্ষণিকের জন্য মনটা ভালো হয়ে গেলো। স্কুলে যেতে যেতে মুক্তিযুদ্ধ, দেশ, বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা-এই চিন্তাগুলি মস্তিষ্কের মধ্যে খেলে যায়! আমাদের কোনো দেশ নেই! আমাদের কোনো বাড়ি নাই। আমাদের কোনো ঘর নাই। ভাবলাম সেই পুরান কথা নতুন মোড়কে-নিজ দেশে পরবাসী। আমার বাবা, কাকা, মামা, দাদু মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। নিন্দুকেরা বলে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। বলে বলুক। দেশটাকে ভালোবাসতেন। মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে যেয়ে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের চাকরি মেলে। মুক্তিযোদ্ধারা ভাতা পান। অথচ শহীদ পরিবারের কোনো ভাতা নেই। চাকরি নেই। স্বীকৃতি নেই। খারাপ লাগে ভীষণ খারাপ লাগে। যে মাটিতে আমার পরিবারের রক্ত লেগে আছে তাদের পরিবার কী হালে আছে! ভেবে দেখার কেউ নেই! যারা শহীদ হলেন তাদের ভালোবেসে সরকারের তরফ থেকে কোন উদ্যোগ নেই! উদ্যোগ থাকলেও তা নানা রকম কাগজে কলমের ভাজে আটকা পড়ে যায়! 

মুক্তিযুদ্ধ মানে- আমার কাছে বাবা হারানো। মায়ের সিঁদুর মুছে যাওয়া, ঠাকুরমার বোবা হয়ে যাওয়া। শহীদ কাকার নাম খোদাই করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কষ্ট কষ্ট। এক ঝাক কষ্ট। কষ্ট পেতে পেতে বড় হওয়া। এখন সেই কষ্টের বোঝা অনেক ভারী হয়ে গেছে। আমার কোনো কাজ নেই। যাওবা আছে তা দিয়ে আমার বাজে খরচের টাকাও হয় না!
মাননীয় শেখ হাসিনার কষ্ট অনেক। মানি। বড় মানুষের বড় বড় কষ্ট। আমরা ছোট। আমাদের কষ্টগুলোও ছোট ছোট। আমাদের দেখবার কেউ নেই। আমরা শহীদ পরিবারের সন্তান হয়েও সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি। পাইনি বললে ভুল হবে। বঙ্গবন্ধু আমার মাকে দুই হাজার টাকা দিয়েছিলেন। ওই পর্যন্তই। আমরা মানবেতর জীবন যাপন করি কেউ নেই দেখার! শেখ হাসিনাও আমাদের দিকে একবারের জন্য চোখ তুলে তাকাননি। তাঁকে দোষ দেবার মতো ধৃষ্টতা আমি দেখাচ্ছি না! তার আশে পাশের চেলা চামুন্ডারা তাঁকে ভুলিয়ে রাখে। সব সময়ই সবকালেই আসল মানুষেরা ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকেন না! তেল নামক শব্দটি ভালো মানুষদের অজানা। ক্ষমতার যারা কেন্দ্রে তাদেরকে দোষারোপ করছি না। এ বিষয়টি এরকমই।

এ নিয়ে দুঃখ পাবার কিছু নেই। দুঃখ করতে নেই এসব নিয়ে। দুঃখ একটাই যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলাম তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারলাম না! এ আমার খেদের কথা না! কষ্ট বলে অনেকেই উড়িয়ে দেবে। মস্তিষ্কের মধ্যে নানা কথা ছবি হয়ে ফিল্মের ফিতা হয়ে দৌঁড়ায়। নুরু ভাইয়ের চায়ের দোকানে বসলাম। অর্ডার দিতে হয় না নুরু ভাই-ই এক কাপ চা এগিয়ে দেয়। কী ভাবছেন? বলে নুরু ভাই। কিছু না। চা খেয়ে টাকা দিয়ে সোজা স্কুল। সত্য কথা স্কুল আমার ভালো লাগে না! যাই পৃথ্বিরাজের জন্য আর বড় ভাইয়ে ভয়ে। ওর দুধের পয়সাটা তো হয়! আমি যে স্কুলে যাই সে স্কুলের নাম কিশলয় বিদ্যানিকেতন। এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সাহসী সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। তাঁকেই ভর করে বেড়ে উঠা! কষ্ট হচ্ছে। বিদ্যালয়ে চেয়ারে গিয়ে বসলাম। কারো সাথে কোন কথা না বলে গতকাল ভাবনার ভেতরে গল্পের প্লট আসা গল্পটি লিখতে বসলাম। প্রেম-ই প্রেম না প্রেমহীনতার মধ্যে প্রেম বেঁচে থাকে। নানা খাপছাড়া অসংলগ্ন কথামালা আমার কলম বেয়ে নেমে আসে। এটা কি আমার দেশ! না। তবে কোন দেশটা আমার? ভাবতে ভাবতে মনের গহীন অতলে ডুব দেই। আমার শহীদ পিতা মরে গিয়ে পরপারে ভালো আছে নাকি পরপারে এই দেশটার দিকে তাকিয়ে আছালি বিছালি করছে। আমার মনে হয় শহীদেরা ভালো নেই! ভালো থাকলে দেশের অবস্থা এমন কেন!

জোর যার মুল্লুক তার। এভাবেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে না পিছিয়ে যাচ্ছে বোঝা দায়। আমাদের দেশে কোনকিছুর দাম বাড়লে আর কমার কথা নেই! ভন্ডরা দেশটাকে লুটে পুটে খাচ্ছে। বড় বড় নেতারা মদের পেয়ালায় উড়ায় নারীর শরীর! ভুলে যান দেশের কথা দেশের জনগণের কথা। যে জনগণকে একদিন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলো। সে প্রতিশ্রুতি চোরাবালিতে কেবলই ঘুরপাক খায়। চলে মদের আড্ডা। নারীর শরীর উড়ে আকাশে বাতাসে।

দেশটাকে ভালোবাসি। এখনো দেশটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। যখনই স্বপ্ন দেখতে বসি তখনই শুনতে পাই অমুক অঞ্চলে মন্দির ভেঙ্গেছে! অথবা ওয়াজের ছলে বলে উঠে,‘‘দেবী দুর্গাকে দেখলে কামাসিক্ত হই’’। এসব দেখে শুনে আর ভালো লাগে না। কারোর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া ঠিক না! আমি মানুষ এটাই বড় পরিচয়। প্রত্যেকটা ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের খোঁজ খবর নিয়ে সোজা চর্যাপদে। সজীব দেখি আজ অনেক আগেই দোকান খুলেছে। বিদ্যুৎ নেই। অনেকদিন ধরে বিদ্যুতের বেহাল অবস্থা। এই বিদ্যুৎ আছে পরক্ষণেই দেখি বিদ্যুৎ নেই। গরমে কষ্ট পাচ্ছি। দোকানের চেয়ারে বসে স্কুল দেখি। মনে হয় একটি গোলাপ বাগান। চাকুরীটা ভালো লাগে না! ছেলেমেয়ের দিকে তাকালে চাকরিটা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে না। যেনো স্বর্গে আছি। বাচ্চাদের মনস্তত্ত্ব বোঝা অনেক কঠিন। তবে ওদের ভালবাসলে যা বলা যায় তাই শোনে। ওদেরকে পড়াচ্ছি এই মুডে থাকলে ছেলে-মেয়েরা অমনোযোগী হয়ে উঠে। খেলাচ্ছলে অথবা আনন্দের সাথে শিক্ষা দিলে ওরা পড়াশোনাটাকে আপন করে নেয়। ভাবি নিভৃতে, একদিন ওরাই দেশ চালাবে। এ কথা ভাবতে ভালো লাগে। আশ্চর্য হই এতো গুলো ছেলে মেয়েদের অভিভাবক আমি!

অর্থ অনর্থের মূল। তেমনি অর্থ ছাড়া চলেও না। আমার ভেতরে অনেক কষ্ট জেকে বসেছে। এ কষ্টের কথা কাকে জানাবো! মাননীয় শেখ হাসিনা এই দীনহীনের ডাক কী শুনবেন? না, শুনবেন না! তাই আমি শূণ্যে হাত তুলে শূণ্যের কাছে বলি, হে শূণ্য তুমি আমাকে বড় একটা শূণ্য বানিয়ে দাও। শূণ্যই আমার ভালে লাগে। জন্ম আমার ৭১-এ। শূণ্য হাতে করেই জন্ম হয়েছে আমার। হাতের শূণ্যটা বড় থেকে আরো বড় হচ্ছে। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর তার ছায়া। সেই ছায়া দেখা যায় না। শূণ্যে কেবলি দুই হাত ও দুই পা দিয়ে সাঁতরাচ্ছি। আমার কথা কী কেউ শুনতে পান?

আজ সারাদিনটাই এলোমেলো ভাবনারা পেখম মেলে আমাকে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। ভাই পেনসিল দেনতো একটা। ভাবনার তার ছিঁড়ে যায়। চেয়ার থেকে উঠে একটি পেনসিল দেই। কত। দশ টাকা। ঝুড়িতে টাকাটা রেখে আবার ভাবনায় ডানা মেলি। আমরা শহীদ পরিবারের সন্তান আমাদের প্রতি রাষ্ট্রের কোন দায়িত্ব নেই? নাকি রাষ্ট্র অন্ধ। বোবা কালা। আমি দেশমাতাকে দোষ দিচ্ছি না উনি কী করবেন! উঁনার হাত তো দুইটা। তারপরও তিনি দশোভূজা হয়ে দেশ চালাচ্ছেন। আমার কষ্ট দানা বাঁধে। শহীদ পরিবারের দিকে তাকাচ্ছেন না কেনো? তাঁর পিতা যে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেলেন উঁনি সে পথেই হাঁটছেন। আমার একান্ত চাওয়া দেশরত্নের দৃষ্টি পড়ুক শহীদ পরিবারের দিকে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের মহান আত্মত্যাগেই আমরা বাংলাদেশ নামক ভূ-খন্ডটি পেয়েছি। কিন্তু এই দেশে সেই শহীদ পরিবার ভীষণভাবে উপেক্ষিত। আমার ভাবনারা খালি উল্টোরথে চলে। বাড়ি যাবো না থাক। আর কিছুক্ষণ পর। আমার কী কোনো কাজ নেই! তাহলে ভোর থেকে রাত্রি অবধি কী করছি আমি? মরিচিকা। শুধুই মরিচিকা। দোকান বন্ধ করে সোজা বাড়ি। পৃথ্বিরাজ বলে, বাবা পাঙাস মাছ খাবা না? খাবো তো বাবা! একসাথে খাবো বাবা! স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে বলে ঠিক, আছে বাবা।

বিছানায় গিয়ে বসি। এ কী হলো আমার! ভাবনারা আমাকে শুধু বেঁধে রাখে। কাজ কই আমার। নাকি শূণ্য হাতে শূণ্যে দৌঁড়াবো! হাত দুটি মুঠি করে ধরি। দুটি হাত কাছাকাছি আনি। আমার হাতের কররেখায় কী লেখা আছে। দেখতে থাকি। তপতির ডাকে ধ্যানভঙ্গ হয়। ¯œান সেরে খেতে বসি। কী হয়েছে তোমার? উত্তর-কিছুনা। এতো ভাবনা কিসের?

দেশ, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, শেখ হাসিনা। মগজে খেলে যায়। জন্মটা এ দেশে না হয়ে অন্য কোন দেশে হলে একটা পেশা খুঁজে পেতাম। তোমরা তো ভাবছো আমার তো পেশা আছে। আমি বলি আমার কোন পেশা নেই। শহীদ পরিবারের সন্তান আমরা রাষ্ট্র কী আমাদেরকে কোন কাজ দেবে না! দেশ ও দশের জন্য আজীবন কাজ করে যেতে চাই আমি। খাওয়া শেষ করে আবার বিছানায়। মনে মনে বলতে থাকি-একটা কাজ দরকার নইলে শহীদ পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো না। স্বপ্নের গহীন ঘোরে দেখতে থাকি দেশরত্ন আমাকে একটি কাজ দিয়েছেন। আমি নাটক করে যাচ্ছি। তাই আমার নাটক শহীদের স্বপ্নের কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। দেশের কথা বলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের কথা বলে। দেশোমাতার হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি প্রগতির পথে।

লেখক : শিক্ষক ও নাট্যকার।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test