E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যাত্রা পথে মৃত্যুর মিছিল কমাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে 

২০২২ সেপ্টেম্বর ১৮ ১৬:০২:৪০
যাত্রা পথে মৃত্যুর মিছিল কমাতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে 

মাসুম শাহরিয়ার


যাত্রা পথে  দুর্ঘটনা একটি আতঙ্কের নাম। এটি আমাদের দেশে একটি ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে।  প্রতিবছর আমাদের দেশে অসংখ্য মানুষ দূর্ঘটনার শিকার হয়ে নিহত, নিখোঁজ যেমন হচ্ছেন পাশাপাশি আহত হয়ে পঙ্গুত্ব ও কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন। সাধারণত আমাদের দেশে সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ  এই তিনটা মাধ্যমে যাত্রা করে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে সড়ক, রেল ও নৌপথ কোনটিই আমাদের জন্য তেমন নিরাপদ না । বিশেষ করে  বিভিন্ন ছুটি ও ধর্মীয় উৎসবের সময় কর্মক্ষেত্র হতে ঘরে ফেরা ও ঘর থেকে কর্মফেত্রে পুনরায় ফেরার সময় দূর্ঘটনার চিত্র আরোও ভয়াবহ হয়ে উঠে। 

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, ২০২১ সালে সড়কে ৫ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৮০৯ জন নিহত ও ৯ হাজার ৩৯ জন আহত হয়েছেন এবং একই সময় রেলপথে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ১৩৪ জন। নৌপথে ১৮২টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত, ৫৭৮ জন আহত এবং ৫৪৪ জন নিখোঁজ হয়েছেন।

একই তথ্য মতে, ২০২০ সালে দেশে চার হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৬৮৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আট হাজার ৬০০ জন। রেলপথে ৩২৩টি দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত ও ৭৯ জন আহত হয়েছেন। ১৮৩টি নৌ দুর্ঘটনায় ৩১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩৭১ জন নিখোঁজ হয়েছেন। বিদায়ী বছরে সড়ক, রেল ও নৌপথে পাঁচ হাজার ৩৯৭টি দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৩১৭ জনের প্রাণ গেছে। ৯ হাজার ২১ জন আহত হয়েছেন।

অর্থাৎ তথ্য অনুসারে ২০২০ সালের থেকে ২০২১ সালে ৭৬৮ টি দূর্ঘটনা ও ১১,২৩ জন বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

গড় হিসাবে ২০২০ সালে প্রতিদিন যাত্রাপথে প্রায় ১৯ জন ও ২০২১ সালে গড়ে প্রায় ২২ জন মানুষ মারা গেছেন। ২০২২ সালে এসে এর সংখ্যা আরোও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে মোটরসাইকেলে দূর্ঘটনার সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে।

উপরোক্ত তথ্য দেখে বুঝা যায় যাত্রা পথে প্রতিবছর মৃত্যুর মিছিল বেড়ে চলছে দূর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যাটা আরোও বেশি হতে পারতো কারণ যাত্রা পথে ২০২১ সালে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ ছিল।

সড়ক দূর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ হিসাবে ধরা হয়ে থাকে সড়ক পথে অতিরিক্ত গতি ও অভারটেকিং, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অপ্রশস্ত রোড, ওভারলোডিং, আইন অমান্য ইত্যাদি। নৌপথে ধারণ ক্ষমতার থেকে অতিরিক্ত যাত্রী এবং রেল পথে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং, সিগনাল সমস্যা,অসতর্কতা ও অবহেলা, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও জরাজীর্ণ লাইন, ডবল লাইন না থাকা, জনবল সংকট ইতাদি।

আমাদের যাত্রা পথে দূর্ঘটনা হয়তো সম্পূর্ণ রূপে নিমূল করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এই মুহূর্তে সম্ভব না। তবে আমরা অতিরিক্ত গতি ও অভারটেকিং হতে বিরত থেকে, লাইসেন্স প্রদানে জালিয়াতি প্রতিরোধ ফিটনেসবিহীন গাড়ি প্রতিরোধ, রোড প্রশস্ত রোড, ওভারলোডিং রোধ ও ট্রাফিক আইনের যথাযত প্রয়োগ। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ধারণে সর্তকতা সহ রেলে অবৈধ লেভেল ক্রসিং তৈরি না করা ও জনবল বাড়িয়ে যাত্রাপথে সর্তকতা বাড়িয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।

তাছাড়াও যাত্রা পথে মৃত্যুর মিছিল কমাতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকার কে ট্রাফিক আইনপর উপর গুরুত্ব, গাড়ীর ফিটনেস ও বৈধ লাইসেন্স এর দিকে নজর, রেলে জনবল নিয়োগসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test