E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী কোন পথে চলছে নীলফামারীর রাজনীতি?

২০২২ অক্টোবর ২৭ ১৩:২৯:৪৯
জেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী কোন পথে চলছে নীলফামারীর রাজনীতি?

ওয়াজেদুর রহমান কনক


গত বছর ৭ অক্টোবর দৈনিক বাংলা ৭১ পত্রিকার প্রথম পাতায় 'পারবে কি আওয়ামী লীগ' লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল। বোধ করি জেলা পরিষদ নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী রাজনীতিতেও লেখাটি প্রাসঙ্গিক।

" ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ এই শব্দগুলো একটার সাথে একটার এমন গভীর সম্পর্ক যে একটিকে জানলে অন্যটিও জানা হয়ে যায়। কেউ যদি বঙ্গবন্ধুকে জানতে চায়, তবে তার মুক্তিযুদ্ধটাও জানা হয়ে যায়। কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধকে জানতে চায়, তবে তার বাংলাদেশকেও জানা হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ যে এই তিনটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত হয়েছে, তাও কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক, আওয়ামী লীগের উপস্থিতি ছাড়া তাঁদের মর্যাদা রক্ষা করার আর কেউ আছে কি ? রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করা চলে, কিন্তু ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’-এর কোন বিরোধীতা চলে না।

মুজিব বর্ষে দল-মত নির্বিশেষে যে যার অবস্থান থেকে স্মরণ করবে, এটাকে বাঁকা চোখে দেখার কিছু নাই। মুজিব বর্ষে অনেক জামায়াত-শিবিরের প্রতিষ্ঠানের সামনেও শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার টাঙ্গানো হয়েছে । বিপত্তিটা আসলে অন্য জায়গায়। যখন ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে পুঁজি করে কেউ রাজনৈতিক ফয়দা লোটার চেষ্টা করবে বিপত্তিটা আসলে সেখানেই।

নতুন প্রজন্মের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে জানানো দ্বায়িত্বটা আসলে কার ? নিশ্চয়ই জামায়াত-শিবির এই দ্বায়িত্ব পালন করবে না। যদি তারা সেটা করেও তবে তারা কোন পয়েন্ট অব ভিউ থেকে নতুন প্রজন্মের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে জানানোর প্রয়াস চালায় অথবা চালানোর চেষ্টা করে সেটা বোঝার জন্য কি তাহলে শেষ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ হতে হবে !

ভোটের রাজনীতির জন্যই হোক আর অন্য যেকোন কারণেই হোক আওয়ামী লীগে যে অনুপ্রবেশকারীদের অস্থিত্ব বিদ্যমান, আশা করি একথা কেউ অস্বীকার করবে না। দুই একবার নৌকার টিকিট পেলেই যে সে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন হয়ে গেল, একথা বিশ্বাস করলে ক্ষতিটা আর কারো না হোক, ক্ষতিটা হবে আওয়ামী লীগের। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করতে সবাই এক কাতারে শামিল হলেও সবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এক ছিল না। বামপন্থীদের একটা অংশ ‘দুই কুত্তার কামড়াকামড়ি’ আখ্যা দিয়ে শত্রু পক্ষ- মিত্র পক্ষ এই দুই পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এখন এদের কাছে থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প কেন শুনতে হবে? কমিউনিস্ট পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আর নতুন করে কিছু বলার নাই । কমিউনিস্ট পার্টি বঙ্গবন্ধুর কোন মর্যাদাহানি ঘটায়নি। কমিউনিস্ট পার্টির কাছে থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা যেতে পারে, কিন্তু অন্যান্য দল গুলোর ক্ষেত্রে? সব দলকেই কি কমিউনিস্ট পার্টির কাতারে ফেলা যায়?

স্বাধীনতা পূর্ববতী সময়ে যারা ছাত্রলীগ/ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে না থেকে এনএসএফ-এর সাথে রাজনীতি করেছে, তাদের কাছে থেকে কি রকম মুক্তির সংগ্রামের গল্প আশা করা যায়! স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাসদের ভূমিকা কি ছিল, তারা কি রকম মুক্তির সংগ্রামের গল্প মানুষকে শোনাতে চায়! স্বাধীনতার পর প্রায় দুই দশক যারা আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি করে পৌর চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছে তারা কেমন মুক্তিযুদ্ধকে জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে। যারা আপাদমস্তক একজন জাত আওয়ামী লীগারের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে পারে, তারা কেমন মুক্তিযুদ্ধকে জানাতে আসছে! নৌকার মনোনয়ন না পেলে যারা ‘বিদ্রোহী’ হয় এরা আবার কেমন মুক্তিযুদ্ধের কথা জানাতে চায়!

‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’-এর মর্যাদা অন্য কেউ এসে রক্ষা করবে না, কেউ না। যদি মর্যাদা রক্ষা করতে হয়, তবে আওয়ামী লীগকেই এগিয়ে আসতে হবে। ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে পুঁজি করে ফয়দা লোটার চেষ্টা রুখে দিতে পারবে কি আওয়ামী লীগ?"

১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়ী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বিজয় সমাবেশে কান্নাজড়িত কন্ঠে "ভোট বাণিজ্য' সম্পর্কে বলেন, আমি জীবনেও ভুলতে পারবো না। আজকে যখন আমি জলঢাকা, কিশোরগঞ্জে- তখন আমার পকেটে দলীয় নেতা-কর্মীরা ৫০ হাজার, ১০টাকা, ৫০ টাকা, ২ হাজার, ১ হাজার করে দিয়েছে। আমরা কোন চাঁদাবাজি করি না।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, যে চাঁদাবাজি করে নীলফামারীর রাজনীতিকে কলুষিত করেছিল, চাঁদাবাজির কারণে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে দল থেকে বিতাড়িত করেছিল। সেই চাঁদাবাজ আজকে ভণিতা বের করে এই দলছুট ব্যাক্তিটি এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের নেতা জেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক জনাব আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে বেড়িয়েছে। বিজয় সমাবেশ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক।
উপস্থিত নেতা-কর্মীরা সমবেত ভাবে ধিক্কার ধিক্কার বলে তাঁর বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন।

মমতাজুল হক আরও অভিযোগ করেন, এই ব্যাক্তিটি চাঁদাবাজ ছিল। সে আমাদের সাথে আওয়ামী লীগ করেছিল। আমাদের পেছনে পেছনে রাজনীতি করে বেড়িয়েছিল। সে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিল। সন্ত্রাস করে সে আমাদের অনেক দলীয় নেতা-কর্মীদের অপমান করেছিল।

উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের সামনে এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করেন, এই ব্যাক্তি আজকে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনে, এই ব্যাক্তি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ছোট করতে চেয়ো না। আওয়ামী লীগের জনক হচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখানে হেলাফেলা করে, রংবাজি করে নেতৃত্বে থাকা যাবে না।

এখন থেকে যদি এসব কথা উচ্চারণ করেন, তবে নীলফামারীর মাটি থেকে পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। নীলফামারীটা কারো বাবার না। রাজনীতিকে কলুষিত করার কোন অধিকার আপনার নাই। বিজয় সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মমতাজুল হকের পুরো বক্তব্যটার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলীয় নেতা-কর্মীরা প্রচার করছে। তাঁর বক্তব্যের কোথাও তিনি কাউকেই বাস্তুচ্যুত করার কথা না বললেও ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মমতাজুল হকের বিরুদ্ধে বাস্তুচ্যুত করার ঘোষণার অভিযোগ করেছেন।

২৬ অক্টোবর বুধবার নীলফামারী জেলার আট জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র নীলফামারী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর পাঠানো হয়েছে। এই অভিযোগ পত্রে বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে 'নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন কে বাস্তুচ্যুত করার হুমকীর বিচার দাবি'। এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে ' আপনার নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক গঠিত নির্বাচন কমিশন প্রনীত জেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর ও আফতাব উদ্দীন সরকারসহ জেলার ৬ উপজেলার চেয়ারম্যানগণ অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে জয়নাল আবেদিনকে পরাজিত করেন।

এখানে উল্লেখ থাকে যে, আসাদুজ্জামান নূর এবং আফতাব উদ্দীন সরকার দুই জনেই নেতৃত্বস্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা।
অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে গত ১৭ অক্টোবর নির্বাচনে জয়লাভ করে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মমতাজুল হক শহরের ডিসির মোড়ে জয়নাল আবেদিনেক আক্রমণাত্মক ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি জয়নাল আবেদিনকে নীলফামারী থেকে বের করে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

নীলফামারী জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছিল। ৩০ আগস্ট হত্যাকান্ডের ৪৭তম বার্ষিকীতে শহরের স্বাধীনতা অম্লান চত্বরে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। জেলা যুবলীগের আয়োজনে এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি সুধীর রায়ের সভাপতিত্বে প্রখ্যাত শ্রমিক ও যুবনেতা ইয়াকুব আলীর হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করে মানববন্ধন চলাকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন নীলফামারী ২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা (সাবেক উপসচিব) আমিনুল হক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদর উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা কান্তি ভূষণ রায়, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুজার রহমান, জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি দেওয়ান সেলিম আহমেদ, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাবেক নিকসু ভিপি কামরুজ্জামান কামরুল, সাধারণ সম্পাদক দীপক চক্রবর্তী, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফি সবুজ, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি প্রনবানন্দ রায় রাখাল, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকার প্রমুখ।

৭৫ এর ৩০ আগস্ট নীলফামারীতে মর্মাত্মিক হত্যাকান্ডে নিহত শ্রমিক ও যুবনেতা ইয়াকুব আলীর স্মৃতিচারণ করে নীলফামারী ২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আগস্ট আমাদের জন্য কষ্টের মাস, বেদনার মাস। এক ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশকে তুলে এনে নিপুণ কর্মযজ্ঞে লিপ্ত ছিলেন জাতির জনক। পাকিস্থানের সাথে যুদ্ধ করে আমরা যে ভাবধারা পরিত্যাগ করেছি, পরাজিত শক্তি সেই ভাবধারাই ফিরিয়ে আনতে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছিল। সেই চক্রান্তের সূত্র ধরেই ৭৫ এর ১৫ আগস্টের সূচনা, এরই সূত্র ধরে ১৭ আগস্ট আর ২১ আগস্টের সূচনা। এই সূত্র ধরেই ৭৫ এর ৩০ আগস্ট নীলফামারীতে ইয়াকুব আলী হত্যাকান্ডের শিকার হন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র কৃষিবিদ দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, ৭৫ এর ৩০ আগস্ট ইয়াকুব আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীরা স্বাধীনতা মেনে নিতে চায়নি। এরই ধারাবাহিকতায় নীলফামারীতে ইয়াকুব আলী হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। তিনি সরকার ও প্রশাসনের কাছে ইয়াকুব আলী হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন।

নীলফামারী সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের আফসোস হয়, দুঃখ হয় স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও যদি মানবতারবিরোধীদের বিচার হয়, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়, যে রাজনৈতিক শুন্যতা সৃষ্টির জন্য জাসদের গণবাহিনী প্রখ্যাত যুব ও শ্রমিক নেতা ইয়াকুব আলীকে গুলি করে হত্যা করে, এর বিচার না হয়, তবে এই দুঃখ আমরা রাখবো কোথায়।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে বলতে হবে- রাজনীতি মোটেও কোন সহজ কথা নয়। বিএনপি জামায়াতের রাজনীতি সহজ কি না জানি না, তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা কঠিন থেকে কঠিনতর। হাইব্রিড আর সুযোগসন্ধানীদের কথা আলাদা, এখানে তাদের বিষয়টি বাদ দিয়েই বলছি।

মুখে মুখে কয়েকবার ‘জয় বাংলা’ উচ্চারণ করলেই কি আওয়ামী লীগ হওয়া যায়..?

অথবা বাপ-দাদা আওয়ামী লীগ করেছে, সেই সূত্রে আমিও আওয়ামী লীগ হয়ে গেলাম- বিষয়টা কি এতোই সহজ।
রাজনীতি হলো ধারণ করার বিষয়। রাজনীতি হলো দীর্ঘ চর্চার বিষয়।

হুট করে কেউ কোনদিন আওয়ামী লীগ হয়ে যেতে পারে না। এলাকা ভিত্তিক রাজনীতির ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও প্রবল। কোন এলাকায় রাজনীতি করতে হলে, দীর্ঘদিন সেখানে জনগণের পাশে থেকে মাইলের পর মাইল দৃপ্ত পায়ে হেঁটে শ্লোগানে শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে । আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে আদর্শ মেনে প্রয়োজনে জেল-জুলুমের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

হামলা-মামলা, হুমকী-ধামকী সহ্য করে পথ চলার সাহস থাকতে হবে । জামায়াত-শিবিরের জঙ্গী আস্তানা গুড়িয়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে । এসব না করেই কেউ কি আওয়ামী লীগ হতে পারে...নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের রক্ত-শ্রম আর ঘাম দিয়ে গড়ে উঠা একটি আদর্শের নাম আওয়ামী লীগ। বাংলার আকাশে ভেসে বেড়ানো একটি মেঘমালার নাম আওয়ামী লীগ। রাখালিয়া বাঁশির সুরে হৃদয়ে সোনার বাংলার গুনগুন হলো আওয়ামী লীগ।

তীব্র তাপদাহের পর এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টির নাম আওয়ামী লীগ । শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা একটি হুংকারের নাম আওয়ামী লীগ। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের অতন্দ্র প্রহরীর নাম আওয়ামী লীগ । ধর্মীয় গোঁড়ামী আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দূর থেকে ভেসে কোন এক শঙ্খধ্বনীর নাম আওয়ামী লীগ ।
বাঙ্গালীর আজন্ম লালিত অসাম্প্রদায়িকতার চেতনায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ভেসে আসা আযানের ধ্বনীর মতো একটি নাম আওয়ামী লীগ । এসো কল্যাণের পথে.. এসো শান্তির পথে ।

কালের বোরাকে চাকায়-পাখায় ছুটে চলা একটি দুরন্ত সময়ের নাম আওয়ামী লীগ।

চর্তুদিকে মুহুমুহু গ্রেনেড হামলার মধ্যে প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার জীবন বাঁচাতে নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের গড়ে তোলা একটি মানবঢালের নাম হলো আওয়ামী লীগ।

লেখক : সাংবাদিক, নীলফামারী

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test