E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সরকার কি বন্ধুহীন হয়ে যাচ্ছে? 

২০২২ ডিসেম্বর ১১ ১৫:৫৪:২৬
সরকার কি বন্ধুহীন হয়ে যাচ্ছে? 

শিতাংশু গুহ


বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউস বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতি’র ভাষা সরকারের প্রতিকূলে, বিএনপি’র অনুকূলে। আগে কখনো হোয়াইট হাউসের এমত বিবৃতি চোখে পড়েনি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র খুব গভীরভাবে বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। এর আগে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত একটি কঠিন বিবৃতি দিয়েছেন। স্বভাবতঃ প্রশ্ন জাগে, যুক্তরাষ্ট্র কি আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এর অবস্থান পরিষ্কার করে দিচ্ছে? না। পূর্বাহ্নে ঢাকাস্থ ১৫টি দেশের দূতাবাস একসাথে বিবৃতি দিয়েছেন, তন্মধ্যে ইইউ (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) আছে। জাতিসংঘ  বিশেষ রেপোটিয়ার ক্লেমেন্ট ভউল তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। কারো বক্তব্য সরকারের জন্যে খুব একটা সুখপ্রদ নয়। জেনেভা থেকে ওএমসিটি-সহ ১১টি সংগঠন বাংলাদেশকে হত্যা, গুম, নির্যাতন, জেল-জুলুম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। জাপানী রাষ্ট্রদূত ঠাট্টা করে পুরো জাতিকে নিয়ে ‘উপহাস’ করেছেন। আবার প্রশ্ন, সবাই কি সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে? উত্তর, না।

এসবই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হলো এঁরা কখন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে ছিলো? প্রায়শ:ই এঁরা বিভিন্ন ধরণের ষ্টেটমেন্ট দিয়ে থাকে, নির্বাচন এলে বেশি-বেশি দেয়, ঘোলাটে পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে দেয়? ২০১৪, ২০১৮, ২০১৯-এ ফিরে তাঁকালে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তবে এবার ব্যতিক্রম জাপানী রাষ্ট্রদূত, তিনি কেন্ অমন কথা বললেন, তা রহস্যময়। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিটি বারংবার পড়লে বোঝা যায়, এটি ‘ফরমায়েশী’। অর্থাৎ, অনেকটা বন্ধু’র অনুরোধে কিছু একটা বলা! কে সেই বন্ধু? প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেন ছিলেন ক্লিন্টনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। ক্লিন্টন দম্পতির সাথে প্রেসিডেন্টের চমৎকার সম্পর্ক। শোনা যায়, ড: ইউনূসের সাথে ক্লিন্টনদের সম্পর্ক এখনো অটুট আছে। বিএনপি’র সাবেক এক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক এবং তাঁর ভাই ওসমান সিদ্দিকী, যিনি বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁরা যথেষ্ট প্রভাবশালী? এটি সত্যি লবিং-এ বিএনপি পারদর্শী এবং আওয়ামী লীগ থেকে অনেক এগিয়ে।

আমরা কিন্তু চীনের কথা শুনিনি। চীন অবশ্য প্রকাশ্যে প্রায় কিছুই বলেনা, এদের কারবার টেবিলের নীচে দিয়ে, অপ্রকাশ্যে। আমরা ভারতের কথাও শুনিনি। যতক্ষন ভারতের কথা শোনা না যাবে, ততক্ষন আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চিন্তে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে এবং এর কারণও আছে? বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার সম্পর্কটি এখন এমন আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা যে, একজনকে ছাড়া আর অন্যজনের চলেনা, অর্থাৎ বাংলাদেশের যেমন ভারতকে প্রয়োজন, ভারতেরও তেমনি বাংলাদেশকে প্রয়োজন। শেখ হাসিনা- নরেন্দ্র মোদী ওয়ার্কিং রিলেশানটি এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে, বিএনপি চেষ্টা করেও সেখানে ফাটল ধরাতে পারছে না? বিএনপি লবিং-এ ভালো, কিন্তু ভারতে সুবিধা করতে পারছে না? আনাগোনা নেই, তানয়! এর কারণ, অতীতে বিএনপি বারবার ‘অঙ্গীকার’ ভঙ্গ করেছে। বিএনপি ভাব দেখালেও এখনো জামাতকে ছাড়েনি। প্রণব মুখার্জি’র মৃত্যু’র পর বিএনপি’র একটি সুযোগ ছিলো, শেখ হাসিনা সেই পথটিও বন্ধ করে দিয়েছেন। এইতো সেদিন গান্ধী পরিবার এসে শেখ হাসিনা পরিবারের সাথে দেখা করে গেলেন, এটিই বন্ধুত্ব।

কথায় বলে, ‘বিপদে বন্ধু’র পরিচয়’ একজন ভাল বন্ধু অনেককিছু সামাল দিতে পারে, বাংলাদেশ-ভারত এঁকে অপরের প্রতি তাই করছে। শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফর ভীষণভাবে ফলপ্রসূ ছিলো। বিদেশমন্ত্রীকে সাথে না নেয়া ছিলো উত্তম সিদ্ধান্ত। জানুয়ারি ২০২৪-এ নির্বাচন বলে ঘোষণা এসেছে। শেখ হাসিনা’র উচিত মন্ত্রীসভাকে এক্ষুনি নির্বাচনমুখী করা। সংখ্যালঘুসহ প্রকৃত বন্ধুদের কাছে টানা, ২০১৮-র নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করা। কারণ ২০১৪ এবং বিশেষত: ২০১৮’র নির্বাচনে আওয়ামী সরকারের গায়ে কলঙ্ক লেগেছে। এ কলঙ্ক মোচনে ২০২৪’র নির্বাচনটি ‘অবাধ ও সুষ্ঠূ’ হতে হবে, যাতে বিদেশিরা কথা বলার সুযোগ না পায় এবং একথা প্রমান করতে হবে যে, আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠূ নির্বাচন সম্ভব। হত্যা, গুম, সংখ্যালঘু নির্যাতন, রিজার্ভ, ব্যাঙ্ক লুটপাট, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক নৈরাজ্য বন্ধ করা না গেলে, বিশেষত: দুর্ভিক্ষ ঠেকানো না গেলে সবকিছু তছনছ হয়ে যাবে। দুর্ভিক্ষ হবে, একথা কেউ বলছেনা, কিন্তু ১৯৭৪-র কারণগুলো জেনে অগ্রিম ব্যবস্থা নিতে হবে। বিএনপি’র সভা প্রমান করে এন্টি-আওয়ামী লীগ শক্তি ঐক্যবদ্ধ, সামনে তাঁরা আরো শক্তিশালী হবে। পেশিশক্তি নয়, রাজনীতি দিয়েই রাজনীতি’র মোকাবেলা করতে হবে। বিএনপি’র মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে অনেকের কথাবার্তাই ‘অশালীন’ ছিলো। এখনো এক বছর সময় আছে, ত্যাগী, পরীক্ষিত নেতাকর্মী, এবং সমমনা-দের একত্রিত করলে জনগণ উন্নয়ন ও সুশাসনের আশায় আবারো নৌকায় ভোট দেবে।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test