সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস
রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া দেশব্যাপী সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
সোমবার সর্বজনীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিবস ২০২২।আর্থিক সংকট ছাড়াই বিশ্বের সকল নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতিসংঘ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। এই প্রস্তাবের ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’র সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রতিবছর ১২ই ডিসেম্বর ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ দিবস পালন করা হয়। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য, ‘কাঙ্ক্ষিত পৃথিবী গড়ি: সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করি।’ সবার জন্য সমানভাবে স্বাস্থ্যসেবা বিনা মূল্যে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী এগিয়ে চলছে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি। বাংলাদেশও এই ধারায় এগিয়ে চলছে। তবে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় তা সঠিক মাত্রায় চলতে পারছে না। অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কার্যক্রমের পথ আটকে রাখছে।
কিভাবে এই সংকট কাটিয়ে সামনে চলা যায়, তা নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন- সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সুস্থ ও সতেজ জীবনের চাবিকাঠি ভালো স্বাস্থ্য। এ কথা আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, আর্থিক—সব কিছুর ওপরই নির্ভর করছে সবার জন্য এই ভালো স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা তথা সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা। এর অর্থ হলো, কোনো ধরনের আর্থিক সংকট ছাড়াই প্রয়োজন অনুসারে সবার জন্য ভালো বা মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। ভালো স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা হচ্ছে—শুধু কোনো রোগ এবং পঙ্গুত্বের অনুপস্থিতি নয়, বরং পরিপূর্ণ দৈহিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকা। কাজেই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে একজন মানুষকে সার্বিকভাবে ভালো থাকতে হবে। চাইলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন করাও সম্ভব।
স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সাফল্য আছে। গড় আয়ু বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার কমেছে, শিশুপুষ্টির উন্নতি হয়েছে। শিশুদের টিকা দেওয়ার হার অনেক বেশি। জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মোট প্রজননহার কমেছে। বেশ কিছু রোগের আধুনিক চিকিৎসা দেশে আছে। তারপরও অনেক মানুষ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে অথবা তারা প্রয়োজনের সময় সেবা পাচ্ছে না। আবার সেবা পেলেও মানসম্পন্ন সেবার বিষয়ে অভিযোগ আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১০ সালে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে প্রথম বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ওই প্রতিবেদনে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার মূল বিষয় এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের উপায়গুলো ব্যাখ্যা করা হয়। বাংলাদেশও সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কাজ শুরু করেছে এক যুগের বেশি।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কী
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার অর্থ হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ স্বাস্থ্যের উন্নতিসহায়ক, রোগ প্রতিরোধমূলক, আরোগ্যলাভকারী ও পুনর্বাসনমূলক সেবা পাবে। মানুষ এসব সেবা পাবে তার প্রয়োজনের মুহূর্তেই। এসব সেবা হতে হবে মানসম্পন্ন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১০ সালের প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যে অর্থায়নের ক্ষেত্রে ন্যায্যতার কথা বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, মানুষ অসুস্থতার সময় তার সাধ্য বা সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে। মানুষ অর্থের অভাবে চিকিৎসাবঞ্চিত থাকবে না বা চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়বে না। মানুষ কী রোগে আক্রান্ত বা রোগের ধরন কী—সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তা বিচার্য হবে না।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ধারণায় তিনটি পরস্পর সম্পর্কিত বিষয় ছিল: যার সেবা দরকার সেই সেবা পাবে, অর্থ ব্যয় না করলে সেবা পাবে না বিষয়টি এমন নয়; নামমাত্র সেবা হলেই চলবে না। সেবা হবে মানসম্পন্ন, যেন সেবা গ্রহণকারীর স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়; এটা নিশ্চিত করা যে সেবা নেওয়ার কারণে মানুষ আর্থিক ঝুঁকিতে পড়বে না।
দেশে যক্ষ্মা রোগের ক্ষেত্রে সর্বজনীন সুরক্ষা চালু আছে। দেশের যেকোনো নাগরিক যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করাতে পারেন বিনা মূল্যে। ধনী–দরিদ্র বা শহর–গ্রামের নাগরিকের জন্য এই সেবা দিচ্ছে সরকার। হৃদ্রোগ বা ক্যানসারের ক্ষেত্রেও সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থা আছে। কিন্তু মানসম্পন্ন হৃদ্রোগ চিকিৎসার ব্যবস্থা অপ্রতুল। ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একই পরিস্থিতি। মানসম্পন্ন সেবা হয়তো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আছে, কিন্তু সব মানুষের সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই।
সামর্থ্য বা আর্থিক নিরাপত্তা না থাকলে মানুষ সেবা খুঁজতে চায় না, সেবার মান বিচার করে না, এমনকি মানুষ সেবা নেয়ই না। কিন্তু মানুষ যদি জানে চিকিৎসার ব্যয় পরিশোধ করা লাগবে না, অথবা ব্যয় আগাম পরিশোধ করা আছে অথবা চিকিৎসার জন্য বিশেষ তহবিল আছে তাহলে সে চিকিৎসা নেবে, সেবাবঞ্চিত থাকবে না। সেবার ক্ষেত্রে অর্থায়নের কৌশল নির্ধারণ করা সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেউ স্বাস্থ্যবিমাব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করছেন, কেউ সামাজিক বিমার ধারণার কথা বলছেন। কেউ এই দুইয়ের মিশ্রণের কথা বলছেন।
বাংলাদেশ কোন পথে
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়ন বিষয়ে কৌশলপত্র তৈরি করে। ‘এক্সপ্যান্ডিং সোশ্যাল প্রোটেকশন ফর হেলথ টুওয়ার্ডস ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ’ নামের ওই কৌশলপত্রে কিছু উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল: স্বাস্থ্য খাতের জন্য অর্থ বা সম্পদ বাড়ানো, বেশি মানুষের জন্য সেবা নিশ্চিত করা ও ন্যায্যতা বাড়ানো এবং সম্পদ বরাদ্দ ও ব্যবহারে দক্ষতা বাড়ানো।
২০১২ সালে স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল ৬০ শতাংশ। ওই কৌশলপত্রে বলা হয়েছিল, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমে আসবে এবং ২০৩০ সালে তা কমে ৩২ শতাংশ হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) নামে একটি পরীক্ষামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছিল।
পরিস্থিতি কী
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন অগ্রগতি নিয়ে ২০২২ সালে হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাতে দেখা যাচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হয়েছে। যেমন চিকিৎসা নিতে গিয়ে মানুষের নিজস্ব ব্যয় কমেনি, বরং বেড়েছে। ২০১২ সালে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল ৬০ শতাংশ, এখন তা ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ।
চিকিৎসা নিতে গিয়ে মানুষ আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কোনো পরিবারের মোট আয়ের ১০ শতাংশ যদি স্বাস্থ্য খাতে চলে যায়, তাহলে তাকে বিপর্যয়মূলক স্বাস্থ্য ব্যয় বলে। দেশের ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ এই বিপর্যয়মূলক ব্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
এই বিপর্যয়ের কারণে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ অর্থাৎ ৬২ লাখ ১১ হাজার মানুষ প্রতিবছর চিকিৎসা নিতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে।
২০২১ সালের নভেম্বরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণা তথ্য উপস্থাপনের সময় সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের গবেষকেরা বলেছিলেন, ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ ওষুধ। ব্যক্তির ব্যয়ের ৬৪ শতাংশ যায় ওষুধের পেছনে। চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে দেশের ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ খানা বা পরিবার হাসপাতাল, ক্লিনিক বা কোনো চিকিৎসকের কাছে যায় না। প্রয়োজন থাকলেও তারা সেবা নেওয়া থেকে বিরত থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই প্রতিবেদনে বর্তমান কত মানুষ নির্বাচিত কিছু সেবার আওতায় আছে, সেই তথ্যও দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ৭৩ শতাংশ দম্পতি পরিবার–পরিকল্পনা সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট, চারটি প্রসবপূর্ব সেবা পায় ৩৭ শতাংশ গর্ভবতী মা, ৯৮ শতাংশ শিশু ডিপিটি টিকা পায়। সংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ৮১ শতাংশ যক্ষ্মারোগী চিকিৎসা পায়, ২৩ শতাংশ এইচআইভি রোগী অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল চিকিৎসা পায়। অর্থাৎ শিশুদের টিকা দেওয়া ছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে সর্বজনীন সেবা নিশ্চিত হয়নি।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির মূল্যায়ন
দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবারগুলোকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মূল দায়িত্বে ছিল স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট। ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতী, ঘাটাইল ও মধুপুর উপজেলায় এসএসকে বাস্তবায়ন শুরু হয়। তিনটি উপজেলা হাসপাতালের অবকাঠামো ও রোগনির্ণয় পরীক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি ওষুধের নিশ্চয়তা, জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, চিকিৎসা নীতিনির্দেশনা (প্রটোকল) তৈরি করা হয়। হাসপাতাল পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। অংশীজনদের সম্পৃক্ত করা ও সচেতনতা বাড়ানোর কাজ হাতে নেওয়া হয়। তিনটি উপজেলায় আর্থিক সহায়তাদান ছিল এর মধ্যে অন্যতম।
বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় কিছু সেবার অস্তিত্ব পাননি গবেষকেরা। জনবল না থাকায় কালিহাতী উপজেলা হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে প্রসবসেবা ও পুষ্টিসেবা গবেষকদের চোখে পড়েনি। এ রকম আরও নানা দুর্বলতার তথ্য আছে ১৮২ পৃষ্ঠার মূল্যায়ন প্রতিবেদনে।
দীর্ঘ প্রস্তুতির পর তিনটি উপজেলায় এসএসকে বাস্তবায়ন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বেশ কিছু দুর্বলতা থাকার পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কর্মসূচি আরও কিছু উপজেলায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।বাংলাদেশে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ২০১২ প্রণীত হলেও কাম্য জনসংখ্যা পরিকল্পনা সামনে আসেনি। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ২০১৯ সালের তথ্য মতে, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮১ লাখ। মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.১ শতাংশ। ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ১০ কোটি ৪৭ লাখ। ২০১৯ সালের ১৭ জুন প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বর্তমান জনসংখ্যা ৭৭০ কোটি। আগামী ৩০ বছরে আরো ২০০ কোটি যোগ হয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে মোট জনসংখ্যা হবে ৯৭০ কোটি। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের অন্য পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৮০৪ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি, ১৯২৭ সালে ২০০ কোটি, ১৯৫৯ সালে ৩০০ কোটি, ১৯৭৪ সালে ৪০০ কোটি, ১৯৮৭ সালে ৫০০ কোটি এবং ১৯৯৯ সালে ৬০০ কোটি। ২০১১ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭০০ কোটিতে পৌঁছেছে। এই হারে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় এক হাজার কোটি এবং চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ ২১০০ সালে গিয়ে দাঁড়াবে এক হাজার ১০০ কোটিতে। কেউ কেউ মতামত দেন, পৃথিবীর যা সম্পদ রয়েছে তা সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ৩০০ কোটি লোকের জন্য যথাযথ। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভাব একসময় পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছিল। আবার জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে কৃষি বিপ্লব। বর্তমানে প্রযুক্তির বিকাশ ও উতপাদন বৃদ্ধির কারণে সব মানুষের খাদ্যের সংস্থান তেমন সমস্যা নয়। সমস্যা বিদ্যমান বৈষম্যমূলক ও পুঁজিবাদী অর্থনীতির একচেটিয়া আধিপত্য। এর ফলে অনেক সময়ই প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য মজুদের অভাবে নষ্ট হয়। হতাশার কথা হলো, খাদ্যাভাবে পতিত মানুষের কাছে যথাযথভাবে উদ্বৃত্ত খাদ্যও পৌঁছে না। অন্যদিকে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে জাতিগত দ্বন্দ্ব, বিবাদ, জোরপূর্বক অভিবাসন ও প্রভাব বিস্তারের ফলে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
৫২ বছর আগে মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পরিবার পরিকল্পনাকে একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৬৯ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের স্মারক ২৫৪২(১৯) ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়, বাবা-মা মুক্ত ও স্বাধীনভাবে সন্তান নেয়া এবং বিরতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ১৯৯৪ সালে কায়রোয় অনুষ্ঠিত জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ঘোষণাপত্রের ধারা ৮-এ বলা হয়, সন্তান সংখ্যা, দুই সন্তানের মাঝে বিরতি দেয়ার বিষয়টি ব্যক্তির অধিকার। একটি রাষ্ট্রের যে কয়েকটি মৌলিক উপাদান রয়েছে তার মধ্যে জনসংখ্যা অন্যতম। আর এই জনসংখ্যা কোনো দেশের জন্য সম্পদ আবার কোনো দেশের জন্য বোঝা। অনেক দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে সম্পদ হিসেবে বিচেনায় না করে বোঝা হিসেবে বিবেচনায় নেয়। তবে সমসাময়িক প্রযুক্তি এবং উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অতিরিক্ত জনসংখ্যা দক্ষ করতে পারলে তা সম্পদ পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, অপুষ্টি, পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ, বেকারত্ব, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার মূলে রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। আর এসব বিষয়কে সামনে রেখে জনসংখ্যা বিষয়ক সমস্যাগুলো সকলকে অবহিত করা এবং তা গুরুত্ব সহকারে সমাধানের প্রচেষ্টা করাই হলো দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে প্রতি মিনিটে বিশ্বে ২৫০টি শিশু জন্মগ্রহণ করে। যেসব রাষ্ট্র এই জনসংখ্যাকে বোঝা হিসেবে দেখে, তারা জনসংখ্যা বৃদ্ধিকেই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। তবে জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে কিছুটা বৈশ্বিক বিতর্কও আছে। অনেকের মতে পৃথিবীর যে সীমিত স¤পদ রয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি লোককে জায়গা দেওয়া সম্ভব। তাদের মতে ধীরে ধীরে জনসংখ্যা কমিয়ে আনা উচিত। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নত বণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে বিশেষজ্ঞ। জনবহুল সমস্যায় জর্জরিত চীন এক সন্তান নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। আবার কিছু দেশ ঋণাত্মক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের কারণে উল্টো বৃদ্ধি নীতিও গ্রহণ করেছে। পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই প্রবণতা খুব বেশি আগের নয়। মূলত কৃষি বিপ্লবই জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। এর পূর্বকার সময় খাদ্যাভাব পরোক্ষভাবে জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে নগরায়ন, বন উজাড়, জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে বৈশ্বিকউষ্ণতা ক্রমশই বাড়ছে। এরসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। সেইসাথে বিশ্বজুড়ে জাতিগত দ্বন্দ্ব ও বিবাদ নানা কারণে বাস্তুচ্যুতি ও জোরপূর্বক অভিবাসন তো রয়েছেই। এসব দুর্যোগ ও দ্বন্দ্বে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর এসব দিক বিবেচনায় বিশ্বে জনসংখ্যার ধনাত্মক কিংবা ঋণাত্মক হার যেটিই হোক তা বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণই বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান ২০২২ নামের এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্যসেবার জনবলে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এই জনবলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সবার ওপর রয়েছে মালদ্বীপ। জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরে ৭৫তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনের স্বাস্থ্য খাতের পরিসংখ্যান নিয়ে এই বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মূলত টেকসই উন্নয়ন অভিষ্টের (এসডিজি) স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অবকাঠামো বা আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকাই যথেষ্ট নয়। সেগুলো কার্যকরভাবে চালু রাখার জন্য পর্যাপ্ত ও দক্ষ জনবল থাকা জরুরি। এসডিজি অর্জনের জন্য তৈরি করা জনবল কৌশলপত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, এক হাজার মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য ৪ দশমিক ৪৫ জন চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ দরকার। বাংলাদেশে এক হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক আছেন শূন্য দশমিক ৬৭ জন। আর এক হাজার মানুষের জন্য নার্স ও মিডওয়াইফ আছেন শূন্য দশমিক ৪৯ জন। এক হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ আছেন ১ দশমিক ১৬ জন। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের চেয়ে ৭৪ শতাংশ চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ কম আছে। প্রতিবেদনে মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্যবিধি, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ, টিকাসহ ৫০টির বেশি সূচকের পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের তথ্যও ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে বছরে ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় অনিরাপদ পানিসংশ্লিষ্ট সমস্যার কারণে। পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় বিষক্রিয়ায়।
সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন রোগের মৃত্যুর তথ্যও প্রতিবেদনে আছে। অন্যের হাতে মৃত্যুর তথ্যও প্রতিবেদনে এসেছে। দেশে এক লাখ মানুষের মধ্যে বছরে ২ দশমিক ৮ জন খুন হয় অন্যের হাতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৩ লাখ। সেই হিসাবে, বছরে ৪ হাজার ৭৬৮ জন মানুষ অন্যের হাতে খুন হচ্ছে। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ১৩ জন মানুষ অন্যের হাতে মারা যাচ্ছে। প্রতিবেদনে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার ওপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ মানুষ সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার সূচক অনুযায়ী সেবার আওতায় আছে। এর অর্থ দেশের ৫১ শতাংশ মানুষ প্রয়োজনের সময় মানসম্পন্ন সেবা পায়। এর অন্য অর্থ হচ্ছে, ৪৯ শতাংশ মানুষ প্রয়োজনের সময় মানসম্পন্ন সেবা পায় না।
পাশাপাশি বলা হচ্ছে, ২৪ শতাংশ মানুষের পারিবারিক আয়ের ১০ শতাংশ চলে যায় চিকিৎসা খরচ মেটাতে। ৮ শতাংশের বেশি মানুষ পারিবারিক আয়ের ২৫ শতাংশের বেশি খরচ করে চিকিৎসার পেছনে। কয়েক বছর ধরে জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা বলে আসছেন, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে দেশের অনেক পরিবার দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে, অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রায়ই বলে থাকি, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। মানব উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসাবে স্বাস্থ্য সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫(ক) এবং ১৮(১) অনুসারে চিকিৎসাসহ জনগণের পুষ্টি স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।
সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত অন্যতম খাত স্বাস্থ্য। বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছরে এ খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের সাফল্য ছাড়াও অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির বিস্তার, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও মৃত্যুহার নিম্নমুখী, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীর নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩০-এ আনয়ন, গড় আয়ু বেড়ে ৭২.৮ বছর, অপুষ্টি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে দেশব্যাপী ভিটামিন এ ও ফলিক এসিড বিতরণ এসবই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সাফল্যের চিত্র।
বাংলাদেশে রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কে ক্রমাবনতি, অনাস্থা, অসন্তুষ্টি সমস্যাগুলো পুরনো। জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির গবেষণায় বলছে, সঠিক রোগ নির্ণয়, কার্যকর চিকিৎসা এবং চিকিৎসার ফলাফল বা ট্রিটমেন্ট আউটকাম নির্ভর করে চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্কর ওপর। চিকিৎসা সেবা নিয়েও রয়েছে বিপরীত বক্তব্য। আমরা মনে করি, সমস্যাগুলো পুরাতন ও বহুমাত্রিক হলেও দূরত্ব কমাতে আলোচনা, প্রয়োজনে মাসিক গণশুনানি ও চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি। জেলা হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা সরকারি হাসপাতালের তুলনায় প্রাইভেট চেম্বারে বেশি আগ্রহী, সকল শ্রেণির মানুষের জন্য ন্যূনতম ওষুধও পাওয়া যায় না। সরকারের ভিশন হলো, সুস্থ জাতি সমৃদ্ধ দেশ। মিশন হলো, স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়নের মাধ্যমে সবার জন্য গুণগত স্বাস্থ্যসেবা ও পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিত করা। তা নিশ্চিত করতে নিুলিখিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
ক) দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য স্বাস্থ্যবীমা পলিসির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সরকার প্রয়োজনে এ পলিসির প্রদানের উদ্যোগ নিতে পারে। এই প্রিমিয়ামের অর্থ চিকিৎসকসহ অন্যান্যদের বেতন ভাতা বাবদ বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রার্থী নাগরিকের অধিকার ও চিকিৎসকের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে।
খ) হাসপাতালগুলোতে দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধ ও গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিয়মিত গণশুনানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
গ) ডাক্তারদের স্বতন্ত্র বেতন-কাঠামো তৈরি করে তাদেরকে উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক নিশ্চয়তার বিধান করলে তাদের প্রাইভেট র্প্যাকটিসে অনেক সময় যে নৈরাজ্য চলে তা কিছুটা হলেও কমবে।
ঘ) উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ঙ) আত্মীয়করণ বদলি প্রথা বন্ধ করা প্রয়োজন।
চ) তরুণ চিকিৎসকের বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য প্রেষণা প্রদান প্রয়োজন।
ছ) ওষুধ, খাবার ও অন্যান্য সকল কেমিকেল, মেডিকেল মালামাল ক্রয়ে পিপিআর-৮ (ই-টেন্ডার) প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে। বাৎসরিক প্রয়োজন নির্ধারণ করতে হবে যেন ঘাটতি না পড়ে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। আমরা মনে করি, চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্যবিদ, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, পেশাজীবী সংগঠন, নাগরিক সমাজ বসে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের এখনই উপযুক্ত সময়। বিদ্যমান স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রাখা, একই সঙ্গে সেবার সঠিক মূল্যায়ন ও কার্যকর সেবা প্রদান বা সেবা গ্রহণে সার্ভিস প্রদান কার্যক্রমকে পর্যালোচনা করা, নতুন চাহিদার পরিসরে সুরক্ষা বা নিরাপত্তা প্রদান করা। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করা, নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনে অত্যাবশ্যকীয় সেবা খুঁজে বের করা ও বহুমুখী সেক্টর পরিকল্পনা করে অগ্রসর হওয়া। নীতিনির্ধারকদের এসব বিষয়ে কোভিডকালীন উপাত্তের শূন্যতা পূরণে কাজ করতে হবে। জন্ম-মৃত্যুর সঠিক ও সময়মতো উপাত্তের ভিত্তিতে পরিবর্তনকে বিবেচনায় নিয়ে সব ক্ষেত্রে প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
করণীয়
২০২০ সালে শুরু হওয়া করোনা মহামারি দেশের অর্থনীতিতে বড় আঘাত হানে। ইউক্রেন–রাশিয়া চলমান যুদ্ধের কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে আগের চেয়ে ওষুধের দাম বেড়েছে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে।
পরিশেষে বলতে চাই, ওষুধের দাম, চিকিৎসকদের রোগী দেখার ফি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তি পর্যায়ে খরচ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখা বা প্রয়োজন ছাড়াও অস্ত্রোপচারের পথ ধরায় চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। আবার অনেকে মনে করেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে জনপরিসরে আলোচনা কম। স্বাস্থ্যবিমার পক্ষে–বিপক্ষেও বিতর্ক হওয়া দরকার। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া দেশব্যাপী সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কেউ কেউ মনে করেন, বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পদ্ধতিতে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জন সম্ভব নয়।
লেখক : চিকিৎসক, কলামিস্ট ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
পাঠকের মতামত:
- প্রাক্–প্রাথমিকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর তারিখ ঘোষণা
- অবশেষে গোপালগঞ্জে স্বস্তির বৃষ্টি, জনজীবনে প্রশান্তি
- ফরিদপুর মধুখালিতে বজ্রপাতে ১ জনের মৃত্যু
- স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে ভোটার তালিকায় জালিয়াতি
- ধামরাইয়ে কালবৈশাখী ঝড়ে দেয়াল চাপায় ২ জনের মৃত্যু
- ৪৭ ঘণ্টা পর শতভাগ নিয়ন্ত্রণে সুন্দরবনের আগুন, কাজ চলবে আরও ৩ দিন
- কেন্দুয়ায় কাল বৈশাখীর ছোবলে লণ্ডভণ্ড স্কুলের ঘর
- শৈলকুপায় ছাগলে ঘাস খাওয়া কেন্দ্র করে হামলায় আহত ২
- কালিয়াকৈরে বন বিভাগের অভিযানে কয়লা তৈরির ২০ চুলা ধ্বংস
- অবশেষে সালথায় স্বস্তির বৃষ্টি
- যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ
- ‘ফরিদপুর সদরে ফকির বেলায়েতের মোটরসাইকেল মার্কার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে’
- গণমাধ্যম সাপ্তাহের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে রাজবাড়ীতে স্মারকলিপি প্রদান
- আমেরিকায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার
- গণমাধ্যম সপ্তাহের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে পাংশায় স্মারকলিপি প্রদান
- বেলকুচিতে জনমত জরিপে এগিয়ে বদিউজ্জামানের মোটরসাইকেল
- নদীতে গোসল করতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ গেল সনজিবের
- ‘উপজেলা নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলেই শাস্তি পেতে হবে’
- ‘বিএনপি বিদেশি প্রভুদের কথায় নির্বাচন বর্জন করেছে’
- লালপুরে পৌর আ.লীগ নেতা মঞ্জু হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
- চাটমোহরে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন আতাউর রহমান
- হাজীগঞ্জে সড়কে প্রাণ গেলো বাবা-ছেলের
- একীভূত না হয়ে নিজেরাই সবল হতে চায় ন্যাশনাল ব্যাংক
- ভাইয়ের চাপাতির কোপে জখম সাবেক র্যাব সদস্য মারা গেছেন
- দুর্নীতিবাজ সভাপতির অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবাদ সমাবেশ
- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জঙ্গি হামলার হুমকি
- টুঙ্গিপাড়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্বোধন
- ঝিনাইদহ-১ আসনের উপ-নির্বাচন স্থগিত
- কাপাসিয়ায় কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
- মঙ্গলবার থেকে প্রাথমিকে স্বাভাবিক রুটিনে ক্লাস
- ‘মিল্টন সমাদ্দার ইয়াবা সেবন করে শিশু ও বৃদ্ধদের পেটাতেন’
- বিদ্যুৎস্পর্শে নয়, শিশু মাইশাকে গলাটিপে হত্যা করেন মা
- নড়াইলে পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার
- নিজেকে নিরপেক্ষ রাখার ঘোষণা দিলেন নূর মোহাম্মদ এমপি
- নিজেদের প্রার্থীর বাইরে ভোট দিলে প্রতিহত করবেন সাবেক এমপি!
- সালথায় সাপের কামড়ে যুবকের মৃত্যু
- ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’ এ লন্ডন মাতাতে যাচ্ছেন জেমস
- ‘বিএনপি অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় আসতে চায়’
- রোহিঙ্গা মামলা চালাতে আর্থিক সহায়তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান
- গাছকাটা ও লাগানোর বিষয়ে বিধিমালা করতে রুল
- ‘সম্পদ অর্জনে এমপিদের পেছনে ফেলেছেন চেয়ারম্যানরা’
- মিল্টনের আশ্রমে থাকা ব্যক্তিদের দায়িত্ব নিচ্ছে শামসুল হক ফাউন্ডেশন
- আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো কোচ মেনত্তি আর নেই
- মাইকিং করে চিপসের প্যাকেট ও ডাবের খোসা কিনলেন মেয়র
- চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদককে শোকজ
- সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাজীবকে শুভেচ্ছা
- গোপালগঞ্জে ২৮ হাজার টাকার জাল নোটসহ ব্যবসায়ী গ্রেফতার
- গোপালগঞ্জে ৫ বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মাদ্রাসা ছাত্র গ্রেফতার
- বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পেলেন বিএনপি নেতা আমান
- ‘আওয়ামী লীগ ভাঙা কলসি, বাজছে বেশি’
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- সিলেটের ভ্রমণ কাহিনী
- শুধু প্রভাবশালীদের পক্ষেই আইন!
- অম্ল-মধুর যন্ত্রণায় অপু বিশ্বাস
- লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
- আমার বোন শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি : চিনে নিন কে এই বরকত!
- 'ইতিহাসের ইতিহাস'
- ধনী হওয়ার আট কার্যকর উপায়
- মেয়ে পটানোর কৌশল!
- লক্ষাধিক রাখাইন জনগোষ্ঠী আড়াই হাজারে নেমে এসেছে
- উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের নতুন যাত্রা ১ বৈশাখ
- লোভী মানুষ চেনার সহজ উপায়
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ১৪'তোমার সহজাত উদারতা তোমাকে আকাশের সীমানায় উন্নীত করলেও তোমার ঘনিষ্ঠ অনেকের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ তোমার নৃশংস মৃত্যুর পথে কোনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি'
- বাংলা বই পড়ার ওয়েবসাইট
- শাকিবের নায়িকা শ্রাবন্তী, অপুর নায়ক জিৎ
- মঠবাড়িয়ায় ৯ বছরের শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা
- হুমায়ূনের মৃত্যুর কারণ মদের পার্টি !
- দেশে ফিরছেন তারেকস্ত্রী জোবায়দা রহমান
- বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
- ইউটিউবে নায়লার আত্মপ্রকাশ
- নেপালের ভূমিকম্প প্রাকৃতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি !
- বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে !