E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মানব জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সমাজ সেবা সীমাহীন গুরুত্বের দাবিদার রাখে 

২০২৩ জানুয়ারি ০৪ ১৬:৪১:২৬
মানব জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সমাজ সেবা সীমাহীন গুরুত্বের দাবিদার রাখে 

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


জাতীয় সমাজসেবা দিবস ২০২৩ (২ জানুয়ারি, সোসবার) পালিত হয়েছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায়, দেশ গড়ব সমাজ সেবায়।১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ঢাকায় বস্তি সমস্যা উদ্ভূত হয়। এ সমস্যার সমাধানে ১৯৫৫ সালে জাতিসংঘের পরামর্শে সমাজকল্যাণ কার্যক্রম শুরু হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সমাজকল্যাণ পরিদপ্তর। পরবর্তীতে কার্যক্রমের পরিধি বিস্তৃতির কারণে ১৯৭৮ সালে এই পরিদপ্তরকে সরকারের একটি স্থায়ী  জাতিগঠনমূলক বিভাগ হিসেবে উন্নীত করা হয় এবং ১৯৮৪ সালে একে সমাজসেবা অধিদফতর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ৪ জুন বাংলাদেশ সরকার ২ জানুয়ারিকে সমাজসেবা দিবস হিসাবে ঘোষণা দেয়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অসহায়, অনগ্রসর মানুষকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করতে ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য দেশ পুনর্গঠনের শুরুতেই সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদানসহ সুদূরপ্রসারী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি প্রবর্তন এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য পল্লী মাতৃকেন্দ্র শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। শিশুদের সুরক্ষায় প্রণয়ন করেন শিশু আইন, ১৯৭৪।’ আর তার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত শিশু, অনাথ প্রতিবন্ধী, কিশোর-কিশোরী, স্বামী নিগৃহিতা নারী ও প্রবীণ ব্যক্তিসহ সহায় সম্বলহীন মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নে লাগসই ও টেকসই প্রকল্প গ্রহণসহ সামজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ৫৪টি জনহিতকর কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ১ কোটি ৮ লাখ উপকারভোগীর ভাতা ও অনুদানের টাকা সরাসরি দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে জি-টু-পি পদ্ধতিতে। আর বর্তমানে চা-শ্রমিক, হিজড়া, বেদে ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ, বিশেষ ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করছে। ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগী এমনকি অগ্নিদগ্ধদের জন্য আর্থিক সহায়তাও প্রদান করা করতেছে। হাসপাতাল থেকে সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবার প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছে। ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তিসহ ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্যও বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শিশু সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে টোল ফ্রি চাইল্ড হেল্প লাইন ১০৯৮ সেবা প্রচলন করেছে।

আজকের বিষয় নিয়ে কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গবেষক ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন- পৃথিবীতে কল্যাণ ও হিতকর একটি কাজ সেবা। সেবার বিভিন্ন খাত থাকলেও সমাজসেবা অন্যতম।ইদানীং একটা মানসিক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছি। যত আপ্তবাক্য ও হেদায়েতি বয়ান আমার মতো অনেক অভাজন পত্রিকার মাধ্যমে করে থাকেন, এর ভালো কিছু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আদৌ আমলে নেন কিনা? মানবজীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সমাজসেবা সীমাহীন গুরুত্বের দাবিদার। সাধারণত সমাজের অসুবিধাগ্রস্ত নিম্নশ্রেণীর মানুষের কল্যাণে গৃহীত সেবামূলক কার্যক্রমকে সমাজসেবা বলা হলেও আধুনিক ধারণামতে, সমাজসেবা হচ্ছে- সমাজে মানুষের নিরাপত্তা ও মঙ্গলার্থে গৃহীত যাবতীয় কার্যক্রমের সমষ্টি।

বর্তমানে সমাজসেবাকে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাতিসংঘের সংজ্ঞানুযায়ী, ‘ব্যক্তি ও তার পরিবেশের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তাদানের লক্ষ্যে গৃহীত ও সংগঠিত কাজের সমষ্টিই সমাজসেবা।

এছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও সমস্যা প্রতিরোধকল্পে গৃহীত ও সংগঠিত যাবতীয় কার্যক্রমও সমাজসেবার অন্তর্ভুক্ত। আর মানুষ পরিবেশের কারণে, ষড়রিপুর আধিক্যে মানুষ নামের কলঙ্ক হয়, পঙ্কিলতার সাগরে ডুবে যায়, আবার মানবিক গুণগুলো জাগিয়ে তুলতে পারলে মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ ফিরে পায়, মানুষের মতো কর্ম করে, আচরণ করে। মানুষের অন্তর্নিবিষ্ট স্বভাব ছাড়াও সুশিক্ষা ও যোগ্য প্রশিক্ষণ এবং সুস্থ সমাজব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষকে ‘মানুষের মতো মানুষ’ রূপে গড়ে তোলা যায়। এভাবেই সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন শিক্ষিত সমাজ, আদর্শ রাষ্ট্র ও টেকসই জাতি গড়ে ওঠে। সমাজ উন্নয়নে এদের কাজে লাগানো যায়। ব্যক্তির সুষ্ঠু চিন্তাধারা সামষ্টিক সুস্থ চিন্তার উৎস। ব্যক্তির মানসিক উন্নতির মধ্যে সামষ্টিক উন্নতি নিহিত। তাই এদের দিয়ে ব্যক্তির মানসিক উন্নতির চেষ্টা করতে হবে। ব্যক্তির উন্নতির মধ্য দিয়ে সামষ্টিক উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে হবে।

সমাজসেবা করেন। তাদের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। জনসেবা ও সমাজসেবাও একটি অনিবার নেশা। এর মজা যিনি পেয়েছেন, তিনিই মজেছেন। এদেশে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত একটি ধার্মিক জনগোষ্ঠী আছে, তারাও একটি সামাজিক শক্তি, তারা পরকালের মুক্তি চান। তাদের অনেকেই জীবনের উদ্দেশ্যকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, ইহকালকে উপেক্ষা করে, কখনো নিরর্থক জেনে পরকালের মুক্তির নেশায় ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছেন। আমি তো দেখি, ইহকালের শিক্ষা, কর্ম, চিন্তাচেতনা, সমাজসেবা, জনসেবা ও সৃষ্টিসেবার মধ্যেই ইহকালের ইবাদত, পরকালের মুক্তি। পুরো ধর্মদর্শন এই সৃষ্টি, কর্ম ও সৃষ্টিসেবার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে। তারাও তো একটু ভেবে দেখে সমাজসেবা, মানবসেবা ও সৃষ্টিসেবায় যোগ দিতে পারেন। সৃষ্টিসেবার মধ্যে পরকালের মুক্তি খুঁজতে পারেন। স্রষ্টায় একান্তভাবে বিশ্বাসী প্রত্যেক মানুষকেই সৃষ্টিসেবায় ও মানবসেবায় আনা সম্ভব।

তাবলিগ জামাতের অসংখ্য ধর্মভীরু মুসলমান দেশ-বিদেশে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে ধর্ম প্রচারের কাজে মন দিয়েছেন। সমাজের অনেকে তাদের পথ অনুসরণ করে নামাজ-রোজা, হজ-জাকাত ও তসবিহ-তেলাওয়াতের কাজে রত হয়ে পরকালের পথে নিজেকে সঁপে দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশই সৃষ্টির উদ্দেশ্য-শিক্ষা, জীবন-জীবিকা-কর্ম, সমাজ গঠনকে উপেক্ষা করে চলেছেন। প্রতিপালকের সৃষ্টিকর্ম, দুনিয়াদারি, সৃষ্টির সেবা, জীবনকর্ম ও পেশাকে একেবারে মূল্যহীন-নিষ্কর্ম করে ছেড়েছেন। যুগ যুগ ধরে তারা সমাজে সুশিক্ষা, ন্যায়নিষ্ঠা, হতদরিদ্র মানুষের জন্য সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন, আর্তমানবতার সেবা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষিত সমাজ গঠন ও সত্য কতটুকু প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন-এসব কথা নিয়ে আজ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, এগুলোও ‘দ্বীনের খেদমত’ ও ‘হক্কুল ইবাদ’-পরকালের পাথেয়। তাদের বুঝিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক সুশিক্ষা, ন্যায় কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান জানানো, দুস্থ সহায়তা ও দারিদ্র্য-মানবতার সেবার জন্য ‘শিক্ষা সেবা সমাজের’ একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে আনতে পারলে সমাজ নিঃসন্দেহে উপকৃত হয়, একইসঙ্গে তাদের পরকালের মুক্তিও মেলে।

এক সময় বাম রাজনীতির ধারা এদেশের জনগোষ্ঠীর একটি অংশকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল। উদ্দেশ্য সমাজসেবা করা; বঞ্চিত, নিপীড়িত, মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করা। গণমানুষের মুক্তি ও শোষণহীন সমাজ গঠনের জন্য স্বার্থত্যাগী ও ভুক্তভোগীরা এতে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্বাধীনতা-যুদ্ধের কিছুদিন পরই বাম ধারার রাজনীতির মধ্যে মতাদর্শগত ভিন্নতার কারণে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেল। প্রভাবশালী অনেক নেতাই দলীয় আদর্শকে মনে মনে বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থের দিকে ঝুঁকে পড়লেন। অন্তরে-প্রকারান্তরে বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে গেলেন। দলীয় কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হতে থাকলেন। ক্রমান্বয়ে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে বাম রাজনীতির মেহনতি মানুষের মুক্তির স্বপ্ন বিদায় নিল। শেষ বিদায়ের মৃদু রক্তিম রশ্মির চিক্কন মনোহর ছোঁয়া এদেশের পশ্চিম গগনের অধরেও কিঞ্চিৎ ধরা দিয়ে আবার হারিয়ে গেল। মাঝখান থেকে অসীম জীবনকে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের নিগড়ে বাঁধতে গিয়ে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে অকাতরে প্রাণ দিতে হলো। বাম নেতাদের অনেকে বিভিন্ন ডান দলে অনুপ্রবেশ করতে লাগলেন। ত্যাগী কর্মীরা বিনা প্রতিবাদে মনের দুঃখ মনে নিয়ে যার যার পথে রুজি-রোজগারের কাজে নেমে পড়লেন। তাদের মধ্যে আর্তমানবতার সেবা, মেহনতি মানুষের জন্য ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার মনোভাব এখনো বিদ্যমান। পার্থক্য এটুকুই যে, যেসব নেতাকর্মী ধর্মকে সমাজ থেকে বিতাড়িত করে ধর্মহীন বাম-রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই এখন সময় অতিক্রমণে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ ভুলে গিয়ে নামাজ-রোজার আস্তিক মোড়কে নিজেদের পরকালকে সংরক্ষিত করে চলেছেন। কথা হচ্ছে, সুস্থ মানসিকতার বিকাশ ছাড়া মানবসভ্যতা ও সৃষ্টিকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। মানুষের জন্য সমাজ, রাষ্ট্র ও সৃষ্টির এত আয়োজন।

স্রষ্টার এ প্রতিনিধিকে প্রচলিত আইনে বিচার না করে বিপ্লবের নামে অন্যায়ভাবে নিধন করার মতবাদকে সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন কোনো মানুষই মেনে নিতে পারেন না। মানুষকে বিভক্ত করে, নিধনযজ্ঞ চালিয়ে মানবতার মুক্তি আসে না। মতবাদ তখন অকেজো হয়ে যায়। অর্থনৈতিক ভিত্তিতে সামাজিক বিভক্তি সমাজে প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। অর্থনৈতিক ভিত্তিও সময়ের ব্যবধানে আপেক্ষিক। বাম রাজনীতির রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের অনেক ব্যবস্থাকে আমাদের দেশের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, সামাজিক বুনন ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সংশোধিত মডেলে প্রয়োগ করতে পারলে সাধারণ মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হতো এবং দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকত বলে আমার বিশ্বাস। তবে সেখানে সততা, নৈতিকতা, শিক্ষা ও ধর্মীয় আদর্শ থাকা জরুরি ছিল। এগুলো সামাজিক দ্বন্দ্বকে মিনিমাইজ করে। সমাজসেবা ও মেহনতি মানুষের জন্য আত্মত্যাগে উজ্জীবিত অনেকেই বর্তমানে পরপারের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আবার অনেকে এ সমাজেই বিভিন্ন পেশায় রয়ে গেছেন। তাদের অনেকের মনে বঞ্চিত মানুষের মুক্তির নেশা, মানবতার ধর্ম রয়ে গেছে। তাদের সমাজসেবা ও শিক্ষিত জাতি গড়ার আদর্শে আবার জাগিয়ে তুলতে পারলে তারাই শিক্ষিত সমাজ গঠনে অংশ নিতে পারেন।

সমাজে আরও কিছু পক্ষ আছে। তাদের মধ্যে একটা শ্রেণি হচ্ছে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া ব্যক্তিরা। এর একটা অংশ সুশিক্ষিত-যারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, সামরিক বাহিনীতে কর্মকর্তা পদে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। তাদের অর্জিত জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা থেকে সমাজ সেবা পেতে আশা করে। দেশের আনাচে-কানাচে তারা ছড়িয়ে আছেন। তাদের অনেকে জীবনের পড়ন্ত বিকালে স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে সমাজকে কিছু দিয়ে যেতে চান। সমাজে তারা শ্রদ্ধেয়। সমাজ তাদের চায়। শিক্ষিত সমাজ গড়ে তুলতে তাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তাদের খুঁজে খুঁজে সমাজ উন্নয়নের কাজে ভেড়ানো দরকার। একটা নীতিমালা হাতে তুলে দেওয়া দরকার।

সমাজের পরতে-পরতে আরেকটি পক্ষও মিশে আছে-যাদের শিক্ষা আছে, জ্ঞান আছে। ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা আছে। সমাজ তাদের কথা এখনো নেয়। তাদের একটা অংশ রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করে আত্মমর্যাদা ভুলে বিপথে গেছে। বাকিরা তো ঠিক পথে আছেন। সমাজে তারা শিক্ষক হিসাবে পরিচিত। তারা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার পাশাপাশি সমাজ-শিক্ষার দায়িত্ব নিতে পারেন। জ্ঞান-গরিমা, শিক্ষা, চিন্তাচেতনা, নতুন নতুন ভাব-ধারণা (আইডিয়া), দিকনির্দেশনা দিয়ে জাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারেন। সমাজের মানুষকে সুশিক্ষা দিতে পারেন। আমার বিশ্বাস, সুষ্ঠু পরিবেশ ও সমাজ গঠনের অনুকূল পরিবেশ পেলেই তারা এগিয়ে আসবেন।

পরিশেষে বলতে চাই, সামাজিক ন্যায়বিচার যখন সমাজ থেকে উঠে যায় তখন সমাজ থেকে সুখ শান্তি স্বচ্ছন্দ ও গণমানুষের নিরাপত্তা চলে যায়। সেখানে তারাই ভালো থাকে যারা ক্ষমতাশীল ও তাদের ছায়াতলে অবস্থান করে। অথচ সংবিধান প্রণেতাগণ সংবিধানের প্রস্তাবনায় অঙ্গীকার করেছেন যে, ‘আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।আর সামাজিক সুশিক্ষা ও সুস্থ সমাজ গঠনকে যদি আমরা একটি সামাজিক আন্দোলন হিসাবে গ্রহণ করি, বিভিন্ন সমাজ-সংগঠনকে যদি এ লক্ষ্যে ব্যবহার করি, তাহলে এদেশে সামাজিক সুশিক্ষার অভাব হওয়ার কথা নয়। উল্লিখিত সামাজিক এসব পক্ষকে একত্র করে একটা অরাজনৈতিক প্ল্যাটফরম তৈরি করতে পারলে, সামাজিক এ স্বেচ্ছাসেবী সমাজসংগঠন চেষ্টা করলে, রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেক অল্প সময়ে এদেশে সুশিক্ষা ও সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব।

লেখক : সংগঠক ও কলাম লেখক, প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test