E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মেট্রোরেল এখন স্বপ্ন নয় বাস্তব

২০২৩ জানুয়ারি ০৫ ১৬:৪১:০০
মেট্রোরেল এখন স্বপ্ন নয় বাস্তব

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


মেট্রোরেল মূলত একটি দ্রুত পরিবহণব্যবস্থা যা বিশ্বের অনেক বড় শহরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় গণপরিবহণের জন্য ‘ঢাকা মেট্রো রেল’ হলো ‘জাইকা’-এর অর্থায়নে একটি সরকারি প্রকল্প। প্রকল্পটি মেট্রো রেল বিশ্বের অনেক বড় শহরে গণপরিবহণের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। ১৮৬৩ সালে লন্ডনে প্রথম দ্রুত ট্রানজিট সিস্টেম চালু করা হয়েছিল, যা এখন ‘লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড’-এর একটি অংশ। ১৮৬৮ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এনওয়াইতে তার প্রথম দ্রুত ট্রানজিট রেলব্যবস্থা চালু করে এবং ১৯০৪ সালে, নিউইয়র্ক সিটি সাবওয়ে প্রথমবারের জন্য খোলা হয়েছিল। এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে, জাপান হলো প্রথম দেশ যেটি ১৯২৭ সালে একটি পাতাল রেলব্যবস্থা তৈরি করে। ভারত ১৯৭২ সালে কলকাতায় তার মেট্রো সিস্টেম নির্মাণ শুরু করে। এর পরে, ভারত অন্যান্য শহরেও মেট্রো রেলব্যবস্থা তৈরি করে। বর্তমানে, বিশ্বের ৫৬টি দেশের ১৭৮টি শহরে ১৮০টি পাতাল রেলব্যবস্থা চালু রয়েছে। অপেক্ষার প্রহর শেষে আলোর মুখ দেখল স্বপ্নের মেট্রোরেল। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রবেশ করেছে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ে। মেট্রোর কল্যাণে রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনের পাশাপাশি নগরবাসীর জীবনমান আরো সহজ হবে।

যেখানে ১০০ বছরের পরিকল্পনাও করতে হয়েছে বা করা হয়েছে, যা আগামী ১০০ বছর পরিবেশ ও প্রতিবেশকে রক্ষার জন্য পথ দেখাবে। আমরা যে একটা নতুন যুগে প্রবেশ করছি নতুন নতুন প্রকল্প তৈরির মাধ্যমে সেটা আমাদের টেনে নিয়ে যাবে। একটা উন্নত দেশ গড়ে তোলার জন্য যা যা অবকাঠামো প্রয়োজন, এগুলো হবে তার ভিত্তি। আমরা একটা উন্নত দেশ হতে পারব। ২০৪১ বা তার নিকটতম পরবর্তী সময়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব। এ প্রকল্পগুলোর সাফল্য প্রমাণ দেয় যে আমরা যেখানে স্বপ্ন নিয়ে ্ন পথযাত্রা চিহ্নিত করেছি পরিকল্পনাগুলোতে, রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ বা ১০০ বছরের পরিকল্পনা, এসবই হলো দেশকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেয়ার সুচিন্তিত পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি নিয়ে যাবে

ট্রাফিক সিগন্যালে যে সময় ব্যয় হয় মেট্রোরেলে সেই সময় কমে আসবে। যানজট, বায়ু দূষণ, গাড়ির নির্গত গ্যাস কমে যাবে। স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব কমবে। সব মিলিয়ে বহুমুখী প্রভাব পড়বে। সব মিলিয়ে এটা আমাদের অর্থনীতিতে ১ শতাংশ বা তার বেশি প্রবৃদ্ধিতে যোগ হবে। এটি অর্থনীতির জন্য একটি সুখকর বার্তা। আর তার থেকেও বড় কথা, এতজন মানুষের যে ঢাকা শহরে চলাচল আরামদায়ক হচ্ছে সেই বিষয়টি অভূতপূর্ব আমি মনে করি। জীবনমান বাড়ছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে, সেই ধরনের সুযোগ-সুবিধাও তো দিতে হবে। এসবই পরিপূরক। আমাদের আয় বাড়ছে, রুচি বাড়ছে, সে ক্ষেত্রে এ প্রকল্প আমাদের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে শৃঙ্খলা তৈরি করবে, যে টিকিট দিয়ে আমি যাচ্ছি, টিকিট দিয়ে আমার গেট পার হতে হচ্ছে। এ বিষয়গুলো মানুষকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসবে। অর্থনীতির দিক থেকেও বেশ স্বচ্ছতা আসবে কারণ টাকার লেনদেন স্বচ্ছ হবে, এখানে অপব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই, যত টিকিট কাটা হবে ততটাই কোষাগারে জমে যাবে। টিকিট না দিলে গেট খুলবে না, একজন যাবে গেট খুলবে, তারপর গেলেই আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাবে। আরেকজন পরে টিকিট দিয়ে ঢুকবে। এটা বিদেশেও আছে। বিদেশেও নিয়ন্ত্রিত হয় এভাবেই।

বর্তমান সরকার অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ। এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে আপনাদের কোন শক্তি কাজ করেছে? আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ প্রথমে ব্রিটিশরা শোষণ করেছে। এরপর পাকিস্তানিরা আমাদের চরম দারিদ্র্য করে ছেড়েছে। বৈষম্যই ছিল তাদের প্রধান হাতিয়ার। এ সময় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ার পর মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল এ দেশ একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ হবে। দুঃখজনক সত্য হলো, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর বাংলাদেশ আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। চরম দারিদ্র্য, দুঃশাসন, স্বপ্নভঙ্গ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর শাহাদত থেকে জাতি ভিন্ন কিছু পায়নি। একটা সময় বিশ্বের বুকে বাঙালি ভিক্ষুক ও মিসকিন জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। সে দেশটিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আসার পর নতুন গতি সঞ্চারিত হয়। কিন্তু আমাদের জন্য এমন স্বপ্ন দেখা দুরূহু ছিল—এ দেশের মেট্রোরেলের মতো অবকাঠামো নির্মাণ হবে এবং বাংলাদেশের জনগণ মেট্রোরেলে চড়ে নিত্যনৈমিত্তিক কাজ করবে। আজ যখন এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করল, এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে, সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার কাছে সত্যিই খুব গর্ববোধ হচ্ছে। ভাবতেই ভালো লাগছে, আমাদের সেই হতদরিদ্র দেশের মানুষ আজ মেট্রোরেলের অধিকারী হলো।

এটা সত্যিই খুব উপভোগের বিষয় যে, উন্নত বিশ্বের মানুষ যে সুবিধা ভোগ করে নিয়মিত যাতায়াত করত, সেটা এখন আমাদের দেশের মানুষও ব্যবহার করবে। সরকারের এ অগ্রগতির ফলে আমরা গর্বিত জাতির মর্যাদা পাব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এ দেশকে সত্যিকারের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার, সে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, সুপরিকল্পিত লক্ষ্য নিয়েই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু হলো, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল হলো, রাজধানীর বুকে মেট্রোরেল হলো, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে, শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। আমাদের খাদ্য এখন আমরা উৎপাদন করি। আমাদের শতভাগ ছেলে-মেয়ে স্কুলে যায়, আমাদের সব গ্রামে এখন স্কুল আছে। গৃহহীন মানুষের দেশ যেন কেউ আমাদের বলতে না পারে সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গৃহহীনদের উপহারের ঘর দেয়া হচ্ছে। এ কর্মসূচিও প্রায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে। এসব সফলতা দেখে আমরা স্বপ্ন দেখি আগামী প্রজন্ম এ দেশকে অনেক উন্নত দেশ বানাবে।

এক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যে ফাউন্ডেশন দরকার সে ফাউন্ডেশন কিন্তু হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিল, বাঙালি জাতি যে স্বপ্ন দেখেছিল সে স্বপ্ন এখন বাস্তব হয়ে ধরা দিচ্ছে। আবারো বলছি, এসব কারণে এ দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে গর্ববোধ করি। এ গর্ববোধ মন্ত্রী হিসেবে নয়। এখন আমাদের ফকির-মিসকিনের জাতি কেউ বলবে সে সুযোগ নেই। অন্যদিকে অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্পায়ন, ডিজিটালাইজেশন এসবের কল্যাণে আজ আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮১৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ফলে আমাদের আগামী স্বপ্নগুলোও বাস্তবায়নের বিষয়ে এখন আমরা আস্থা রাখতে পারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ,তিনিই আমাদের শেষ আস্থার প্রতীক।


লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test