E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরেণ্য সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত: চেতনার বাতিঘর  

২০২৩ জানুয়ারি ০৮ ১৬:০৯:০৬
বরেণ্য সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত: চেতনার বাতিঘর  

মানিক লাল ঘোষ


বরেণ্য সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত। এই প্রজন্মের অনেকের কাছেই নামটি অজানা। এমনকি তরুণ প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাছেও। দেশমাতৃকার এই কৃতিসন্তান সন্তোষ গুপ্ত সাংবাদিকতা ও সাহিত্যে অবদান রাখায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর)সহ একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদক, মাওলানা তর্কবাগীশ পদক, জহুর হোসেন স্মৃতি পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

সব সময়ই স্রোতের বিরূদ্ধে অবস্থান নিতেন সন্তোষ গুপ্ত। ১৯২৫ সালের ৯ জানুয়ারি ঝালকাঠির কীর্ত্তিপাশার রুনসী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বরেণ্য ব্যক্তিদের ভৌগোলিক সীমারেখায় আটকে রাখা যায় না। তাঁরা দেশ ও জাতির সম্পদ। তারপরেও একই জেলায় জন্মগ্রহণ করায় শ্রদ্ধাভাজন সন্তোষ গুপ্তকে নিয়ে আমার গর্বের মাত্রাটা একটু বেশি । ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় হিন্দুরা পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমান, আর মুসলমানরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্ববঙ্গে আসেন। কিন্তু সন্তোষ গুপ্ত কলকাতা থেকে জন্মভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। মাতৃভূমির প্রতি তাঁর এই টান আর দেশপ্রেম এই প্রজন্মের কাছে নিঃসন্দেহে অনুকরণীয়।

সন্তোষ গুপ্ত ছিলেন একাধারে কবি, লেখক, সাংবাদিক, সমালোচক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার। কবিতা, শিল্পকলা, চিত্রকলা, রাজনীতি, সাহিত্য, সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ১৮টি গ্রন্থ রয়েছে। সম্পাদনা করেছেন বহু গ্রন্থ।

উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় তিনি ছিলেন আজাদ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক। পরে যোগ দেন 'দৈনিক সংবাদ' -এর বার্তা সম্পাদক হিসেবে। সাহসিকতা আর দেশপ্রেমের পরিচয় দেন দায়িত্ব পালনকালে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দৈনিক সংবাদে সিনিয়র সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৪ সালের ৬ আগস্ট মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মারা যান তিনি।

তাঁর ‘অনিরুদ্ধের কলাম’-এ দীর্ঘ দুই যুগে (১৯৭৮-২০০২) সহস্রাধিক কলাম লিখেছিলেন। এর বাইরেও তাঁর লেখা সম্পাদকীয় ও অন্যান্য প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা ছিল অসংখ্য।

সাংবাদিকতা পেশায় আসার আগে বামধারার রাজনীতির সংগে যুক্ত ছিলেন সন্তোষ গুপ্ত। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে অনেক প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হয়েছে কর্মজীবনে। এমনকি হারাতে হয় চাকরিও। রাজনৈতিক কারণে তাকে একাধিকবার জেলেও যেতে হয়েছে। ১৯৭১ সালে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য বিভাগে কর্মরত ছিলেন।

১৯৫৭ সালে সাংবাদিকতায় এসে তিনি প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে যুক্ত ছিলেন এই গণমাধ্যম জগতে। কর্মজীবনে সততা , দায়িত্ববোধ আর দক্ষতার যে নিদর্শন রেখে গেছেন, তা আমাদের চলার পাথেয়। সন্তোষ গুপ্ত সবসময় সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার অসংগতি, দুর্বলতা এবং রাজনীতিতে ডান আর বামের বিচ্যুতি নিয়ে খুবই অসন্তষ্ট ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর জেলের অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেন সন্তোষ গুপ্ত। এ সময়ে বামদের সংকীর্ণতায় ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। তথাপিও বিচ্যুত হন যৌবনের বিশ্বাস আর চেতনার বাম রাজনীতি থেকে। সেই অসন্তোষের প্রকাশ ঘটতো তাঁর বিভিন্ন লেখনীতে।

সাম্প্রদায়িকতা আর অসত্যের বিরূদ্ধে আমৃত্যু রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। তাঁর দেশপ্রেম, সততা আর অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধ আমাদের অনুপ্রাণিত করুক আগামী দিনে চলার পথে। বিনম্র শ্রদ্ধা দেশ বরেণ্য এই গুণীজন সন্তোষ গুপ্তের স্মৃতির প্রতি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট, সহ সভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test