E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে এককেন্দ্রিক অবস্থানে আসতে হবে

২০২৩ জানুয়ারি ১১ ১৯:১০:২০
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে এককেন্দ্রিক অবস্থানে আসতে হবে

আবীর আহাদ


বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলাম তুষার, সাজ্জাদ বিশ্বাস, হাজী বাবলু, তিতুমীর আহমেদ প্রমুখ বেশ কিছুদিন দিন যাবত শতধাবিভক্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দৈন্যদশা সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। তারা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এককেন্দ্রিক আন্দোলনের ওপর যে গুরুত্বালোপ করে আসছে, সে-বিষয় দুটি কথা বলতে আজকে আমার এ লেখনি। প্রসঙ্গটির অবতরণ করার পূর্বে কিছুটা ভূমিকা কষতে গিয়ে লেখাটা কিঞ্চিত দীর্ঘ হতে বাধ্য।

মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভুয়ামুক্ত তালিকাসহ কিছু মৌলিক দাবি সম্পর্কে দেশের সব প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত যুব-জনতা সচেতন হয়ে উঠেছেন। এসব দাবির মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা এবং তাদের পরিবারের সার্বিক কল্যাণ নিহিত। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে, অথচ স্বাধীনতা আনায়নকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া তো হলোই না, উপরন্তু গোঁজামিল সংজ্ঞায় এখনো মুক্তিযোদ্ধা পয়দা করা হচ্ছে। উপরন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহঋণ, চিকিত্সাসেবা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, সন্তানদের কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের নির্লিপ্ততায় মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় মর্যাদা ও ভাবমূর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কহীন কেউ কেউ যখন মুক্তিযোদ্ধা খেতাবে ভূষিত হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি তারা হাতিয়ে নিচ্ছে, তখন একদিকে যেমন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা অপমানিত হচ্ছেন, অপরদিকে দেশের জনগণও অবাক হচ্ছেন। এসব জালিয়াতি দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে আজ বেশ কটি বছর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মরা নানান আন্দোলন-সংগ্রাম, বাদ-প্রতিবাদ করলেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তথা সরকার কোনো ভ্রুক্ষেপই করছে না। এ অবস্থায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সর্বাত্মক আন্দোলনে মাঠে নামা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। আর সর্বাত্মক আন্দোলনটি গড়ে তুলতে হলে প্রকৃত সব মুক্তিযোদ্ধা ও প্রজন্মদের মধ্যে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং সেই সাথে সবাইকে একটি প্লাটফর্মে এসে জড়ো হয়ে এককেন্দ্রিক আন্দোলনে সামিল হতে হবে। অন্যথায় কোনো আন্দোলন গড়ে উঠবে না, দাবি-দাওয়াও পূরণ হবে না। এ অবস্থায় চরম হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পরপারে চলে যাওয়ার দিনই শুধু গুণতে হবে!

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ঐক্য নেই বলেই তাদের সন্তান ও প্রজন্মের মধ্যেও অনৈক্য বিরাজ করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ২/৪টি মৌলিক সংগঠন আছে, অথচ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্মের সংগঠন সংখ্যা নাকি তিন শতাধিক। ফলে ব্যক্তিস্বার্থ ও রাজনৈতিক কারণে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রজন্মরা একটি অভিন্ন প্লাটফরমে ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না! তবে সন্তান ও প্রজন্মের মধ্যকার অনৈক্য ও দূরত্ব ঘুচিয়ে তাদেরকে একটা অভিন্ন প্লাটফরমে সমন্বিত করা যেতে পারে মনে করে আমি বেশ কিছুকাল পূর্বে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বহুধা বিভক্ত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্মবিষয়ক সংগঠনের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির একটা পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। তাতে বেশ ক'টি সন্তান সংগঠনের সাথে আমাদের আলোচনাও হয়। দু'একটি বড়ো সংগঠন কী কারণে সাড়া দেয়নি তা জানা না গেলেও তারা আমাদের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদও জানিয়েছিলো। কিন্তু আলোচনার মাঝেই বুঝা গেলো, তারা মুখে ঐক্যের কথা বললেও কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। আমরা সব সন্তান সংগঠন নিয়ে ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে একটি একক ফেডারেশন গড়ার প্রস্তাব দিলে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করে। বিশেষ করে কে ঐ ঐক্যবদ্ধ ফেডারেশনের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হবে, এ নিয়ে কেউই স্পষ্ট ধারণা দেয়নি। অপরদিকে প্রতিটি সংগঠন একে-অপরের বিরুদ্ধে নানান বিষোদগার করে! তাতে আমাদের মনে হয়েছে, যার সংগঠন যতোই ছোট বা বড়ো হোক না কেনো, কেউ কাউকে কোনো প্রকার মূল্যায়ন করে না, সবাই মূল নেতৃত্বে তথা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হতে চায়। আমরা এসব সংগঠনের নেতা ও সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধা-পিতাদের এমআইএস তথ্য প্রদান করার কথা বললে, অনেকেই 'দিচ্ছি' বলে দেয়নি বা আর ফিরে আসেনি! বেশ কিছুদিন এ প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে আমরা স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, এসব সন্তান ও প্রজন্ম সংগঠনের মধ্যে অনেক অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানের অনুপ্রবেশ ঘটে গেছে! ফলে বিশেষ করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা উচ্ছেদ বিষয়ক দাবিতে তাদের কারোর কোনোই সায় পাওয়া যায়নি! অথচ এই দাবিটি সব প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রাণের দাবি। অতঃপর আমরাও নিরাশ হয়ে চুপসে যাই।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ বা অনৈক্য নেই। যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও ভুয়া সৃষ্টির কারিগর তারাই আকারে, ইংগিতে, লেখায় ও বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কৃত্রিম ভেদাভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি করে রেখেছে যাতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা এক কেন্দ্রে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। কারণ ভুয়া ও ভুয়ার কারিগররা ভালো করেই জানে যে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধ হলে তাদের অস্তিত্ব ও প্রভাব থাকবে না। অপরদিকে সরকারের মধ্যকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী একটি অদৃশ্য চক্রও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। এ চক্রটিও জানে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধ হলে দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ডসহ সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও লুটপাট চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে তারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের কারিগরদের নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সবর্মোট সংখ্যা দেড় লক্ষের নিচে। এখন জীবিত থাকতে পারেন ষাট হাজার । অথচ সরকারি তালিকায় গেজেটধারী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দু'লক্ষের অনেক ওপরে। এর মধ্যে ভুয়াদের সংখ্যাই এখন বেশি বলে মনে হয়। এদের সৃষ্টিকর্তা বিভিন্ন সরকারের গোঁজামিলের সংজ্ঞা, নির্দেশিকা, অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ইউনিয়ন থানা জেলা ও কেন্দ্রীয় কমাণ্ড কাউন্সিল, রাজনৈতিক দলের এমপি-মন্ত্রী ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। জীবিত প্রকৃত ষাট হাজার মুক্তিযোদ্ধা এখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত আছেন। ভুয়ার সৃষ্টিকর্তাসহ হাজার হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হলো চেতনাহীন, টাউট, বাটপাঢ় ও সুযোগ সন্ধানী এরাই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের শত্রু। এরা ধনে-জনে-শক্তিতে বলিয়ান। এদের বিরুদ্ধেই 'একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ' ও আমার সংগ্রাম চলমান।

একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থসামাজিক মর্যাদাপূর্ণ উন্নত জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। এ-জন্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, ভুয়ার কারিগর, জামুকা ও পরশ্রীকাতরতায় আচ্ছন্ন একটি চক্র একযোগে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও আমার বিরুদ্ধে আদাজল খেয়ে নানান চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমি তাই আহ্বান জানাচ্ছি, যতোই বাধা আসুক, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলুক সেসবকে পদদলিত করে আপনারাও একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রয়াসের সাথে সম্পৃক্ত হোন। যারা নানাভাবে বিভ্রান্ত হয়ে বা ভুল বোঝাবুঝির কারণে সংগঠন থেকে বের হয়ে গেছেন, অথবা অন্য কোনো বিভ্রান্তিকর সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে নিজেদের ভুল বুঝতে পারছেন ও অনুতপ্ত অবস্থায় রয়েছেন এবং যারা আদৌ কোনো সংগঠনের সাথে জড়িত নন তাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও তাদের পরিবারবর্গের বৃহত্তর স্বার্থে আস্থা ও বিশ্বাসের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের আশা-আকাঙ্খা ও চেতনার বাতিঘর একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা জানি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র জাতীয় সংগঠন। যেহেতু নানান কারণে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এখন সচল নয়, সেহেতু মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় ঐক্য বিনির্মাণের প্রয়োজনে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গড়ে তোলা হয়েছে। ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ও তাদের পরিবারের দাবিদাওয়া একটা যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়ে অত:পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বেশি, সেহেতু বর্তমান অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন মানে পুরো মুক্তিযোদ্ধা সংসদটি ভুয়াদের দখলদারিত্বে চলে যাবে। এটা নিশ্চয়ই কোনো প্রকৃত সচেতন মুক্তিযোদ্ধাদের কাম্য হতে পারে না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের মধ্যে ঐক্য না থাকার সুযোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি বিশেষ করে রাজাকার আলবদর ও স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানান ঠুনকো অজুহাতে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গের ওপর একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজাকার আলবদর ও তাদের উত্তরাধিকারসহ বিএনপি জামায়াত শিবির ফ্রিডমপার্টি ও সামাজিক অপরাধীরা অনেকেই আওয়ামী লীগ নেতাদের অর্থ দিয়ে সেই দল ও তার অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে অবস্থান করে নিয়েছে। তাদের কেউ কেউ এমপি উপদেষ্টা এমনকি মন্ত্রী পদও বাগিয়ে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের খাতায় নাম লিখিয়েই তারা এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারবর্গের ওপর হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, জায়গা জমি দখল, লুটতরাজ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের একশ্রেণীর নেতাদেরকে তারা অর্থ দিয়ে এমনি বশ করে ফেলেছে যে, তাদের এহেন কার্যকলাপের বিরুদ্ধে টু-শব্দটি করার শক্তি তারা হারিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের নীরবতার দেখাদেখি প্রশাসনও একধরনের নির্লিপ্ত অবস্থানে আছে ক্ষেত্র বিশেষে প্রশাসনও অপকর্মীদের সহযোগিতা করে চলেছে। এ অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা আজ তাদের সীমাহীন ত্যাগে অর্জিত দেশে পরবাসী জীবনযাপন করে চলেছেন। এ দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা ঐক্যবদ্ধ হলে তাদের সন্তানসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষজন ঐক্যবদ্ধ হতে বাধ্য। বাস্তব অবস্থাই বলে দিচ্ছে যে, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দুর্নীতিবাজ-লুটেরা শক্তি একজোট হয়ে আজ মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা গায়েপড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে চলেছে। এ অবস্থায় সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের জীবন ও মানমর্যাদা রক্ষার প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সন্তানদের বৃহত্তর ঐক্যে সামিল হওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই। অপরদিকে এ অবস্থায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল=জামুকা অর্থ, আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে গোঁজামিলের সংজ্ঞায় যাকে তাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েই চলেছে।

আমরা যদি জীবিত এই ষাট হাজার মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও যুবসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে এককেন্দ্রিক আদর্শিক অবস্থানে থাকি, তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে মহলবিশেষের ষড়যন্ত্র ও অত্যাচারকে আমরা যেমন প্রতিহত করতে সক্ষম হবো পাশাপাশি আমাদের দাবির চলমান আন্দোলন আরো বেগবান হবে, আমাদের প্রাণের দাবি বাস্তবায়ন সহজ হবে। সর্বাগ্রে মনে রাখতে হবে, বিভক্ত ও বিভ্রান্ত হয়ে কোনো আন্দোলন যেমন গড়ে তোলা যায় না, তেমনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের মর্যাদাও রক্ষিত হয় না। এককেন্দ্রিক ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে জড়িত থাকলে ভুয়া ও ভুয়ার কারিগরসহ ষড়যন্ত্রকারীরা যতোই শক্তিশালী হোক তাতে তারা আমাদের কোনোই ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। ফলে আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। তাহলে আসুন, মুক্তিযোদ্ধাদের বৃহত্তর কল্যাণ ও স্বার্থে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রবহমান রাখার লক্ষ্যে আমরা আমাদের মধ্যকার সব অনৈক্য, দ্বিধাদ্বন্দ্ব, হিংসা ও সংকীর্ণতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, ভুয়ামুক্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নত ও নিরাপদ আর্থসামাজিক জীবনের দাবিতে একটি অভিন্ন প্লাটফরমে একতাবদ্ধ হয়ে একটি ঐতিহাসিক বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কল্যাণের লক্ষ্যে যেকোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি।

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test