E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসলে শিক্ষা ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসবে

২০২৩ জানুয়ারি ২৫ ১৫:৪৬:৫৬
মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসলে শিক্ষা ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসবে

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষকরা হচ্ছেন সেই মেরুদণ্ড তৈরির কারিগর। জাতির চালিকা শক্তি ঠিক রাখার জন্য শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। মানবশিশুর জন্মের পর থেকে বাবা-মা যেমন তাদের ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা দিয়ে বড় করে তোলেন, তেমনি শিক্ষকরা শিক্ষার আলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যান। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমেই নয়, বাস্তবমুখী ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে একজন সুশৃঙ্খল, পরিশ্রমী, সৎ ও সাহসী মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষাটা প্রদান করেন আমাদের শিক্ষকরাই। তাদের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা, আদর ও শাসন এবং নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সৎ, সাহসী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। সমাজ ও জাতি গঠন, দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে, দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে, বিশ্বের দরবারে নিজ দেশের গৌরবময় অবস্থান গড়ে তুলতে একজন আদর্শ শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে একটি শিক্ষিত জাতি।

শিক্ষক শব্দটি কানে প্রবেশের সাথে সাথেই শ্রদ্ধায় কেমন মাথা নত হতে আসে। উন্নত জাতি গঠনের সবচেয়ে মহান দায়িত্বটি যারা নিরলসভাবে পালন করে যাচ্ছেন, প্রতিনিয়ত তাদের প্রতি যথার্থ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আসলে ভাষায় অসম্ভব। একজন আদর্শ শিক্ষকের জ্ঞান, নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলির আদর্শে আলোকিত হয় সমস্ত জাতি। তাদের শিক্ষায় সূর্যের আলোর মতো তেজস্বী ও প্রখর হয়ে ওঠে পরবর্তী প্রজন্মের অনুজেরা। যারা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনায় ছড়িয়ে দেয় সেই আলোর ছটা। তাই মানুষ তৈরির এই মহান কারিগরদের যথার্থ মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় শিক্ষক দিবসে জাতির এই সূর্য সন্তানদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতা।

একটি জাতি গঠনের পরিচালক ও নির্দেশক হলেন একজন শিক্ষক। শিক্ষকদের মাধ্যমেই মেধা, জ্ঞান এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চারিত হয়। সেই মেধার পরিচর্যার দায়িত্বে থাকেন শিক্ষকরা। আমাদের শিক্ষকরা আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কোন অবস্থানে আছেন, তাদের সম্মানজনক জীবনযাপনের জন্য সেই সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত কি না, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মোটামুটি সুযোগ-সুবিধা থাকলেও বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চলের যে শিক্ষকরা আছেন, তারা হয়তো সেই সুযোগ-সুবিধাটা পায় না। যদিও অনেক শিক্ষকের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা কিছুটা হলেও দেওয়া হচ্ছে এবং অন্যান্য সরকারি দিনের ন্যায় এই দিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা উচিত শিক্ষকদের জন্য। আমাদের উচিত সবসময় তাদের যোগ্য সম্মান ও ভালোবাসা দেওয়া। তারা ক্রমাগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষিত করে তোলেন। তাদের অনুপ্রেরণার জন্যই আমরা জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারি।

ভালো-মন্দের শিক্ষা দিয়ে একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। অনেক শিক্ষকই আছেন, যারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে সময় দেওয়া থেকে তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বেশি সময় ব্যয় করেন। এছাড়া এমন শিক্ষকের উদাহরণও পাওয়া যাবে, যারা বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করে থাকেন। তবে বর্তমানে শিক্ষক এবং ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষক তাদের পেশা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা চাকরি জীবনে বেতন বা চাকরি জীবন শেষে পেনশনটা ঠিকমতো পান না।

এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষক অন্য পেশা খুঁজে নিতে বাধ্য হয়েছেন। শিক্ষকরা যাতে বর্তমান প্রজন্মের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, নির্দ্বিধায় শিক্ষাদান করে যেতে পারেন সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকারি বেসরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা, তাদের কাজকে গুরুত্ব এবং স্বীকৃতি দিতে হবে।

একটি শিশু যখন গুটিগুটি পায়ে পৃথিবীর চলমান নিয়ম-কানুনের মধ্যে খোলস খুলে বের হয়, তখনি তাদের বড় একটা অংশ শিক্ষকের সঙ্গে জুড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ছাত্র-ছাত্রীরা পরিবারের সদস্যদের চাইতে শিক্ষকদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু শতাব্দীর পরিবর্তনে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক দিন দিন যেনো শুধু ক্লাসরুম পর্যন্তই বিরাজমান, এর কারণ নানারকম সামাজিক অবক্ষয়, শিক্ষকের প্রতি ছাত্রদের বৈশ্বিকভাবে গড়ে উঠা নানারকম নেতিবাচক ধারণা, শিক্ষকের অনীহা ইত্যাদি। শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান, সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করলেই তারা শিক্ষকতাকে শুধু পেশা নয়, ভালোবেসে গ্রহণ করবে। ভালোবেসে গড়ে উঠবে ছাত্র-শিক্ষকের পুত্র-কন্যা তুল্য সম্পর্ক।

একজন শিক্ষক একজন ছাত্রের অভিভাবক। শিক্ষক যে শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রেই হস্তক্ষেপ করেব, এমন না। একজন শিক্ষক একজন ছাত্রকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। ছাত্রদের মনের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে তোলেন। একটা ছাত্রের জীবনের লক্ষ্য থেকে শুরু করে জীবনের সফলতার প্রতীক।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test