E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারাবাহিকতা 

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ০৭ ১৭:১৮:০২
আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারাবাহিকতা 

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটির সাথে ইতোমধ্যে আমরা সকলেই পরিচিত হয়ে উঠেছি। শুধুমাত্র পরিচিত নয় ডিজিটাল বাংলাদেশের যে সুযোগ সুবিধা তার আওতায় আমরা প্রায় সকলেই সুফল পাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাংলাদেশ শব্দটি একসময় বেমানান মনে হলেও সরকারের চেষ্টায় তা আজ সফল একথা নিঃসন্দেহে বলা চলে। যার ফলে এ শব্দটি সকলের মাঝেই আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং কিছু সুধিজনদের মুখ থেকে এর বিরোধিতা শোনা গেলেও এর সুফল বর্তমানে তারা ভোগ করছে এবং বিরোধিতাকারীদের কথা বলা বন্ধ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটি আলোচিত হয়েছে তার কার্যক্রমের মাধ্যমে। 

আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে এবং সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে হলে ডিজিটাল হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আর এই ডিজিটাল হওয়ার মূল লক্ষ্য হলো একুশ শতকে বাংলাদেশকে একটি তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। মূলত এর মূল চারটি খুঁটি হলো মানবসম্পদ উন্নয়ন, ইন্টারনেট সংযোগ, ই-প্রশাসন ও তথ্য প্রযুক্তি শিল্পখাত গড়ে তোলা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শব্দটি প্রথম আসে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহার থেকে। এ ডিজিটাল ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল সবদিক দিয়ে বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটিয়ে একটি জ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর দেশ গঠন করা। ডিজিটাল শব্দটি কেবল দেশের একটি নির্দিষ্ট খাতের জন্য নয়। সর্বোপরি সকলখাতে এ ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে সমন্বয় ঘটানো। দিন যত এগিয়ে যাচ্ছে তত মানুষের জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে হচ্ছে দ্রুত। উচ্চ গতির অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ইউনিয়ন স্তরে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে দ্রুত গতিতে।

সরকারের সাহসিকতায় উৎক্ষেপণ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ যা আমাদের ডিজিটাল ব্যবস্থায় নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে এবং বিগত ৩ বছরে আয় হয়েছে তিনশ কোটি টাকা। এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ থাকা দেশগুলোর তালিকায় যোগ হয় বাংলাদেশের নাম। ডিজিটাল সেবার অর্জন নিয়ে খাতওয়ারি একটু কথা না বললে এলেখাটি অপূর্ণই থেকে যায়। বাংলাদেশের আজকের ডিজিটাল ব্যবস্থার অর্জন অনেক ক্ষেত্রেই স্বপ্নের মতোই মনে হয়। পৃথিবীর অনেক দেশ আমাদের চেয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে একথা অস্বীকার করা যাবে না কিন্তু মনে রাখতে হবে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে সরকারি তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে টোল ফ্রি সরকারি হটলাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের দেশে জীবনজীবীকার সবচেয়ে বড় মাধ্যমে হলো কৃষি। এক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন কৃষক ঘরে বসেই স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারছে। ১৬১২৩ ও ৩৩৩১ হট লাইনের মাধ্যমে কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে প্রতিনিয়ত যোগযোগ করে জমির উৎপাদিত ফসলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারছে।

এমনকি উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল সেবার সুযোগ নিতে পারছে। তবে আমাদের কৃষকরা এখনও এসবক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সেবা পাওয়ার জন্য যেমন দক্ষ হওয়ার প্রয়োজন সেটা হয়ে উঠতে পারছে না তাই এসব সুবিধা পাওয়ার জন্য কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সেবা পাওয়ার হট লাইন নাম্বার এখন ৯৯৯। এ নাম্বারটি এখন অনেকের জানা। ফ্রি সার্ভিসে মানুষ এখন এ নাম্বারে ফোন করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্সের সেবা পাচ্ছে। যার ফলে আইনশৃংঙ্খলা এবং জীবন ও যানমালের ক্ষতির পরিমাণ কমে এসেছে। তবে এখন এসব ক্ষেত্রে সরকারকে আরো বেশি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন এর ব্যবহার বিধির উপর। না হলে এনসব ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থাহীনতা তৈরি হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, দুদক, দুর্যোগের আগাম বার্তা, ভূমি সেবা হটলাইন, জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য, শিশুর সহায়তা, মহিলা সংস্থা বা তথ্য আপার মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা এখন ডিজিটাল হওয়ার কারনে হটলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে মানুষের মাঝে এব্যবস্থার উপর আস্থাও তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে ভোগান্তি কম হওয়ার কারনে সাধারণ জনগণ সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী হচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। একটি ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে তা হলো স্মার্ট মোবাইল ফোন এর ব্যবহার।

স্মার্ট ফোন ছাড়া এ ডিজিটাল সেবা বাস্তবায় করা অত্যন্ত জটিল। শুধু জটিলই নয় এর বাস্তবায়নই প্রায় অসম্ভব। এ ফোন ব্যবহারের ফলে মানুষের ডিজিটাল সেবা গ্রহণে যেমন সুবিধা পাচ্ছে তেমনি উৎসাহিত হচ্ছে সেবা পাওয়ার জন্য। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল সেবার অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। করোনাকালে ডিজিটাল স্বাস্থ্য আমাদের জীবন ব্যবস্থায় ভূমিকা রেখেছে অনেক। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে একেবারে গ্রাম পর্যায়ের সাধারণ মানুষও সেবা গ্রহণ করতে পেরেছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে। ভর্তি প্রক্রিয়ার জটিলতা অবসান চোখে পড়ার মতো। ভোগান্তি কমেছে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের। বই পড়া থেকে শুরু করে বই কেনা পর্যন্ত এমনকি করোনাকালে ঘরে বসে ক্লাস করা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে। বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলের জন্য আজ যেতে হয়না কোথাও । ঘরে বসেই ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পেয়ে যাচ্ছে ফলাফল। ব্যাংকিং সেক্টরে ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটি ব্যাপকভাবে আলোচিত ও ব্যবহৃত হয়েছে।

ব্যাংকে না গিয়েও ঘরে বসে মানুষ ব্যাংকের সেবা গ্রহণ করতে পারছে। ব্যাংকের সেবা পাওয়ার জন্য মানুষের যে দীর্ঘ সারি তা আজ খুব একটা চোখে পড়ে না এমনকি বিভিন্ন ধরনের বিল আজ মানুষ ঘরে বসে পরিশোধ করছে। যার ফলে কমে আসছে ভোগান্তি এবং বেঁচে যাচ্ছে সময়। আয়কর রিটার্ন তৈরি ও দাখিল, জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি কার্ড, বিভিন্ন যানবাহনের টিকিট, ই-টেহুারসহ সকল কাজেই আজ প্রযুক্তির ডিজিটাল ছোঁয়া। ইতোমধ্যে বিশ্বের নবম দেশে হিসেবে আমাদের দেশে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট চালু হয়েছে। ফাইভজি সেবা পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হলেও ফোরজি সেবা দেশের সব জায়গায় সহজ মূল্যে পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। এসব সেবা প্রদানের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশের সকল মানুষকে এ সেবার অধীনে নিয়ে আসা।

ডিজিটাল সেবার অধীনে না আনতে পারলে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ হবে চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা হলো দেশের সকল ব্যবস্থা ডিজিটাল করার লক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের ফলে তৈরি হবে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে যবু সমাজের ভূমিকা হবে অগ্রণী। তাই যুব সমাজকে গড়ে তুলতে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের উপযোগী করে। যেখানে যুবসমাজ দুর্নীতি মুক্ত ও স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ধারণ করে দেশপ্রেমে জাগ্রত হয়ে এগিয়ে আসবে। সরকারকে একটি সঠিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বর্তমান সরকারের ভকিষৎত চিন্তায় আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ কেমন হবে তার একটি চিত্র সাধারণ মানুষের সামনে নিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো সূচনা হবে স্মার্ট বাংলাদেশের এটাই সকলের প্রত্যাশা।

লেখক : শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test