E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নবীনগরে আওয়ামী লীগে আবারও গ্রুপিং! দেখার কি কেউ নেই?

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ০৮ ১৬:০৩:৫৯
নবীনগরে আওয়ামী লীগে আবারও গ্রুপিং! দেখার কি কেউ নেই?

গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের উদ্যোগে একই সময়ে একই স্থানে দুটি 'শান্তি সমাবেশ' আহবান করাকে কেন্দ্র করে দলটির বিবদমান দুই গ্রুপের নেতা কর্মী সমর্থকদের মধ্যে আবারও নতুন করে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জানা গেছে, আগামি ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ১০টায় নবীনগর উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের শাহপুর খেলার মাঠে একই সময়ে একই স্থানে আওয়ামীলীগের উদ্যোগে দুটি পাল্টাপাল্টি 'শান্তি সমাবেশ' ডাকা হয়েছে। এরমধ্যে রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের 'আহবায়ক কমিটির ব্যানারে ডাকা একটি শান্তি সমাবেশে 'প্রধান অতিথি' করা হয়েছে নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদলকে। পাশাপাশি এই সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন চৌধুরী শাহান ও নবীনগর পৌরসভার মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট শিব শংকর দাসের নাম পোস্টারে দেয়া হয়েছে। এতে 'প্রধান বক্তা' হিসেবে ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক (রতনপুর ইউপির সন্তান) এডভোকেট কাজী মোর্শেদ হোসেন কামালের নাম রয়েছে। আর রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির 'আহবায়ক' আবদুর রউফ তুহিন এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন উল্লেখ করে প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

অন্যদিকে একই সময়ে একই স্থানে রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ব্যানারে অপর শান্তি সমাবেশটি ডাকা হয়েছে। এই সমাবেশে 'প্রধান অতিথি' করা হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুলকে। পাশাপাশি এই সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক (রতনপুর ইউপির সন্তান) এডভোকেট কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন চৌধুরী শাহান, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির, ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক, জেলা পরিষদ সদস্য নাছির উদ্দিনসহ আরও একাধিক আওয়ামীলীগ নেতার নামও পোস্টারে দেয়া হয়েছে। এতে 'প্রধান বক্তা' হিসেবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ সম্পাদক (রতনপুর ইউপির সন্তান) মো. আলামিনুল হক আলামিনের নাম রয়েছে। আর রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের 'সভাপতি' সৈয়দ জাহিদ হোসেন শাকিল এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন উল্লেখ করে একইভাবে প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

এদিকে আগামি ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার একই সময়ে একই স্থানে নবীনগরে আওয়ামীলীগের বর্তমান এমপি ও সাবেক এমপি'র অনুসারীদের 'পাল্টাপাল্টি' এই দুটি সভা ডাকা নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেককে দুটি সমাবেশ নিয়ে দুই গ্রুপের দুটি পোস্টারসহ "রসাত্মক পোস্ট" দিতেও দেখা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে এক গ্রুপের নেতা আবদুর রউফ তুহিন নিজেকে রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের 'আহবায়ক' দাবি করে বলেন,'শাকিল ও মারুফের নেতৃত্বে থাকা রতনপুর আওয়ামীলীগের কমিটি অনেকদিন আগেই ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, সেটি সকলেই জানেন। এরপর আমাকে 'আহবায়ক' করা হয়েছে। আমরা তাই আহবায়ক কমিটির উদ্যোগে রতনপুরে দলের নেতাকর্মীদেরকে চাঙ্গা ও শক্তিশালী করতে উপজেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেই আগামি ১১ তারিখ একটি শান্তি সমাবেশ আহবান করেছি। পরবর্তীতে আমাদের সভাটিকে মূলত বানচাল করতেই রতনপুর আওয়ামীলীগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া সাবেক নেতৃবৃন্দ একই সময়ে একই স্থানে পরে আরেকটি পাল্টা সমাবেশ ডেকেছেন। যা তাদের পোস্টার দেখে আমরা জানতে পেরেছি।"

অন্যদিকে আরেক গ্রুপের নেতা সৈয়দ জাহিদ হোসেন শাকিল নিজেকে এখনও রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের 'সভাপতি' দাবি করে বলেন,'অগঠনতান্ত্রিকভাবে আমাদের কমিটি ভাঙ্গা হয়েছিল। যা আমরা মানিনি। সেটি সকলেই জানেন। তাই রতনপুরে দলকে শক্তিশালী করতে আমরা মাননীয় এমপি মহোদয়কে প্রধান অতিথি করে আগামি ১১ ফেব্রুয়ারি একটি 'শান্তি সমাবেশ' আহবান করেছি। তবে একই সময়ে একই স্থানে অন্য কেউ শান্তি সমাবেশ ডেকেছেন বলে আমাদের জানা নেই। কারণ, কেউ আমাদেরকে এ বিষয়ে তেমন কিছু এখন পর্যন্ত জানায়নি।"

এদিকে দুই গ্রুপের ডাকা পাল্টাপাল্টি দুটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে 'অনাকাংখিত' কিছু ঘটার আগেই বিষয়টির আশু সুরাহার জন্য আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দের সানুগ্রহ সুদৃষ্টি কামনা করেছেন দলটির তৃণমূলের (স্থানীয়) সাধারণ নেতা কর্মী সমর্থকেরা।

আমার দুটি কথা

রতনপুরে আওয়ামীলীগের বিবদমান দুই গ্রুপের দুটি সমাবেশ ডাকার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে যেটুকু জানতে পেরেছি, তাতে নিশ্চিত হয়েছি, আবদুর রউফ তুহিনের নেতৃত্বে আহবায়ক কমিটির শান্তি সমাবেশটিই প্রথমে আহবান করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে, এই সমাবেশের পোস্টারে বর্তমান এমপি এবাদুল করিম বুলবুল ও তাঁর অনুসারী তেমন কাউকেই রাখা হয়নি। ফলে এমপি এবাদুল করিমের অনুসারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বর্তমান এমপিকে 'প্রধান অতিথি' করে একই সময়ে একই স্থানে পাল্টা আরেকটি শান্তি সমাবেশ আহবান করেছেন বলে এলাকাবাসি মনে করছেন। যার ফলে দুটি সমাবেশ নিয়ে দুই গ্রুপেই এখন উত্তেজনা বাড়ছে।

এক্ষেত্রে আহবায়ক আবদুর রউফ তুহিন ও তাঁর পৃষ্টপোষকদের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন? বর্তমান এমপি এবাদুল করিম বুলবুলতো আওয়ামীলীগেরই এমপি। এছাড়া সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি ফয়জুর রহমান বাদলের সাথে বর্তমান এমপি এবাদুল করিমের চমৎকার সুসম্পর্কও রয়েছে। যা নবীনগরে আওয়ামলীগের বিগত বহু সভা সমাবেশে দুজনকে পাশাপাশি একসঙ্গে বসে সৌহার্দপূর্ণ বক্তব্যও রাখতে দেখা গেছে। তাহলে বর্তমান এমপি এবাদুল করিমকে 'বাদ' রেখে কেন রতনপুরের আহবায়ক কমিটি হঠাৎ করে এ ধরণের একটি 'প্রশ্নবিদ্ধ' সমাবেশ ডেকে বর্তমানে এরকম একটি অনাকাংখিত পরিবেশের সৃষ্টি করলো?

এক্ষেত্রে প্রথমে আহবায়ক কমিটির ব্যানারে সমাবেশটি ডাকার আগে সাবেক এমপি ফয়জুর রহমান বাদলের পাশাপাশি বর্তমান এমপি এবাদুল করিমের সঙ্গে সমাবেশ নিয়ে কথা বলে নিলে কি মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত?

অপরদিকে রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ কমিটির দাবীদার নেতৃবৃন্দ নিজেদের দল আওয়ামীলীগের উদ্যোগে এলাকায় একটি শান্তি সমাবেশ ডাকার পর, কিভাবে একই স্থানে একই সময়ে পাল্টা আরেকটি শান্তি সমাবেশ ডেকে পরিস্থিতিকে 'অশান্ত' করে তুললেন? সেটিও কিন্তু আম জনতার কাছে ইতিমধ্যে বিষয়টি জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে।

সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, আওয়ামীলীগের উদ্যোগে এই পাল্টা সমাবেশ ডাকা হলেও, দলটির উপজেলা সভাপতি ও সাবেক সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদলকে অনুরূপভাবে এই সমাবেশে 'বাদ' রাখা হয়েছে! ফলে এতেই পরিষ্কার হয়ে গেছে, আসলে রতনপুরে আগামি ১১ ফেব্রুয়ারি শান্তি সমাবেশের নামে দুটি গ্রুপ মূলত কি করতে চাচ্ছেন?

সুতরাং সচেতন জনগণ বুঝে গেছেন, রতনপুরে আওয়ামীলীগের দুটি গ্রুপ দলের দুই শীর্ষ নেতাকে স্ব স্ব সমাবেশে 'অসম্মান' করে দলটিতে অশান্তি সৃষ্টি করে কেউ কেউ হয়তো ব্যক্তিস্বার্থে ফায়দা লুটতে চেষ্টা করছেন। সেক্ষেত্রে আমরা মনে করি, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ আগামি ১১ ফেব্রুয়ারির আগেই সৃষ্ট এই জটিলতা ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির আশু সমাধান দেবেন।

পরিশেষে শুধু বলবো, কাউকে সম্মান দিতে না পারলেও, কাউকে অসম্মান করার কেউ প্রয়াস নিবেন না, প্লিজ। এতে করে দেখবেন, একটা সময় দলে গ্রুপিং সৃষ্টিকারী, দলের ক্ষতিকারক 'পয়জন' খ্যাত তথাকথিত নেতৃত্ব একসময় আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়ে যাবেন। তখন ওরা 'আম ছালা' সবই হারাবেন। সুতরাং সময় থাকতে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক ও সাবধান হওয়া প্রয়োজন।

সামনেই জাতীয় নির্বাচন। তাই সব ভেদাভেদ ভুলে সবার আগে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলকে শক্তিশালী করুন, বঙ্গবন্ধু কন্যাকে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে কোমর বেঁধে দলের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করুন। অন্যথায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে অনেকেই হয়তো পালিয়েও রক্ষা পাবেন না, এমন মন্তব্যও কিন্তু এখন অনেকেই প্রকাশ্যে তুলতে শুরু করেছেন! মহান সৃষ্টিকর্তা সকলের মঙ্গল করুন।

লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলা ৭১, সম্পাদক, নবীনগরের কথা।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test