E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেহের খাদ্য ভাত-রুটি, মনের খাদ্যের যোগান দেয় বই

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ১০ ১৫:৪৯:৫৯
দেহের খাদ্য ভাত-রুটি, মনের খাদ্যের যোগান দেয় বই

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


জ্ঞানের রহস্যময় ভান্ডার হলো বই। বই মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। বই মানুষকে হাসাতে পারে সব দুঃখ ভুলিয়ে দিতে পারে। আপনি আপনার বন্ধুদের সব সময় পাশে নাও পেতে পারেন কিন্তু বই নামক বন্ধুকে সব সময় পাশে পাবেন। বই মানুষকে হাসতে, জানতে বুঝতে শেখায় ও মনের কুসংস্কার দূর করতে সাহায্য করে। 

মানবজীবনের সুন্দর অভ্যাসগুলোর মধ্যে পাঠ্যাভাস অন্যতম। মানুষ বইপাঠের মাধ্যমে সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে। যুগে যুগে বই এনেছে ত্যাগের দীক্ষা, সত্য ও সুন্দরের সাধনা। এই মানব জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো বই। কারণ বই পড়ে মানুষ অজানাকে জানতে পারে অচেনাকে চিনতে পারে।তাই বই বিশ্বাসের অঙ্গ জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার। বই আমাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে এনে আলোর দিকে নিয়ে আসে।

বই অন্ধকার দূর করে সভ্যতার অগ্রগতি ঘটায়। তাই বই যেমন সভ্যতার রক্ষাকবচ তেমন সভ্যতার চাবিকাঠি। সভ্যতার আদি লগ্ন থেকে বই অতীত ও বর্তমানের বহুমুখী জ্ঞান সম্পদকে বহন করে চলেছে। মানুষ বই পড়তে অভ্যস্ত হয়ে আছে সেই প্রাচীনকাল থেকে। প্রাচীন যুগে বই পড়াটা নাগরিকদের মধ্যে একটা বড় রকমের মর্যাদার ব্যাপার ছিল।

বইপড়া আমাদের কাছে অনেক সহজ ব্যাপার। বর্তমানে ইউরোপে বই পড়া সভ্য সমাজের একটি সাংস্কৃতিক ব্যাপার বলে বিবেচিত। প্রাচ্যের নাগরিক সমাজ কাব্যকে মনের বেশভূষার উপকরণ হিসাবে দেখতো।

বই পড়া সকল দেশের মানুষের কাছে একটি শখের বিষয়। বিভিন্ন রুচির মানুষ তাদের রুচি মাফিক বইয়ের পাতায় চোখ রেখে শখ চরিতার্থ করে।

মানুষের পুরো মনটার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় সাহিত্যে। তাই আমাদের বই পড়তেই হবে। কারণ বই পড়া ছাড়া সাহিত্য পাঠ নেই। এই চর্চার জন্য একক গ্রন্থ সম্ভব নয় চাই লাইব্রেরী।

ধর্ম-দর্শন নীতি, বিজ্ঞানের চর্চা যথাক্রমে মন্দির, গুহা, ঘর এবং গবেষণাগারে করা গেলেও বিদ্যা সংগ্রহ ও চর্চার জন্য পাঠাগারই একমাত্র স্থান। দেহের খাদ্য ভাত, রুটি মনের খাদ্যের যোগান দেয় বই।

মনের সুস্থতার ওপর অনেকাংশে দেহের সুস্থতা নির্ভর করে। মনকে সুস্থ রাখতে হলে ভালো বই পড়া দরকার। ভালো বই পড়াশোনার মধ্য দিয়ে মানুষের মনে আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে চেতনা জাগে।

তাছাড়া আমরা দেখি যে মানুষেরা বইকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে তাদের অনেক শত্রু কম। বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের মন ভালো থাকে আমাদের মন প্রসন্নতায় ভরে যায়। তাই বই জ্ঞানের প্রতীক বই আনন্দের প্রতীক। মানুষ জীবনে তিনটি জিনিস কামনা করে পুরুষ, স্ত্রী এবং বই।

অবশ্য এই সহচর নির্বাচনে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। বইয়ের ক্ষেত্রে যার বই পড়তে ভালো লাগে তাকে সেই বই পড়তে দেওয়া উচিত। তাহলে তার কাছ থেকে নতুন চিন্তার ফসল পাওয়া সম্ভব হবে। জীবনকে বুঝতে হলে অভ্যাসের সংস্কারের বেড়া ভাঙতে হলে বইয়ের সঙ্গ আমাদের অবশ্য প্রয়োজন।

লেখক প্রমথ চৌধুরী বই পড়ার উপযোগিতা প্রসঙ্গে বলেছেন– বৈঠকখানার দেওয়ালে হাজার টাকার একখানি নোট না ঝুলিয়ে, হাজার টাকা দামের একখানা ছবি ঝোলানোতে যে আর্থিক সুরুচির পরিচয় দেয়, তেমনি নানা আকারের নানা বর্ণের রাশি রাশি বই সাজিয়ে রাখতে প্রমাণ হয় যে, গৃহকর্তা একেধারে ধনী ও গুণী। এখন আধুনিক যুগে বই শিক্ষালাভের ও জ্ঞান লাভের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বই হল আয়নার মত সেই আইনাতে আমাদের নিজেদের মনের প্রতিবম্ব ধরা পড়ে। যারা জ্ঞানী তারা বই ব্যবহার করে আর অন্যেরা সেই বইয়ের প্রশংসা করে।

বইকেনা যেমন অনেক মানুষের কাছে নেশার জিনিস, তেমন বই পড়াও অনেক মানুষের কাছে নেশার জিনিস, জীবনের সাথী করে অনেক মানুষ আছে যারা বইকে ভালবেসে চলেছে।

জ্ঞানকে প্রদীপের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আর সেই জ্ঞানের রহস্যময় ভান্ডার হলো বই। বইকে মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলা হয়। কারণ বই আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে। এটি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে ও অনুভূতিকে সতেজ করে তোলে। বিভিন্ন ধরনের বই বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানের সমারোহ বহন করে। বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করতে পারে। জ্ঞানার্জনের জন্য মানুষের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বই। বই পড়া ছাড়া একজন মানুষের জীবন ৮০ শতাংশই বৃথা। কেননা বই একজন মানুষকে তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা ঘুমন্ত মানুষটিকে জাগিয়ে তোলে, মনের চক্ষু খুলে দেয়, জ্ঞান ও বুদ্ধিকে প্রসারিত ও বিকশিত করে এবং ভিতরে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test