E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাংলা নববর্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা

২০২৩ এপ্রিল ১১ ১৫:৫৬:৫৫
বাংলা নববর্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা

শিতাংশু গুহ


বাংলা নববর্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা। নুতন বছরের শুরুটা এবার পবিত্র রমজান মাসে পড়েছে। এতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। গত সপ্তাহান্ত ছিলো একসাথে ইস্টার-পাসোভার-রমজান, পুরানো ফিলিস্তিন-ইসরাইল ঝগড়া বাদে কারো কোন সমস্যা হয়নি। পহেলা বৈশাখ-রমজান একসাথে সমস্যা হবার কথা ছিলোনা, তবু সমস্যা হচ্ছে, সমস্যা সৃষ্টি করা হচ্ছে। 

শেষ কবে রমজান ও পহেলা বৈশাখ একসাথে এসেছিলো আমার জানা নেই, তবে এসেছিলো তা নিশ্চিত, তখন কোন সমস্যা হয়নি, রমজানের পবিত্রতা ক্ষুন্ন হয়েছিলো বলে শোনা যায়নি। তাহলে এবার সমস্যা হচ্ছে কেন? দেশে একজন আইনজীবী ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বন্ধে মামলা করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে এ সংবাদ দিয়ে নীচে একজন লিখেছেন, তিনি হয়তো নির্বাচন করবেন?

কিন্তু উত্তর আমেরিকায় যাঁরা মাঠ গরম করতে চাচ্ছেন তাঁদের লক্ষ্য কি? এনিয়ে যাঁরা সোচ্চার, অন্তত: সামনের সারিতে থেকে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন তারা নিজেদের আওয়ামী ঘরানার লোক হিসাবে পরিচয় দেন, বঙ্গবন্ধু’র অনুসারী বলে লোকে জানে। এদের কমিউনিটিতে চলাফেরা আছে, কেউ কেউ লেখালেখি করেন, কখনো-সখনো ‘প্রগতিশীল’ সাঁজতে পছন্দ করেন।

রমজান সংযমের মাস, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান নিয়ে আর একটু সংযম তো আমরা আশা করতেই পারি? প্রথমে এটি ছিলো অনুরোধ, এরপর প্রতিবাদ, এখন যাচ্ছে প্রতিরোধের দিকে (আশা করি যাবেনা)। শোনা কথা, সত্য-মিথ্যা জানিনা, ঘটনা নাকি মেয়র অফিস পর্যন্ত পৌঁছেছে। এমনিতে ফোন, স্পন্সরদের সরে আসার আহবান, কাউকে কাউকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দেয়া এসব তো আছেই!

তবে ‘মনে রাখবো’, ‘বয়কট করার আহবান’ এগুলো একটু বেশি হয়ে যাচ্ছেনা? এসব প্রচ্ছন্ন হুমকি নয়কি! রোজার মধ্যে ও ঈদের পরে এবার পহেলা বৈশাখের বেশ ক’টি অনুষ্ঠান হচ্ছে, যেকেউ এতে যেতে পারেন, আবার নাও যেতে পারেন, এতে বিরোধিতার কি আছে? আচ্ছা, রোজার মাসে ‘পহেলা বৈশাখ’ অনুষ্ঠান যদি দোষের হয়, ঈদের পর সেটি ‘দোষমুক্ত’ হবে কিভাবে?

১ লা জানুয়ারী ইংরেজী নববর্ষ, ১লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ, এগুলো অপরিবর্তনযোগ্য, যাঁরা নববর্ষের অনুষ্ঠান পেছাতে বলছেন, তারা হয়তো ক’দিন পর বাংলা-বর্ষটাই পাল্টে দিতে চাইতে পারেন! পহেলা বৈশাখ পালন না করাটা আপনার ইচ্ছে, কেউ নির্দিষ্ট দিনে পালন করলে বাধা দেয়া উচিত কি? টাইমস স্কয়ার ও ডাইভার্সিটি প্লাজায় উন্মুক্ত স্থানে ‘বর্ষবরণ’ ঠেকাতে ধর্মকে টেনে আনাটা ঠিক হচ্ছে কি?

রোজার মধ্যে যারা অনুষ্ঠানটি করছেন, তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সবাই আছেন, যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন তাঁরা একটি সম্প্রদায়ের অতি ক্ষুদ্রাংশ, একই সম্প্রদায়ের অনেকেই কিন্তু পক্ষে মন্তব্য করছেন। এরচেয়ে চুপ করে থাকলে হতো না? মনে প্রশ্ন জাগছে, যাঁরা আমেরিকায় বসে নববর্ষের অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা দেশে থাকলে কি করতেন?

আমরা দেখেছি, চট্টগ্রামে একটি স্কুলের দেয়ালে সাঁটা মনীষীদের ছবি কালো কাপড়ে ডেকে দেয়া হয়েছে। দোকান খোলার অপরাধে এক হিন্দুকে কানে ধরে উঠবস করানো হচ্ছে (ভিডিও দিলাম), হুমকী দেয়া হচ্ছে। বড্ড জানতে ইচ্ছে করছে, এদের সাথে আপনাদের তফাৎ কি? ওঁরা এবং আপনারা তো একই কথা বলছেন, ‘রমজানের পবিত্রতা’ রক্ষা, অর্থাৎ ধর্মকে বর্ম হিসাবে টেনে আনছেন।

মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়েও কারো কারো ‘চুলকানি’ আছে, এঁরা হয়তো সামনে ‘পান্তা-ইলিশ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। পান্তাভাত, ইলিশ মাছ, বা পেঁচা এগুলোর সাথে তো বাঙ্গালীর আজন্ম সম্পর্ক। এরসাথে ধর্মের সম্পর্ক কোথায়, এগুলো এসেছে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য্য বাড়াতে। সামনে হয়তো আরো কিছু যোগ হবে, হয়তো কিছু বাদ যাবে, এনিয়ে ‘গেল গেল’ বলে অযথা হৈচৈ-এর কোন কারণ নেই! আমেরিকা ইজ এ গ্রেট কান্ট্রী, আসুন আমরা আর একটু উদার হই। সবশেষে ভাবুন, আমরা একই দেশের মানুষ।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test