E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

মুজিবনগর সরকার ও আমাদের স্বাধীনতা

২০২৩ এপ্রিল ১৭ ১৬:০৬:১৬
মুজিবনগর সরকার ও আমাদের স্বাধীনতা

রিয়াজুল রিয়াজ


মুজিবনগর সরকার আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম ভিত্তি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালের এই দিনটি ও স্থানটি আমাদের দেশপ্রেম ও আবেগের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে।

১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল গঠন করা হয় বাংলাদেশের প্রথম সরকারের কাঠামো প্রস্তাবনা, যা ইতিহাসে মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক শুরুর মাত্র এক মাসের মধ্যে ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান মুজিবনগর উপজেলা) গ্রামের আমবাগানে এই সরকারের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে উক্ত সরকার প্রস্তাবনাটি সার্থকতা লাভ করে। সংক্ষিপ্ত আকারে খুব অল্প সময় ব্যায় করে এবং মাত্র ১২৭ জন দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের উপস্থিতে মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এবং এই শপথ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় ও দেশের প্রথম সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। যদিও যুদ্ধকালীন সময় মুজিবনগর সরকারের সদর দপ্তর মুজিবনগর থেকে পরিবর্তন করে কলকাতায় নেয়া হয়েছিল। ওই সময়টিতে কলকাতা থেকেই এই সরকারেস কার্যক্রম প্রতিচালিড হতো। মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন সরকার বা বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার হিসেবেও পরিচয় বহন করে থাকে।

মুজিবনগর সরকারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। তবে, বঙ্গবন্ধু তখন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকায় ওই সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্বে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ. এইচ. এম কামারুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্র এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

যুদ্ধকালীন দেশের শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ও গঠন করেছিল এই সরকার। তৎকালীন এই সরকার বাংলাদেশকে ১১টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করেছিল। মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী গঠন করে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, দক্ষ যোদ্ধা গড়ে তুললে সহায়তা করে। গেরিলা বাহিনী তৈরী ও গেরিলা অভিযান পরিচালনা ছিল এই সরকারের অন্যতম সফল রণকৌশল। মুজিবনগর সরকার গঠনের পর থেকে দেশের অগণিত মানুষ নিজের দেশকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, দেশে ও বিদেশে এই যুদ্ধের জনমত গড়ে তোলা এবং বিশ্বব্যাপী জনসমর্থন অর্জনের ক্ষেত্রে মুজিবনগর সরকার সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

মুজিবনগর সরকার প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের সহয়তায় পেতেও কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টায় প্রতিবেশি ভারত নানাভাবে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছে। ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী বাঙালি শরণার্থীদের খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবা দিয়েছে তারা।

আছাড়া ভারত তখন মিত্রবাহিনী নামে একটি সহায়তাকারী বাহিনী গঠন করে। অপারেশন জ্যাকপটে মিত্র বাহিনী বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল। মিত্রবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২১শে নভেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মিলে গঠন করা হয় যৌথবাহিনী। যৌথবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীর বিদায় ঘন্টা বেজে উঠে।

প্রায় ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষ প্রান্তে যখন পাকিস্থানী বাহিনীর পরাজয় প্রায় নিশ্চিত, ঠিক তখনই এদেশকে মেধাশূন্য করতে দেশের বুদ্ধিজীবীদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করেছিল। এরূপ নৃশংস কাজে তাদেরকে সহযোগিতা করেছিল এদেশেই জন্ম নেয়া রাজাকার, আলবদর, আল-শামস নামে বিভিন্ন কমিটি ও সংগঠন। যারা স্বাধীন বাংলাদেশের দেশ বিরোধী অপশক্তি হিসেবে চিহৃিত।

অতীব পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, দেশ বিরোধী ওই অপশক্তিগুলোর বংশধরেরা স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও, এদেশে এখনও সমানভাবে সক্রিয় রয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করে, স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিশ্বাস করে না, অসাম্প্রদায়িকতার চেতনাকে বিদ্রুপ করে, জাতির পিতাকে বিশ্বাস করে না, এদেশের সংবিধানকে বিশ্বাস করে না। এসব অপশক্তিকে স্ব-মূলে নির্মূল করা না গেলে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুফল পেতে আমাদের আরো প্রতীক্ষায় থাকতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ছড়াকার।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test