E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শুধু আইন নয়, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন জনসচেনতা

২০২৩ এপ্রিল ২৫ ১৬:১১:২৭
শুধু আইন নয়, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন জনসচেনতা

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


বর্তমান সময়ের আলোচিত ও মর্মস্পর্শী ঘটনা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনায় প্রতিদিন হারিয়ে যায় হাজারো  মানুষ। ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন। বর্তমান সময়ে আমাদের নিরাপত্তার প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা।

প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সৃষ্ট স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোরে সংবাদপত্র হাতে নিলেই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের মর্মান্তিক দুঃসংবাদ। বর্তমানে শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় পায়ে হেঁটে বা যানবাহনে চলাফেরা রীতিমতো বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সড়ক দুর্ঘটনার ফলে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।

দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঠিকই ঘটছে কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘর থেকে রাস্তায় বের হলেই দেশের প্রত্যেকটি মানুষের মনে একটি আতঙ্ক তাড়া করে। এই সড়ক দুর্ঘটনা একটি পরিবারের সারা জীবনের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সড়ক দুর্ঘটনা আকস্মিক ছিনিয়ে নেয় পরিবারের একমাত্র আশা অন্ন -বস্ত্রের সংস্থানকারীকে যাহা কখনো কাম্য নয়। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কাউকে এককভাবে দায়ী করা যাবে না। নানারকম কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এই সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে পড়ে কিছু তাজা প্রাণ। দুর্ঘটনাগুলো বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর জন্যই বেশি হচ্ছে। দুর্ঘটনাগুলো আরও ঘটে থাকে অসতর্কতাভাবে গাড়ি চালানো, অদক্ষ অযোগ্য ও লাইসেন্সবিহীন চালকের কারণে, অসাবধানে রাস্তা পারাপার বা রাস্তা পারাপারের নিয়ম না মানা, জনসংখ্যার চাপ ইত্যাদির কারণে।

সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ আইন অমান্য করে গাড়ি চালানো। জরিপে দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ চালক জেব্রা ক্রসিংয়ে অবস্থানরত পথচারীদের অধিকার আমলই নেয় না। পাশাপাশি ৮৫ ভাগ পথচারী নিয়ম ভেঙে রাস্তা পার হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে শতকরা ৯৫ জন রিকশাচালক ট্রাফিক আইন ও নিয়মের প্রাথমিক বিষয়গুলো ও জানে না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। সড়ক দুর্ঘটনার ফলাফল কেবল মানুষের মৃত্যুর ক্ষতি নয়, অপূরণীয় আরো অনেক ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দেয় সাধারণের জীবনে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মানুষ প্রাণে বেঁচে থাকে বটে কিন্তু জীবনের স্বাভাবিক গতি তারা হারিয়ে ফেলে চিরকালের জন্য। সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতি অপূরণীয় এবং অসীম। এই সড়ক দুর্ঘটনার কারণে হঠাৎ একটি পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে।

অনাকাঙ্খিত মৃত্যুগুলো আমাদের মনভারী করে দেয়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজন একটু সচেতনতা, ধৈর্য, সতর্কতা। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা বেশি দেখা যায় ট্রাক, মিনিবাস আর দূরপাল্লার বাস চালকদের মধ্যে। এসব গাড়ির চালকগণ ভুলে যায় বেশ কিছু মানুষের জীবন কিছু সময়ের জন্য তাদের জিম্মাদারিতে রয়েছে। চালকগণ একটু সহনশীল হলে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোজনিত সড়ক দুর্ঘটনা সহজেই প্রতিরোধ করা যায়।

মানুষের পথ চলা যতদিন থাকবে দুর্ঘটনা ও ততদিন থাকবে। সচেতন হতে হবে চালক, হেলপার, যানবাহন মালিক, যাত্রী, পথচারী সবাইকে। শক্ত হাতে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের কার্যক্রম জোরদার করতে হবে তবেই এ নিঃশব্দ ঘাতকের রোধ করা যাবে। তাই বাড়াতে হবে জনসচেতনতা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে সেখানে তারা উল্লেখ করেন- চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৪০৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১৭ জন নিহত এবং ৬৫৯ জন আহত হয়েছেন। এই সময়ে ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত, ৫৫ জন আহত হন। ১৩টি রেল দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন।

এতে বলা হয়, নিহতের মধ্যে ৯৭ শতাংশ নারী ও ৬৮ শতাংশ শিশু। ১৫৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৭১ জন, যা মোট নিহতের ৩৩.০৭ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৮.৪২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১২৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৪.৫৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৬ জন, অর্থাৎ ১৪.৭০ শতাংশ। দুর্ঘটনাসমূহের ৭৯টি (১৯.৪৫%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪২টি (৩৪.৯৭%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১২৩টি (৩০.২৯%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৪৯টি (১২.০৬%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা ও ১৩টি (৩.২০%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ১২ ধারায় বলা হয়েছে (১) ‘কর্তৃপক্ষ বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির নিকট যদি এইরূপ বিশ্বাস করিবার যুক্তিসংগত কারণ থাকে যে, ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী কোনো ব্যক্তি অসুস্থ, অপ্রকৃতিস্থ, শারীরিক বা মানসিকভাবে অক্ষম, মদ্যপ, অভ্যাসগত অপরাধী বা অন্য কোনো কারণে মোটরযান চালাতে অযোগ্য, তাহা হইলে কর্তৃপক্ষ বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্ধারিত পদ্ধতিতে উক্ত ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী ব্যক্তিকে মোটরযান চালাইবার জন্য অযোগ্য ঘোষণা করিতে বা তাহার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত, প্রত্যাহার বা বাতিল করিতে পারিবেন।’

আমাদের দেশের চালকদের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ, অনেক চালক মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালনা করে থাকেন এবং দুর্ঘটনার পর এই বিষয়টি প্রায় সময়ই সামনে আসে। তাই এই বিষয়টি মনিটরিংয়ে রাখা উচিত। মহাসড়কের কোনো না কোনো স্থানে যদি চেক করা হয় যে চালক মদ্যপ বা নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন কি না, যদি চালিয়ে থাকেন তাহলে সাথে সাথে তার লাইসেন্স আইন অনুযায়ী বাতিল করতে পারলে অবশ্যই সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা যাবে।

সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ আইন অমান্য করে গাড়ি চালানো। জরিপে দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ চালক জেব্রা ক্রসিংয়ে অবস্থানরত পথচারীদের অধিকার আমলই নেয় না। পাশাপাশি ৮৫ ভাগ পথচারী নিয়ম ভেঙে রাস্তা পার হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরে শতকরা ৯৫ জন রিকশাচালক ট্রাফিক আইন ও নিয়মের প্রাথমিক বিষয়গুলো ও জানে না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। সড়ক দুর্ঘটনার ফলাফল কেবল মানুষের মৃত্যুর ক্ষতি নয়, অপূরণীয় আরো অনেক ক্ষতির বোঝা চাপিয়ে দেয় সাধারণের জীবনে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মানুষ প্রাণে বেঁচে থাকে বটে কিন্তু জীবনের স্বাভাবিক গতি তারা হারিয়ে ফেলে চিরকালের জন্য। সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতি অপূরণীয় এবং অসীম।
এই সড়ক দুর্ঘটনার কারণে হঠাৎ একটি পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে।

লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test