E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিক্ষিপ্ত ভাবনা

২০২৩ জুন ১৩ ১৮:৫৪:২১
বিক্ষিপ্ত ভাবনা

আবীর আহাদ


১) মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কোন গণতন্ত্র চলবে সেটা নির্ধারণে অন্যকোনো দেশের প্রেসক্রিপশনের দরকার নেই। সেটা আমরা ভালো বুঝি। নিশ্চয়ই স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার ও ধর্মান্ধ অপশক্তির জন্যে কোনো গণতন্ত্র নয়, তারা দেশদ্রোহী। দেশদ্রোহীদের জন্যে কিসের গণতান্ত্রিক অধিকার? তাদের তো বাঁচারেই অধিকার নেই! আমরা অনুগ্রহ করে তাদের ছাড় দিয়েছি কিন্তু ছেড়ে দেইনি।

যুক্তরাষ্ট্রের কেউ যদি বলে, যুক্তরাষ্ট্র মানি না, জাতির পিতা ওয়াশিংটনকে মানি না, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত মানি না- তাকে কি যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আদর করবে, না রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে সাজা দেবে? দেবে কি তাকে কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার? নিশ্চয়ই না। তো বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে কেন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক অধিকার প্রদানের পক্ষে ওকালতি করছে? পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে, তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে, তাদের পক্ষে অবস্থান-নেয়া রাজাকার আলবদর ও ধর্মান্ধ অপশক্তিকে এদেশের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়! মূলত একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখানকার তাদের পদলেহী দালাল রাজাকার অপশক্তিকে সাথে নিয়ে বীর বাঙালির বিরুদ্ধে এক অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হুয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার এদেশের দালালগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের পবিত্র মাটি থেকে বিতাড়িত করার প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

২) বঙ্গবন্ধু নেই। কয়েক যুগ আগেই তিনি বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। এখনো তাঁর অজস্র সৎ কর্মী রয়েছেন, যারা তাঁর নীতি আদর্শ ও দেশপ্রেমের টানে জীবন দিতে পারেন। কিন্তু আর কোনো নেতার কর্মী নেই, আছে নেতাদের সৃষ্ট অজস্র দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও চাটারদল ধরনের পাতিনেতা!

৩) আমরা অনেক কষ্টে দেশটি স্বাধীন করেছি। অনেকেই রক্ত দিয়েছি। ফলে এদেশের ভাল-মন্দ দেখা ও ভাবার অধিকার নিশ্চয়ই আমাদের রয়েছে। এদেশে কেউ খাবে কেউ উপোস থাকবে, কেউ দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে শতশত হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করে দেশেবিদেশে রাজকীয় জীবন যাপন করবে, দেশের কষ্টার্জিত লক্ষকোটি বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করবে, লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার উদ্ভ্রান্তের মতো পথে পথে ঘুরে বেড়াবে, ব্যবসায়ীরা সিণ্ডিকেট তৈরি করে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধগতির মাধ্যমে জনজীবন বিপর্যস্ত করবে, তথাকথিত রাজনীতিক নেতা ও আমলারা দেশটিকে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে যা-ইচ্ছে-তাই করবে, দেশের স্বাধীনতা আনায়নকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের অবমূল্যায়ন করবে, অর্থ আত্মীয়তা ও রাজনৈতিক বিবেচনায় যখন-তখন যাকে-তাকে, এমনকি রাজাকারদেরও মুক্তিযোদ্ধা বানানো হবে- এসব কি মেনে নেয়া যায়? যায় না। যায় না বলেই আমরা এসব অপরাধকর্মের সমালোচনা করি, অপরাধীদের শাস্তি চাই। দেশকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলায় পরিণত করতে চাই। আমরা চাই, সৎ মেধাবী ও ত্যাগী মানুষের মূল্যায়ন। আমরা চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এসবই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।

৪) যে যা-ই ভাবুন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই যে, ভারত ও চীনের বুকের কাছে অবস্থিত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র শেষপর্যন্ত হালে পানি পাবে না। কারণ ভারত-চীন একে-অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তারা এশিয়ার বুকে তথা ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মোড়লীপনার কোনোই সুযোগ দেবে না। ভারত ও চীনের সম্ভবত আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া থাকতে পারে। সেটা হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা কোনোক্রমেই ধর্মীয় মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে দেখতে চাইবে না। কারণ বাংলাদেশের মাটিতে তাদের উভয় রাষ্ট্রের বিপুল বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। ফলে আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশকে স্থিতিশীল দেখতে চায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইউক্রেন বিষয়ে শক্তিশালী রাশিয়া এবং তাইওয়ান বিষয়ে শক্তিশালী চীনা আক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকিতে অবস্থান করছে। ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শেষপর্যন্ত আরেকটি ফ্রন্ট খুলে যৌথভাবে ভারত-চীনকে ক্ষেপিয়ে তুলতে চাইবে না।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test