E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শেখ হাসিনা : ‘হাসু’ থেকে বাঙালির সাহসী ঠিকানা

২০২৩ জুলাই ০৮ ১৬:১৯:৫৬
শেখ হাসিনা : ‘হাসু’ থেকে বাঙালির সাহসী ঠিকানা

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


মহান স্রষ্টার কাছে অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এ জন্য যে, তিনি বাঙালি জাতিকে এমন এক মহান নেতা উপহার দিয়েছেন যাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞা-সুদূরপ্রসারী চিন্তা-চেতনা, আবেগের মায়াবী ও বজ্রকঠিন অঙ্গীকারের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহ্যিক প্রেরণায় এক রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটিয়েছেন। দীর্ঘ তিন হাজার বছর বাংলার এই জনপদের সমাজ-ইতিহাস চিত্রিত হয়েছে আর্য-দ্রাবিড়-রাঢ়-মৌর্য-তুর্কী-পাঠান-মোগল-ইংরেজ ও পাকিস্তানের চরম শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের লোমহর্ষক ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে। এ তিন হাজার বছরের মধ্যে প্রকৃত অর্থেই যিনি সর্বপ্রথম স্বাধীন এবং বাঙালি রাষ্ট্রনায়ক, তিনি রাজনীতির মহাকবি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বীয় মেধা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতাসমৃদ্ধ এবং অসাধারণ মানবিক গুণাবলীর মোড়কে আপামর বাঙালির ভালবাসা ও শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে পরবর্তীকালে শুধু বাঙালির বঙ্গবন্ধুই নয়, সমগ্র বিশ্বের কাছে ‘বিশ্ববন্ধু’ শেখ মুজিব হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁরই সুযোগ্য তনয়া বিশ্ববরেণ্য নন্দিত রাজনীতিক সামাজিক-মানবিক ও রাষ্ট্র দর্শনের সমকালীন প্রবক্তা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলার ঋতুসমূহের শ্রেষ্ঠতম শরতের শুভ্রতা-সৌম্য-পবিত্রতা, শিউলিমাখা প্রকৃতির অনন্য সুন্দর কাশফুলের সৌরভে অত্যুজ্জ্বল প্রতীক হয়ে যাঁর জন্ম, বিশ্ব বিধাতার দরবারে তাঁর মঙ্গল প্রার্থনার জন্য এই স্বল্প মাত্রার নিবন্ধের উপস্থাপনা।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর শেষ প্রচ্ছদে বঙ্গবন্ধুর অতি প্রিয় ও আদরের ‘হাচু’ এবং কামালকে নিয়ে বর্ণিত বক্তব্যের ত্যাগ-মনোকষ্ট ও প্রিয়জন থেকে বিচ্ছেদ থাকার যে মর্মবেদনা প্রতিফলিত হয়েছে তা প্রত্যেক হৃদয়বান মানুষকে ব্যথিত ও স্পর্শ করে। সেদিনের অতি চঞ্চল ও আদরের ‘হাচু’ বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে বিশ্ব রাজনীতিতে আজ বিশেষ মর্যাদার আসনে সমাসীন হবেন জাতির পিতা নিজেও কী তা জানতেন! বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করে এই মহিয়সী নারী বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে যেমনিভাবে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, একইভাবে বিশ্ব রাজনৈতিক পরিমন্ডলে তাঁর সুদৃঢ় অবস্থান বিশ্ব রাজনীতিতে নারীর রাজনৈতিক অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপটে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে স্বীয় প্রতিভা-দক্ষতা-নিষ্ঠা-যোগ্যতা-সততা-অসীম সাহসীকতার স্বাক্ষর রেখে বিশ্ব রাষ্ট্রিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আজ এক অসাধারণ উঁচুমার্গের আসনে অধিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু তনয়া বাঙালির হৃদয়ের ভালোবাসা, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। জাতি পেয়েছে জাতির পিতা, পেয়েছে বঙ্গমাতা। সঙ্গে পেয়েছে বাংলাদেশের অক্ষয় জ্যোতি সমতুল্য অতি শ্রদ্ধার কাশফুল কন্যা, প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে যে গভীর অন্ধকার-নষ্ট-বিকৃত-বিভ্রান্তির রাজনীতি চালু করে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনাকে সমূলে ধ্বংস করার লক্ষ্যে সামরিক জান্তার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নস্যাৎ করে ইস্পাতকঠিন দৃঢ়-নির্ভীক শেখ হাসিনা এক দিশাহীন জাতিকে সৎ-সুন্দর-কল্যাণ-আলোকে প্রজ্জ্বলিত করে উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রায় ১০ বার কুচক্রীদের চক্রান্তের শিকার মৃত্যুঞ্জয়ী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশের বৃহত্তম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভার হাতে নিয়ে সকল কুপমন্ডুকতা-অনগ্রসরতা-সাম্প্রদায়িকতা-অমানবিকতা-অনৈতিকতা অর্থাৎ সকল ধরনের অশুভ শক্তির নিধনে ব্রত গ্রহণ করেন। জাতির পিতার হত্যার বিচার এবং মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও জনগণের প্রত্যাশিত এ মহৎ কার্যক্রম অব্যাহত রেখে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে বিশ্ব দরবারে এক অবিনশ্বর ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া সেই নেত্রী আজ বিশ্বখ্যাত নারীনেত্রী ও সুদক্ষ রাষ্ট্রপ্রধান শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, মার্গারেট থেচার, লেডি ন্যান্সি এ্যাস্টর, লিওনর সুলিভ্যান, মার্গারেট চেজ স্মিথ, মার্থা গ্রিফিথস, এলা গ্র্যাসো, শার্লি চিশল্‌ম, বার্নাডেট ডেভলিনের একই কাতারে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছেন। ক্ষেত্র বিশেষে এদেরকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার উপমা সর্বত্রই সমাদৃত। ধরিত্রী-সমুদ্র-সীমান্ত-মঙ্গা-ক্ষুধা-দারিদ্র্য বিজয়ে নেত্রীর দূরদর্শীতা সম্পর্কে দেশবাসী সম্যক অবগত আছেন। তাঁর সফল রাষ্ট শাসনের ফলে অর্জিত অসাধারণ বিষয়গুলো হচ্ছে- অগ্রসরমান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, লিঙ্গ সমতা, দারিদ্রতার হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শ্রমঘন রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব উন্নয়ন, পোশাক ও ঔষধ শিল্পকে রপ্তানিমুখীকরণ ইত্যাদি আজ দেশের আর্থ-সামাজিক দৃশ্যপটে যুগান্তকারী অভিধায় সমুজ্জ্বল। অন্যদিকে ভৌত অবকাঠামো, যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানী ইত্যাদির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, নিজস্ব অর্থায়ানে স্বপ্নের পদ্মাসেতু, পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীরসমুদ্র বন্দর, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, পরিকল্পিত নগরায়ন ও জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয়-ব্যবহার যোগ্য পানি ও সুয়ারেজ প্রকল্পের মত বিভিন্ন মেঘা প্রকল্পের অব্যাহত বাস্তবায়নসহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সফলতা-সক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব পরিমন্ডলে উন্নয়ন-অগ্রগতির রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃত।

তাঁর অর্জিত উল্লেখযোগ্য পুরষ্কারসমূহ হল – ২০০০ সালে “Pearl S Buck” Award, ২০১০ সালে যথাক্রমে সহাস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিশেষ করে শিশু মৃত্যু হার ৫০ শতাংশে কমিয়ে আনার জন্য জাতিসংঘ পুরষ্কার এবং ‘Indira Gandhi Peace Prize’, ২০১১ সালে ‘ICT Award’, ২০১২ এবং ২০১৪ সালে UNESCO কর্তৃক যথাক্রমে ‘Cultural Diversity’ এবং ‘Tree of Peace’ Award, ২০১৩ সালে দারিদ্র বিমোচনের জন্য ‘United Nations South-South’ Award, ২০১৪ সালে ‘United Nations South-South Cooperation Visionary’ Award, ২০১৫ সালে যথাক্রমে Women in Parliament Global Forum’ Award, ‘ICT in Sustainable Development’ Award এবং ‘Champion of the Earth’ Award, ২০১৬ সালে ‘Planet 50-50 Champion’ and ‘Agent of Change’ Award, ২০১৯ সালে ‘Life Time Contribution For Women Empowerment’, ‘Vaccine Hero’, ‘Champion Development For Youth’ Award ইত্যাদি।

জনগণের সেবায় নিবেদিত ও দেশপ্রেমে উজ্জ্বল এক রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এ মেধাবী- অনন্যসাধারণ ও উদার নৈতিকতাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর নির্ভীক রক্তের উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতায় নিজেকে আদর্শ পিতা-মাতার আদর্শ সন্তান হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পরিপূর্ণ সার্থক। সামাজিক ও মানবিক শক্তির সমন্বয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্খার আলোকে তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার সমূহ বাস্তবায়নের প্রতিটি জায়গায় সকল ষড়যন্ত্রকে কঠোর হস্তে দমন করে নিরলসভাবে নির্ভীকচিত্তে লাল-সবুজের পতাকা উড্ডীন রেখে এগিয়ে চলেছেন বঙ্গবন্ধু তনয়া। যে পতাকার জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ত্রিশ লাখ বাঙালি শহীদ হয়েছেন, ২ লাখ জননী-জায়া-কন্যা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সেই পতাকার সামগ্রিক ভার বহন করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন এবং সর্বদাই অপরাজিত থাকবেন – দেশবাসির হৃদয়গভীরে এই অবারিত বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে প্রোথিত।
এটি অত্যন্ত কঠিন উপলব্ধির বিষয়; এই মহান নেত্রীর বুকজুড়ে বাবা-মাসহ নিষ্পাপ কনিষ্ঠ ভাই রাসেলের নির্মম হত্যাকান্ডের করুণ স্মৃতি, দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীদের অব্যাহত ষড়যন্ত্র ও তাঁকে বারবার হত্যার অপচেষ্টা এ সবকিছু মাথায় নিয়েই মহান মুক্তিযুদ্ধের অমর চেতনার অতুলনীয় উদাহরণে ঋদ্ধ। জাতির পিতার স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখি-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের পথে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী নেত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালির কাছে আজ এক সাহসী ঠিকানা। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার জন্মে লুকিয়ে আছে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা-দেশবাসীর ধ্যান-ধারণা ও প্রত্যাশা-প্রাপ্তির যথার্থ প্রতিশ্রুতি। আজকের এই দিনে মহান স্রষ্টার কাছে এই প্রাণপ্রিয় নেত্রীর ঝুঁকিমুক্ত-নির্ভয়-নির্ভার নিরাপদ সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর বিনীত প্রার্থনা জানাচ্ছি।


লেখক : সহকারী পরিচালক (অর্থ ও বাজেট), অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test