E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দাঁতের ইনফেকশনের কারণ ও সমাধান 

২০২৩ জুলাই ১৭ ১৬:০১:১৫
দাঁতের ইনফেকশনের কারণ ও সমাধান 

ডা. আমিনুল ইসলাম ভূইয়া


দাঁতের বিষয়ে অনেক মানুষেই সচেতন নন। দাঁতের রোগের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধেও জানেন না বেশিরভাগ মানুষ। চিকিৎসকদের মতে, দাঁতের ইনফেকশন কিংবা ব্যথাকে কখনোই হালকাভাবে না নেয়া উচিত নয়। কারণ গবেষণা বলছে- দাঁতে জীবাণুর সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হলে তা থেকে  দেখা দিতে পারে বিভিন্ন  জটিল রোগের সমস্যা।

দাঁতের সংক্রমণ কি ?

দাঁতের সংক্রমণ বা দাঁতের ফোঁড়ার সংক্রমণ,যা গোড়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পরার ফলে দাঁতের ভিতরে পুঁজ ভরে যায়। সংক্রমণটি বেদনা দায়ক হওয়ায় দন্তচিকিৎসকের প্রয়োজন। দাঁতের চারপাশের শিরায় ও টিস্যুতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরাকে পেরিওডনটিটিস বলে।

এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি ?

দাঁতের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া লক্ষণ হল ক্রমাগত দাঁতেব্যথা, যার ফলে মাড়ির নিচে শিরা উপশিরাগুলি ফুলে যায়। দাঁতের সংক্রমণের সাথে জড়িত অন্যান্য উপসর্গগুলি হলঃ

* দাঁতে ঠাণ্ডা বা গরমের স্পর্শে সংবেদনশীলতা

* জ্বরের অনুভুতি

* কিছু খাওয়ার সময় কামড়াতে বা চেবাতে অসুবিধা ও ব্যথার অনুভুতি

* মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি

এর প্রধান কারণগুলি কি কি ?

দাঁতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। মুখের ভিতরে লুকিয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া থেকে হওয়া নিঃসরণটি অ্যাসিডিক হওয়ার ফলে প্লাক এবং ক্যারিস জমে,যা সংক্রমণের জন্য দায়ী। দাঁতে সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে জড়িত আরেকটি প্রধান কারণ হল অতিরিক্ত মিষ্টি বা মিষ্টিজাত খাবার খাওয়া, যার ফলে মুখের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়।

কিভাবে এর নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয় ?

ওপরে দেওয়া লক্ষণ ও উপসর্গগুলি দেখার পর, প্রথমে এবং সর্বপ্রথম কাজ হল দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় ঠিক করা যাতে উনি পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পারেন যে মাড়ির কতটা অংশে পুঁজের সংক্রমণটি ছড়িয়েছে। দন্ত চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন যা থেকে সংক্রমণটির বৃদ্ধি ও ছড়িয়ে পরার বিষয়ে জানা যাবে। যে পরীক্ষাগুলি সাধারণত দাঁতের সংক্রমণের নির্ধারণে ব্যবহৃত হয় সেগুলি নীচে দেওয়া হল:

এক্স-রে – সংক্রমণের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য করা হয়।

ওপিজি – আপনার দাঁতের ও চোয়ালের বেড়ে যাওয়া সংক্রমণ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

সংক্রমণ এড়াতে সাধারণত যে সতর্কতাগুলি অবলম্বন করা হয় তার মধ্যে দাঁতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বিশেষভাবে জরুরী। চিকিৎসক প্রতিদিন দুবার দাঁত মাজার ও ফ্লসিঙের পরামর্শ দেন প্লাক জমা হওয়া ও সংক্রমণ এড়ানোর জন্য।

তবুও, যখন সংক্রমণটি ঘটে বা ছড়িয়ে পড়ে ,তখন যে অ্যান্টিবায়োটিকের সাথে চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হয় তা হলঃ

* পুজ ভর্তি ফোঁড়াগুলি চিরে বাদ দেওয়া – পুঁজ ভর্তি ফোঁড়া গঠিত হলে, ব্যথা কমাতে চিকিৎসক ফোঁড়াগুলি থেকে পুঁজ বের করে দেন।

* রুট ক্যানেল পদ্ধতি – দন্ত চিকিৎসক রুট ক্যানেল পদ্ধতির মাধ্যমে মাড়িতে ছড়িয়ে পরা সংক্রমণ ও জমা হওয়া পুঁজ বের করেন।

* প্রাভাবিত দাঁতটি উপরে ফেলা – প্রাভাবিত দাঁতটিতে রুট ক্যানেল পদ্ধতি যখন কার্যকরী হয়না তখন শেষ পদক্ষেপ হিসাবে দাঁতটি তুলে ফেলা হয়।

জীবাণু ঢোকার রাস্তা

মুখের ভেতর নানা ধরনের ৭০০টি জীবাণুর বাস, যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় অনেক বেশি। এ সব জীবাণু ঢোক গেলা এবং নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে। তাছাড়া রক্ত চলাচলে মধ্য দিয়েও জীবাণু মুখে ঢুকতে পারে। অর্থাৎ দাঁতে জীবাণু ঢোকার প্রবেশ পথ অনেক। তাই সকলেরই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

পরিশেষে বলতে চাই, শরীরের যে কোনো অঙ্গের মতো দাঁতের যত্নও অত্যন্ত জরুরি। তাই দাঁতকে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে নিয়মিত যত্ন ছাড়াও ডাক্তারি চেকআপ প্রয়োজন। তাছাড়া দাঁতে ইনফেকশন থাকা অবস্থায় কোনো রোগীর চোখ, কান, মস্তিষ্ক বা হার্টের মতো অঙ্গে অপারেশন করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই একথা সত্য যে দাঁতের কোনো সমস্যা হলে অনেকেই প্রথমদিকে তেমন গুরুত্ব দেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা উপশমের জন্য ‘পেইন কিলারের’ আশ্রয় নিয়ে থাকেন অনেকে। অথচ দাঁতের সমস্যা সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে সমস্যার শুরুতেই সমাধান সম্ভব, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

লেখক : চীপ কনসালটেন্ট এবং মুখ ও দন্ত রোগের বিশেষজ্ঞ ইসলাম ডেন্টাল কেয়ার, ফেনী।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test