E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্মৃতিতে তাজউদ্দিন আহমেদ

২০২৩ জুলাই ২৩ ১৫:৫৪:৩৮
স্মৃতিতে তাজউদ্দিন আহমেদ

আবীর আহাদ


আজ ২৩ জুলাই। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের ৯৮তম জন্মদিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের পরবর্তী নাম তাজউদ্দিন আহমদ। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিণতি ঘটিয়ে তিনি মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন। আমরা অনেকেই মহান তাজউদ্দিন আহমেদকে নিকট থেকে দেখেছি, চিনেছি, জেনেছি। তিনি তাঁর কর্মপদ্ধতি নিয়ে আজো আমাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন। আজ তাইতো আকুল হয়ে আমার মানসপটে মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে তাঁর সাথের আমার একটা প্রত্যয়দৃপ্ত স্মৃতি উঁকি মারছে।

১৯৭১। অক্টোবর মাস। গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়ার পাকিঘাঁটিতে উপর্যুপরি আক্রমণ চালাতে গিয়ে আমাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যায়। ফলে প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ আনার জন্য আমি ক'জন সাথী মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে ৯ নং সেক্টরে রিপোর্ট করি। ভাটিয়াপাড়ার গুরুত্ব অনুধাবন করে সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল সম্মত হলেন। তিনি গোলাবারুদ সরবরাহে ৪/৫ দিন সময় লাগবে জানালে সাথীদের বেগুনদিয়া ইন্ডাকশন ক্যাম্পে রেখে আমি কলকাতা চলে যাই। কলকাতা বাংলাদেশ মিশনে আমার এক কাকা আলীমুজ্জামান প্রেসবিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন বিধায় আমি তাঁর বাসায় গিয়ে উঠি। কাজ না থাকায় সারাদিন বাংলাদেশ মিশনে পড়ে থাকার মাঝে একটা প্রবল গুঞ্জন কানে এলো।

খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে, পাকি-মার্কিন প্রেসক্রিপশন মোতাবেক মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাকগং একটা ফর্মূলা ছেড়ে দিয়েছেন: 'হয় স্বাধীনতা, না হয় বঙ্গবন্ধুর মুক্তি'! অর্থাৎ আমরা বঙ্গবন্ধুকে ফেরত চাই, নাকি স্বাধীনতা চাই ? বড় কঠিন প্রশ্ন। কলকাতায় চরম উৎকন্ঠা। উৎকন্ঠায় মুজিবনগর সরকার। সীমান্ত অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও উৎকন্ঠা। আমিও উৎকন্ঠিত। আমরা আসলে কোনটি চাই, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, না স্বাধীনতা? বহু পরিচিত-অপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাসহ মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে চললো আমাদের কথাবার্তা। এরই এক ফাঁকে আমি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদকে পেয়ে গেলাম। আলোচনায় এ-প্রসঙ্গটিও এলো ।

প্রধানমন্ত্রীই আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন : কী চাও, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, না স্বাধীনতা? আমি কোনো ভাবাভাবি না করেই বললাম : বঙ্গবন্ধুকেও চাই, স্বাধীনতাও চাই! প্রধানমন্ত্রীর মুখখানা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আমার কাঁধে একখানি হাত রেখে প্রবল ঝাঁকি দিয়ে বললেন : আমরা দু'টোই চাই চাই চাই- বঙ্গবন্ধুকেও চাই, স্বাধীনতাও চাই! যাও যুদ্ধে যাও! এ দু'টো অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবেই চলবে!

আমরা মুক্তিযোদ্ধারাও সেদিন দু'টোই চেয়েছি, দু'টোই ছিনিয়ে এনেছি রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। আর এসবের অন্যতম প্রধান রূপকার বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test