E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দাঁতের ব্যথার কারণ ও প্রতিকার 

২০২৩ জুলাই ৩০ ১৮:৫০:০১
দাঁতের ব্যথার কারণ ও প্রতিকার 

ডা. আমিনুল ইসলাম ভূইয়া রাসেল


সারা বিশ্বে দন্ত চিকিৎসার ক্ষেত্রে দাঁতের ব্যথা একটি অতি সাধারণ পরিস্থিতি। দাঁত ব্যথা একটি অপ্রীতিকর মানসিক অভিজ্ঞতা। কোন একটি উদ্দীপক বস্তুর সংস্পর্শে এসে ব্যথা শুরু হয় আর তারপরে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটা বেশি বা কম অস্বস্তিকর, দুর্দশা এবং যন্ত্রণার একটি সংবেদন। দাঁতের ব্যথার কারণ হল দাঁতের রোগ, দাঁতে গর্ত অথবা দাঁতে আঘাত লাগা। দাঁতের চিকিৎসার দুটি পর্যায় আছে, প্রথমটি হল কারণ নির্ণয় এবং দ্বিতীয়টি হল এর চিকিৎসা। সঠিক ভাবে দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করলে এবং চিকিৎসা এবং ওষুধ পেলে দাঁতের ব্যথা সাধারণত ২-৩ দিনে সেরে যায়। আর দাঁত ব্যথার আসল কারণ হল ক্যারিজ বা দন্তক্ষয়। অনেকের কাছে এই রোগটি দাঁতেরপোকা নামে পরিচিত। দাঁতের সব রোগের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বেশি হয়।

চারটা কারণে এই রোগ হতে পারে

১. দাঁতে বা দাঁতের ফাঁকে খাবার জমতে পারে এমন জায়গা।

২. ক্যারিজ তৈরিকারী জীবাণু।

৩. রিফাইন্‌ড কার্বোহাইড্রেট বা চিনিজাতীয় খাবার

৪. বেশিদিন ধরে যদি উপরের তিনটা কারণ একইসঙ্গে চলতে থাকে।

আমাদের দাঁতে অনেক খাঁজ (Pits and Fissure) আছে, যেগুলোতে বেশি ক্যারিজ হয়। ক্যারিজ বেশি হয় দুই দাঁতের মাঝে। তবে সত্যি কথা হচ্ছে ডেন্টাল ক্যারিজ দাঁতের যে কোনো জায়গায় হতে পারে।

ক্যারিজ বা দন্ত ক্ষয়ের শুরুতে তেমন কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে গর্ত আস্তে আস্তে বড় হলে দাঁতে শিরশির করা, কিছু খেলে গর্তে ঢুকে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।

একসময় দাঁতের গর্ত আরও বড় হয়। আর তা মজ্জার কাছাকাছি চলে যায়। ফলে মাঝেমধ্যে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে এই ব্যথাটা থেমে থেমে হয়। কান, মাথা ও চোখসহ ব্যথা করতে পারে। ডেন্টাল ক্যারিজের এই পর্যায় পর্যন্ত সাধারণ ফিলিং করেই ক্যারিজের পরিসমাপ্তি টানা যায়। এতে খরচও কম লাগে, সময়ও কম নষ্ট হয়। আর রোগীর কষ্টও কম হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী এই সময় ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে কিছুদিন নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে থাকেন।

এরপরই শুরু হয় প্রচণ্ড ব্যথা। কোনো একদিন রাতে, যখন বাইরে গিয়ে ওষুধ কেনা প্রায় অসম্ভব তখনই এটা শুরু হয়।

পরদিন সকালে ওষুধ খাওয়ার পর ব্যথা কমে। আর ঠিক বিকেলে আবার ব্যথা শুরু হয়। তখনই বেশিরভাগ রোগীর বোধোদয় হয়। তারা ডেন্টিস্টের কাছে যান। তবে অনেকেরই বোধোদয় হয় না। কেউ কেউ এই অবস্থায়ও অ্যান্টিবায়োটিক আর ব্যথার ওষুধ একসঙ্গে চালাতে থাকেন।

ইতিমধ্যে দাঁতের যতটুকু ক্ষতি হয়, সেখান থেকে দাঁতটি জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব না। তবে মৃতভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ এই সময় রুট ক্যানেল চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ উপশম করা যায়।

যারা এই অবস্থাতেও ডাক্তারের কাছে যান না, তারা মাঝেমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক আর ব্যথানাশক ওষুধ খান। এতে তীব্র ব্যথার অনুভূতি একসময় কমে গেলেও ডেন্টাল ক্যারিজ কিন্তু থেমে থাকে না।

কিছুদিনের মধ্যে জীবাণুর সংক্রামণে দাঁতের মজ্জা পুরোপুরি পচে যায়। পচা অংশগুলো দাঁতের গোড়া দিয়ে হাঁড়ের মধ্যে চলে যায়। সেখানে পুঁজ তৈরি করে। এই অবস্থায় যে ব্যথাটা হয় তা কোনো ওষুধেই কমে না।

দেখা গেছে রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই অবস্থাতেই ডেন্টিস্টের কাছে আসেন। এ ক্ষেত্রে অনেকের দাঁত রুট ক্যানেল চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। আর অনেকের দাঁত ফেলে দিতে হয়।

কেউ কেউ আছেন এই অবস্থাতেও ব্যথা সহ্য করতে থাকেন। ডেন্টিস্টের কাছে না আসার জন্য মনস্থির করেন। তাদের দাঁত আস্তে আস্তে মাড়ির সঙ্গে মিশে যায়। এ সময় মাঝেমধ্যে ব্যাথা হয়। তখন তারা আবার ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খান।

এই পর্যায় থেকে দুই রকম ব্যাপার ঘটতে পারে

১. ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সেলুলাইটিস, লাডউইগ্‌স অ্যান্‌জাইনা ইত্যাদি। লাডউইগ্‌স অ্যান্‌জাইনা হলে পুঁজ জমে রোগীর গলা ফুলে যায়। চিকিৎসা না করালে রোগী নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে।

২. সিস্ট, টিউমার ও ক্যান্সার হয়ে যেতে পারে।

> দাঁত ব্যথা কমানো ঘরোয়া প্রতিকার

* লবঙ্গ: লবঙ্গের উপাদান ইউজেনল মৃদু ব্যথানাশক। এটা দাঁত ব্যথা থেকে মুক্তি দিয়ে সাহায্য করে।

দাঁতের ব্যথা কমাতে আস্ত লবঙ্গ, গুঁড়া বা তেল ব্যবহার করতে পারেন। একটা লবঙ্গ দাঁতের কোণায় রেখে দিন এবং কিছুক্ষণ পর পর সামান্য চিবিয়ে নিন, এতে এর তেল নিঃসরণ হবে।

এছাড়াও, লবঙ্গের তেল দাঁতে ব্যবহার করতে পারেন। দাঁত ব্যথা কমে যাবে। লবঙ্গের তেল ব্যবহারের সময় সচেতন থাকা উচিত। সরাসরি আক্রান্ত স্থানে লবঙ্গের তেল ব্যবহার ব্যথা আরও বাড়াতে পারে। তাই তুলার বলের সাহায্যে দুতিন ফোঁটা তেল নিয়ে তা দাঁতের মাঝে ব্যবহার করতে হ‌বে।

* লবণ পানির ব্যবহার: দাঁত ব্যথা সমস্যার প্রাথমিক ও কার্যকর সমাধান হল লবণ পানি ব্যবহার। এটা মুখ প্রাকৃতিকভাবেই পরিষ্কার করে ও দাঁতের সমস্যা দূর করে।

এটা দাঁতের প্রদাহ কমায় ও মুখের ক্ষত দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

আধা চা চামচ লবণ এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে তা দিয়ে কুলকুচি করুন।

* বরফের টুকরা: পাতলা কাপড়ে পেঁচিয়ে তা ব্যথার ওপরে ধরলে ব্যথা কমে যায়। এটা দাঁত ব্যথা ও ফোলার সমস্যায় খুব ভালো কাজ করে।

দাঁত ব্যথার সমস্যা থাকলে ঠাণ্ডা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, এতে দাঁতের ব্যথা কমে।

* রসুন: রসুন অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান সমৃদ্ধ, এটা দাঁত ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। কয়েকটা রসুন টুকরা করে তাতে লবণ ও গোলমরিচ মেশান।

মিশ্রণটি সরাসরি আক্রান্ত অংশে ব্যবহার করুন। চাইলে চিবিয়েও রসুনের তেল বের করে নিতে পারেন।

রসুন ব্যবহারের সময় তা ছেঁচে ব্যবহার করবেন, কারণ রসুন কাটার সঙ্গে সঙ্গেই তা থেকে তেল বের হয়ে যায়।আর গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী নারী ভেষজ চিকিৎসার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পরিশেষে বলতে চাই, অন্তত ৬ মাস পর পর দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করানো উচিত। তাহলে দাঁতে যদি সামান্য কোনো সমস্যাও থাকে, সেগুলো নিমিষেই দূর করা সম্ভব হয়। আর ভবিষ্যতে দাঁতের বড় রকমের সমস্যায় পড়তে হয় না। সামান্য দাঁতের ব্যথা থেকে কত কিছু হতে পারে। তাই দাঁত ব্যথা হলে সামান্য দেরি না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক : চীপ কনসালটেন্ট এবং মুখ ও দন্ত রোগের বিশেষজ্ঞ, ইসলাম ডেন্টাল কেয়ার, ফেনী।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test