আমেরিকা বাংলাদেশে কেমন সরকার চায়?
গোপাল নাথ বাবুল
যে সরকারের মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলে জোরে কামড়ে হাতের চার আঙ্গুল ছিঁড়ে নেবে, আমেরিকা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সে সরকার চায় না। আমেরিকা এমন একটি সরকার চায়, যার মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলে কামড় দেওয়ার সাহস তো করবেই না, বরং তাদের কথামতো আঙ্গুলগুলো চকলেটের মতো চুষবে এবং তাদের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করবে। যা আমরা স্বাধীনতাত্তোর সময় থেকে তার ভূরি ভূরি প্রমাণ পেয়েছি। আমেরিকা যখনই দেখবে, স্বাধীন মনমানসিকতা সম্পন্ন বা স্বাধীনতাপন্থী কোনো সরকার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তখনই তারা বিভিন্ন কলা-কৌশল অবলম্বন করে তাপালিং শুরু করে দেয় এবং যে কোনো উপায়ে তারা তাদের পছন্দের দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। যার বড় প্রমাণ ২০০১ সালের নির্বাচন।
ওই নির্বাচনে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মরহুম লতিফুর রহমান এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদের কেরামতিতে মামলা-হামলার মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে নিষ্ক্রিয় করে আমেরিকার ঈশারায় তাদের পছন্দনীয় দলকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। যে দলের নেতা-কর্মীরা ভোট পরবর্তী তিনমাস পর্যন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা, তাদের সম্পদ লুঠ, বাড়িঘর ভাঙ্গচুরসহ আগুনে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যায় মেতে ওঠে। এতো অনাচার অত্যাচারের মধ্যেও তখনকার সরকার দেখেও না দেখার ভান করে চুপ ছিলেন। এমনকি কোনো থানায় নির্যতীতদের মামলা পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। উপরন্ত তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন বলেছিলেন, তিনি নাকি হেলিকপ্টার নিয়ে সারাদেশ ঘুরে একটাও নির্যাতনের ঘটনা দেখেননি। এমন অর্বাচীন ও অযোগ্য সরকারই আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলোর পছন্দ। এমন সরকার ক্ষমতায় আনতে তারা প্রয়োজনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করে না। উল্লেখ্য, বিএনপিকে পঞ্চমবারের মতো কানাডার ফেডারেল আদালত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
ওই নির্বাচনের ফলাফল দেখেই বোঝা যায়, তা ছিল পুরোপুরি ষড়যন্ত্রমূলক এবং ঠিক মার্ক দিয়ে নির্বাচিত করার একটা নির্বাচন। ওই নির্বাচনে বিজয়ী দল ২,২৮,৩৩,৯৭৮ ভোট (৪০.৯৭%) পেয়ে ২০০ এর ওপরে আসন পেয়েছিল এবং পরাজিত দল ২,২৩,৬৫,৫১৬ ভোট (৪০.১৩%) পেয়ে মাত্র ৬২ আসন পেয়েছিল। অর্থাৎ শতকরা হারের দিকে দেখলে বোঝা যায়, উক্ত নির্বাচনের ফল আগেই ঠিক করা ছিল এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ২১ বছর পর, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে সাধ্যমত উন্নয়নমূলক কাজ করার পরেও ২০০১ সালের নির্বাচনে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কাছে আওয়ামীলীগ হেরে যায়।
এভাবে হেরে যাওয়ার কারণ ছিল গ্যাস। উক্ত নির্বাচনের আগে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সম্মানে তখনকার প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমান এক মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেছিলেন। ওইখানে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে জিমি কার্টার গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুখের ওপর না করে দেন। তিনি জিমি কার্টারকে বলেছিলেন, ‘এই গ্যাস জনগণের। আর কতটুকু গ্যাস আছে, আমি জানি না। কাজেই বাংলাদেশের সম্পদ, মানুষের সম্পদ শুধু ক্ষমতার লোভে বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকব-এমন বাপের মেয়ে আমি নই’। তখনই কার্যত যে কোনো মূল্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় আমেরিকা। পরবর্তীতে ভারতে অবস্থিত আমেরিকান কোম্পানী ইউনিকোলের কাছে বিএনপি-জামাত জোট ‘গ্যাস বিক্রির মুচলেকা’ দিয়ে ক্ষমতায় আসে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে তার দালিলিক প্রমাণও দেন। এটার সত্যতাও পাওয়া যায় নির্বাচনের আগে-পরে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের বিভিন্ন কার্যকলাপে।
১৬ মে, ২০০১ নির্বাচনকে সামনে রেখে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মেরি অ্যান পিটার্স একটি সেমিনারের আয়োজন করে নয়া সরকারকে ১০০ দিনের ৫ দফা অর্থনৈতিক পরামর্শ দেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, “আগামীতে যে সরকারই আসিবে তাহাদের প্রতি আমার আবেদন, সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসসমূহ উন্নয়ন সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থায় কিভাবে উন্নয়ন করা যায় তাহা দ্রুত মূল্যায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে। ভারতে গ্যাস রপ্তানি করিলে বাংলাদেশ সবচাইতে বেশি লাভবান হইবে বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন”।(দৈনিক ইত্তেফাক-১৬মে, ২০০১)
এরপর ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোট জয়লাভ করে মাত্র এক মাসের মধ্যে ভারতে আমেরিকান কোম্পানি ইউনিকোলের কাছে গ্যাস বিক্রির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তোড়জোড় শুরু করে। ইউনিকোলের প্রস্তাব জাতীয় স্বার্থের অনুকুলেঃ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। চলতি মাসেই গ্যাস রপ্তানির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।(দৈনিক ইত্তেফাক-০১ নভেম্বর, ২০০১)
নির্বাচনের পরপরই ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির লক্ষ্যে দিনাজপুর পর্যন্ত গ্যাসের লাইন নেওয়ার পরিকল্পনা করে এবং তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমান সারাদেশে ঘুরে ঘুরে বলে বেড়াতে লাগলেন, মাটির নিচে গ্যাস রেখে লাভ নেই। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামীলীগ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুললে বিএনপির গ্যাস বিক্রির উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
এবারও আমেরিকা বুঝে গেছে, তাদের পছন্দনীয় দল ক্ষমতায় আসছে না। সুতরাং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আমেরিকার ইঁদুর দৌঁড় শুরু হয়ে গেছে গত বছর থেকে। ইতিমধ্যে মার্কিন কুটনীতিকরা গোপনে বিএনপি’র কিছু নেতার সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেছে, যা নিয়ে জোর চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে। আর তাতে ঈশারা পেয়ে তাদের পছন্দনীয় দলগুলোও আন্দোলনের নামে আবারও দেশে অগ্নিসন্ত্রাসসহ বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শুরু করে দিয়েছে। পশ্চিমারা নির্বাচন কমিশন, সরকারের বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রী, বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে লাগাতার বৈঠক করে যাচ্ছে এবং কথাবার্তা ও আচার-আচরণে বোঝাতে চাচ্ছে যেন বাংলাদেশে অরাজকতা বিরাজ করছে। যে অরাজকতা থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধারের জন্য তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। যেন সারাবিশ্বে আর কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা শুধু একটাই, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ২০০১ সালের মতো ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে তাদের পছন্দনীয় দলকে নিয়ে আসা। যদিও একটা স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এভাবে আগ বাড়িয়ে বিদেশি দূতদের মন্তব্য করা বা মাথা ঘামানোর সুযোগ নেই।
রাষ্ট্রদূতদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এভাবে হস্তক্ষেপ শিষ্টাচারবহির্ভূত একটি কাজ হওয়া সত্ত্বেও তারা ভিয়েনা কনভেনশনের নীতি লঙ্ঘন করে যাচ্ছেতাই বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে এবং এমন গর্হিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যেন বাংলাদেশ তাদের উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছে। যদিও বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশী হস্তক্ষেপ নতুন নয়। মূলত ৭৫ এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ শুরু হয়। বিশেষ করে দেশের রাজনীতিতে যখন থেকে সেনাবাহিনী অংশগ্রহণ শুরু করে তখন থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং তার অবৈধ অর্থ যোগান দেয় পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।
গত ১৩ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানান, বিদেশিদের যেই চাপই আসুক না কেন, জনগণের স্বার্থে যা করা দরকার, সরকার সেটাই করবে। গত ২০ জুলাই আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেলপথকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ৭২ কিলোমিটার রেলপথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যে যত পরামর্শ দিক, দেশটা আমাদের। আর এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আমাদেরই করতে হবে। সেই চিন্তা থেকে আমি দেশ চালাই। কবে কে কী পরামর্শ দিয়েছে সেটা নয়, মানুষের উন্নতি ও সমৃদ্ধির কথা চিন্তা করে আমরা পদক্ষেপ নিই। আমার দেশ, আমার চিন্তা, আমার দেশের মানুষের কিসে মঙ্গল সেটা আমরাই ভালো বুঝি’। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শুনিয়ে দেন, আমেরিকা না গেলে কোনো সমস্যা নেই। পৃথিবীতে আরও অনেক বন্ধু দেশ আছে। শিরদাঁড়া সোজা করে মুখের ওপর বলে দেন, আমেরিকাকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দিয়ে তিনি ক্ষমতায় থাকতে চান না। তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে তিনি ছিনিমিনি খেলতে দেবেন না। তিনি পরিষ্কার বলে দেন, এই দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানো কিংবা কাউকে আক্রমণ করার মতো কাজ তিনি হতে দেবেন না।
বঙ্গকন্যার দৃঢ়তা বুঝতে পেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার মিনমিন করে বলেন, না না, এটা ঠিক নয়, আমরা তোমাদের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ চাই না। অথচ ক্রমান্বয়ে ‘ম্লান’ বা ‘ক্ষয়িঞ্চু’ হওয়ার পথে বিশ্বের পুরনো ‘শক্তিধর’ পাশ্চাত্য বিশ্বের নেতৃত্বে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতার আগে থেকেই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে আসছে। একসূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু যদি ১৯৭১ সালে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ডের প্রস্তাব অনুযায়ী সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আমেরিকার কাছে লিজ দিতেন তাহলে বিনা যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যেতো।
আমেরিকা স্পষ্ট বুঝতে পারল যে, বঙ্গবন্ধুর যোগ্যকন্যা শেখ হাসিনা আমেরিকার দাদাগিরি মানবেন না। তাছাড়া এটা ১৯৭৫ অথবা ২০০১ নয়, এটা ২০২৩ সাল। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে মুক্তি ও উন্নয়ন মডেল পূর্ব ও পশ্চিমের নেতাদের কাছে যথেষ্ট সমাদৃত। বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে এখন নির্ভরশীল বিশ্বব্যবস্থায় নানান বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও কাজ করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম অনিরাপদ দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ধর্মীয় জঙ্গীবাদ, দারিদ্র্য ও মিয়ানমার সরকারের গণহত্যার ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যার আঞ্চলিক সমাধান বাংলাদেশ করে চলছে, যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় আছে। এককথায় দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভূরাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিরাপত্তার জন্য যেহেতু বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেই কারণে আমেরিকার জন্যও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোর কুটনৈতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ নিয়ে আলাপ বা উল্লেখ লক্ষণীয়।
তাই আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায়, যেনতেন প্রকারে শেখ হাসিনা সরকারকে সরিয়ে তাদের পছন্দনীয় সরকারকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসাতে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তারা কখনো র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, কখনো বাংলাদেশের নির্বাচন ‘বাধাগ্রস্তকারীদের’ ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণের পথ বন্ধ করতে কংগ্রেসের ৬ সদস্যদের দিয়ে বাইডেনকে চিঠি লেখার নাটক করে, কখনো ঢাকা-১৭ আসনে এক প্রার্থীর ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে ভিয়েনা কনভেশনের নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূতরা বিবৃতি দেয়। তাতেও কোনো সুবিধা করতে না পেরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর (যারা আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ায়, গাড়ি পোড়ায়, মানুষের ধন-সম্পদ নষ্ট করে) বাংলাদেশ সরকারের পরিচালিত সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘের নজরদারিতে বাংলাদেশে নির্বাচনের দাবিতে ১৪ কংগ্রেস সদস্যকে দিয়ে জাতিসংঘে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে চিঠি পাঠায়।
আমেরিকাসহ ইইউ’র এসব অন্যায় কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর কয়েকবার প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের ভিয়েনা কনভেশনের নিয়ম লঙ্ঘন না করার জন্য সতর্ক করেছে। তারপরও তাদের লজ্জা হয় না। তারা তাদের কাজ যথারীতি করেই চলেছে। চুন থেকে পান খসলেই তারা বক্তব্য-বিবৃতির ডালা নিয়ে হামলে পড়ে।
অথচ কিছুদিন আগে পাশ্ববর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সহিংসতায় প্রায় ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, কয়েকশত আহত হয়েছে, অনেক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। মণিপুরে এতবড় কান্ড ঘটে চলছে গত ২ মাস ধরে। শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বাড়িঘর ত্যাগ করে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। তাতে পশ্চিমাদের মাথাব্যাথা হয় না এবং ভারতের বিরুদ্ধে টু শব্দ করার সাহস করে না। যত মাথাব্যাথা সবই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। কারণ নরেন্দ্র মোদীর মুখে হাত ঢুকিয়ে দিলে সেই হাতের আঙ্গুল আর আমেরিকায় ফেরত যাবে না, ভারতেই পড়ে থাকবে। কথায় আছে-দুনিয়ায় সবাই শক্তের ভক্ত নরমের যম। পশ্চিমারাও তার ব্যতিক্রম নয়।
এখন আবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলছেন, তারা অক্টোবরে প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে। যে বিশেষজ্ঞ টিমে থাকবেন-ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সিটিটউট ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিক ইন্সটিটিউটের বিশেষজ্ঞরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডার পেয়ে জাতিসংঘও শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য এবং অন্তভূক্তিমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে বলে সংস্থাটির মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক জানিয়েছেন। মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সদস্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে বাংলাদেশকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন বলেও জানা যায়। আর হাঁটতে-বসতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ তো আছেই।
অথচ কিছুদিন পরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিরা খুন হচ্ছে। গত ১৮ জুলাই দেশটির মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্টলুইস শহরের হ্যাম্পটন অ্যাভিনিউয়ে একটি গ্যাস স্টেশনে গুলিতে মারা যান ইয়াজউদ্দিন আহম্মদ (২৩) নামের এক বাংলাদেশি। তার মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে একইভাবে দুর্বৃত্তের গুলিতে আবুল হাশিম (৪২) নামে আরেক বাংলাদেশি নিহত হন। এভাবে শত শত বিদেশিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত হত্যা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র গত ৬ মাসে ২৮টি বন্দুক হামলায় ১৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে একটা অংশ স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে বাড়িতে ঢুকে, ছোট-বড় শহরে, বিদ্যালয়ে নির্বিচারে বন্দুক হামলায় মৃত্যুর মিছিল থামছেই না এবং এসব হত্যাকান্ডের কোনো সুরাহাও হচ্ছে না। হত্যাকান্ডের সঠিক চিত্রও প্রকাশ হচ্ছে না। সবকিছু মিলে আমেরিকার আইনশৃংখলার অবস্থা খুবই শোচনীয় বলা যায়। অর্থাৎ তারা তাদের দেশের ও বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে বিদেশি নাগরিকরা রীতিমতো আতংকে দিন অতিবাহিত করছেন।
অথচ হলি আর্টিজানের মতো হামলার সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক একটি সন্ত্রাসী চক্রকে তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ বিদেশিদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। সেই বাংলাদেশের কোনো ছোট ঘটনাকে নিয়ে আইনশৃংখলা রক্ষায় ব্যর্থ যুক্তরাষ্ট্র চিৎকার শুরু করে দেয়। মার্কিন আইন প্রণেতারা দাবি জানাচ্ছেন, বাংলাদেশকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে বহিষ্কার করতে। এখন দেখা যাচ্ছে, আমেরিকাকেই জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে বহিষ্কার করা উচিত। কারণ তারা বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতিসংঘের উচিত-প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে আমেরিকাকে জোরালোভাবে নির্দেশ দেওয়া। যাতে প্রত্যেক নাগরিক তাদের জানমাল রক্ষায় নিরাপদ থাকে। এছাড়া আমেরিকা ইরাক, আফগানিস্থান, লিবিয়া, সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ ধ্বংস করেছে। ইউক্রেনকে উস্কানি দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে সারাবিশ্বকে এক কঠিন বিপদে ফেলে দিয়েছে।
পরিশেষ বলবো, বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৮ শত ডলারের ওপরে। তাই আমাদের নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে আমাদের আরো কঠোর হওয়া উচিত যাতে বিদেশিরা যখন তখন আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করার সাহস না দেখায়।
লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।
পাঠকের মতামত:
- কাপ্তাইয়ে ঝড়ে চলন্ত গাড়ির ওপর ভেঙে পড়ল গাছ, আহত ২
- মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় কামাল হোসেন ফের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত
- পটুয়াখালীতে সাংবাদিক-রাজনীতিক আব্দুর রশিদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
- আরেক দফা কমলো স্বর্ণের দাম
- ‘দেশে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে’
- ‘তাপপ্রবাহে শ্রমজীবীদের বাঁচাতে সরকার কিছুই করছে না’
- ‘শাকিবের পরিবার বিরক্ত হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে’
- কাপাসিয়ায় স্কাউটসের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- সাভারে পৃথক অভিযানে ৫ আসামি গ্রেফতার
- ৩ দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার
- ‘ছাঁটাই ছাড়া চাল বাজারজাতে মিলারদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে’
- বদিউজ্জামানের ওপর হামলা চালিয়ে থানায় ঢুকে উত্তাপ ছড়ালো আমিনুল সমর্থকরা, সুষ্ঠ নির্বাচনী পরিবেশ ফেরানোর দাবি
- কালিগঞ্জে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির হাড়গোড় উদ্ধার, আটক ১
- মৌলভীবাজারে শিল্পায়নের নামে হাওর ধ্বংসের প্রতিবাদ ও পরিবেশের হৃৎপিণ্ড কাউয়াদিঘি রক্ষার দাবি
- তীব্র তাপদাহে ফরিদপুর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির শরবত বিতরণ অব্যাহত
- আগৈলঝাড়ায় ভোটযুদ্ধে ১৩ প্রার্থী
- ‘পঁচাত্তরের পর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে’
- লোহাগড়ায় উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ
- রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে ২ নারীর মৃত্যু
- পাংশায় সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে নাগরিক সমাজের মতবিনিময় সভা
- ভোটে প্রভাব বিস্তার করবেন না: মন্ত্রী-এমপিদের ইসি
- সোনা রপ্তানিতে বাংলাদেশে উজ্জ্বল সম্ভাবনা
- বশেমুরবিপ্রবিতে ইনোভেশন শোকেসিং বিষয়ক কর্মশালা
- পাংশায় বিদেশি পিস্তল সহ সাবেক মেম্বার গ্রেফতার
- পোশাক শ্রমিকদের নিপীড়ন নিয়ে অ্যামনেস্টির মিথ্যাচার
- নিজেদের করা পাপ নিজেদেরই মোচন করতে হবে
- বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায় ৮০টি সৌদি কোম্পানি
- শৈলকুপায় একজনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা
- মিথ্যা মামলা ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে খসরু চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন
- উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে প্রায় ৫ হাজার পর্যবেক্ষক
- ভৈরবে তাপদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং, জনজীবন অতিষ্ঠ
- গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি
- ভৈরবে ভ্রমণতরী ডুবে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বাল্কহেডের চালক গ্রেপ্তার
- দাম কমলো এলপি গ্যাসের
- ভৈরবে নূরানী কয়েল ফ্যাক্টরীতে আগুনে অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি
- ধানে ভরপুর ভৈরবের মোকাম, দাম নিয়ে হতাশ কৃষক-ব্যবসায়ীরা
- বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আপিল বিভাগের নতুন ৩ বিচারপতির শ্রদ্ধা
- গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বর্তমান সরকারের ভূমিকা
- আশুলিয়ায় স্বামীর পিটুনিতে গার্মেন্টস কর্মীর মৃত্যু
- জাবি উপাচার্যের নামে ভুয়া মেইল আইডি, তথ্য আমলে না নেওয়ার আহ্বান
- মহম্মদপুরে মহান মে দিবস উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
- 'ফরিদপুর সদর উপজেলার জনগণ মোটরসাইকেল মার্কায় ভোট দিতে ৮ তারিখের অপেক্ষা করছে'
- গোপালগঞ্জে মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কলেজ ছাত্র নিহত
- ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে কোন লাভ হবে না’
- দ্বিতীয় লেগে ঘুরে দাঁড়াবে পিএসজি, আশাবাদী এনরিক
- শনিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা
- উপজেলা ভোটের দ্বিতীয় ধাপের প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রচার শুরু
- ‘মিল্টনকে রিমান্ডে নিয়ে সব অপকর্ম বের করবো’
- কক্সবাজারে বজ্রপাতে দুই লবণচাষী নিহত
- ওমরাহ পালনে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- সিলেটের ভ্রমণ কাহিনী
- শুধু প্রভাবশালীদের পক্ষেই আইন!
- অম্ল-মধুর যন্ত্রণায় অপু বিশ্বাস
- লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
- আমার বোন শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি : চিনে নিন কে এই বরকত!
- 'ইতিহাসের ইতিহাস'
- ধনী হওয়ার আট কার্যকর উপায়
- মেয়ে পটানোর কৌশল!
- লক্ষাধিক রাখাইন জনগোষ্ঠী আড়াই হাজারে নেমে এসেছে
- উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের নতুন যাত্রা ১ বৈশাখ
- লোভী মানুষ চেনার সহজ উপায়
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ১৪'তোমার সহজাত উদারতা তোমাকে আকাশের সীমানায় উন্নীত করলেও তোমার ঘনিষ্ঠ অনেকের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ তোমার নৃশংস মৃত্যুর পথে কোনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি'
- বাংলা বই পড়ার ওয়েবসাইট
- শাকিবের নায়িকা শ্রাবন্তী, অপুর নায়ক জিৎ
- মঠবাড়িয়ায় ৯ বছরের শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা
- হুমায়ূনের মৃত্যুর কারণ মদের পার্টি !
- দেশে ফিরছেন তারেকস্ত্রী জোবায়দা রহমান
- বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
- ইউটিউবে নায়লার আত্মপ্রকাশ
- নেপালের ভূমিকম্প প্রাকৃতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি !
- বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে !