E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পুরনো কাসুন্দি: মাছের রাজা ইলিশ, মানুষের রাজা পুলিশ!

২০২৩ আগস্ট ১২ ১৬:২৮:১০
পুরনো কাসুন্দি: মাছের রাজা ইলিশ, মানুষের রাজা পুলিশ!

রহিম আব্দুর রহিম


গত ১১ আগস্ট, এক সাংবাদিক তাঁর ফেইসবুক ওয়ালে মনের ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেছেন, "পঞ্চগড়ে দশ চাকার ট্রাক ওভারলোড পাথর নিয়ে রাস্তা দিয়ে যায়, পুলিশের চোখে পড়ে না, চোখে পড়ে শুধু মোটর সাইকেল।" তাঁর এই মন্তব্য যথাযথ। তবে যারা ঘোড়া কিনেছেন অথচ লাগাম কিনতে পারেনি, তাদের তো খেসারত দিতেই হবে।   

২০২২ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বেসরকারি এক চ্যানেলে একটি শিরোনাম হয়েছিল "হঠাৎ টেনে ধরলো মোটরসাইকেল" শিরোনামটির সার সংক্ষেপ হলো, রাজশাহীর একব্যক্তি তার স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন, ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করায় কর্তব্যরত এক পুলিশ সদস্য মোটর সাইকেল টেনে ধরে, এত করে মোটর সাইকেল উল্টে গেলে বাইকার ও বাইকে থাকা তাঁর স্ত্রীসহ সন্তান আহত হোন। ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করা মারাত্মক অন্যায়,তার চেয়েও অন্যায়, চলন্ত মোটর সাইকেল টেনে ধরা। কথায় বলে, চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। ১৪ জুলাই শুক্রবার জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকার ভেতরের পাতায় প্রকাশিত একটি শিরোনাম ছিলো, 'কান্না থামছে না হায়দারের।'

বগুড়া ব্যুরো'র বরাত দিয়ে প্রকাশিত শিরোনামের শুরুতে বলা হয়েছে, "হাঁপানি রোগে আক্রান্ত বগুড়ার হায়দার আলী ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁর উপার্জনেই চলে তিন সদস্যের সংসার। মাত্র চারদিন আগে জমানো টাকা ও জমি বিক্রি করে নতুন ইজিবাইক কেনেন তিনি।বৃহস্পতিবার সকালে শহরের সাতমাথায় প্রবেশ করায় হায়দার (৪৭) এর ইজিবাইকের সিট খুলে জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ। পরে শহরের গোহাইল রোড়ে ইজিবাইক রেখে তিনি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে যান সিট ছাড়িয়ে নিতে। অনেক কাকুতি-মিনতি করেও সিট না পেয়ে হায়দার ফিরে এসে দেখেন ইজিবাইক নেই। পরে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও ইজিবাইকটি পাননি। জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে হায়দার বলেছিলেন, 'সব শেষ হয়ে গেল!' এই লেখাটি যখন তৈয়ার করছিলাম তখন পর্যন্ত হায়দারের ইজিবাইক বাইকটি পুলিশ উদ্ধার করতে পেরেছে কি না জানি না।

তবে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার ভুক্তভোগী চালককে ১০ হাজার টাকা এবং কিছু খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন। যা কিছুই হোক না কেনো, ওই ট্রাফিক পুলিশ হাঁপানি আক্রান্ত হায়দার আলী ও তাঁর পরিবারকে মাটির সাথে পিসে দিয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই।মূল আলোচনায় যাবার আগে আরও একটি ঘটনা উপস্থাপন করছি। গত ১৪ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ব্যক্তি পুলিশের এক এস আইয়ের ভয়ংকর হুক্কারের একটি অডিও আপলোড করেছে, যা শুনে মনে হয়েছে আইনের রক্ষকরা এত ভয়ংকর! সভ্যতা আজ কোথায়! ঘটনাটি পঞ্চগড় জেলার বোদা থানায়। ঘটনার সারসংক্ষেপ, 'দুই ব্যক্তির মধ্যে জমি জায়গা নিয়ে বিরোধ, একপক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে, থানার কর্তাব্যক্তি বিষয়টি দেখার জন্য মো. আমজাদ হোসেন নামক এক এস আইকে দায়িত্ব দেন। এবার এস আই দায়িত্ব পেয়ে বিবাদী পক্ষের মোস্তফা কামাল নামক এক ভ্যান চালককে থানায় আসতে বলেন, রাত হওয়ায় সে যেতে পারবে না বলে জানান, এতে ক্ষেপে যান এসআই আমজাদ হোসেন। ফোনে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে মোস্তফাকে। এক পর্যায় এই আইনের সেবক ভ্যান চালক মোস্তফার পা কেটে ফেলার হুমকি দেন। ফোনে দেওয়া হুমকি মোস্তফা রেকর্ড করে। যা হাত বদল হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড হয়।'

পুলিশের দেয়া হুমকির এই অডিও এক লক্ষ ৩৩ হাজার জনমানুষের কানে পৌঁছেছে। ছি!ছি! উঠেছে পুলিশের এই নেতিবাচক কর্মকান্ডে। ভুক্তভোগী মোস্তফা কামাল ওই এস আইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগও করেছেন। অভিযোগের ফলাফল জানা যায়নি। পৃথিবীর সকল আইন কানুন মানুষের কল্যাণে হয়েছে, তবে কেনো হায়দার আলীর ইজিবাইকের সিট খুলে নিল ট্রাফিক পুলিশ। সে অপরাধ করে থাকলে তার ইজিবাইক জব্দ করার কথা; ইজিবাইক জব্দ হলে তা চুরি হতো না। ট্রাফিক পুলিশ তা করেনি, ফলে যা হবার তাই হয়েছে। পুলিশের কাজ মানুষের জান মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তা কি করতে পেরেছেন ওই পুলিশ? হত দরিদ্র হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হায়দার আলীর আয় রোজগারের একমাত্র সম্বল ইজিবাইক চুরি হয়েছে, এই চুরির দায় কে নেবে? হায়দারের সংসার কিভাবে চলবে, তাঁর পাশে কে দাঁড়াবে? এইসব কি এই আইনের সেবকরা কখনও ভেবেছেন? সড়কে বের হলেই, 'বাইক' চালকরা যেভাবে আইনের আওতায় আসছে, সেই তুলনায় সড়কে চলাচলকারী আনফিট বাস, ট্রাক, নছিমন, ভটভটি, টুকটুকির অদক্ষ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে কি?

আজকের লেখার দ্বিতীয় ঘটনা, জমি সংক্রান্ত বিরোধী, একপক্ষ অন্যপক্ষের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন, করতেই পারেন। সেক্ষেত্রে থানা পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিলে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়; তবে কোন একটি পক্ষের হয়ে অন্য কোন একটি পক্ষকে হুমকি, ভয়ভীতি দেখানো কতটা আইন সম্মত বা যুক্তিযুক্ত! আশির বা নব্বইয়ের দশকের পুলিশের চেয়ে বর্তমান পুলিশ অনেক জনবান্ধব, পুলিশ জনগণের সেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। এরপরও পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য দ্বারা চরম নেতিবাচক ঘটনা কালে ভদ্রে ঘটেই চলছে; সংশ্লিষ্ট বাহিনীর উর্ধ্বতনরা আরও একটু কঠোর হলেই সড়কে যেমন পূনাঙ্গ শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, তেমনি পুলিশ বাহিনী মানবের কল্যাণে স্থায়ী বন্ধুত্বে পরিনত হবেন; অন্যথায় সেই পুরনো কাসুন্দি, "মাছের রাজা ইলিশ, মানুষের রাজা পুলিশ।"

লেখক : শিক্ষক ও শিশু সাহিত্যিক।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test