E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৫ আগস্ট জাতীয় জীবনে একটা কলঙ্কের দিন  

২০২৩ আগস্ট ১৪ ১৭:০৪:১৯
১৫ আগস্ট জাতীয় জীবনে একটা কলঙ্কের দিন  

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


মঙ্গলবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ২০২৩। বাংলার আকাশ-বাতাস আর প্রকৃতিও অশ্রুসিক্ত হওয়ার দিন। কেননা পঁচাত্তরের এই দিনে আগস্ট আর শ্রাবণ মিলেমিশে একাকার হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর আকাশের মর্মছেঁড়া অশ্রুর প্লাবনে।পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সুবেহ সাদিকের সময় যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে বুলেটের বৃষ্টিতে ঘাতকরা ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল, তখন যে বৃষ্টি ঝরছিল, তা যেন ছিল প্রকৃতিরই অশ্রুপাত। ভেজা বাতাস কেঁদেছে সমগ্র বাংলায়। ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের সামনে ভীতসন্ত্রস্ত বাংলাদেশ বিহ্বল হয়ে পড়েছিল শোকে আর অভাবিত ঘটনার আকস্মিকতায়। কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে এ শোকের আগুন।

স্বাধীনতার পরবর্তী অতি অল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু যখন তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে বাঙ্গালি জাতিকে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত জাতিতে করতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এই দিনে হত্যা করা হয়েছিলো বাঙ্গালির স্বাধীনতাকে, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে।

যখন মসজিদ থেকে সুললিত কন্ঠে ভেসে আসছিলো মোয়াজ্জিনের ফজরের আযান, ঠিক তখনই প্রকাণ্ড গর্জনে ঘাতকের গুলি বর্ষণে ঝাঁজড়া হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর বুক,হত্যা করা হয়েছিলো বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ পরিবারের সকলকে, বাদ যায়নি ছোট্র শিশু রাসেলও। দেশি বিদেশী শত্রুর মদদপুষ্ট স্বাধীনতা বিরোধী ওই অপশক্তি সেদিন মুলত বঙ্গবন্ধুকে নয়, তাঁর আদর্শকে ধ্বংস করার জন্য বিশ্বের ইতিহাসে নৃশংস এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলো। বাঙ্গালি জাতির ইতিহাস থেকে এই কলংকের অধ্যায় মুছে যাওয়ার নয়। শোষণ মুক্ত একটি দেশ, স্বাধীন মানচিত্র ও পতাকা উপহার দেয়া মুক্তিযুদ্ধত্তোর ধ্বংস স্তুপের মধ্য থেকে নতুন জীবন নির্মাণ করা, দেশের উপর দেশবাসীর মালিকানা প্রতিষ্টা করাসহ বঙ্গবন্ধুর ঈর্ষণীয় সফলতা ঘাতকেরা মেনে নিতে পারেনি, তাইতো তাঁরা সেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তাঁরা মুলত বাংলাদেশকেই হত্যা করতে চেয়েছিলো। কিন্তু এত সহজেই কি মোছা যায় জাতির জনকের নাম, আর জনকের স্বপ্নজাত দেশটিকে?

৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সমগ্র বাঙ্গালি জাতির ললাটে যে কলংকতিলক দেশদ্রোহী নরপশুরা এঁকে দিয়েছিলো, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করে তা মোচন করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উত্তরাধিকার দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আত্মস্কীকৃত খুনিদের অধিকাংশেরই ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ৪৮ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালনের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও বংশ পরিচয়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। লুৎফর- সায়েরা দম্পতির চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে মুজিব ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোনের নাম ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম, সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী; ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের।

বংশ পরিচয়: সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, এ জাতির ইতিহাসে অবিসংবাদিত মহানায়কের রয়েছে সম্ভ্রান্ত বংশ পরিচয়। উচ্চ বংশীয় ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় তার মাঝে আশৈশব ধর্মীয় মূল্যবোধ ও মানবিক চেতনাবোধের উন্মেষ ঘটে। সমৃদ্ধ বংশ পরিচয় অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তির আত্মমর্যাদাবোধ ও আত্মপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখে।ইসলাম ধর্মেও বংশ পরিচয়ের মূল্যায়নে শিক্ষণীয় নির্দেশনা দেয়া আছে। প্রকৃতপক্ষে এ সংক্রান্ত জ্ঞানচর্চা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। মূলত ইসলাম বংশ পরিচয়ের আভিজাত্যকে গৌণ রেখে যোগ্যতা, বিশ্বাস ও ন্যায়নীতি-নিষ্ঠাকে ব্যক্তির মর্যাদার মানদণ্ড নির্ধারণ করে। এ সার্বজনীন ও মানবিক বিধান মেনে বলা যায়-ভাষা, বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায় ও বংশীয় ঐতিহ্য অনেক সময় ব্যক্তির রুচিবোধ, স্বাতন্ত্র্য, বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়ক বা সম্পূরক ভূমিকা পালন করে। ব্যবহারেই বংশের পরিচয়। উচ্চ বংশীয় ব্যক্তি ঐতিহ্যগতভাবেই সাধারণত উন্নত মানসিকতা ও সমৃদ্ধ রুচিবোধের পরিচয় বহন করেন।

মুজিবুর রহমান সম্ভ্রান্ত উচ্চ বংশীয় ঐতিহ্যের ধারক। তিনি ‘শেখ’ বংশীয় উত্তরাধিকার বহন করেন। ‘শেখ’ শব্দটি এসেছে আরবি ভাষা থেকে, যার অর্থ শক্তিশালী, বলবান, বিপুল ক্ষমতাধরসম্পন্ন। এটি সম্মানসূচক আরবি অভিধা বা পদবী হিসেবেও পরিচিত। বিশেষ করে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাবান শাসকদের উপাধি হিসেবেও শেখ-এর ব্যবহার রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মানুষের নামের পূর্বে এটি ব্যবহৃত হয়।ল্যাটিন শব্দ ‘সেনেক্স’-এর বাংলা ‘বয়োবৃদ্ধ বা সম্মানিত’। এর আরবি প্রতিশব্দ ‘শেখ’। তবে বর্তমানে এ পদবীতে পরিচিত ও সংশ্লিষ্টদের নেপথ্যে রয়েছে অনবদ্য তাৎপর্য। ইসলামের মহা নবী, মানবতার পরম বন্ধু, মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে অনেককে সরাসরি মুসলিম করেন। ইতিহাসে তারা ‘শেখ’ অভিধায় ভূষিত।

আমাদের এ প্রাচীন বঙ্গীয় জনপদে অসংখ্য ব্যক্তি ইসলামের শাশ্বত বাণী নিয়ে আসেন। তাদের অধিকাংশই আরব ও পারস্য থেকে কালের নানা সন্ধিক্ষণে এ ভূখণ্ডে আগমন করেন। তন্মধ্যে অনেকে ছিলেন মহানবী (সা.)-এর সাহাবী। পরবর্তী কালে আরো আসেন সুফি, দরবেশ, গাউস, কুতুব, অলি ও বুজুর্গ।একদা মহামতি শেখ আউয়াল নামে এমন দরবেশের আগমন ঘটে এ বঙ্গে। আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধু তারই বংশের সৌভাগ্যবান অধস্তন বংশধর। তাকে খোকা বলে ডাকতেন বাবা লুৎফর ও মা সায়েরা। তাদের ধারণকৃত ভিডিও দলিলের বরাত দিয়ে বলা যায়, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ মঙ্গলবার রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আজীবন অকুতোভয়, সৎ সাহসী, আপোষহীন সচ্চরিত্র, উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দৃঢ়চেতা, স্বাধীনতাপ্রিয়, নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন, দরিদ্রের প্রতি দয়ালু, মানুষের প্রতি মমত্ববোধ সম্পন্ন এবং বাবা-মায়ের কথা পালনে অন্যরকম বাধ্য ছিলেন বলে উল্লিখিত দলিলে পাওয়া যায়।

শেখ আউয়াল ব্যাবিলনীয় সভ্যতার লীলাভূমি ইরাক থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে বিশ্বখ্যাত অলি হযরত বায়েজিদ বোস্তামির (রাহ.) সফর সঙ্গী হয়ে বঙ্গে আগমন করেন। ইসলাম প্রচারের মহান ব্রত ছিল তাদের। এ মহান অলি সমুদ্রপথে জাহাজে করে আসেন। প্রথমে বার আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রামে আস্তানা গাড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ আউয়াল দরবেশেরই সপ্তম অধস্তন বংশধর ছিলেন। তার বংশীয় ঊর্ধ্বতনদের খ্যাতনামা আরেক ব্যক্তি হলেন শেখ বোরহান উদ্দিন। তিনি আউয়ালের ছেলে শেখ জহির উদ্দিনের দৌহিত্র ছিলেন। বোরহান উদ্দিনের বাবা ছিলেন শেখ জান মাহমুদ ওরফে তেকড়ি।বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলার গল্প গ্রন্থের বরাত দিয়ে বলা যায়, অলিকুল শিরোমণি বায়েজিদ বোস্তামির (র.) নির্দেশে মেঘনা পাড়ে গমন করেন শেখ আউয়াল। এতদঞ্চলের অধিবাসীদের মাঝে ইসলামের শান্তির বাণী প্রচার করেন তিনি। পরে এ দরবেশ চলে আসেন মেঘনা বিধৌত সোনারগাঁও এলাকায়। সেই সুবাদে শেখ আউয়ালের সন্তান শেখ জহির উদ্দিনও এ অঞ্চলেই বসবাস করেন। পরে জহির উদ্দিনের ছেলে তেকড়ি শেখ খুলনার দিকে পাড়ি জমান। উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসা।

একসময় তেকড়ির ছেলে শেখ বোরহান উদ্দিন জনৈক বন্ধুর কাছে মধুমতি ও ঘাঘোর নদীদ্বয়ের মাঝখানে গড়ে ওঠা টুঙ্গিপাড়া গ্রামের কথা জানতে পারেন। পরে বন্ধুকে নিয়ে রূপসা নদী অতিক্রম করে সেখানে চলে আসেন। একপর্যায়ে কাজি পরিবারের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। বাকিজীবন এখানেই স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। আর এভাবেই বিখ্যাত শেখ পরিবারের গোড়াপত্তন হয় ঐতিহাসিক টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে। বোরহান উদ্দিনের ছেলে শেখ আকরাম হলেন বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমানের দাদা। আর শেখ লুৎফর রহমান হলেন শেখ আব্দুল হামিদের সন্তান। কালক্রমে উত্থান-পতন ঘটেছে শেখ পরিবারের। নাম-যশ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, অর্থ, বিত্ত-বৈভব হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু তার সুমহান ঐতিহ্য ও পরিবারের সমৃদ্ধ ইতিহাস কখনই বিস্মৃত হয়নি। বরং সময়ের বিবর্তনে সেই পরিবার সুকীর্তির শীর্ষে উপনীত হয়েছে। এমন আলোর বিচ্ছিরণ ঘটিয়েছে যা আর কখনই ম্রিয়মান হওয়ার নয়।বাংলার আকাশ-বাতাস আর প্রকৃতিও অশ্রুসিক্ত হওয়ার দিন।

সেই কালো রাতে শহীদ হয়েছিলেন যারা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের কালরাতে ঘাতকের হাতে নিহত হন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক, প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্ত:সত্তা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খান।

জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে সকল শহীদকে। সমগ্র জাতিকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় প্রস্তুত করেছিলেন ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তাই চিরঞ্জীব তিনি এ জাতির চেতনায়। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনে দেশের সংবিধানও প্রণয়ন করেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। শোষক আর শোষিতে বিভক্ত সেদিনের বিশ্ববাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন শোষিতের পক্ষে।পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার যে ডাক দিয়েছিলেন তা অবিস্মরণীয়। সেদিন তাঁর বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই অমর আহ্বানেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিপীড়িত কোটি বাঙালি। সেই মন্ত্রপূত ঘোষণায় বাঙালি হয়ে উঠেছিল লড়াকু এক বীরের জাতি।

আবার ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেও বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠেই জাতি শুনেছিল মহান স্বাধীনতার অমর ঘোষণা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওই রাতে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাকে বন্দি থাকতে হয় পাকিস্তানের কারাগারে। তার আহ্বানেই চলে মুক্তিযুদ্ধ। বন্দিদশায় মৃত্যুর খবর মাথায় ঝুললেও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি অকুতোভয় এ মহান নেতা। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। বীরের বেশে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু।দেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি দেশের মানুষকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করেন বঙ্গবন্ধু। দেশগড়ার এই সংগ্রামে চলার পথে তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তার দেশের মানুষ কখনও তার ত্যাগ ও অবদানকে ভুলে যাবে না। অকৃতজ্ঞ হবে না। নবগঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু তাই সরকারি বাসভবনের পরিবর্তে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের সাধারণ বাড়িটিতেই বাস করতেন।

মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তারা একের পর এক চক্রান্তের ফাঁদ পেতেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী উচ্চাভিলাষী কয়েকজন সদস্যকে ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যবহার করেছে ওই চক্রান্তেরই বাস্তব রূপ দিতে। এরাই স্বাধীনতার সূতিকাগার বলে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে হামলা চালায় গভীর রাতে। হত্যা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে। বিশ্ব ও মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেদিন তারা কেবল বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার সঙ্গে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতার আদর্শগুলোকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলতে অপপ্রয়াস চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসও। বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যাকান্ড বাঙালি জাতির জন্য করুণ বিয়োগগাথা হলেও ভয়ঙ্কর ওই হত্যাকাণ্ডে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতও হয়েছে নানাভাবে। হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক সরকার।

১৯৭৬ সালের ৮ জুন ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে অভিযুক্ত হত্যাকারী গোষ্ঠীর ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল

১. লে. কর্নেল শরিফুল হককে (ডালিম) চীনে প্রথম সচিব,

২. লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব,

৩. মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব,

৪. মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব,৫. মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব,

৬. মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব,

৭. মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব,

৮. মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব,

৯. কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব,

১০. লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব,

১১. লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব,

১২. লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

তবে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় মতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা এবং নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বিচার সম্পন্ন হয়। জোট শাসনের পাঁচ বছর এই রায় কার্যকরের পথে বাধা সৃষ্টি করে রাখা হলেও বর্তমান মহাজোট সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের পাঁচজনের রায় কার্যকর হয় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি। দণ্ড প্রাপ্ত কয়েক খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছেন। ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল দিবাগত রাতে খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

সেই কালো রাতে যা ঘটেছিল

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (রেসিডেন্ট পি এ) জনাব আ ফ ম মোহিতুল ইসলাম এর এজাহারে বর্ননানুসারে) ১৯৭৫ সালে তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে কর্মরত ছিলেন। ১৪ আগষ্ট (১৯৭৫) রাত আটটা থেকে ১৫ আগষ্ট সকাল আটটা পর্যন্ত তিনি ডিউটিতে ছিলেন ওই বাড়িতে। ১৪ আগষ্ট রাত বারোটার পর ১৫ আগষ্ট রাত একটায় তিনি তাঁর নির্ধারিত বিছানায় শুতে যান। মামলার এজাহারে জনাব মোহিতুল উল্লেখ করে বলেন, ‘তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম তা খেয়াল নেই। হঠাৎ টেলিফোন মিস্ত্রি আমাকে উঠিয়ে (জাগিয়ে তুলে) বলেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব আপনাকে ডাকছেন। তখন সময় ভোর সাড়ে চারটা কী পাঁচটা। চারদিকে আকাশ ফর্সা হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু ফোনে আমাকে বললেন, সেরনিয়াতের বাসায় দুষ্কৃতকারী আক্রমণ করেছে। আমি জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করলাম। অনেক চেষ্টার পরও পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাইন পাচ্ছিলাম না। তারপর গণভবন এক্সচেঞ্জে লাইন লাগানোর চেষ্টা করলাম। এরপর বঙ্গবন্ধু ওপর থেকে নিচে নেমে এসে আমার কাছে জানতে চান পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে কেন কেউ ফোন ধরছে না। এসময় আমি ফোন ধরে হ্যালো হ্যালো বলে চিৎকার করছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধু আমার হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বললেন আমি প্রেসিডেন্ট বলছি। এসময় দক্ষিণ দিকের জানালা দিয়ে একঝাঁক গুলি এসে ওই কক্ষের দেয়ালে লাগল। তখন অন্য ফোনে চিফ সিকিউরিটি মহিউদ্দিন কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। গুলির তান্ডবে কাঁচের আঘাতে আমার ডান হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এসময় জানালা দিয়ে অনর্গল গুলি আসা শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শুয়ে পড়েন। আমিও শুয়ে পড়ি।

কিছুক্ষণ পর সাময়িকভাবে গুলিবর্ষণ বন্ধ হলে বঙ্গবন্ধু উঠে দাঁড়ালেন। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। ওপর থেকে কাজের ছেলে সেলিম ওরফে আবদুল বঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবী ও চশমা নিয়ে এলো। পাঞ্জাবী ও চশমা পরে বঙ্গবন্ধু বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) বললেন আর্মি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি এত গুলি চলছে তোমরা কি কর? এসময় শেখ কামাল বলল আর্মি ও পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসুন। কালো পোশাক পরা একদল লোক এসে শেখ কামালের সামনে দাঁড়ালো। আমি (মোহিতুল) ও ডিএসপি নূরুল ইসলাম খান শেখ কামালের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নরুল ইসলাম পেছন দিক থেকে টান দিয়ে আমাকে তার অফিস কক্ষে নিয়ে গেল। আমি ওখান থেকে উঁকি দিয়ে বাইরে দেখতে চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি গুলির শব্দ শুনলাম। এসময় শেখ কামাল গুলি খেয়ে আমার পায়ের কাছে এসে পড়লেন। কামাল ভাই চিৎকার করে বললেন, আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল, ভাই ওদেরকে বলেন।’

মোহিতুল ইসলামের এজাহারের বর্ণনায় বলেন, ‘আক্রমণকারীদের মধ্যে কালো পোশাকধারী ও খাকি পোশাকধারী ছিল। এসময় আবার আমরা গুলির শব্দ শোনার পর দেখি ডিএসপি নূরুল ইসলাম খানের পায়ে গুলি লেগেছে। তখন আমি বুঝতে পারলাম আক্রমণকারীরা আর্মির লোক। হত্যাকান্ডের জন্যই তারা এসেছে। নূরুল ইসলাম যখন আমাদেরকে রুম থেকে বের করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন তখন মেজর বজলুল হুদা এসে আমার চুল টেনে ধরলো। বজলুল হুদা আমাদেরকে নিচে নিয়ে গিয়ে লাইনে দাঁড় করালো। কিছুক্ষণ পর নিচে থেকে আমরা বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শুনলাম। বিকট শব্দে গুলি চলার শব্দ শুনতে পেলাম আমরা। শুনতে পেলাম মেয়েদের আত্মচিৎকার, আহাজারি। এরইমধ্যে শেখ রাসেল ও কাজের মেয়ে রুমাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। রাসেল আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমাকে মারবেনাতো। আমি বললাম না তোমাকে কিছু বলবে না। আমার ধারণা ছিল অতটুকু বাচ্চাকে তারা কিছু বলবে না। কিছুক্ষণ পর রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রুমের মধ্যে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর মেজর বজলুল হুদা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মেজর ফারুককে বলে, অল আর ফিনিশড।’অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল ফারুক রহমানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি বলেন, খোন্দকার মোশতাকের নির্দেশে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট তিনি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অভিযান পরিচালনা করেন। ওই বাসভবনে অভিযানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল রশিদ দায়িত্ব পালন করেছেন বঙ্গভবনে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর ডালিম ছিলেন বেতার কেন্দ্রে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সামরিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বন্টন করেছেন তিনি (ফারুক) নিজেই।

পরিশেষে বলতে চাই, শেখ মুজিব-শেখ ফজিলাতুন্নেছার রক্তের উত্তরাধিকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিতার আদর্শে ও তার দেখানো পথে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে তিনি দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলার মানুষের শেষ আশ্রয়স্থলও এই শেখ হাসিনা-ই। কোভিড-১৯ মোকাবেলাই সরকারের সফলতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তার এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন গত সাড়ে ১৪ বছর। আর বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের আজকের যে অবস্থান সেটা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে তার দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের কারনে। তবে তার এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করেছে সরকারের ধারাবাহিকতা কারণ বাংলাদেশের মতো দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশের জনগণ তার ওপরে আস্থা রেখে তাকে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবার সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের বিশ্বাস আগামী ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ একই রকমভাবে তার উপরে বিশ্বাস রাখবে কারণ এই মুহূর্তে আমাদের সকলের মাথায় যে বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত সেটি হচ্ছে- বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিকল্প এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ যেমন সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয় ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের আরেক নাম হয়ে উঠেছেন। ফলে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন উন্নত দেশের অভিমুখে ধাবমান।জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে সকল শহীদদেরকে। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন তাদের মাকাম আরও বৃদ্ধি করে দেন। বঙ্গবন্ধুর ৪৮ তম শাহাদাত দিবসে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

লেখক : কলাম লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test