E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আচার্য সেলিম আল দীন : ভুবন ডাঙার ঘাটে দেখে নিয়েছি

২০২৩ আগস্ট ১৭ ১৬:৩০:৫২
আচার্য সেলিম আল দীন : ভুবন ডাঙার ঘাটে দেখে নিয়েছি

পীযূষ সিকদার


জন্ম সত্য, না মৃত্যু সত্য! দুটোই তো হাত ধরাধরি করে চলে এক আকাশ নিরবতা নিয়ে। আগস্ট মাস শোকের মাস। আগস্ট এলেই চোখের জলে গাঙ হই। আবার আগস্ট আমার পিতার জন্মদিন। একদিকে শোক শক্তিতে রূপান্তরিত করে আমি একাকার হয়ে যাই। জন্ম মৃত্যু জরা সেতো প্রকৃতির নিয়মে চলে স্বেচ্ছাচারী হয়ে। জন্ম আছে তার ব্যাধি আছে। জন্ম আছে তার মৃত্যু আছে। ১৮ আগস্ট ২০২৩, আমার পিতা আচার্য সেলিম আল দীন-এর ৭৪তম জন্মদিন। তাঁর জন্মদিন এলেই আমি বিষন্ন হয়ে যাই। এক আকাশ বিষন্ন নিরবতা আমাকে গ্রাস করে। কষ্টে নীল হই। সাপে কাটা লখিন্দরের মতো। আমি মনসাকে স্বপ্ন দেখি। হে দেবী আমি তোমার পূজা দেব। আমি চাঁদ বণিকের মতো অহংকারী নই। আমার পিতা বণিক ছিলেন না। সাদা কাগজে চলতো একের পর এক তাঁর স্বপ্ন বুনন। তাঁর প্রতিটি লেখাতেই অথবা চরিত্র বুননে ছিলো অসাধারণ কাব্যিক মহাবর্ণনা। একের পর এক আচ্ছা আমি কি মনসা কে স্বপ্নে দেখি! কেন দেখি! মনসা কী সাপ হয়ে আমার পিতার জন্মলিখন খন্ডন করেছিলেন! আমার পিতাকে মনসা ছায়া দেয়। মনসা যার সাধন সঙ্গী তাকে জন্ম মৃত্যু জরা ছুঁতে পারে না। আজ আচার্য সেলিম আল দীনের জন্মদিন। 

জন্মদিনেতো আনন্দে থাকার কথা ছিলো! বুকের মধ্যে চিন চিন ব্যথা অনুভব করি ক্যান! নিন্দুকেরা বলে আমি একলব্য। হ্যাঁ সত্যিই আমি একলব্য! বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে দিয়ে গুরুদক্ষিণা দিয়েছি। অর্জুন হয়েছে বীর, আমি অর্জুন হতে চাই না, চাইওনি কোনদিন। তবে কী হতে চেয়েছিলাম! আমি ভক্ত হতে চেয়েছিলাম আচার্য সেলিম আল দীনের। ভক্ত হতে পেরেছিলাম কি না তা তোলা রইল পরবর্তী প্রজন্মের হাতে। স্যার, পিতা, গুরু যে নামেই ডাকি শেষপর্যন্ত আমার প্রণতি তাঁর কোমল চরণদ্বয় স্পর্শ করে।

মনসাকে একদিন বলেছিলাম, মনসা আমি তোকে ভালোবাসি। মনসার সেই যে কী খিলখিল হাসি। সেই হাসিতে আকাশ পাতাল কাঁপে। আমি মনসার অজান্তেই ওর চোখের জল দেখে নিয়েছি। মনসা সোনার পিঁড়িতে পা রাখে। খিলখিল হাসিতে কম্পমান হতে হতে মুহুর্তে অদৃশ্য হয়ে যায়। আমার পিতা আচার্য সেলিম আল দীন কী মনসার বর পেয়েছিলো? এর উত্তর থাক না অজানা! অজানের মাঝে অজানাকে বরণ করে নিই। আচ্ছা আমাকে মনসা স্বপ্ন দেখায় ক্যান?

মৃত্যু সমাচ্ছন্ন জেনেও আমি লিখে যাই। তবুও কানে বাজে মনসার খিলখিল হাসি। আমি পিতার সম্মুখে দাঁড়াই। পিতার আশীর্বাদে আমি আবার বেঁচে উঠি। এক আকাশসম নিরবতা ভেঙ্গে জানান দেই- স্যার আপনিতো জীয়নের মন্ত্র জানেন। এই দেখেন আমি দাঁড়িয়ে আপনার সম্মুখপানে। বিশ্বাস হচ্ছে না স্যার! আমি পীযূষ। আমি রূপান্তরিত হতে হতে পীযূষ দ্রাবিড়। পিতা বলেন, যা কলমই হোক তোর মোক্ষ লাভের উপায়। সেই থেকে কলম ধরি, লিখে যাই যা আসে মনে। উপর হতে গম গম গলার শব্দ ভেসে আসে। তোর লেখার মধ্যে ফিলোসফি নাই। তবে ভক্তি আছে। সেই থেকে ভক্তিজ্ঞানে প্রতি জন্মদিনে আচার্য সেলিম আল দীনকে নিয়ে লিখে চলি।

জানি আমি পুড়ে ছাই হয়ে যাবো কী লেখায়, কী শরীরে। আমার কোন চিহ্ন থাকবে না। হ্যাঁ থাকবে। আমিতো রবি দাশ। আমিই যখন নাই হয়ে যাবো তখন রবি দাশকে কে মনে রাখবে! নদী একদিন শুকায়। নদী গতি বদলায়। শুধু বদলাবে না তুমি পিতা। তোমার সৃষ্টি সম্ভারে। তুমিতো অমর। মরে মরে আমি তোমাকে ভূবন ডাঙার ঘাটে দেখে নিয়েছি। মনসা খিল খিল করে হাসে। বলে, আমার হাতেই তোর মৃত্যু আছে! কিন্তু আমি জিয়নের মন্ত্র জানি! স্যার, পিতা, গুরু যে নামেই ডাকি তোমার চরণে আমাকে ঠাঁই দিও। মনসা অদৃষ্টলোকে হাসে। সে হাসি শূণ্যে মিলিয়ে যায়। আচার্য সেলিম আল দীনও হাসেন। সে হাসি কী শূণ্যে মিলায়! নাকি নদীর স্রোতের মতো কুলু কুলু স্বরে বয়ে চলে নিরন্তর। আজ ১৮ আগস্ট। ১৯৪৯ সালে সেনের খিলে জন্মছিলেন। জন্ম মৃত্যুর খেলায় তুমি যে চিরঞ্জীব। চিরঞ্জীব আচার্য সেলিম আল দীন।

লেখক : শিক্ষক ও নাট্যকার।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test