E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দাবানলে বিপর্যস্ত সারাবিশ্ব

২০২৩ আগস্ট ২২ ১৮:২১:১৬
দাবানলে বিপর্যস্ত সারাবিশ্ব

গোপাল নাথ বাবুল


সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস জলবায়ু সঙ্কট নিয়ে ৪০টি দেশের মন্ত্রীদের এক বৈঠকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে দাবানল এবং তাপপ্রবাহ প্রমাণ করে, দলবেঁধে বিশ্ব মানবতা আত্মহত্যা করতে চলেছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রচন্ড গরমের প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দুর্যোগ এবং দাবানলের কারণে অর্ধেক মানবতা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সব দেশই কোনও না কোনও রোগে আক্রান্ত। কোনও জাতিই রোগমুক্ত নয়। তবু আমরা আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানির অবাধ ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছি। এখন আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, একসঙ্গে কাজ করব নাকি আত্মহত্যা করব।

উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে নাসাও জানিয়েছিল, গত ১০০ বছরের মধ্যে জুলাই মাসটা এর আগে কোনোদিন এতটা গরম হয়ে ওঠেনি। ধরিত্রীও এতটা তেতেপুড়ে ওঠেনি। এই গা পোড়ানো জুলাইয়ের জন্য দায়ী ইউরোপে নজির গড়ে ফেলা তাপপ্রবাহ, গোটা সুমেরু ও ইউরেশিয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধি আর পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এর আগে প্রায় একই কথা জানিয়েছিল ইউরোপের ‘কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস’।

গত ২ হাজার বছরে একটি রেকর্ড যে, গত ৭/৮ বছর ধরে ইউরোপে খরা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্যই গোটা ইউরোপ মহাদেশে তাপপ্রবাহের ঘটনা বেড়েছে। চলতি এপ্রিল থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা রেকর্ড ছুঁয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৩-এর জুলাইয়ে ফ্রান্সের গালার্গ লো মোঁত্যোয়ে যে ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহ হয়েছিল, এবারের জুলাইয়ের তাপমাত্রা তার চেয়েও ৩.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট ওপরে। ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষকে। প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমি পুড়ে যায় দাবানলে। ক্যালিফোর্নিয়া এবং টেক্সাসে তাপপ্রবাহ বেড়েই চলছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে তাপমাত্রা ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিশ্বজুড়ে দিনে দিনে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে তাপমাত্রার ভয়াবহতা। কেটলিতে থাকা ফুটন্ত জলের মতই বেড়ে চলেছে উষ্ণতা। জলবায়ুর এমন বৈরী প্রভাবে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়ার প্রতিকুলতায় বর্তমান এ সময়কে তাই ‘ফুটন্ত যুগের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

গত ২৭ জুলাই জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস নিউইয়র্কের এক ভাষণে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে অবিলম্বে আমূল পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেন, এ জুলাই মাসে গোটাবিশ্বে যে রেকর্ড-বিধ্বংসী তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে, তাতে এ কথা স্পষ্ট যে পৃথিবী একটি উষ্ণতার পর্যায় থেকে ফুটন্ত যুগে চলে গেছে। ‘ওয়ার্মিং’ স্তর পেরিয়ে ‘বয়েলিং’ স্তরে চলে গেছে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন। অর্থাৎ পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা বা যাকে বলে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’, তা আরও এক ধাপ এগিয়ে হয়ে গিয়েছে ‘গ্লোবাল বয়েলিং’। এক কথায়, শুরু হল ফুটন্ত বিশ্বের যুগ। উষ্ণায়ন পার করে শুরু হয়েছে ফুটন্ত যুগ।

এদিন তিনি উল্লেখ করেন, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ জুড়ে যেভাবে বাড়ছে তাপমাত্রা, তা রীতিমত ‘নিষ্ঠুর’। ‘গোটা গ্রহের জন্যই এটি একটি বিপর্যয়!’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামী যে দিনগুলি আসতে চলেছে, তাতে এত বছরের সব রেকর্ড ভেঙ্গে যাবে। কারণ, এতটাই জলবায়ুর পরিবর্তন হয়েছে, যা রীতিমত ভয়ঙ্কর। এটি সবেমাত্র শুরু। বিশ্ব উষ্ণায়নের যুগ শেষ হয়েছে, বিশ্ব ফুটন্ত যুগ এসেছে।’
গুতেরেস মনে করিয়ে দেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এই চরম প্রভাবগুলি নিয়ে বিজ্ঞানীরা আগেই ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন এবং সতর্ক করেছিলেন। তাঁদের সব কথা মিলে যাচ্ছে। যে গতিতে এই পরিবর্তন হচ্ছে, তা বিস্ময়কর! পৃথিবীর আগামী পরিণতি ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করে তিনি জ্বালানি নিয়েও নতুন করে ভাবনাচিন্তার পরামর্শ দেন।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড ব্রেকিং তাপমাত্রাকে ‘অস্তিত্বের হুমকি’ বলে উল্লেখ করেছেন ইউএসএ’র প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, বর্তমানের আবহাওয়া একমাত্র ঘাতক। প্রতিবছর এই তাপের প্রভাবে ৬০০ শ্রমিক মারা যায়। শ্রমিকদের জন্য তাই তাপ সম্পর্কিত সুরক্ষা নিয়মগুলোকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।’

জার্মানির লাইপজিগ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ড. কার্স্টেনের বিশ্লেষণ বলছে, জুলাই মাসটি ১ লক্ষ ২০ হাজার বছরের মধ্যে রেকর্ড করা সবচেয়ে উষ্ণতম মাস।

জাতিসংঘের মহাসচিবের বক্তব্যকে মান্যতা দিয়ে বলতে হয়, প্রচন্ড গরম আর শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে বর্তমানে ভয়াবহ দাবানলের কবলে বিশ্বের নানা দেশ। এ দুর্যোগটি সবকিছু পুড়ে ছারখার করে দিচ্ছে। দাবানল হচ্ছে বনভূমি বা গ্রামীণ এলাকার বনাঞ্চলে সংঘটিত একটি অনিয়ন্ত্রিত আগুন, যার উষ্ণ তাপ-শিখা ক্রমশ ওপরের দিকে ওঠতে থাকে আর পোড়াতে থাকে বনের পর বন। এ আগুন নিয়ন্ত্রণ করাও খুব কঠিন। কারণ আগুন থামাবার জন্যে সহজে কোনো ব্ল্যাঙ্ক করিডোর তৈরি করা যায় না। অতএব যতক্ষণ খুশি আপন মনে জ্বলতে জ্বলতে যখন খাদ্যের প্রচন্ড অভাব হয় তখনই আগুন নিভে যায়। গত ৩০ বছরে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অরণ্য, আফ্রিকার কঙ্গো বর্ষাবন এলাকা এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের মিলিয়ন মিলিয়ন একর এলাকার বৃক্ষ ধ্বংস করে জুম এবং নিয়মিত চাষাবাদের জমি বের করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এসব জমির উর্বরা শক্তি কমে যাওয়ায় পুনরায় নতুন করে পোড়াতে হচ্ছে বন-বনানী। মানুষ কর্তৃক এভাবে প্রকৃতি ধ্বংসের কারণেই আজ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা জ্বলছে দাবানলে। নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার একর বন, বন্যপ্রাণি ও মানুষের সহায় সম্পদসহ বাড়ি-ঘর।

পর্তুগালে ২৫০টি নতুন দাবানলের রিপোর্ট পেয়েছে দেশটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী গতবছর ৬৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্পেনের ৩০টি অঞ্চলে সাঁইসাঁই করে পুড়েছে সবকিছু। ৩৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় অর্ধেক বন-বনানী পুড়ে ছাই হয়ে যায় দেশটির। স্পেনে দাবানল গ্রাস করেছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর এলাকা। স্পেনের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দাবানল এটি। আগস্টে দেশটির ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের তেনেরিফে দ্বীপের উত্তরাংশে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল। ৩০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। দ্বীপটির জরুরি সেবা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, ১১টির মত শহরে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় ৫ হাজার হেক্টর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

একই দশা ইতালিতেও। ইতালির সিসিলির আগুনও বাগে আনতে হিমশিম খাচ্ছিলেন দমকলকর্মীরা। উচ্চ তাপমাত্রা এবং তীব্র বাতাসের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল নতুন নতুন জায়গায়। আগুনের লেলিহান শিখা বিপজ্জনক হয়ে উঠায় স্থানীয় অনেক বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সে বছর রাশিয়ার রায়াজান অঞ্চলও বাদ যায়নি দাবানলের আগুন থেকে। স্থানীয় এক নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে হেলিকপ্টারের সাহায্যে পানি ছিটিয়েও আগুন বাগে আনতে দমকলকর্মীরা হিমশিম খেয়েছিল।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার পূর্বাঞ্চলে বাতাসের তীব্র বেগের কারণে দাবানলের আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেখানকার বনাঞ্চলে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস করা শহরটিতে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছিলেন শহরবাসী। দমকলকর্মীরা অনেক কষ্টে দু’টি হেলিকপ্টারের সাহায্যে পানি ছিটিয়ে বাগে আনতে পেরেছিলেন দুর্যোগপূর্ণ এলাকার আগুন। এদিকে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের কাছে সৃষ্ট দাবানল জোর বায়ুপ্রবাহের কারণে নিকটবর্তী উপকূলীয় শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত ভূমধ্যসাগরীয় তাপপ্রবাহের প্রভাবেই এ দাবানলের সৃষ্টি হয়। লাগোনিসির সমুদ্রতীরবর্তী পর্যটকদের পছন্দ আবাসিক এলাকায়ও দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রিসের ইভিয়া দ্বীপে অগ্নি নির্বাপক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে আরোহী ২ পাইলট নিহত হয়েছে। গ্রিস থেকে তুরস্কের জঙ্গল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল।

গত মে মাসে দাবানলে পুড়েছে কানাডার পশ্চিমাঞ্চলীয় আলবার্টা প্রদেশ এবং জুনে পুড়েছে নোভা স্কোটিয়া প্রদেশ। দু’প্রদেশে প্রায় ৪১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে এবং দাবানলে ১ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দাবানলে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রাদেশিক রাজধানী এডমন্টন থেকে প্রায় ১৪০ কিমি পশ্চিমের ড্রেটন ভ্যালি এবং শহরের প্রায় ৫৫০ কিমি উত্তরের ফক্স লেক। নোভা স্কোটিয়া প্রদেশে কমপক্ষে ২৫০টি ভবন পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানে বৃটিশ কলম্বিয়া প্রদেশ তীব্র দাবানলে পুড়ছে। বৃটিশ কলম্বিয়ার প্রিমিয়ার ড্যানিয়েল ইবাই পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ বলে জানিয়েছেন।

শক্তিশালী বাতাস ও শুষ্ক বজ্রপাত চলতে থাকায় দাবানল প্রসারিত হচ্ছে। ভ্যাঙ্কুবার থেকে তিনশত কিমি পুর্বদিকে কেলোওনা শহরের চারিদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে কানাডার ১০৬২টি সক্রিয় দাবানলের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরও অধিক বৃটিশ কলম্বিয়া প্রদেশে। সেখানে এখনো ৩৭৩ জায়গায় এবং কুইবেকে ১০৮টি স্থানে দাবানল সক্রিয় রয়েছে। পুরো উত্তর-পশ্চিম ভূখন্ডে ২৪০টি দাবানল তৈরি হয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে কানাডায় প্রায় ১ কোটি হেক্টর জমি পুড়ে যায়, যা ১৯৯৫ সালের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।

চলতি মাসের শুরুতে শুষ্ক গ্রীষ্মকাল ও পাশ দিয়ে যাওয়া একটি হারিকেনের জোরালো বাতাসে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপে অন্তত ৩টি দাবানল শুরু হয়। এ দাবানলে ১১০ জনের প্রাণহানি হয়। নিখোঁজের সংখ্যা হাজারের ওপর। বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। দাবানলের কারণে ঐতিহাসিক শহর লাহাইনা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ শহরের প্রায় প্রতিটা বাড়ি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রায় ৫২ শত পাকা ভবন এবং ৩.২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ইনশিওবড প্রপার্টি ধ্বংস হয়েছে। বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে এ দাবানলে। বিশেষজ্ঞরা এই দ্বীপটিতে দাবানল ভয়াবহ আকার ধারণ করার জন্য দাহ্য ঘাসকে দায়ী করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুশাস্ত্রের অধ্যাপক কার্লা ডি’অ্যাণ্টোনিও জানান, আফ্রিকা থেকে আসা এ জাতীয় ঘাসগুলো খুবই দাহ্য। আগুনের সংস্পর্শে এলেই জ্বলে ওঠে। এমনকী ঘাসগুলো এমন পরিবেশ তৈরি করে, যার কারণে আগুন জ্বলার জন্য তা আরও উপযোগী হয়ে ওঠে।

৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এ প্রজাতির ঘাসগুলো নিয়ে গবেষণা করে আসছেন ডি’অ্যাণ্টোনিও। তাঁর মতে, ঘাসগুলো মরে যাওয়ার পর তা পঁচে না গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে জায়গাতেই থেকে যায়। এক সময় তা হাড়ের মত শক্ত হয়ে শুকিয়ে যায়। ২০১৯ সালের এক গবেষণা অনুসারে, ৬ প্রজাতির দাহ্য ঘাস মার্কিন বাস্তুতন্ত্রে আগুনের মাত্রা ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। দাবানলে দ্বীপটির ২০১৮ সালে ২৩৩০ একর এবং ২০১৯ সালে ২৫ হাজার একর এলাকা পুড়ে যায়।

উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়া দাবানলে এখন পর্যন্ত ১০ জন সৈন্যসহ ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। আগুন নেভাতে গিয়ে সৈন্যরা প্রাণ হারান। দেশটির ১৬টি প্রদেশে ৯৭টি দাবানলের প্রাদুর্ভাব রেকর্ড করা হয়েছে। ফেনাইয়া, বেজাইয়া, জাবারবার ও বুইরাতে ১৫ শত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল দেখা দিয়েছে আলজেরিয়ার কাবেলি অঞ্চলে। তিউনিসিয়ায় দাবানলের কারণে নষ্ট হয়ে যায় ক্ষেতের ফসল। তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দেশটির ৪০ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এটি।

এদিকে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতে ইন্দোনেশিয়ায় জেগে ওঠল আনাক ক্রাকাতোয়া। আনাক ক্রাকাতোয়াকে বলা হয় ‘ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির সন্তান’। অগ্ন্যুৎপাতের ধাক্কায় আকাশের দিকে ৩ কিমি দৈর্ঘ্যরে ছাইয়ের স্তুপ তৈরি হয়েছে। ক্রাকাতোয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এক বিবৃতিতে জানায়, চূড়ার ওপরে বিস্ফোরণের স্তম্ভকে প্রায় ১০ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত ওঠতে দেখা গিয়েছে। জ্বালামুখের কেন্দ্র থেকে আমজনতাকে ৫ কিলোমিটার দুরে থাকতে বলেছে কর্তৃপক্ষ। এ বিশাল আকৃতির জ্বালামুখটি ১৯৮৩ সালে সৃষ্টি হয়েছিল। সেবার এ জ্বালামুখের ভিতরে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছিল যে, যার আওয়াজ অষ্ট্রেলিয়ার পারথ থেকেও শোনা গিয়েছিল। এদিকে কাজাখাস্তানের আবাই অঞ্চলে একটি বনে দাবানলে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগুনে ৬০ হাজার হেক্টর জমি গ্রাস করেছে। আটকে পড়া বন রেঞ্জারদের অনুসন্ধান চলছে। ১ হাজারেরও বেশি মানুষ অগ্নিনির্বাপক, অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে।

সুতরাং জাতিসংঘের মহাসচিবের সতর্কবাণী অনুযায়ী শুরু হওয়া ফুটন্ত যুগের বিপর্যয় থেকে বাঁচতে শিক্ষিত, বিজ্ঞান সচেতন মানবগোষ্ঠীর সর্বাগ্রে প্রয়োজন, নিজেদের মধ্যে ফুটন্ত যুগের কুফল বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আগামী প্রজন্মকে অবশ্যম্ভাবী ধ্বংসের অভিমুখ থেকে প্রত্যাগমন করানোর জন্য বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ধর্মীয় গোষ্ঠী, সরকার সকলকেই সাধ্যমত প্রয়াসী হতে হবে। প্রয়োজনে দেশের সরকার বা জাতিসংঘকে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, এছাড়া আমাদের অন্য কোনো পথ খোলা নেই।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test