E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোক্তাদের জিম্মি করে বিত্তশালী হওয়ার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই

২০২৩ আগস্ট ২৩ ১৮:১৮:৪৫
ইসলামের দৃষ্টিতে ভোক্তাদের জিম্মি করে বিত্তশালী হওয়ার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে ইসলামের নির্দেশনা। সব বিষয়ের মতো ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও রয়েছে ইসলামের নির্ধারিত ও সুনির্দিষ্ট মূলনীতি। কেননা, আল্লাহর সৃষ্টি মানুষ কোনো ক্ষেত্রেই বল্গাহীন স্বাধীনতা পেতে পারে না। আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বর্তমানে দেশের জাতীয় সমস্যাগুলোর অন্যতম। অধিকাংশ নিত্যপণ্যের মূল্যই এখন নিম্ন-আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। চাল, ডাল,পেয়াজ, ডিম, আলু তেলসহ অন্য নিত্যপণ্যের মূল্য হরদম বেড়েই চলেছে। দেশের ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যে কারণগুলো বেরিয়ে আসে, তা হলো—

১.ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রধান কারণ। একশ্রেণির অতি মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত গড়ে তুলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বলে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে। সরকারও বিভিন্ন সময় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকেই দায়ী করে।

২. শিল্প-মালিক, উদ্যোক্তা, উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের ওপর মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ। ব্যবসায়ী এবং উৎপাদকরা চাঁদাবাজদের প্রদত্ত চাঁদার ক্ষতি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে পুষিয়ে নেন। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ ভোক্তারা।

৩.আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব অভ্যন্তরীণ বাজারেও পড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বাভাবিকভাবেই এর মূল্য বেড়ে যায়। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামের এমন সব কালজয়ী কল্যাণধর্মী সুচিন্তিত নীতিমালা ও সুদূরপ্রসারী বাজার পরিকল্পনা রয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, অনাকাঙ্ক্ষিত মূল্যস্ফীতি রোধ এবং সর্বোপরি বাজারের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীলতা দূর করা সম্ভব।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ইসলামী দৃষ্টিকোণ

প্রথমে ব্যবসা সংক্রান্ত পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াত পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি- আল্লাহ পাক বলেন, “তোমরা ইনসাফ মোতাবেক যথাযথ ভাবে ওজন কর এবং ওজনে কম দিও না (সূরা রহমান, আয়াত- ০৯)। আফসোস সে সকল লোকদের জন্য যারা পরিমাপে দুর্নীতি করে, যারা মানুষের নিকট থেকে মেপে নিতে যথাযথভাবে নেয়। যখন মানুষকে মেপে দেয় তখন ওজনে কারচুপি করে। তারা কি মনে করে না যে, তারা পূনরুত্থিত হবে একটি মহান (কিয়ামত) দিবসে (সূরা মুতাফ্ফেফিন, আয়াত ১-৪)। তোমরা পরিমাপে ও ওজনে কম দিও না আমি তোমদেরকে ভালো অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি এবং আমি তোমাদের জন্য আশংকা করছি বেষ্টনকারী আযাবের দিনের (সূরা- হুদ, আয়াত- ৮৪)। হে জাতি তোমরা পরিমাপ ও ওজন পরিপূর্ণ ভাবে ন্যায় সংগত ভাবে কর, মানুষকে তাদের জিনিসপত্র কম দিয়ে ক্ষতি গ্রস্থ কর না, পৃথিবীতে ফাসাদ ছড়িয়ে দিও না (সূরা- হুদ, আয়াত- ৮৫)। হে ঈমানদার গণ তোমরা অন্যায় ভাবে একে অপরের সম্পদ ভক্ষণ কর না। পরস্পর সম্মতিক্রমে ব্যবসা করবে স্বার্থের জন্য নিজেকে হত্যা কর না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াবান (সূরা নিসা, আয়াত -২৯)। তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করনা(সূরা- বাকারা, আয়াত- ৭২)। দ্বিতীয় ব্যবসা সংক্রান্ত হাদিস থেকে তুলে ধরছি-

ইবনে মাজাহ শরিফে বর্ণিত একটি হাদিসে রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের খাদ্যদ্রব্য ৪০ দিন পর্যন্ত মজুদ করে রাখে, আল্লাহতায়ালা তাকে কুষ্ঠরোগ ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ)মজুদদারের ঘৃণ্য মানসিকতার নিন্দা করে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মজুদদার কতই না নিকৃষ্ট! দ্রব্যমূল্য হ্রাসের খবর তার কাছে খারাপ লাগে; আর মূল্যবৃদ্ধির খবরে সে আনন্দিত হয়।’অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মজুদদারের ওপর আল্লাহতায়ালা, ফেরেশতাকুল ও মানবজাতির লানত। আল্লাহতায়ালা তার কী ফরজ, কী নফল কোনো ইবাদতই কবুল করেন না।’ (শামি : ৬/৩৯৮)

মজুদদারি সম্পর্কে ফিকাহি নীতিমালা

ফিকহে হানাফির সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘হিদায়া’য় উল্লেখ রয়েছে, ‘মানুষ ও গবাদিপশুর খাদ্য মজুদ করা মাকরুহ, যদি তাতে শহরবাসীর ক্ষতি হয়। যদি শহরবাসীর ক্ষতি না হয়, তাহলে মাকরুহ নয়।’ (হিদায়া, ৪/৪৭০) ‘ফতোয়া-ই-আলমগিরি’তে উল্লেখ রয়েছে, ‘ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) বলেন, ‘নগরবাসী বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সরকার মজুদদারকে বাধ্য করবে, যেন সে তার পণ্য সাধারণ মূল্যে বা যতটুকু বেশি মূল্যে মানুষ মেনে নেয়, সেই মূল্যে বিক্রি করতে।’ (আলমগিরি : ৩/২১৪)

অন্যত্র উল্লেখ রয়েছে, মজুদদার সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করা হলে সরকার তাকে তার এবং তার পরিবারের প্রয়োজনাতিরিক্ত খাদ্য বিক্রির আদেশ দেবে এবং মজুদ করতে নিষেধ করে দেবে। যদি সে বিরত না হয়, তাহলে উপদেশ দিতে হবে, সতর্ক করতে হবে। এরপরও যদি বিরত না হয়, তার বিরুদ্ধে আবার মজুদদারির অভিযোগ ওঠে, তাহলে তাকে বন্দি করবে। (আল-মুহিত)‘আল-মুজারাআত’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, ফকিহরা এ ব্যাপারে একমত, প্রয়োজনে মজুদদারদের সম্মতি ছাড়াই বিচারক মজুদকৃত খাদ্য বিক্রি করতে পারবেন।

মধ্যস্বত্বভোগীদের অপতৎপরতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। এ কারণেই মধ্যস্বত্বভোগীদের এহেন অপতৎপরতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে রয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) স্বল্পমূল্যে কেনার জন্য বহিরাগত বিক্রেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করেছেন। (তিরমিজি)

অর্থাৎ পণ্যের মালিক বা তেজারতি (বাণিজ্যিক) কাফেলা শহরে পৌঁছার আগেই তাদের কাছ থেকে অধিক মুনাফার লোভে পণ্য কেনা রাসুল (সা.) নিষিদ্ধ করেছেন। কারণ, এতে সাধারণ ক্রেতা ও ভোক্তাদের স্বার্থ বিনষ্ট হয় এবং দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়।আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো শহরবাসী কোনো গ্রামবাসীর পক্ষ হয়ে বিক্রি করবে না। মানুষকে তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দাও, যেন আল্লাহতায়ালা তাদের একের দ্বারা অন্যের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। (তিরমিজি)। অর্থাৎ সাধারণত গ্রামবাসীই অনেক খাদ্যের উৎপাদনকারী। গ্রা

মবাসী সরাসরি শহরে এসে সেসব খাদ্য বিক্রি করলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে, শহরবাসীকে উচ্চমূল্য দিতে হয় না। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা গ্রামবাসীর কাছ থেকে নিয়ে নিজেরা দালালি করে বাজারদর বাড়িয়ে ফেলে। তাই রাসুল (সা.) এ ধরনের কাজ নিষিদ্ধ করেছেন।এক হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মূল্যবৃদ্ধির অসদুদ্দেশ্যে মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপ করে,কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তাকে আগুনের হাড়ে বসিয়ে শাস্তি দেবেন।’ (তাবরানি : ৮/২১০)অনেক সময় কেনার উদ্দেশ্যে নয়, বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অসদুদ্দেশ্যে দালাল চক্রকে অধিক মূল্যে দর-দাম করতে দেখা যায়। রাসুল (সা.) সেটাও নিষিদ্ধ করেছেন। হাদিসে এটাকে ‘নাজাশ’ বলা হয়েছে। আবু হুরাইরা (রা.) থকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নাজাশ (ক্রেতাকে প্রতারিত) করার জন্য দর-দাম করবে না।’ (তিরমিজি)

* শরিয়তের বিধান হচ্ছে- সাধারণত সরকার পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে দেবে না। এ প্রসঙ্গে আনাস (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, রাসুল (সা.)-এর যুগে একবার দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। লোকেরা তখন বলে, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন।’ রাসুল (সা.) তখন বললেন, ‘মূলত আল্লাহতায়ালাই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকারী, রিজিক সঙ্কীর্ণকর্তা, প্রশস্তকর্তা ও রিজিকদাতা। আমি আমার রবের সঙ্গে এভাবে সাক্ষাতের আশা রাখি যে, তোমাদের কারও যেন আমার বিরুদ্ধে রক্ত বা সম্পদ, কোনো বিষয়ে কোনোরূপ দাবি না থাকে।’ (তিরমিজি : ১/২৪৫)

এই হাদিসের পরিপ্রেক্ষিতেই ফকিহরা বলেন, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে সরকার পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে দেবে না; তবে ব্যবসায়ীরা যদি অতিরিক্ত মূল্য নেয় অথবা দ্রব্যমূল্য যদি এতই বেড়ে যায় যে, মূল্য নির্ধারণ না করলে জনসাধারণের ভোগান্তি হয়তাহলে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সরকার দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারবে। সর্বসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবের উদ্দেশ্যে সরকার তখন দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেওয়াটাকে কল্যাণকর বলেই বিবেচনা করবে।’ (হিদায়া, আলমগীরি)ফকিহরা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, ব্যবসায়ীরা যেন যোগসাজশ করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে, সেদিকে সরকারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। যদি তারা পরস্পর যোগসাজশ করে মূল্যবৃদ্ধি করে, তাহলে মুসলিম সরকার বাজারে হস্তক্ষেপ করে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করতে পারবে, যাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। (তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম : ১/৩১২)আল্লামা ইবনু কায়্যিমিল জাওজিয়্যা (রহ.) বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ন্যায় এবং ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ শুধু বৈধই নয়, ক্ষেত্রবিশেষে জরুরিও বটে।’ (আত-তুরুক : ১/৩৫৫)

দ্রব্যমূল্য নির্ধারণের নীতিমালা প্রসঙ্গে ‘বাহরুর রায়েক’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সরকার যখন দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করতে চাইবে, তখন সংশ্লিষ্ট পণ্যের বাজারের গণ্যমান্য লোকদের একত্র করবে। ক্রেতাসাধারণকে সরকার উপস্থিত করবে। বিক্রেতারা কী দামে বিক্রি করছে এবং ক্রেতারা কী দামে কিনছে, তা জিজ্ঞেস করে সত্যতা যাচাই করবে। এরপর উৎপাদক-আমদানিকারক-ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয় না, আবার ক্রেতাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে না যায়এমনভাবে মূল্য নির্ধারণ করে দেবে।

পরিশেষে বলতে চাই, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ক্রয়-বিক্রয়ে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মজুদদারি সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিকোণ রয়েছে। খাদ্য ও পণ্যের উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি করতে পারেন না। যদি কেউ এমন অপরাধ করেন তবে ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মসাৎকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবেন। ইসলামী বিধানে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মজুদদারি, কালোবাজারি ও যাবতীয় অসাধু উপায় রোধ, ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ প্রভৃতি দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য বিশেষজ্ঞ কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাজার পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনের দায়িত্বে যারা আছেন বা থাকবেন তাদের সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করতে হবে। কৃত্রিমভাবে খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে মানুষকে কষ্ট দেওয়া ইসলামে হারাম। প্রকৃতপক্ষে পণ্যের ন্যায্যমূল্য বিক্রেতার অধিকার। স্বেচ্ছাচারী উৎপাদনকারী ও অসাধু ব্যবসায়ীরা যদি সীমালংঘন করে যেনতেনভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে এবং মূল্য নির্ধারণ ছাড়া ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভবপর না হয় তাহলে সরকার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারেন। মূল্য নির্ধারণের পর কেউ যদি সীমালংঘন করে অধিক মূল্যে বিক্রি করে তাহলে এটা ইসলামের বিধানে ন্যায়সঙ্গত হবে না, বরং আইন লংঘনের দায়ে সে ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হবে।

অথচ দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ধর্মপ্রাণ মানুষের আয়-রোজগার না বাড়লেও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে। সঠিক পণ্যমূল্য জানে না এমন ক্রেতার কাছ থেকে অন্যায়ভাবে বেশি দাম আদায় করা ইসলামে নিষিদ্ধ। শরিয়তের দৃষ্টিতে তা ধোঁকাবাজি ও প্রতারণার শামিল। যে মুসলমান অপর মুসলমানের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা নিল সে তাকে ঠকালো ও প্রতারিত করলো, এজন্য সে জঘন্য অপরাধী। হাদীস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ব্যবসায়ী যদি সীমাতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ করে এ সুযোগে যে, ক্রেতা পণ্যের প্রকৃত মূল্য জানে না, তাহলে এই অতিরিক্ত পরিমাণের মূল্য সুদ পর্যায়ে গণ্য হবে।তাই ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলি। মুনাফাখুরি, মজুতদারি, ফাটকাবাজারি, কালোবাজারি ও সুদসহ অবৈধ পন্থায় লেনদেনে অর্থ উপার্জন থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে ইসলামী নির্দেশনা মেনে সততার সাথে ব্যবসা করার তৌফিক দিন। অসৎ ব্যবসায়ের মহাপাপে পাপী হওয়া থেকে রক্ষা করুন- আমিন।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test