E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আমার আমি...

২০২৩ সেপ্টেম্বর ০১ ১৭:৩৪:৪৭
আমার আমি...

মীর আব্দুল আলীম


শৈশবে আমার মধুর স্মৃতি হচ্ছে বাবা-মা রোজ স্বপ্ন দেখাতেন টয়োটা গাড়িতে চড়ার। পড়াশুনা করলেই নাকি টয়টাগাড়ি  কেনা যাবে, চড়া যাবে। বিমানে চড়ে দেশবিদেশ ঘুরা যাবে। তাঁরা স্বাপ্ন দেখাতে ভালো মানুষ হওয়ার। ভালো মানুষ কি জানতে চাইতাম আমি। বলতেন মানুষের জন্য ভালো কিছু করা। আম্মা মাঝে মাঝেই এবাড়ি ওবাড়িতে নিয়ে যেতেন। সাথে রান্না করা কিংবা রান্না ছাড়া খাবার থাকতো। তা দিতেন পরিচিত জনদের। আমি জিজ্ঞাস করতাম ওদের খাবার আছে না? ওদের খাবার দিচ্ছেন কেন? আম্মা বলতেন ওরা অভাবী খাবার জোগাড় করতে পারে না। পারে না কেন জানতে চাইতাম। বলতেন ওরা লেখাপড়া ঠিক মতো করেনি। বুঝতাম লেখা পড়া না করলে ঠিকমত খাবার পাওয়া যায় না, আর ভালো কাজ মানেই অন্যের পাশে দাঁড়ানো। এই যে যেটা করছি আমি। আমার কথা ছোট বেলাতেই বেশ দাঁগ কেঁটেছে হৃদয়ে।

আব্বাকে দেখতাম মাঝে মাঝে ভীষণ রাগ করতেন। ছোট ছিলাম তেমন বুঝতামনা কেন রাগ করছেন তিনি। একটু বড় হয়ে বুঝেছি। তিনি কাথা কাজে মিল না থাকলে, মিথ্যা কথা বললে, সময় ঠিক না রাখলে সবার উপর রেগে যেতেন। ২০২১ সালে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সন্তান হিসেবে বলতে পারি মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত দেখেছি তিনি কখনো মিথ্যা কথা বলেছেন। কোথাও কোন কথা দিয়েছেনতো সেটা শতভাগ পালন করেছেন। আর কোথাও দাওয়াত থাকলে সময় মতো সেখানে হাজির হতেন। সময়ের হেরফের করেননি কখনো। অমিও বাবার আদর্শটা ধরে রাখার চেষ্টা করি। পারি না হয়তো। আব্বাকে দেখেছি তিনি কথা কমিটমেন্ট ঠিক রাখতেন। আর অন্যরা তাকরলে রাগ করতেন কিন্তু মূহুর্তেই ক্ষমা করে দিতেন।

আগে গ্রামে একটা বিষয় বেশ প্রচলন ছিলো। কারো টাকা পয়সার খুব প্রয়োজন হলে যার কাছে অর্থ আছে জমি রেখে টাকা ধার নিতেন। ঐ জমি তখন ভোগদখল করতেন ধারদাতা। আমার আব্বার কাছে আমাদের এক প্রতিবেশী ধার নিয়ে ছিলেন সম্ভবত তখন সাত আট হাজার টাকা হবে। সেসময় এ পরিমান টাকায় দেড়’দু বিঘা জমিও কেনা যেত। চুক্তিপত্রে লিখা ছিলো সময়মতো টাকা ফেরত না দিতে পারলে জমি আমার আব্বার হয়ে যাবে। সময়মত টাকা দেয়নি ছয় মাসেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। সালিশ অনুসারে জমি আব্বার হয়ে গেছে। লিখে দিতে হবে। এমনটাই রায় হয়েছে। আমার পিতা তখন বলেছেন- ‘ওর জমি ওরই থাকবে ওকে সময় দিয়ে দেন’। ছোট বেলায়ই দেখেছি তিনি জমি লোভী নন। এ জন্যই হয়তো জমি সম্পদেরও উপর কেন জানি লোভটা একটু কমই অনুভব করি। আমার সন্তানেরাও এমনই হয়েছে। তবে আল্লাহ সহায় বলে ভালই আঠি আমরা।

বাবার কাছ থেকে সবসময় পজেটিভ গল্প শোনতাম। ভুতের আর মিথ্যায় ভরা অজগুবি গল্প নয় বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে গল্প বলতেন। বাবা অফিস থেকে ফিরে খাওয়া-দাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে আমাকে গল্প শোনাতেন। রূপকথার গল্প বা ঠাকুরমার ঝুলির গল্প না, বাবা গ্যালিভার-লিলিপুটদের কাহিনী বলতেন। বলতেন আমার চেনা পৃথিবীর বাইরের নানা গল্প। এত আকর্ষণীয়ভাবে এইসব অচেনা পৃথিবীর গল্প বলতেন আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম। বাবা বুঝতে পারতেন আমার এডভেঞ্চার ভালো লাগে। এডভেঞ্চারের জায়গাগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলতেন। গ্যালিভার-লিলিপুটদের কাহিনীতে আমি এমনভাবে হারিয়ে যেতাম, আমার বাবাকে বারবার অনুরোধ করতাম এই একই গল্প বলে শোনাতে। প্রতিদিন একই রকম আকর্ষণীয়ভাবে বাবা আমাকে গল্প শোনাত।

বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিলো চিকিৎসক হবো আমি। পড়ালেখায়ও ভালো ছিলাম। ক্লাস সেভেন থেকেই সেই স্বপ্নের চাকা ঘুরে গেছে আমার। মনে আছে তখন আব্বা সাপ্তাহিক ছাড়া দৈনিক পত্রিকা রাখতেন দুইটা। একটা অফিসের জন্য আরেকটা বাসার। আমাদের ৫ ভাই-বোনের পত্রিকা পড়ার প্রতিযোগিতা চলতে। যেহেতু ৪ বোনের পরে এক ভাই আর সবার ছোট সব কিছুতেই বেশ গুরুত্ব পেতাম। মনে আছে একদিন আব্বা আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম পত্রিকা কিভাবে লিখে, কারা লিখে। বাবা প্রথম পাতা দেখিয়ে বললেন এই পাতায় লেখেন সাংবাদিকরা। সম্পাদকীয় পাতা দেখিয়ে বললেন এপাতায় লেখে প্রবীন এবং গুণী লেখকরা। গবেষণা ধর্মী লেখা এগুলো। এই লেখায় তাঁরা সারকারকে নির্দেশনা দেয়। সরকারও এগুলো আমলে নেয়। সে রাতে ঘুম হলো না। সরকার মানে আমার কাছে মস্ত কিছু।

সরকারকে যারা পথ দেখায় তারাতো গুণীই। বাবা ঠিক বলেছেন। ভাবলাম আমি কি লেখক হতে পারব কোন দিন। স্বপ্ন আকঁছি মনেমনে। তখন আমাদের বাসায় আসতো দৈনিক ইত্তেফাক আর দৈনিক সংবাদ মাঝে মাঝে দৈনিক বাংলা আনতেন আব্বা। একদিন দৈনিক ইত্তেফাকে একটি ছোট্র বিজ্ঞাপন চোখে পরলো আমার। লিখা সাংবাদিক আবশ্যক। পত্রিকার নাম ‘সাপ্তাহিক যুগ্মধ্বনি’। সপ্তম শ্রেনীতে পরি সবে। তখনই সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন জাগলো। সেই বিজ্ঞাপনে একটা ফোন নাম্বার ছিলো। তখন টেলিফোন মানেই অনেক জটিল বিষয়।

এক্চেঞ্জে হয়ে তার পর কল করতে হয়। আমি বাবার অফিসের অফিস সহকারী জলিল কাকুর সহায়তায় কল করলাম ঐ পত্রিকা অফিসে। আব্বার অফিস আর আমাদের বাসা একদম লাগোয়া এক বাউন্ডারিতেই। এক ঘন্টা অপেক্ষার পর অফিসের সাথে যুক্ত হলাম। বললাম আজ দৈনিক ইত্তেফাকে একটা বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে, আমি সাংবাদিক হতে চাই। কন্ঠ বুঝেই ধরে নিয়েছে কোন শিশু কন্ঠ। ওপার থেকে বললেন তুমি কিসে পড় বাবা। সপ্তম শ্রেনীতে শোনার পরই বললেন তোমারতো বয়স হয়নি আরও বড়হ ও তখন লিখবে। তবুও বললাম ‘আমাকে একটু লেখার সুযোগ দেন আমি আমি লিখতে পারব’। ছোট কালেই মুখস্ত বিদ্যায় বিশ^াসী ছিলাম না আমি। রচনা কিংবা কোন প্রশ্নে ইচ্চর লিখতাম নিজের মতো করে। পড়তা কিন্তু আমার মতো করে আমার ভাষায় লিখতাম। তাতে টিউটর শিক্ষকের বকাঝকাও খেয়েছি। যাই হউক যুগ্মধ্বনি পত্রিকার সম্ভবত বার্তা সম্পাদক আমার শিশুইচ্ছাকে প্রধান্য দিতে গিয়ে সেদিন বললেন ‘বাপ তুমি লেখা পাঠাও’। অবশ্য অফিসের টেলিফোন ব্যবহার করার জন্য আব্বার বকা খেয়েছি সেদিন। জলিল চাচুকেও বকেছেন অনেক।

সব কিছুর পরও এগিয়ে যাচ্ছি অমি; আমার লক্ষে। আমাদের বাসার পাশে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, টং দোকানী। চাচু অনেক আদর করতেন আমাকে। সরমালাই খেতে গিয়ে তাঁর কাছ থেকে যুদ্ধের গল্প শুনেছি অনেক। সেমতই লিখে ফেললাম মন যা চাইলো তাই। মুক্তিযোদ্ধা চাচুকে বললাম চাচু আপনার একটা ছবি লাগবে আমার। কেন বলতেই বললাম পত্রিকায় দিব। অতশত জিজ্ঞাস না করে ক্যাশবাক্স থেকে একটা সাদাকালো ছবি তিনি আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। “একজন মুক্তিযোদ্ধার কথা” এই শীরোণামে লেখা আর ছবিসহ ডাকযোগে পাঠিয়ে দিলাম। অপেক্ষায় আছি সাত দিন কবে পার হবে আর পত্রিকা কবে বের হবে। তখন সাপ্তাহিত হিসাবে বিচিত্রা, চিত্রালী, মুক্তিবাণী পত্রিকাষ্টলে আসতো। অল্পসংখ্যক যুগ্মধ্বনিও থাকতো ষ্টলে। যথা সময়ে পত্রিকা ষ্টলে এলো। কিনেও আনলাম কিন্তু আমার সেই লেখা নেই। ভীষণ কষ্ট পেলাম।

পরের সাপ্তাহেও ছাপা হলোনা। বুঝলাম সাংবাদিক আর হতে পারবনা। তৃত্বীয় সপ্তাহে পত্রিকা হাতে নিয়েই দেখলাম প্রথম পাতায় আমার লেখা শীরোনামেই “একজন মুক্তিযোদ্ধার কথা” ছবিসহ বক্স করে লেখাটা ছাপা হয়েছে। পুলকিত হলাম। বিষয়টি বেশ আশাজাগাণীয়া। আমার লেখালেখির যাত্রাশুরু হলো। দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ দৈনিক বাংলায়ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তখন লেখা ছাপা হচ্ছে আমার। তবে চিঠিপত্র কলামে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখলাম “মশাল” নামে একটি নতুন পত্রিকা আসছে বাজারে। পূর্বের কিছু কাটিংসহ আবেদন করে বসলাম। মাসখানেক পর সংবাদদাতা হিসেবে ডাকযোগে একটি আইডি কার্ড কয়েকটা পত্রিকার কপি, রাইটিং প্যাড আমার কাছে এলো। এটাই ছিলো আমার জীবনের প্রথম আইডি কার্ড। যুগ্মধ্বনি থেকে তখনো কোন আইডি দেওয়া হয়নি আমাকে। মশাল পত্রিকাটি ছিলো রাজনৈতিক দল জাসদের। তখন রাজনীতিটাজনীতি বুঝতাম না লিখতে হবে সে যেখানেই হউক।

একসময় ইচ্ছা উদ্ধমুখী হলো। সাপ্তাহিক মুক্তিরবাণীর তখন সারাদেশে বেশ কাটতি। আব্বা মাঝে মাঝে বাসায় আনতেন। ভাবলাম এতো দামী পত্রিকায় কি আর আমার লেখা ছাপা হবে? পাঠিয়ে দিলাম “অবহেলীত কেন মুক্তিযোদ্ধারা?” ক’দিনবাদে মুক্তিরবাণীর তিনের পাতায় লেখাটা ছাপাও হলো। আমি লেখালেখিতে যুক্ত হয়ে গেলাম পুরোদমে। রাত বারটা পর্যন্ত স্কুলের পড়া পড়ি; আবার রাত দেড়টা; দুটা পর্যন্ত পত্রিকার জন্য লিখি। দিনে স্কুল বাসায় দ’ুজন প্রাইভেট শিক্ষক সবমিলেয়ি হাতে সময় নেই মোটেও। অষ্টম শ্রেনীতে যখন ওঠলাম তখন দৈনিক সমাচের আবেদন করে বসলাম। তাঁরাও লেখার অনুমোতি দিলো। তখন ততটা চলতোনা ঐ দৈনিক। তার পরওতো দৈনিক বলে কথা। এভাবেই চলতে চলতে দেশে নতুনধারার পত্রিকা বাজারে আসছে। ১৯৯১ সালের কথা। সারা দেশে পোষ্টার ছেঁয়ে গেছে। পোষ্টারে কয়েকজনের চোখ বাঁধা, হাত বাঁধা নিচে বড় করে লেখা “আমাদের চোখ বাঁধা নেই আমাদের হাত খোলা আমরা লিখতে পারি” আজকের কাগজ। স্লেগানটা হৃদয়ে বেশ নাড়া দিলো। এসএসসি পাশ করে এইচএসসিও পাশ করলাম। তখনকার ঘটনা। দুই পরীক্ষায়ই ষ্টার মার্কসহ ফাষ্টক্লাস পেয়েছি।

রেজাল্ট ভালো হলো এইচএসসি পাস কাউকে এই পত্রিকায় নেবে এমন শংকায় ছিলাম। সার্বিক বিবেচনায় রাজধানী ঢাকার পাশের রূপগঞ্জ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়েগ পেলাম। তখন আজকের কাগজ সবপত্রিকাকে পিছে ফেলে একদম এক নাম্বারে চলে এলো। সিঙ্গেল কলামের কোন সংবাদ ছাপা হলেও হৈচৈ পরে যেতো। আর এখন এক পৃষ্ঠা ভরে লিখলেও তেমন কিছ হয় না। আজকের কাগজে এতো ভালো করছিলাম যে সীমানা পেরিয়েই লিখতে শুরু করি। বিশেষ করে একস্লিপ আর ফিচার ছিলো আলোচিত বিষয়। একসময় দেশের যে কোন জায়গার আর লেখা এবং ফিচার ছাপছে আজকের কাগজ। সম্পাদক কর্ণেল কাজী সাহেদ আহম্মেদের দৃষ্টিতে এলাম। তার স্নেহধন্য হয়ে এগিয়ে গেলাম।

এক সময় পত্রিকাটির ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিও করা হলো। মুক্ত হাতে কলম চলছে। ঢাকার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও সাংবাদিকতার নেশায় পড়ে এসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে ঢাকা কলেজে প্রাণীবিদ্যায় অনার্সে ভর্তি হই। আরেক নেশা চপলো মাথায়। সাইন্সের ছাত্র তবে সাংবাদিকতায় মাষ্টার্স করতে চাই। অনার্সের পাশাপাশি মানবিক বিভাগে ভর্তি হলাম সোনারগাঁও ডিগ্রী কলেজে। ডিগ্রী পরীক্ষা দিব বলে। এক দিকে অনার্সের পড়া অন্য দিকে বিএ পরীক্ষার প্রস্তাতি। ভালোভাবে বিএ পাশ করেও ফেললাম। অনার্স সাবসিডিয়ারী পরীক্ষায় পাশ করলেও ভাটা পড়লো অনার্সে। এক বছর বিলম্ব হলেও সেটাও সম্পন্ন করলাম। ইচ্ছা অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে বিএ’এর সার্টিফিকেটের জোড়ে সাংবাদিকতায় ভর্তি হলাম। তখন লেখালেখি, বই লেখা ব্যবসা বানিজ্যে এতোটা জড়িয়ে গেলাম যে আর সে ইচ্ছটা পূরণ হলে না। আমার কোন ইচ্ছাই অপূর্ণ নেই এটা ছাড়া।

১৯৯৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় বাংলা ভাষার একটি দৈনিক সংবাদপত্র দৈনিক জনকণ্ঠ। পত্রিকাটি চার রঙের নুন্যতম প্রতিদিন ২০ পৃষ্ঠার পত্রিকা বাংলাদেশের ৪ জায়গা থেকে এক যোগে প্রকাশিত হয়। সেই ১৯৯২-৯৩ সালে ইন্টারনেট নামক জাদুর কাঠিটা তখনও নাগালের বাইরে, তখন বাংলাদেশের চার জায়গা থেকে দৈনিক পত্রিকা বের করে তাক লাগিয়ে দিলেন দেশবাসীকে। ঢাকার বাইরে যেখানে পত্রিকা পৌঁছাতে বিকেল গড়িয়ে যেত, অনেক জায়গায় পরের দিন পত্রিকা যেতো সেখানে জনকন্ঠ পাঠকের হাতে পত্রিকা যেত সাতসকালে। নতুন ধারার পত্রিকাটি সব পত্রিকাকে পিছে ফেলে তিন মাসের মাথায় একনাম্বারে চলে আসে।

আজকের কাগজ ছেড়ে সদ্যপ্রায়ত শ্রদ্ধাভাজন তোয়াব খানের হাত ধরে জনকন্ঠে কাজ করার সুযোগ হলো। এজন্য অবশ্য সমসের সৈয়দ ভাই এবং দিলীপ দেবনাথের কথা আমাকে স্বরণ করতেই হয়। এক পর্যায়ে জনকন্ঠের এমন কোন পাতা নেই যেখানে আমার বিচড়ন ছিলো না। লিখেছি মুক্ত হাতে। এক দিনেই দেখা গেছে ৩/৪ পাতায় বাই নেমে আমার লেখা। নগরমহানগর, ব্যবসাবাণিজ্যৗ, অর্থনীতি, চতুরঙ্গ, টেকনাফ থেকে তেতুলীয়া, অপরাজীতা সব পাতায়ই গুরুত্বের সাথে লেখা ছাপা হচ্ছে। তখন শুক্রবারের সাময়ীকি পাতা ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এখনও। সাময়ীকির এক দেড় পাতার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনও আমি করেছি বহুবার। গবেষণাধর্মী এসব লেখা তৈরি করতে অনেক জায়গায় ছুটতে হয়েছে। তিন চার মাস সময় লেগেছে একেকটা লেখার জন্য। এসব লেখা বিভিন্নি ইনিষ্টিটিউটে এখনো সংরক্ষিত আছে। কিছু দিন আছে ঢাকা পলিটেকনিক ইনিষ্টটিউটের সংগ্রহগারে আমার পাট নিয়ে দীর্ঘ লেখাটি দেখে বেশ পুলকিত হয়েছি। রবিবারের টেকনাফ থেকে তেতুলীয়ার আধা পাতা কত যে পেয়েছি তার সংখ্যা জানা নেই।

সারা দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখেছি দু’হাতে। একই সময় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, বাংলারবানীসহ বিভিন্নপত্রিকায় দু হতে ফিচার লিখেছি। ২০০২ সাল থেকে বিভিন্ন দৈনিকে কলাম লিখতে শুরু করি। আমার কলাম পত্রিকায় ছাপা হবে ভাবিনি কখনো। একসময় ছাপা হয়েছে। দেশের প্রথম শ্রেনীর সবদৈনিকে এবং আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকায় কলাম ছাপা শুরু হয়। নিউজ আর ফিচার ছেড়ে কলাম লিখতে শুরু করলাম। যা এখনো চলমান। তার পর বই লিখতে শুরু করলাম। জীবনে গল্প লিখেছি ৩টি মাত্র। তাও স্ত্রীকে দেখানোর জন্য। স্ত্রী বলতেন আমি নাকি গল্প লিখতে জানিনা। প্রথম গল্প ছাপা হয় ততকালীন দৈনিক বাংলারবানীতে। আসলে গল্প আমার কাছে গল্পই মনে হয়্।

মিথ্যা বিষয় নিয়ে গল্প সাজাতে ভালো লাগে না আমার। আমিতে তাৎক্ষুণীক একজন মানুষ। এখন যা মনে চাইছে এখনই তাই করি। কলাম লিখার ক্ষেত্রেও পুরোন বিষয় নিয়ে লিখতে মোটেও ভালো লাগে না। দেশে এখন যা ঘটেছে তাই নিয়ে ঐ দিনই কলাম লিখি। সমসাময়ীক বিষয়ে লিখতে ভালো লাগে। কারেন্ট ইস্যু নিয়ে লিখি বলে পত্রিকাতেও সে লেখার গুরুতা¦ পায় বেশ। কলামগুলোকে ছোট রূপ দিতে কবিতাও লিখছি। সাথে গানতো আছেই। আমার একেটি কলা এক হাজার শব্দ থেকে ৫ হাজার শব্দ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসব কলাম সমহবোধ্য করতে এক দেড়শ শব্দে সেই লেখাই কবিতায় রূপ দেই। কলামসহ কবিতার বই আছে ২৭টি আরো ৩টির কাজ চলছে। আর যৌথ বইয়ের সংখ্যা অর্ধশত।

লেখক : মহাসচিব, কলামিস্ট ফোরাম অফ বাংলাদেশ, চেয়ারপার্সন (পরিবেশ)- লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test