E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যুদ্ধাপরাধের প্রতি ঘৃণা জেগে থাকুক

২০২৩ অক্টোবর ০৩ ২৩:১৮:২৬
যুদ্ধাপরাধের প্রতি ঘৃণা জেগে থাকুক

চৌধুরী আবদুল হান্নান


কানাডার পার্লামেন্টের স্পিকার বড় বিপাকে পড়েছেন, একটি ভুল করে ক্ষমা চেয়েছেন। ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দিয়েও নিষ্কৃতি পাননি, সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। ঘটনার জেরে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত ২৭ সেপ্টেম্বর আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেন, যা ঘটেছে তা অত্যন্ত হতাশাজনক, ঘটনাটি কানাডার পার্লামেন্টের জন্য, সব কানাডীয়দের জন্য খুবই বিব্রতকর বিষয়।

কী এমন ভুল করেছিলেন স্পীকার অ্যান্থনি রোটা ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করা এক ইউক্রেনীয় ব্যক্তিকে কানাডার পার্লামেন্টে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্পীকার এবং তাকে প্রশংসা করে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। কানাডার পার্লামেন্ট অধিবেশনে উপস্থিত বিশ্বযুদ্ধে কৃত অপরাধের চিহ্ন বহনকারী ৯৮ বছর বয়সী ইয়ারোস্লাভহানাকাকে বীর হিসেবে ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং উঠে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানান স্পীকার। এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় তোলে।

মূলত কানাডা ভিত্তিক একটি ইহুদী মানবাধিকার সংস্থার দাবির মুখে স্পীকার ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন। সংস্থাটি আরও জানায় ওই ইউক্রেনীয় ব্যক্তির হিটলারের নাৎসি বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করার পর্যাপ্ত তথ্য প্রমান তাদের কাছে আছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানী ও অধিকৃত পোল্যান্ডে হিটলারের কুখ্যাত কনসেনট্রেশন ক্যাম্পেই কেবল ৬০ লক্ষ ইহুদীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

লক্ষণীয় যে, ৬ বছর ব্যাপী চলমান যুদ্ধ ৭৮ বছর আগে শেষ হলেও সেই যুদ্ধ দিনের ক্ষোভের কথা বিশ্ববাসী ভুলেনি। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের স্মৃতি প্রজন্ম পরম্পরায় মানুষের মনে জেগে আছে।

যুদ্ধ মানেই ধ্বংস আর প্রাণহানী, যুদ্ধে কারোই জয় হয় না, জীবন আর সম্পদ ধ্বংসের পরিমানের পার্থক্য হয় শুধু।

তবে সারি সারি সমাধির সামনে দাঁড়ানো স্বজনদের দেখে হয়তো অনেকের মনে পড়বে কালজয়ী দার্শনিক হেরোডোটাসেরই সেই বিখ্যাত কথা, “যখন শান্তি থাকে তখন সন্তানরা বাবাকে সমধিস্থ করে আর যখন যুদ্ধ চলে তখন বাবারা ছেলেদের সমাধিস্থ করে।”

৫২ বছর আগে আমরাও একটি যুদ্ধ দেখেছি, স্বাধীনতা যুদ্ধ।মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল দখলদার পাকিস্তানি সেনারা। সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের বাংলাদেশ, একটি স্বাধীন দেশ।

তারপর হঠাৎ আসে বাঙালি জাতির বিভীষিকাময় এক দুর্ভাগ্যের রজনী; ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে সপরিবারে নিহত হন।

একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা এক পর্যায়ে স্বাধীন দেশের ক্ষমতা দখল করে, কুখ্যাত রাজাকারের গাড়িতে যখন বাংলাদেশের লাল সবুজের জাতীয় পতাকা শোভা পায়, তাতে মুক্তিযুদ্ধে স্বজন হারাদের হৃদয়ে কতটা রক্তক্ষরণ হয় তা কেবল ভূক্তভোগীই জানেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকসেনা ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের লোমহর্ষক স্মৃতি আজও আমাদের তাড়া করে ফেরে, স্বজনহারাদের কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই।

‘৭১ এর কৃতকর্মের জন্য যদি মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে অবস্থাকারীরা জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তাতে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির মধ্যে সমঝোতার পথ কিছুটা হলেও সুগম হতে পারতো যা একটি দেশের স্বাভাবিক অগ্রগতির জন্য অত্যাবশ্যক।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test