E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশ্ব দৃষ্টি দিবস  

চোখের যত্নে প্রয়োজন জনসচেতনতা 

২০২৩ অক্টোবর ১১ ১৫:৩৬:১১
চোখের যত্নে প্রয়োজন জনসচেতনতা 

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিশ্ব দৃষ্টি দিবস ২০২৩। প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব দৃষ্টি দিবস পালন করা হয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অন্ধত্ব এবং চোখের বিকলতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে পুরো বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইএবিপি) জানিয়েছে, অন্ধত্বের ৭৫ শতাংশ এবং গুরুতর দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। বিশ্ব দৃষ্টি দিবস প্রত্যেকের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করে, যেখানে সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদেরকে ‘সংহত লোককেন্দ্রিক চক্ষু যত্ন’ সেবা গড়ে তুলতে জোর দিতে পারবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালে দৃষ্টিশক্তির উপর প্রথম প্রতিবেদনটি চালু করেছিল। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব জুড়ে কমপক্ষে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বা অন্ধ, তার মধ্যে এক বিলিয়ন মানুষের ক্ষেত্রে যাদের গ্লোকমা বা ছানির মতো সমস্যা হয়েছিল, তারা যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেতেন তাহলে এই অবস্থা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল।

৭৪ তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশে (ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেমব্লি) প্রতিরোধ, প্রাথমিক শনাক্তকরণ, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা স্তরের সঙ্গে চোখের চিকিৎসা সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব দিয়েছে। জনগণ যাতে তাদের বাড়ির কাছাকাছি এই পরিষেবাগুলি পায়, সেদিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে।

চোখের যত্নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়কেই আরও সচেতন হতে হবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা রোধ করা এবং মোকাবিলা করা কেবল জীবনের মান উন্নত করে তাই নয়, মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী থাকতেও সাহায্য করে।

অন্ধত্ব এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা নিবারণে জাতীয় কর্মসূচি, ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সম্পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৭৬ সালে এটি চালু হয়েছিল। চোখ আমাদের চেহারার সৌন্দর্যের অন্যতম একটি অংশ এবং মূল্যবান অঙ্গ। এক জোড়া সুন্দর চোখ একজন মানুষকে করে তুলতে পারে আকর্ষণীয়। চোখ হচ্ছে মনের আয়না, চোখ মনের কথা বলে। তাই আমাদের সবার উচিত চোখের প্রতি যত্ন নেওয়া। বাংলাদেশের বিভিন্ন রোগ এবং অযত্নের কারনে আমাদের ও চোখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। তাহলে আসুন আমরা চোখের রেটিনা সম্পর্কে জানবো..একটা বয়সের পর থেকে শরীরের সব অঙ্গই ধীরে-ধীরে দুর্বল হয়। যত বয়স বাড়ে তত ক্ষয় বাড়ে। যেমন দাঁত পড়ে যায়, ত্বক কুঁচকে যায়, চুল পাতলা হতে থাকে ইত্যাদি। ঠিক একই ভাবে দুর্বল হয় দৃষ্টিশক্তি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের বিভিন্ন সমস্যা বাড়তে থাকে যা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় স্বচ্ছদৃষ্টিতে। এমনই একটি সমস্যা রেটিনাল ডিজেনারেশন।

এই সমস্যায় ভুগছেন পৃথিবীর বহু মানুষ। এ ব্যাপারে পিছিয়ে নেই আমাদের দেশের মানুষও। অনেকেরই ধারণা রেটিনাল ডিজেনারেশন জন্ম দেয় অন্ধত্বের! ‘‘ডিজেনারেশন মানে ক্ষয়। এখন মানুষের আয়ু বেড়েছে। তাই শরীরের ক্ষয়জনিত সমস্যাও বেশি। যত বেশি বাঁচবে তত ক্ষয় হবে। রেটিনাল ডিজেনারেশন সেরকমই একটা সমস্যা। যার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে। তবে এই ক্ষয় হলেই যে অন্ধ হয়ে যায় তা কিন্তু নয়। ঠিক সময়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেকটা সারিয়ে তোলা যায়। আর রেটিনা হলো মেরুদণ্ডী প্রাণীদের অক্ষিগোলকের পেছনের দিকে অবস্থিত স্নায়ুকোষযুক্ত একটি পাতলা আলোকসংবেদী স্তর। এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অংশ রেটিন হলো চক্ষু লেন্সের পেছনের দিকে অবস্থিত অক্ষিগোলকের ভিতরের পৃষ্টে গোলাপী রঙের ইষদচ্ছ আলোকসংবেদন আবরণ। রেটিনা রড ও কোণ নামক কতগুলি স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা গঠিত। রেটিনার ওপর আলো পড়লে তা স্নায়ুতন্ত্রে এক প্রকার উত্তেজনা সৃষ্টি করে ফলে মস্তিষ্কে দর্শনের অনুভূতি জাগে। রেটিনা ক্যামেরার ফিল্মের মতো কাজ করে, ফটোরেসেপ্টরের মাধ্যমে চিত্রটি ক্যাপচার করে।
চোখের একটি স্পর্শকাতর জায়গা হলো রেটিনা। ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি, হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি, রেটিনা ডিটাচমেন্ট ইত্যাদি রেটিনার বিভিন্ন সমস্যা।

সাধারণত চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস চশমা দ্বারা উন্নতি না হলে, আঘাতজনিত কারণে চোখে কম দেখলে, চোখের সামনে কালো কিছু ভাসতে থাকলে, চোখের সামনে আলোর ঝলকানি দেখা দিলে, চোখে কালো পর্দার মতো কিছু পড়তে দেখলে এবং কোনো ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি হঠাৎ করে কমে গেলে রেটিনাজনিত চোখের সমস্যা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে রেটিনার জন্য দৃষ্টিশক্তি কমলে চোখে কোনো ব্যথা অনুভূত হয় না।

রেটিনার কাজ কী ?

রেটিনার কাজ হল- ১) বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন করা। ২) আলোক গ্রাহক হিসেবে কাজ করে উজ্জ্বল আলোতে দেখতে সাহায্য করে।

কর্নিয়া কি বা কর্নিয়া কাকে বলে ? চোখের শ্বেতমন্ডলের সামনের অংশ যা স্বচ্ছ এবং বাহিরের দিকে কিছুটা উত্তল তাকে চোখের কর্নিয়া বলে। অর্থাৎ কর্ণিয়া হলো চোখের স্বচ্ছ অংশ যা চোখের সামনের অংশটি আচ্ছাদন করে রাখে। কর্নিয়াতে কোন রক্তনালী না থাকাটা এর স্বচ্ছ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। স্বচ্ছতার কারণে এর ভেতর দিয়ে আলো চোখের ভেতরে প্রবেশ করে এবং পেছনের রেটিনার ওপর পড়তে পারে। তখন আমরা কোন বস্তুকে দেখতে পাই। কর্ণিয়া আলোক রশ্মি প্রবেশে সাহায্য করে। কর্নিয়া প্রোটিন এবং কোষ সমন্বয়ে গঠিত।

আর বয়স যখন ষাট পেরিয়ে যায়, কর্মজীবনের ব্যস্ততা আর কোলাহল স্তিমিত হয়ে আসে, প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে তখন কিছু কিছু অনিবার্য পরিবর্তন শুরু হয় আমাদের শরীরে, দেহের কোষে কোষে। বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ করবার ক্ষমতা কমে যায়, কমে যায় শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। আর তখনই নানা রোগব্যাধি গুটিগুটি পায়ে বাসা বাঁধে আমাদের শরীরে। এই সময়ে চোখের যে অসুখগুলি মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ছানি, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, গ্লুকোমা, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, ড্রাইআই আর ক্ষীণদৃষ্টি। ম্যাকুলার ডিজেনারেশনে রেটিনার কোষগুলি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে থাকে, যার ফলে দৃষ্টি একটু একটু করে নষ্ট হয়ে যায়। এর চিকিৎসা বেশ জটিল আর ফলাফল অনিশ্চয়তায় ভরা। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে গ্লকোমার চিকিৎসা খুবই সন্তোষজনক। তবে গ্লকোমার ওষুধ সারাজীবন ব্যবহার করে যেতে হবে।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে, রক্তের স্যুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে, উপযুক্ত চিকিৎসায় এই অসুখ থেকে অন্ধত্বকে রোধ করা যায়। মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির বাড়াবাডি অবস্থায় প্রায় আর কিছুই করবার থাকে না। ড্রাইআই অসুখটি খুব বিরক্তিকর হলেও, চিকিৎসায় আশানুরূপ সাড়া পাওয়া সম্ভব।

ক্ষীণদৃষ্টি বা ল্যো-ভিশন সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। এই অসুখে বইয়ের লেখা পড়া বা লেখালেখি করা, যা বয়স্ক লোকেদের অন্যতম অবলম্বন, তা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। ফলে তাদের জীবনে নেমে আসে হতাশার কালো ছায়া। কিন্তু এই অসুখের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ, এক্ষেত্রে রেটিনার নার্ভকোষগুলি এতই দুর্বল হয়ে যায় যে, সেগুলিকে আর পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বা নানা ধরনের ম্যাগ্নিফাইং গ্লাসের সাহায্যে লেখাপড়ার কাজ চালানো হয়।

ষাটোর্ধ্ব বয়সে চোখ ভালো রাখবার উপায় :

১. ডায়াবেটিস থেকে সাবধান: একথা প্রমাণিত যে, ডায়াবেটিস অন্ধত্বের অন্যতম কারণ। আর ৬০ বছর বয়সের পরে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এছাড়া স্থূলত্ব, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, উচ্চ রক্তচাপ, বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবার, পরিবারে অন্যান্য সদস্যদের ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণে রক্তের চিনির (শর্করা) মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিসের সূত্রপাত হয়। এই রোগে চোখের রেটিনার সূক্ষ্ম রক্তজালিকা থেকে রক্তপাত শুরু হয়। রেটিনার নানা জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে দৃষ্টিকে আচ্ছন্ন করে তোলে। এই অবস্থার নাম ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি ।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির প্রাথমিক অবস্থায় রোগী কিছুই বুঝতে পারেন না। দৃষ্টির কোনও সমস্যাই থাকে না সেই সময়ে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রোগটা জটিল হয়ে ওঠে এবং রোগী যখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হন, ততদিনে দৃষ্টির যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে যায়। সুতরাং ৬০ বছর বয়সের পরে (বা তার আগে) ডায়াবেটিস ধরা পড়লেই, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্বাবধানে থাকা জরুরি।

২. ব্লাড প্রেশারকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন : ডায়াবেটিসের মত হাই ব্লাড প্রেশারও চোখের শত্রু। এর ফলে রেটিনার রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। রক্তনালীগুলি সঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং যথেষ্ট পরিমাণে রক্তের অভাবে রেটিনার আলোক সংবেদী কোষগুলির কর্মক্ষমতা কমে যেতে থাকে। হাই ব্লাডপ্রেশারের দোসর রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশী থাকলে জমাট বাঁধা রক্ত রেটিনার রক্তনালীর ভিতরে আটকে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। একে চোখের স্ট্রোক বলা হয়। চোখের স্ট্রোকে দৃষ্টি ক্ষমতা মুহূর্তের মধ্যেই বন্ধ হয়ে আংশিক বা সম্পূর্ণ অন্ধত্ব নেমে আসে। প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই আগেকার দৃষ্টি আর ফিরে আসে না। পারিবারিক ইতিহাস, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত জলপান, খাবারে লবণের আধিক্য, ধূমপান, মদ্যপান, শারীরিক পরিশ্রমে অনীহা, অনিয়মিত জীবনযাপন ইত্যাদি হাই ব্লাডপ্রেশারের কারণ। তাই ৬০ বছর বয়সের পরে মাঝে মাঝেই ব্লাডপ্রেশার আর রক্তের সুগার ও লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করা উচিত।

দৃষ্টির সতর্কতামূলক পরিবর্তনগুলি খেয়াল রাখুন

চোখের অনেক জটিল অসুখের সংকেত বা লক্ষণ আগেই পাওয়া যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা প্রথমে সেগুলিকে পাত্তা দিই না। চোখের এই মারাত্মক অসুখের প্রাথমিক রোগ লক্ষণগুলিকে যথাযত গুরুত্ব দিলে অনিবার্য অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সুতরাং নীচের লক্ষ্মণগুলি দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

১. ডাবল ভিশন : ছানি, মস্তিষ্কের নার্ভের পক্ষাঘাত চোখের স্ট্রোক, , ব্রেন টিউমার ইত্যাদি অসুখে কোনো কিছু দেখবার সময়ে একটা জিনিসকে দুটো দেখায়।

২. ঝাপসা দৃষ্টি : ছানি, গ্লকোমা, কর্নিয়ার ঘা, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট, ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ইত্যাদি অসংখ্য কারণে দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে। এক্ষত্রে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

৩. অল্প আলোয় দেখার অসুবিধা : ম্যাকুলার ডিজেনারেশন, গ্লকোমা, রেটিনার রক্ত চলাচল-জনিত সমস্যা ইত্যাদি অসুখে অল্প আলোয় দেখতে সমস্যা হয়।

৪. চোখের ব্যথা : আইরাইটিস, গ্লকোমা, কর্নিয়াল অ্যাব্রেশন চোখে ধুলোবালি বা কোনো বাইরের বস্তু (ঢুকে গেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

৫. লালা চোখ : কনজাংটিভাইটিস, অ্যাকিউট গ্লকোমা, কনজাংটিভার হেমারেজ, আইরাইটিস ইত্যাদিতে চোখ লাল হয়ে যায়।

৬. আলোর ঝলক : চোখের সামনে বিদ্যুৎ চমকের মত আলোর ঝলক দেখতে পেলে, সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে দেখিয়ে রেটিনার সামগ্রিক পরীক্ষা করা দরকার। নতুবা রেটিনাল ডিটাচমেন্ট হয়ে চোখে চির- অন্ধকার নেমে আসতে পারে।

৭. ফ্লোটার বা কালো কালো বিন্দু : চোখের সামনে মাছির মত কালো কালো বিন্দু ঘোরাফেরা করে। এদের চোখের মাছি বা ফ্লোটার বলে। বয়সের কারণে চোখের ভিট্রিইয়াস পাতলা হয়ে গেলে ফ্লোটার দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলি থেকে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু কখনও কখনও এটি রেটিনাল ডিটাচমেন্টের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে। তাই সাবধানের মার নেই ।

অন্ধত্ব নিবারণ করতে চাই তাহলে আমাদের কয়েকটি কাজ করতে হবে-

(১) ছোট মাছ শাকসবজি ও হলুদ ফলমুল খেলে চোখের দৃষ্টি বাড়ে। (২) প্রতি ২০ মিনিট পর পর মোবাইল বা ল্যাপটপ বা টেলিভিশন দেখার পর ২০ ফুট দুরে ২০ সেকেন্ড তাকালে চোখের ব্যাথা ও মাথার ব্যাথা দূর হবে।

(৩) প্রতিনিয়ত চোখের যত্ন নিতে হবে বা চোখের যত্নে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বা চশমার প্রয়োজন আছে কিনা চোখের কোনো সমস্যা আছে কিনা এগুলো নিয়মিত চেকআপ করা দরকার। কারো পরিবারের চোখের সমস্যা আছে কিনা পরিবারের কাছ থেকে জানতে হবে।

(৪) পুষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

(৫) নিয়মিত ব্যায়াম করা দরকার।

(৬) যে সমস্ত খাবার খেলে ডায়াবেটিক হয়, ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি হয় সেসব খাবার বর্জন করা।

(৭) ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখা ও গ্লুকোমা পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।

(৮) প্রেসক্রিপশন মোতাবেক ঔষধ ব্যবহার করা উচিৎ। গ্লুকোমার ঔষধ নিয়মিত ব্যবহার করতে হয়।

(৯) কোনো ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে যখন-তখন ব্যবহার করলে চোখের প্রেসার বেড়ে যেতে পারে বা চোখের ক্ষতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ আবশ্যক।

আমরা যদি ধূমপান থেকে বিরত থাকি তবে ক্যাটারাক্ট এবং অন্যান্য চোখের সমস্যা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব। আমরা চোখের প্রটেকশন করব, যাতে করে কোনো আঘাত না লাগে। এই যে ওয়ার্ল্ড সাইট ডে বা বিশ্ব দৃষ্টি শক্তি সংরক্ষণ দিবস উৎযাপনের সময় সেমিনার সিম্পোজিয়াম ফেস্টুন প্লাকার্ড ব্যবহার করে সরকারি এবং বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা সৃষ্টি করলে অন্ধত্ব দূরীকরণে সক্ষম হওয়া যাবে। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালকে বিনামূল্যে রোগীদের সেবা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। যে চক্ষু শিবিরের আয়োজন কর হয় তা অব্যাহত রাখতে হবে।

পরিমিত শরীরচর্চা

কর্মজীবন থেকে অবসর নেবার পরে অনেকেই একটু আলসে বা কুঁড়ে হয়ে যান। এর ফলেই শরীরে নানা সমস্যা বাসা বাঁধে। নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণ, পরিমিত শরীরচর্চা সমস্ত শরীরে এবং চোখে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। এজন্য ম্যাকুলার ডিজেনারেশন ও অন্যন্য বার্ধক্যজনিত চোখের অসুখগুলির সম্ভাবনাও প্রায় ৭০% কমে যায়।তাই এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল চোখের যত্নের পরিষেবা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অন্ধত্ব এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধ করা।

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test