E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

এমনিতে নাচুনি বুড়ি তার ওপর ঢোলের বাড়ি

২০২৩ অক্টোবর ১৩ ১৭:০২:১১
এমনিতে নাচুনি বুড়ি তার ওপর ঢোলের বাড়ি

গোপাল নাথ বাবুল


গত ৭ অক্টোবর হামাস গোষ্ঠী ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে। ফলে ইসরাইলও যুদ্ধাবস্থা ঘোষণা করে গাজায় হামলা চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত এ যুদ্ধে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। তবে ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ আজ নতুন নয়। এ দু’টি দেশের মধ্যে যুদ্ধের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। 

ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের যে ‘ইন্তিফাদা’ আন্দোলন, সে ‘ইন্তিফাদা’ একটি আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ প্রকম্পিত করা, জেগে ওঠা বা উত্থান। ১৯৮০ দশকের শেষ দিকে এবং ১৯৯০ দশকের শুরুর দিকে পশ্চিম তীর ও গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন শুরু হয়। বর্তমানে এ প্রতিরোধ আন্দোলন তৃতীয় ইন্তিফাদায় প্রবেশ করেছে।

মূলত ইসরাইলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের দ্বন্দ্বটা শুরু হয় ১৯৪৮ সালে, যখন ইসরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। তারও আগে অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্বের আগে অত্র এলাকাটি ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের দখলে। ১৮৮৭ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশাল অটোমান সাম্রাজ্যে তখন মুসলমান ছিল ৮৭%, খৃষ্টান ছিল ১০% এবং ইহুদী ছিল ৩%। এ সময় সারাবিশ্ব জুড়ে উগ্রজাতীয়তাবাদ মাথাছাড়া দিয়ে ওঠে এবং ইহুদিরা সংখ্যালঘু হিসেবে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছিল। ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে ইহুদি জার্নালিস্ট থিউডর হার্জ্ট বিশ্বের সামনে জিয়োনিজম-এর একটি কনসেপ্ট তৈরি করেন।

এরপর অটোমান সাম্রাজ্য বৃটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে জিততে বৃটেন প্রতারনার আশ্রয় নেয়। বৃটেন মক্কার শাসক শরীফ হোসেনকে কথা দেয়, যদি অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জয়লাভে তিনি বৃটেনকে সাহায্য করেন তাহলে ফিলিস্তিনসহ জিতে নেওয়া আরব ভূখন্ড শরীফ হোসেনকে দিয়ে দেবে। একইভাবে ১৯১৬ সালে তাদের মিত্র ফ্রান্সকে বলে, অটোমান সাম্রাজ্য জিতে তারা দু’ভাগে ভাগ করে নেবে। এরপর ২ নভেম্বর, ১৯১৭ সালে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড আর্থার বেলফোর ইহুদিদের কথা দেন, এ যুদ্ধে যদি তাদের হয়ে ইহুদিরা যুদ্ধ করে তাহলে ফিলিস্তিনেই তাদের স্বপ্নের রাষ্ট্র ইসরাইল গড়ে দেবে। যা ইতিহাসে ‘বেলফোর ঘোষণা’ নামে পরিচিত। কিন্তু বৃটেন অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জেতার পর কোনও কথা রাখেনি। বরং ফিলিস্তিনে উপনিবেশ গড়ে তোলে সেখানে মুসলমান, খৃষ্টান ও ইহুদিদের জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে ‘ডিভাইডেড এ্যান্ড রুল’ নীতি গ্রহণ করে। এতে ইহুদি এবং মুসলমানদের মধ্যে চরমভাবে বিদ্বেষ তৈরি হয়। ফলে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং কোনও কোনও জায়গায় দাঙ্গাও শুরু হয়ে যায়।

এছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদি বিজ্ঞানী ড. হেইস বাইজম্যান দুর্লভ বোমা তৈরির উপকরণ ‘কৃত্রিম ফসফরাস’ তৈরি করতে সক্ষম হন। ফলে আনন্দিত বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়ে তাকে পুরস্কার দিতে ইচ্ছুক হলে বিজ্ঞানী বাইজম্যান বলেন, “অর্থ নয়, আমার স্বজাতির জন্য এক টুকরা ভূমি চাই, আর তা হবে ফিলিস্তিন।” ফলে ফিলিস্তিনকে ইহুদিদের হাতে তুলে দিতে ১১ নভেম্বর, ১৯১৮ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ বছর বৃটেন নিজেদের হাতে রেখে ধীরে ধীরে দেশটিকে মুসলমান শূন্য করতে থাকে।

বৃটেন ১৯১৭ সালে দেওয়া ‘বেলফোর ঘোষণা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৩০ সাল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের এনে ফিলিস্তিনে বসানো শুরু করে। ফলে ১৯৩৮ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদিরা ৩% থেকে বেড়ে ৩০% হয়ে যায়। এ সময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষ থেকে বাধা এলে ইহুদিরা বৃটিশদের সহযোগীতা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের নির্মমভাবে দমন করে। এমতাবস্থায় ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এ কর্মসূচী স্থগিত হয়ে যায়। এ সময় জার্মানির হিটলার প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে গ্যাস চেম্বারে আবদ্ধ করে হত্যা করলে তাদের প্রতি ইউরোপীয়ানদের সহানুভূতি বেড়ে যায় এবং ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের অনুভব করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বৃটেন সদ্যঘটিত জাতিসংঘকে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান করার জন্য দায়িত্ব দেয়। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর সৃষ্টি থেকে ইঙ্গ-মার্কিনের হাতের পুতুল জাতিসংঘ এমনভাবে ফিলিস্তিনকে দু’ভাগ করে দেয় যে, সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে আরও বেড়ে যায়। কারণ জাতিসংঘের এ পরিকল্পনাকে ইহুদিরা মেনে নিলেও ফিলিস্তিনিরা এ পরিকল্পনাকে প্রত্যাখান করে। ১৫ মে, ১৯৪৮ সালে ইহুদিরা পুরো পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির সঙ্গে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করলে আরব দুনিয়া ইসরাইলকে আক্রমণ করে বসে। আশ্চর্যজনকভাবে মাত্র ৯ মাস, ৩ সপ্তাহ ও ২ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ১৯৪৯ সালের ১০ মার্চ ইসরাইল যুদ্ধে জয়লাভ করেই ক্ষান্ত হয়নি, ফিলিস্তিনের প্রায় ৭৫% জায়গা দখল করে নেয়। ফলে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের দেশে নিজেরাই রিফুজি হয়ে পড়ে।

১৯৫৬ সালের অক্টোবরে মিশরকে সুয়েজ খালের দখল ছেড়ে দিলে মিশরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের শক্তি জিঁয়ে রেখে মধ্যপ্রাচ্যসহ আফ্রিকার ওপর খবরদারী করার জন্য বৃটেন ও মর্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এমতাবস্থায় ১৯৬৪ সালে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম গড়ে ওঠে। ১৯৬৭ সালে আরব জোট ইসরাইলকে আক্রমণ করলে মাত্র ৬ দিনের এ যুদ্ধে ইসরাইল আবারও জয়লাভ করে। যা ‘সিক্স ডে ওয়ার’ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে ইসরাইল ফিলিস্তিনের বাকি অংশসহ মিশরের গাজা উপত্যাকা ও সিনাই উপদ্বীপ, জর্দানের পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীর, সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয় এবং অধিকৃত গাজা উপত্যাকা ও পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে।

১৯৭৩ সালে আরব জোট আবারও ইসরাইলে হামলা চালালে ভীষণ যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ ‘ইয়ম কিপুর যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। এবারও আরব জোট ইসরাইলের কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে যায়। এবার ইসরাইল ও মিশর শান্তি প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। ১৯৭৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষর করে ইসরাইল ও মিশর। ইসরাইল ১৯৬৭-এর যুদ্ধে দখল করা সিনাই উপদ্বীপ মিশরকে ফিরিয়ে দেয়। বিনিময়ে প্রথমবারের মত কোনও আরব দেশ মিশর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়।

উক্ত চুক্তির মাধ্যমে মিশর-ইসরাইলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু দু’দেশের কাছে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় ফিলিস্তিন। কারণ ফিলিস্তিনরা স্বশাসনের পক্ষে। ১৯৮৭ সালে প্রথম ‘ইন্তিফাদা’-র সূচনার পর ‘হারাকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া’ (হামাস) সৃষ্টি করেন কট্টর ইসরাইল বিরোধী নেতা ফিলিস্তিনি ধর্মগুরু শেখ আহমেদ ইয়াসিন। যা ওই অঞ্চলের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল এবং বৃহত্তম ইসলামিক সশ্রস্ত্র গোষ্ঠী। বর্তমানে গাজা উপত্যাকার ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে হামাস। যে সংগঠনকে জঙ্গীগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একাধিক দেশ। কিন্তু ইসলামী দেশগুলোর কাছে উক্ত সংগঠন একটি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

আশির দশকের শেষলগ্নে এ সংগঠনের জন্ম হলেও ১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির জন্য তখনকার প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এর নেতা ইয়াসির আরাফাত ও তৎকালীন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন। ওই চুক্তিতে উভয়পক্ষের মধ্যে যে বোঝাপড়া হয়েছিল তা হল-‘প্যালেস্টাইন অথরিটি’ নামে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে, যারা পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যাকায় স্বায়ত্তশাসন কায়েম করতে পারবেন এবং পিএলও ইসরাইলের স্বীকৃত মিত্র হিসেবে বিবেচিত হবে, যার ফলে বিবদমান প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করার দ্বার উম্মুক্ত থাকে।

১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় অসলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব ছিল। আর এর পরিবর্তে ইসলাইলি রাষ্ট্রের বৈধতা স্বীকার করে নেবে পিএলও। কয়েক দশকের সংঘাতের শেষে এ সমঝোতাকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখা হলেও বাস্তবতা হল ওই চুক্তির তিন দশক পরেও গাজা উপত্যাকায় শান্তি ফিরে আসেনি। কারণ হামাস এবং কট্টরপন্থী ইসরাইলিরা তখনই এ চুক্তির বিরোধীতা করেছিল। কেননা, উক্ত চুক্তির পরেও ফিলিস্তিন ও ইসরাইল কয়েকটি বিষয়ে কখনও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। যেগুলোকে কেন্দ্র করে বারবার সংঘাত হয়েছে উভয়পক্ষের মধ্যে। যেসব বিষয়ে তারা কখনও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি সেসব বিষয়গুলো হল- (১) ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বিষয়ে কী হবে ? (২) পশ্চিম তীরে ইহুদী বসতি থাকবে কি-না ? (৩) জেরুজালেমে উভয়পক্ষের দাবি থাকবে কি-না ? এবং (৪) ইসরাইলের সঙ্গে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র তৈরি হবে কি-না ? সুতরাং অসলো চুক্তি কাঙ্খিত সফলতা এনে দিতে পারেনি বরং উভয়পক্ষ একে-অপরকে স্বত্ব লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করে প্রায় হামলা-পাল্টা হামলায় লিপ্ত হয়েছে। তবে ওই চুক্তির আওতায় ফিলিস্তিনি যে কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছিল, তারা পরবর্তী পাঁচ বছর অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে সংঘাত নিরসনে আলোচনা চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি অন্য সমস্যাগুলোরও সমাধান করবে এবং পশ্চিমতীর ও গাজা মিলিয়ে এ কর্তৃপক্ষ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। ফিলিস্তিনিদের দাবি ছিল তাদের ওই রাষ্ট্রের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। যদিও এ বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কখনও সমঝোতা হয়নি। ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে ইসরাইলে হামাসের প্রথম আত্মঘাতি বিস্ফোরণ ঘটে। ১৯৯৭ সালে হামাসকে বিদেশি জঙ্গীগোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা করে ইসরাইল।

অসলো চুক্তির ধারাবাহিকতায় পরবর্তী ১৯৯৫, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ২০০০ সালে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের উদ্যোগেও তখনকার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ও ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাতের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সে বৈঠকও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে শুরু হয় ফিলিস্তিনিদের নতুন সংগ্রাম যা ‘দ্বিতীয় ইন্তিফাদা’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এর মধ্যেও দু’পক্ষের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা হয়েছে সমঝোতার জন্য। বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থার নানা সময়ে নেওয়া এমন উদ্যোগের মধ্যেও দু’পক্ষের মধ্যে ছোট-বড় নানা সংঘাত হয়েছে।
শেখ আহমেদ ইয়াসিন হামাস-এর প্রধান নেতা হলেও এ সংগঠন তৈরিতে ছিল আজিক আল-রান্তিসি ও মাহমুদ জহরও। ২০০৪ সালে ইসরাইলের আক্রমণে নিহত হন শেখ ইয়াসিন। পরের মাসে নিহত হন ইয়াসিনের সঙ্গী আল-রান্তিসি। এ দু’নেতাকে হারিয়ে হামাস আরও আগ্রাসি হয়ে ওঠে। ফিলিস্তিনের পার্লামেন্ট বিজয়ের এক বছর পর ২০০৭ সালে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজা উপত্যাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর ইসরাইল ও মিশর গাজায় অবরোধ আরও জোরদার করে। মাঝে মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা নিয়মিতই ঘটে আসছে দু’পক্ষের মধ্যে। ২০১৪ সালে ইসরাইলের হামলায় ২ হাজার ২ শত ৫১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু। ২০২১ সালে গাজায় ইসরাইলের হামলায় ২৫৬ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু ঘটে।
এর মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম তীরে আপাতত বসতি স্থাপন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলিদের ওপর বিস্ময়কর এক হামলা চালায় হামাস। যার জেরে হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে ইসরাইল যুদ্ধাবস্থা ঘোষণা করে এবং পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হামাস নিয়ন্ত্রিত পুরো গাজা উপত্যাকায়।

সুতরাং পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে যে ফল পাওয়া যায় তা হল-এমনিতে নাচুনি বুড়ি তার ওপর ঢোলের বাড়ি। ইসরাইলিরা অপেক্ষায় থাকত কখন ফিলিস্তিনিরা তাদের ওপর হামলা করবে। যতবারই আরব জোট হামলা করেছে ততবারই ইসরাইল যুদ্ধে জিতে একটু একটু করে ফিলিস্তিনের প্রায় অংশ দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে ৩২০ বর্গ কিঃমি আয়তন বিশিষ্ট গাজা এবং ১০,৪২৯ বর্গকিমি’র পশ্চিম তীর ছাড়া ফিলিস্তিনের পুরো অংশ ইসরাইলের অধীনে। এখন তারা গাজাকেও নিয়ে নিতে চায়। কারণ, হামাস সে সুযোগ করে দিয়েছে ইসরাইলকে।

পরিশেষে বলা যায়, কোনও যুদ্ধ কাম্য নয়। পাটা-ওতায় ঘষাঘষি মধ্যিখানে মরিচের পরাণ যায়। উক্ত যুদ্ধে এখন পর্যন্ত উভয়পক্ষে যারা মারা গিয়েছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই সাধারণ মানুষ, যাদের মধ্যে শত শত নারী ও শিশু রয়েছে। এ নারী ও শিশুরা কোনও পক্ষের যোদ্ধা নয়। এদের ওপর এমন অমানবিক নৃশংসতা ও নির্মমতা কোনোভাবে কাম্য নয়। তাইতো বলি, যুদ্ধ নয় শান্তি চাই।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test