E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশ্ব ডিম দিবস  

ডিম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে

২০২৩ অক্টোবর ১৩ ১৮:৩৬:১৬
ডিম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


ডিমের গুণগতমান সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আজ শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) ২১তম ‘বিশ্ব ডিম দিবস’ পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ডিমে পুষ্টি ডিমে শক্তি, ডিমে আছে রোগমুক্তি’।প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবারে বিশ্বজুড়ে উদযাপিত হয় ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। 

দিবসটি উপলক্ষে এবার তেমন কোনো আয়োজন নেই। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ছোট পরিসরে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

ডিমকে বলা হয়ে থাকে পরিপূর্ণ খাদ্য। সারা পৃথিবীতে মাত্র কয়েকটি খাদ্যকে সুপার ফুড হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়- যার মধ্যে ডিম অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশে ডিমের বাৎসরিক প্রাপ্যতা মাথাপিছু ১৩৫টি, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৩৬টি।১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত আইইসি ভিয়েনা কনফারেন্স থেকে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী চলছে একটি ইতিবাচক ক্যাম্পেইন। যার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ডিমের প্রয়োজনীয়তার বার্তাটি সবার কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে- ডিম বিশ্বে একটি উন্নতমানের ও সহজলভ্য আমিষজাতীয় খাদ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন (আইইসি) স্থাপিত হয় ১৯৬৪ সালে।

বর্তমানে এই সংস্থার সদস্যসংখ্যা ৮০। সংস্থাটি প্রাণিজ আমিষের চাহদিা পূরণ, স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী জাতি গঠন এবং সর্বোপরি ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রথম ‘বিশ্ব ডিম দিবস’ পালনের আয়োজন করে, যা পরবর্তী সময়ে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার পালিত হয়ে আসছে।ডিম তো অনেক উপকারী। প্রতিদিন পরিবারের সবাই একটা করে ডিম খেতাম। এক ডজন ডিম তো ছয় জনের পরিবারে দুই দিনেই শেষ হয়ে যায়। দাম না কমলে প্রতিদিন ডিম খাওয়া সম্ভব না,” হতাশই শোনাল আমার নিয়মিত পাঠক বৃন্দ

দেশে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের পুষ্টির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ খাবার এই ডিম। ফলে ডিমের বাজার চড়লে মোর্শেদা বেগমের মত অসংখ্য মানুষের পুষ্টিতে টান পড়ে।

গত কিছু দিনে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ পরিবারের চেয়ে আরও কম আয়ের মানুষ পড়েছেন বেশি বিপাকে।

পুষ্টিবিদরা বলেন, কেউ যদি মাছ-মাংসের পরিবর্তে প্রতিদিন ডিম খান, তাহলেও তার প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে। কেননা ডিমে প্রায় ৬ গ্রামের মত প্রোটিন পাওয়া যায়।

“নিম্নবিত্তের মানুষ যেহেতু প্রতিদিন মাছ-মাংস পায় না, সেহেতু তাদের প্রোটিনের চাহিদা ডিম দিয়েও পূরণ হতে পারে। ইদানিং দাম বেড়ে যাওয়ায় তারাও হয়ত এটা প্রতিদিন খেতে পারছেন না। পুষ্টির ঘাটতিও দেখা দিতে পারে এতে।”

ডিম বাজারের হালচাল

বেশ কিছুদিন ধরেই ডিমের বাজার চড়া। বিক্রেতারা বলছেন, খামারিদের কাছ থেকে তাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। আর খামারিদের দাবি, মুরগীর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।আর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয় বলেন, “মানুষের চাহিদা ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়লেও সে অনুযায়ী যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের দেশটা যেহেতু ছোট, তাই এখানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অধিক উৎপাদন সম্ভব। ছোট খামারি, যারা দেশের ৭৮ শতাংশ ডিম উৎপাদন করে, তাদের সাথে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয় কোনো আলোচনাই করে নাই। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এর সমাধান করে নাই। এ কারণেই সমস্যা থেকে খামার সঙ্কুচিত হচ্ছে।”

চট্টগ্রামের রিকশাচালক রিপন মিয়া মাছ-মাংসের বিকল্প হিসেবে ডিমে অভ্যস্ত হলেও এখন তাতেও টান পড়েছে।

তিনি বলেন, “আগে একটা ডিমের দাম ছিল ৬-৭ টাকা। ঘরে কিছু না থাকলে একটা ডিম ভাইজা খাইয়া নিছি। এখন এক হালি ডিমের দাম ৪৬ টাকা। ডিম খামু কেমনে? সবকিছুরই দাম খালি বাড়তাছে।”

দেশের বাজারে ডিমের অস্বাভাবিক দামের লাগাম টানতে আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু এত কিছুর পরও কমছে না দাম। বুধবার (১১ অক্টোরব) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু সেই দাম শুধু কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। বাজারে ক্রেতাদের ডিমের ডজন কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা। ক্ষেত্রবিশেষ তা গিয়ে ঠেকছে ১৫৫ টাকা থেকে ১৬৫ টাকা পর্যন্ত।

ডিমের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে এক ক্রেতা বলেন, এক হালি ডিম ৫৫ টাকা দিয়ে কিনেছি। কোনো জিনিসের দাম একবার বেড়ে গেলে তা আর কমে না।বুধবার (১১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম পাহাড়তলী কাঁচা বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতি হালি লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা দরে। এছাড়া সাদা ডিমের হালি ৪২ টাকা এবং হাঁসের ডিমের হালি ৬০ টাকা।

অর্থাৎ, একটি ডিমের সরকার নির্ধারিত দাম ১২ টাকা। একজন ভোক্তা বলেন ডিম যদি ৮টাকা পিস তাহলে ভালো হয়।

বাজারে ডিমের দাম নিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, গত দুইদিন ধরে দেড়শ টাকা দরে প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি করছি। এর আগে প্রতি ডজনের দাম ছিল ১৪৫ টাকা। তাছাড়া সাদা ডিমের দামও বেড়েছে। গত সপ্তাহে সাদা ডিমের ডজন ছিল ১৪০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা দরে।

ডিমের দাম বেশি থাকার কারণ হিসেবে আরেকজন বিক্রেতা বলেন, বৃষ্টির প্রভাবে ডিমের দাম বাড়তি। তাছাড়া আড়ত থেকেও তেমন সরবরাহ নেই। আগে এক গাড়িতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার ডিম আসতো। এখন একই গাড়িতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার ডিম আসে। এখন আমাদের যে সংখ্যক ক্রেতা, সেই চাহিদামতো সরবরাহ করতে পারছি না। প্রতি বছর শীতের আগে ডিমের দাম কম থাকে, কিন্তু এই বছর সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।

এর আগে বেঁধে দেয়া দামে ভোক্তার হাতে ডিম পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ার পর তিন দফায় ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যানুসারে, দেশে ডিমের বার্ষিক চাহিদা ১ হাজার ৮০৬ কোটি ৪৮ লাখ পিস। বিপরীতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৩৩৭ কোটি ৬৩ লাখ পিস ডিম।

“আমাদের চেয়ে ভারতে সবসময়ই ডিমের দাম কম থাকে। কিন্তু এখন আমাদের চেয়ে তাদের ডিমের দাম বেশি থাকায় এখান থেকে অবৈধ উপায়ে ডিম চলে যাচ্ছে। বিশ্ব বাজারে পোলট্রি পণ্যের দাম স্বাভাবিক না হলে ডিমের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।”

ডিম কেন অপরিহার্য খাদ্য উপাদান?

প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ডিম একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ডিমের কুসুম ও সাদা অংশে ৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

“ডিমের সাদা অংশের বেশিরভাগই প্রোটিন। আবার সাদা অংশ ও কুসুমে অনেকগুলো উপকারী ভিটামিন থাকে। ভিটামিন এ, ডি, ই, কে, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে।

“এছাড়া কিছু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যেমন- কোলিন, সেলিনিয়াম, জিংক, আয়রন রয়েছে ডিমে। যেগুলো সুস্থ থাকার জন্য খুবই জরুরি।“

ডিমে থাকা কোলিন নামের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট হার্টকে সুস্থ রাখে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি মস্তিস্কের কার্যাবলি ঠিক রাখে। আমাদের শরীরের কোষগুলোকে সুস্থ-সবল রাখে। আমাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য কোলিনের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধেও কাজ করে।

“ডিমের কুসুমে থাকা উপাদান আমাদের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে।”

ডিম শিশুকালের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে জানিয়ে তিনি বলেন, “পরবর্তীকালে আমাদের শরীরে যে ক্ষয় হয়, সে ক্ষয়পূরণে সহায়তা করে ডিম। আমাদের চুল, নখ, শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- লিভার, কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রমে সাহায্য করে।”আর আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অ্যান্টিবডি তৈরিতে প্রোটিনের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে মানুষ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিম খাচ্ছে বেশি। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

“বেশিরভাগ কোভিড রোগীদেরই ভিটামিন ডি এর অভাব থাকে। সেই চাহিদাটা পূরণে ডিমের ভূমিকা অনেক।তাই কেউ জটিল রোগে ভুগলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডিম খেতে পারেন। সাধারণ মানুষ যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস আছে, ওজন বেশি তাদের ক্ষেত্রে দিনে একটা করে ডিম খেলে ক্ষতির কিছু নেই।

ডিমের কেবল সাদা অংশ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

“অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কোলেস্টেরল ভালো। সেটা শরীরে উপকার করে এবং অপকারী কোলেস্টেরল বের করে দেয়। এ কারণে প্রতিদিন একটা করে ডিম খাওয়া উচিত।”

“ডিম একটি প্রথম শ্রেণির প্রোটিন। আমাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণে প্রথম শ্রেণির এই প্রোটিন সবচাইতে ভালো। কারণ পুরো প্রোটিনটা শরীরের কাজে লাগে।

“ডিম আমাদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারি। ডিমে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ই, ডি, বি কমপ্লেক্স আছে। ফলে অনেক ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে ডিম।এটি এমন প্রোটিন জাতীয় খাবার, যা তেল ব্যবহার না করেই খাওয়া যায়; যেটা মাছ-মাংসের ক্ষেত্রে সম্ভব না।

“প্রোটিনের চাহিদা পূরণে ডিম প্রতিদিনের নাস্তায় খাওয়া যেতে পারে। এক বছর বয়স থেকে যে কোনো মানুষ প্রতিদিন একটা করে ডিম খেতে পারে; শুধু কিডনি রোগী ছাড়া। কারণ কিডনি রোগীদের সারাদিনের প্রোটিনটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে।

“তাছাড়া সবার জন্য ডিম অনেক জরুরি। ডিমের কোলেস্টেরল হার্টকে ভালো রাখে।”

লেখক : কলাম লেখক ও গবেষক।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test