E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মুক্তিযোদ্ধারা কী অচ্ছুত সম্প্রদায়?

২০২৩ অক্টোবর ১৯ ১৬:০২:১৯
মুক্তিযোদ্ধারা কী অচ্ছুত সম্প্রদায়?

আবীর আহাদ


বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্বে অর্জিত এ বাংলাদেশ। দেশটি স্বাধীন হয়েছিলো বলেই যিনি যা জীবনে কল্পনা করেননি, তাই তিনি হয়েছেন হচ্ছেন ও হবেন। মুক্তিযোদ্ধারা দেশটি স্বাধীন করেছিলো বলেই অনেকে এদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, সচিব, সেনাপতি, জেনারেল, বিরাট শিল্পপতি, বড়ো ব্যবসায়ী প্রভৃতি হয়েছেন হচ্ছেন ও হতেই থাকবেন। এটা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অত্যন্ত খুশি, আনন্দ ও গৌরবের বিষয়। মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই ঐসব স্তরে যেতে না পারলেও এটাই বড়ো আত্মতৃপ্তির কথা যে, এসব কিছুর পশ্চাতে ভূমিকা পালনকারী হলো বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সর্বোপরি বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সীমাহীন শৌর্য ত্যাগ রক্ত ও বীরত্ব দিয়ে একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের জন্য একটি পতাকা, একটা সংবিধান, একটি মানচিত্র, একটা জাতীয় সঙ্গীত, একটা জাতীয়তা প্রভৃতি উপহার দিয়ে বিশাল জনগণের মধ্যে মিশে গেছে। নেই তাদের কোনো আত্মাহঙ্কার, আত্মগর্ব ও আত্মপ্রচার। নেই তাদের কোনো অবাস্তব চাওয়া ও আবদার। তাঁরা চান, জাতিরাষ্টের নির্মাতা হিশেবে একটু সম্মান, একটু ভালোবাসা, একটু স্নেহ। চান ন্যূনতম উন্নত  আর্থসামাজিক মৌলিক অধিকার ও নিরাপদ জীবন ব্যবস্থা।

এই যখন অবস্থা তখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে রাষ্ট্রের প্রধান বা নির্বাহী প্রধানসহ প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনের বাধা কোথায়? দেশের একজন খেলোয়াড়, একজন অভিনেতা, একজন মোল্লা, একজন মন্ত্রী-সচিব-এমপি, ও তাদের গিন্নি, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও অন্যান্যরা মারা গেলে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী তাদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করে জাতীয় প্রচার মাধ্যমে শোকবাণী ও বিবৃতি দেন। জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। অথচ দেশের স্বাধীনতা আনায়নকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তাঁর মৃত্যুতে শোকবাণী বা বিবৃতি দিতে দেখি না!

মৃক্তিযোদ্ধারাও অসুস্থ হন। কিন্তু তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গালভরা সরকারি প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও বাস্তবে তারা বলা চলে যথাযথ চিকিৎসা হতে বঞ্চিত হন। অনেক ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিলে এখানে নানান অসম্মানের শিকার হতে হয়!

মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের স্বীকৃতি ও ক্ষতিগ্রস্ততার কারণে বঙ্গবন্ধু প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে ৩০% কোটার প্রচলন করেছিলেন। কিন্তু সেটি পরবর্তী সরকারসমূহসহ আমলাতন্ত্রের সহ্য হলো না!কোনো সময়ে তার সঠিক বাস্তবায়ন তো ঘটলোই না, আর এখন ভো রলা চলে সে কোটাটি নামমাত্র ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে।

গত বছর মেট্রোরেল উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঘোষণা করেছিলেন যে, তারা সবাই বিনা ভাড়ায় এতে ভ্রমণ করতে পারবেন। কিন্তু মেট্রোতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা লজ্জিত হলেন! প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, কেবলমাত্র যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা এ সুযেগ পাবেন! এভারে ঘোষণা দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অপমান করার কী মর্ম থাকতে পারে তা আমাদের বোধগম্য নয়!

শুধু তাই নয়, বিভিন্ন শ্রেণী/পেশার একটু নামীদামী (এমনকি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী) কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বিরাট অঙ্কের অর্থ প্রদান করা হয়, তাদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতালসহ সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেয়া হয়- শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গেলে তাঁদের সফরসঙ্গী হিশেবে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজনকে রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়ে যাওয়া হয়, সেসব সফরসঙ্গীদের মধ্যে সমাজের চোর লুটেরা দুর্নীতিবাজ রাজাকারদের সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও- বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী/পেশার লোকজন আমন্ত্রিত হলেও- দেখা যায় সেসব ক্ষেত্রে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলা চলে একেবারেই উপেক্ষিত! এতে মনে হয় মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রের কোনো অচ্ছুত সম্প্রদায়! মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি রাষ্ট্র যখন এধরনের সীমাহীন অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রদর্শন করে তখন সে-দুঃখের কথা বলার জায়গা খুঁজে পাওয়া যায় না। এতে প্রমাণিত হয় যে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এ রাষ্ট্রটি বড়োই কৃপণ; বড়োই অকৃতজ্ঞ।

লেখক : মুক্তিযোদ্ধা লেখক গবেষক।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test