E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভাই-বোনের অটুট বন্ধনের উৎসব ভাই ফোঁটা

২০২৩ অক্টোবর ২৮ ১৬:৫১:০৬
ভাই-বোনের অটুট বন্ধনের উৎসব ভাই ফোঁটা

পূর্ণি ঘোষাল


কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় ভাই ফোঁটা বা ভাতৃ দ্বিতীয়া। চলতি বছর ১৬ নভেম্বর ভাতৃদ্বিতীয়া। এ বছর দ্বিতীয়া তিথি শুরু হবে ১৬ নভেম্বর সকাল ৭টা ০৬ মিনিটে। শেষ হবে ১৭ নভেম্বর সকাল ৩টে ৫৬ মিনিটে। ভাইফোঁটার শুভক্ষণ থাকছে দুপুর ১টা ১০ মিনিট থেকে ৩টে ১৮ মিনিট পর্যন্ত। মোট ২ ঘণ্টা ৮ মিনিট সময় থাকবে ফোঁটা দেওয়ার। আবার সকাল ৮টা ০৪ মিনিট থেকে ৯টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত রাহু-কাল থাকায় এ সময় ফোঁটা দেওয়া উচিত নয়। উল্লেখ্য, রাহুকালে শুভ কর্ম বর্জিত।

পশ্চিমবঙ্গের বাইরে এটি ভাই দুজ বা ভাই বীজ নামে পরিচিত। নামে পার্থক্য থাকলেও উদ্দেশ্য একটিই, ভাইয়ে দীর্ঘায়ু ও উন্নতি কামনা করা। তবে কবে, কী ভাবে প্রথম ভাই ফোঁটার রীতি প্রচলিত হল, সে বিষয়ে একাধিক পৌরাণিক উপাখ্যান রয়েছে।

একটি প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, সূর্য ও সংজ্ঞার সন্তান যম ও যমী বা যমুনা। যমুনা নিজের ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়েছিলেন, তার পর থেকে এই উৎসব পালিত হতে শুরু করে। কথিত আছে, যমুনা নিজের ভাই যমকে একাধিক বার নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে ধর্মরাজ যম নিজের বোনের আমন্ত্রণ রক্ষার্থে যেতে পারতেন না। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে বাড়ির দ্বারে নিজের ভাই যমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান যমী। প্রসন্নতা ও স্নেহের সঙ্গে সেই তিথিতে নিজের ভাইকে ফোঁটা দেন ও ভোজন করান যমুনা। এর পর যম যমীকে বর চাইতে বলেন। তখন, যমী ভাইয়ের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা নেন যে, প্রতি বছর তিনি কার্তিক শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ায় যমীর বাড়িতে ভোজন গ্রহণ করতে আসবেন। পাশাপাশি এ-ও বর চান যে, এই তিথিতে যে বোন নিজের ভাইকে ফোঁটা দিয়ে ভোজন করাবে, তাঁর কখনও যমের ভয় থাকবে না। তার পর থেকেই ভাই ফোঁটার রীতি পালিত হয়ে আসছে।

আবার যমুনার জলে স্নান করলে নরক যাতনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলেও, মত প্রচলিত আছে। এমনও বর চেয়েছিলেন যমুনা। যম বোনের এই ইচ্ছাও পুরো করেন। কিন্তু পাশাপাশি সতর্ক করেন, যে ভাই নিজের বোনের তিরস্কার করবে ও অপমানিত করবে, তাঁকে যমপাশে বেঁধে যমপুরী নিয়ে যাবেন তিনি। তা সত্ত্বেও, ভাই যদি যমুনার জলে স্নান করে সূর্যকে অর্ঘ্য দেন, তা হলে স্বর্গলোকে তাঁর স্থান সুনিশ্চিত হবে। এদিন ভাই-বোনের যমুনায় স্নান করা শুভ মনে করা হয়। মৎস্য পুরাণ অনুযায়ী, মৃত্যুর দেবতা যমকে সন্তুষ্ট করার জন্য ভাতৃদ্বিতীয়ার দিনে ষোড়শোপচার বিধিতে পুজো করা উচিত।

আবার অন্য এক প্রচলিত পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, নরকাসুর দৈত্য বধের পর কৃষ্ণ গৃহে ফিরলে, বোন সুভদ্রা প্রদীপ জ্বেলে, ফুল, ফল, মিষ্টি দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। এর পর কৃষ্ণের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন সুভদ্রা। পাশাপাশি কৃষ্ণের আরও সহস্র বছর বেঁচে থাকার কামনা করেন। মনে করা হয়, তখন থেকেই ভাই ফোঁটার সূচনা।

শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়াতে ভাইকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানায় বোন। নকশিকাঁথার কাজ করা সূতির আসনে ভাইকে বসিয়ে শুরু হয় ফোঁটা দেওযার অনুষ্ঠান। কাঁসা বা পিতলের থালায় ধান-দূর্বা, ঘরে আমপাতায় পারা কাজল, চন্দন সাজিয়ে রাখা হয় ভাইয়ের সামনে। সঙ্গে থাকে ঘিয়ের প্রদীপ ও শঙ্খ। আর মুখ মিষ্টি করানোর জন্য থাকে ভাইয়ের পছন্দের সমস্ত মিষ্টিও। এর পর বোনেরা বাঁ হাতের কড়ে আঙুলে কাজল নিয়ে এঁকে দেয় ভাইয়ের ভ্রু-যুগল। এর পর ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোঁটা দেওয়ার সময় ছড়া কাটে বোনেরা—

‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।’

চন্দনের ফোঁটা দেওয়ার পর শঙ্খ ধ্বনির মাঝে ধান-দূর্বা দিয়ে ভাইকে আশীর্বাদ করে বোন। তার পর মিষ্টিমুখ করার পালা। এ ভাবেই বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয়ে আসছে ভাই-বোনের অটুট বন্ধনের উৎসব ভাই ফোঁটা।

লেখক: সংবাদকর্মী।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test