E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিক্ষার রূপান্তর ও নতুন শিক্ষাক্রম

২০২৩ নভেম্বর ১২ ১৬:০৬:২১
শিক্ষার রূপান্তর ও নতুন শিক্ষাক্রম

মোহাম্মদ ইলিয়াছ


শিক্ষা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। শিক্ষা হবে সর্বজনীন। শিক্ষা হবে সহজলভ্য, প্রাণচাঞ্চল্য। শিক্ষা হবে মানবিক, আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, যুক্তিনির্ভর। শিক্ষা মানুষকে লড়তে শেখায় সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে। শিক্ষা মুখস্থ করার কোনো বিষয় নয়, শিক্ষা আত্মস্ত করার। শিক্ষা মানুষকে পূর্ণতা দান করে। সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়। শিক্ষা সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে শেখায় সকল অন্যায় ও কূপম-ূকতার বিরুদ্ধে। শিশুরা, শিক্ষার্থীরা শিখবে আনন্দের সঙ্গে, উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আগ্রহের সঙ্গে।

এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে রূপান্তর তাই অপরিহার্য। সেটিকে বিবেচনায় নিয়েই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর দৃষ্টি সুদূরে - ২০৪১ - ২০৭১ - ২১০০। সেখানে পৌঁছাতে হলে যে আজই যাত্রা করতে হবে। এ লক্ষ্যে পৌঁছাবার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ খাত শিক্ষাকে রূপান্তরে হাত দিয়েছেন তিনি। তিনি অনুমোদন করেছেন শিক্ষা রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১। প্রণীত হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২। এ বছর থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণি দিয়ে শুরু হয়েছে এর বাস্তবায়ন। আগামী বছর হবে ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে। এক অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছে শিক্ষাঙ্গনে। এখন পুরো জাতির সীমাহীন আগ্রহের অন্যতম নতুন শিক্ষাক্রম রূপরেখা/নতুন শিক্ষাক্রম/নতুন শিখন-শেখানো পদ্ধতি/মূল্যায়ন পদ্ধতি।

এটাও সত্য ৩০০ বছরেরও পুরনো ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার শেকড় উপড়ে ফেলে ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে হলে দরকার অসীম সাহস, প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও দেশপ্রেম। এসব গুণাবলিতে যে সমৃদ্ধ জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা আমাদের আশার বাতিঘর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে যেখানে শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দেন সেখানে অন্ধের মতো কোনোরূপ প্রতিদানের আশা না করেই লক্ষ্যে পৌঁছাবার লড়াইয়ে নেমে পড়েন শিক্ষক সমাজ। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও ঘটছে তাই। ফলে স্মার্ট (SMART) তথা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সকল বিভ্রান্তিকে অবজ্ঞা করে শিক্ষকগণ নতুন লড়াইয়ে যুথবদ্ধ।

কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এ দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করার অব্যাহত অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী পাকিস্তানের দোসর, রাজাকার, আল-বদর, আল-সামস, ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কুশিলব, বিএনপি, জামাতসহ বেশ কিছু শক্তি। তারা ও তাদের অনুসারীরা শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত। তাদের এ অপচেষ্টাও ব্যর্থ হতে চলেছে নিশ্চিত।

এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী, বিজ্ঞানমনস্ক, সংবেদনশীল, মানবিক গুণাবলি সমৃদ্ধ বৈশ্বিক নাগরিক। যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, প্রশ্ন করা শিখবে, সমস্যা চিহ্নিত করে নিজেরাই সমাধান করবে, নানা রকম সাধারণ দক্ষতা (soft skill) অর্জন করবে, সংঘর্ষময় বিশ্ব ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে এক সম্প্রীতির বিশ্ব গড়ে তুলবে।

শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, আনন্দ, উৎসাহ উদ্দীপনা, দলবদ্ধ অংশগ্রহণ ও নিয়মিত উপস্থিতির চিত্র আমাদের দিয়েছে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। সাথে রয়েছেন সম্পূর্ণ নতুন ভূমিকায় শিক্ষকগণ। চলছে প্রশিক্ষণের এক মহা কর্মযজ্ঞ। নিজস্ব উদ্যোগে শিক্ষকগণ আয়োজন করছেন শিক্ষা উপকরণ মেলা। সক্রিয় তদারকি, পরিবীক্ষণ ও প্রশিক্ষণসহ নানাবিধ কার্যক্রমে শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পরিচালিত শিক্ষা প্রশাসনে চলছে মহা কর্মযজ্ঞ। তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নকে করছে সহজ।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় অন্য কোনো পেশা নয় বঙ্গবন্ধুর প্রতি অবিচল আস্থা রেখে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শিক্ষক শ্রেণিই প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন সর্বোচ্চ। তাঁর কন্যার প্রতিও তাঁদের আস্থা অবিচল। ফলে শিক্ষা রূপান্তরে শিক্ষকগণ রয়েছেন সর্বাগ্রে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে নিরলস ও কঠোর পরিশ্রম করছেন মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে তাঁদের সার্বক্ষণিক নজরদারি এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। অভিবাদন আপনাদের। শিক্ষকগণ সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বদ্ধপরিকর। আপনাদের সাথে আছেন শিক্ষকগণ। এ চ্যালেঞ্জ সফলতার সাথে মোকাবেলা করে শিক্ষকগণ আবারও প্রমাণ করবে সঙ্কটে শিক্ষকগণই ভরসা তাঁরাই সমাধান।

আধুনিক এবং সৃজনশীল মেধা বিকাশ সহায়ক শিক্ষাক্রমের মধ্য দিয়ে আমরা শিক্ষার কাক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে পারব বলে বিশ্বাস রাখি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্ত দেশ জাপান আজকে উন্নত এবং সভ্য দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটা শুধু সম্ভব হয়েছে জাপানের দেশপ্রেম ভিত্তিক সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক একই ধারার এবং মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে। একটি আধুনিক শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নের মধ্য দিয়ে তারা আজকের সফল অবস্থানে।

নতুন শিক্ষাক্রমে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে শিখনকালীন মূল্যায়ন। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বেশির ভাগ মূল্যায়ন হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে। অর্থাৎ বিষয় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সারা বছর ধরে অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক কাজ, প্রকল্পভিত্তিক শিখনচর্চা, খেলাধুলা, গ্রম্নপ ওয়ার্ক, কুইজ, পোস্টার প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করাবেন এবং তাদের কাজের মূল্যায়ন করবেন। মূল্যায়ন মানে বর্তমানকালের মতো প্রচলিত পরীক্ষা নয়, নম্বর নয়, গ্রেডিং নয়। নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী কতটুকু যোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে সে সম্পর্কে শিক্ষক মন্তব্য করবেন। মন্তব্যগুলো হবে...' খুব ভালো, ভালো, সন্তোষজনক এবং আরও শেখা প্রয়োজন, এ ধরনের। ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শ্রেণিতে প্রথম বা দ্বিতীয় হওয়া বা নম্বর ও গ্রেডিংয়ের পেছনে ছোটার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা সেটি থাকবে না। এখানে শিক্ষকের ভূমিকাই হবে মুখ্য।

লেখক : উপ পরিচালক (অর্থ ও বাজেট) অবসর সুবিধা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test