E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সমবায়ের কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু কথা

২০১৪ নভেম্বর ০৬ ১৮:৪৯:২০
সমবায়ের কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু কথা

মো. বেলায়েৎ হোসেন : ১৮৪৪ সালে ইংল্যান্ডের রচডেল শহরে ২৮ জন বেকার ও দরিদ্র তাঁতী মাত্র ২৮ পাউন্ড মূলধন নিয়ে সমবায় শুরু করেন। অতি অল্প সময়ে তাঁরা সাফল্য পান। তাদের কার্যক্রম ও সাফল্য দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হন এবং ক্রমে সমবায় ধারণা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে। মানব সম্পদ উন্নয়নসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সমবায়ের দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকে। স্বল্প বিত্ত মানুষের সম্মিলিত চেষ্টায় জমতে থাকে মূলধন। উক্ত মূলধন কাজে লাগানো হয় উৎপাদনমূখী লাভজনক কর্মকাণ্ডে। এতে দ্রুত সদস্যদের জীবনযাত্রার মান বাড়তে থাকে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও লভ্যাংশের সুষম বন্টন হচ্ছে সমবায়ের মূল ভিত্তি।

দারিদ্রকে দূর করতে চাই, চঞ্চল পথ চলা, চঞ্চল কথা বলা আর সমবায়ের সঙ্গে পায়ে হাঁটা। কেননা সমবায় হচ্ছে একটি পরিবারের মত। এখানে সবাই সমান, যার জন্য একনিষ্ঠ প্রবাদ আছে ‘দশের লাঠি একের বোঝা’ বা ‘দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ’। সমাজবদ্ধ ভাবে আমরা বাস করি বলে বিশ্বের কউে কেউ বহুকাল আগেই সমবায়ী মনোভাবে অত্যন্ত গুরুত্ব প্রদান করেছেন।

বিশ্বের প্রথম সমবায় উদ্যোগ সংগঠিত হয় ইংল্যান্ডে ১৮৪৪ সালে। জাতিসংঘ ১৯৯৫ সালের জুলাই মাসের প্রথম শনিবার এ দিবসটি পালনের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেন। মূলত: দিবসটির ঘোষণার উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক ভাবে সমবায় গড়ে তোলা। সারাবিশ্বের সাতশত ষাট মিলিয়ন সমবায়ীকে এক ছাতার নিচে একত্রিত করা। এর কারণ হলো সমবায় আবেদন ব্যক্তি, কেন্দ্রিক নয়। সমষ্টি কেন্দ্রিক সমবায়ের সমঅংশী দায়িত্ব, সমপুঁজি, সমঝোতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির যৌথ চেষ্টা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি। আমাদের দেশেও প্রতি নভেম্বর মাসের প্রথম শনিবারকে সমবায় দিবস হিসাবে উদযাপন করা হয়।

সমবায়ের সূত্র ধরে বাংলাদেশেও এসেছে পরিবর্তন। কিন্তু কিছু কিছু সমবায় নিয়ে চলছে স্বার্থপর শ্রেণীর স্বার্থন্বেষী কর্মকাণ্ড যেমন ঘুষের বিনিময়ে অর্থশালীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে সমবায় সনদ। যা সমবায়কে শুধু ক্ষতিগ্রস্ত করছে না করছে বিশ্বাসহীন আর অন্যদৃষ্টির কিছু একটা। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারী তথা সমাজের শুভাকাঙ্খিদের লক্ষ রাখতে হবে যাতে ২০০১ সালের সমবায় সমিতির আইন লংঘিত না হয়।

ইদানিং পত্রিকা খুললেই দেখা যায় সমবায় সমিতির লুটপাটের ফাঁদে পড়ে বহু নিরীহ জনগণ তাদের সর্বোচ্চ হারাচ্ছে, প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রতারণাকারী বহুমুখী সমবায় গুলি সাধারণ মানুষকে ব্যাংক, বীমার চেয়ে বেশি লাভের টোপ দিয়ে তথা সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের সর্বস্ব।

দেশ স্বাধীনের পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে সমবায়ভিত্তিক কৃষি কাজ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এবং সেই উদ্যোগে দেখা গেছে যদি সমবায় ভিত্তিক কৃষি কাজ করা যায় তাহলে অনেক জমির আইল উঠে গেলে উক্ত ব্যবহৃত জমির আইলের পরিমান হবে ময়মনসিংহ জেলার আয়তনের সমান এবং সমবায় ভিত্তিক কৃষি কার্য সম্পাদিত হলে দেশে যে খাদ্যের উৎপাদন হবে তাতে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। বাংলাদেশকে খাদ্যের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে দেয় নাই।

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান জননেত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। দুঃখের বিষয় তার এই পরিকল্পনা যখন বাস্তবায়নের পথে তখন দেখা যাচ্ছে কিছু সুবিধাভোগী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী প্রকল্পের ভিতরে ঢুকে তা বাস্তবায়িত হতে দিচ্ছে না। যেমন খুলনায় সুবিধা ভোগীদের অনেকেই স্বচ্ছল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সিলেটে চলছে টাকা ভাগাভাগির খেলা। রাজশাহীতে ভূমিহীনেরা পেয়েছে গাছের চারা আর বিত্তশালীরা পেয়েছে গরু। এভাবে যদি প্রতিটি জেলায় প্রতিটি অঞ্চলে সরেজমিনে কর্মনিষ্ঠ সৎ কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত করা হয় তাহলে একই চিত্র পাওয়া যাবে। এ যদি হয় আমাদের নৈতিক অবস্থা তাহলে কোন রাষ্ট্রপ্রধান তথা কোন সংস্থার পক্ষেই এর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

আমার ধারনা সমবায় অধিদপ্তরে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে তাদের প্রদানকৃত সনদের মাধ্যমে যারা সমবায় সমিতি পরিচালনা করছেন তা সরকারি বিধি বিধান মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে কি না? যদি তা হতো তাহলে প্রতিনিয়ত জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পড়লেই পড়তে হতো না ‘পুঁজি লুটের ফাঁদে বহুমুখী সমবায় সমিতি’।

আমার জানা মতে, প্রতিটি জেলায় কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক আছে যার মূল উদ্দেশ্য হলো সদস্য সমবায় সমিতিকে সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে তহবিল সৃষ্টি ও বিনিয়োগ করা এবং সেবা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা। আমি একটি বহুমুখী সমবায় সমিতির সহিত সংশ্লিষ্ট আছি ২০০৫ এর মে মাস থেকে। আজ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক থেকে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সেবা প্রদানের সাড়া পাইনি। এমনকি ০৯/০৪/১১ ইং তারিখে সমিতির কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের ফরিদপুরে সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করি। দুঃখের বিষয় এত বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট হতে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।

আমার মনে হয় এবং আমি বিশ্বাস করি সমবায় অধিদপ্তরের স্থানীয় কোন কর্মকর্তাবৃন্দ সমবায়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে দারিদ্র জনগণের নিকট কখনও কোন এলাকায় গিয়ে থাকেন কিনা আমি আমার এলাকায় চল্লিশ বৎসর যাবৎ এর কোন দৃষ্টান্ত দেখিনি।

সমবায়ের সংবাদ পৌঁছানো দরকার দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের কাছে যাতে সাধারণ মানুষ সমবায় সমিতির নিকট থেকে প্রতারণা ও বৈষম্যের শিকার না হয় এজন্য গড়ে তুলতে হবে যথাযথ তদারকি ব্যবস্থা।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test