E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কপি করার আইনি নিরাপত্তার নামই হলো রিমেক

২০২৩ নভেম্বর ২৪ ১৯:০৯:৩৬
কপি করার আইনি নিরাপত্তার নামই হলো রিমেক

গোপাল নাথ বাবুল


গত ১০ নভেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত ছবি ‘পিপ্পা’। ছবির প্রেক্ষাপট ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। গল্পের মূল হিরো ‘পিপ্পা’ অর্থাৎ পিটি-৭৬ ট্যাঙ্ক। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনাদের নাস্তানাবুদ করতে রাশিয়া থেকে কেনা জলে-স্থলে চলতে পারা এ ট্যাঙ্ক রণাঙ্গণে পাঠিয়েছিল ভারত। ট্যাঙ্ক সামলানোর দায়িত্ব ছিল ভারতীয় সেনার ৪৫ ক্যাভালরি রেজিমেন্টের ওপর। আর সেই কারণেই রেজিমেন্টের তরফে ট্যাঙ্কের নামকরণ করা হয় ‘পিপ্পা’। পাঞ্জাবি ভাষায় যার অর্থ বোঝায় ‘ফাঁকা ঘিয়ের কৌটা’। বাংলাদেশের রণাঙ্গণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল ‘পিপ্পা’। ছবিতে আরও তুলে ধরা হয়েছে একটি সেনা পরিবারের তিন ভাইবোনের গল্প। তাঁদের পারস্পারিক সম্পর্কের বোঝাপড়া এবং কীভাবে একসঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন তিন জনেই, তার গল্প।
গল্পে রয়েছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করতে নাম পাল্টিয়ে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) যাওয়া এক ভারতীয় সেনাকে ঘিরে ধরে মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দে মেতে ওঠেছেন। তাঁকে ‘সর্ষে ইলিশ’ রান্না করে খাওয়ানোর কথা ভাবছেন। তখনি গলা ছেড়ে নেচে নেচে কাজী নজরুল ইসলামের ‘ভাঙ্গার গান’ কাব্যগ্রন্থের প্রথমে সংযোজিত ‘ভাঙ্গার গান’ কবিতার অংশ ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ এই বিখ্যাত গানটি ভিন্ন সুরে গাইতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা।

গানটিতে সমবেত কন্ঠ দিয়েছেন কলকাতার তীর্থ ভট্টাচার্য, রাহুল দত্ত, শালিনী মুখোপাধ্যায়, পীযুষ দাশ সহ আরও অনেকে। এতে বদলে গেছে গানটির সুর, তাল, লয় এবং ছন্দ। এখানেই সমস্যা। গানটির সুরের এ বিকৃতি মেনে নিতে পারেননি নজরুল ভক্তরা। যদিও সঙ্গীত জগতের লিজেন্ড এ আর রহমান তাঁর নিজস্ব সুরে মাত্র ৪৭ সেকেন্ড গানটির কিছু অংশ ব্যবহার করেছেন। সঙ্গীত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গানটি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সুবিচার করেননি নির্মাতারা। প্রয়োগের ক্ষেত্রে গানটির ঐতিহাসিক মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে এবং গুরুত্বও হারিয়েছে। ফলে দু’বাংলার সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীতপ্রেমিদের দাবি, এ আর রহমান অত্যন্ত গুণী সঙ্গীত পরিচালক হলেও কাজী নজরুলের এ গানের প্রতি অবিচার করেছেন, যা একটি গর্হিত কাজ।

ইতিহাস বলে, ১০০ বছরেরও আগে ‘ভাঙ্গার গান’ কবিতাটি ১৯২২ সালের ২০ জানুয়ারি “বাঙ্গলার কথা” নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এবং সহকারি সম্পাদক ছিলেন হেমন্ত কুমার সরকার। এ গানটি ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর জেলে যাওয়া দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীর অনুরোধে অল্প সময়ের মধ্যে লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। এসব রচনা কবিকে ‘বিদ্রোহী’ কবির তকমা এনে দেওয়ার পাশাপাশি বৃটিশ রাজশক্তির শত্রুতে পরিণত করেছিলেন।

বিদ্রোহী কবির পাশাপাশি এ গান দ্বারা বাঙালির হৃদয়ে ঝড় তোলার জন্য আরও এক গুণীর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি হলেন শিল্পী গিরীণ চক্রবর্তী। ১৯৪৯ সালে এ ব্যক্তিত্বের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় কবির ‘ভাঙ্গার গান’-এর প্রথম কবিতা ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’কে গানে রূপ দেন এবং একই বছর শিল্পী গিরীণ চক্রবর্তীর সুরে ও কন্ঠে কলম্বিয়া কোম্পানী সেটা রেকর্ড করে, যার রেকর্ড নম্বর-জিই ৭৫০৬ । ১৯৫০ সালে এইচএমভি কর্তৃপক্ষ গানটি পুনরায় শিল্পী গিরিণ চক্রবর্তীর সুরে ও কন্ঠে রেকডিং করে সারা বাংলায় ছড়িয়ে দেয়, যার রেকর্ড নম্বর-এন ৩১১৫২। এইচএমভি থেকে রেকর্ডকৃত গানটি ১৯৪৯ সালে নির্মল চৌধুরীর পরিচালনায় নির্মিত ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন’ চলচ্চিত্রে এবং ১৯৬৯-৭০ সালে কালজয়ী চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া গিরীণ চক্রবর্তী তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় কবি নজরুলের আরও বেশ কয়েকটি কবিতায় সুর দিয়ে গানে রূপান্তরিত করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিলেন। যার মধ্যে গণসঙ্গীত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা ‘বল বীর বল মম উন্নত শির’ কবিতাটি উল্লেখযোগ্য।

‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি এতই বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল যে, গানটি স্বদেশি আন্দোলনকারীদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিত। জানা যায়, হৃদয়ে তরঙ্গ সৃষ্টি করে যে কোনও কাউকে বৃটিশ বিরোধী করে তোলা গানটি রাজবন্দি হিসেবে হুগলীর জেলে থাকা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও অন্য বন্দিরা একসঙ্গে গাইতেন। ফলে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বৃটিশ রাজশক্তির রোষানলে পতিত হন ও গানটির কথায় বন্দিশালায় আগুন জ্বালানো, তালা ভাঙ্গার মত শব্দগুলোর কারণে তার প্রভাব জনমানসে পড়তে দেখে বৃটিশ সরকার তড়িঘড়ি ‘ভাঙ্গার গান’ গানটি নিষিদ্ধ করে। কবি ভারতবাসীকে এ কবিতায় আহ্বান জানিয়েছিলেন, ‘লাথি মার, ভাঙরে তালা!/ যতসব বন্দী-শালায়-/ আগুন জ্বালা,/ আগুন জ্বালা, ফেল উপাড়ি!’ কবির এ আহ্বান সেই অগ্নিগর্ভ সময়ে জেগে ওঠা দেশপ্রেমের তরঙ্গকে আরও বহু গুণ বাড়িয়ে তুলেছিল। এজন্য অনেক সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ বিদ্রোহী কবিকে বাংলার কাব্য জগতের প্রথম ‘রকস্টার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে এ তরুণের কলাম থেকে এমন অগ্নিঝরা কবিতা বের হয়েছিল।

যদিও এ আর রহমানের সৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করার মত সাহস ও যোগ্যতা কোনওটাই আমাদের নেই। কারণ, তাঁর সুর করা গান অনেককেই সিনেমা জগত ও গানের জগতে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ১৯৮৮ সালে অলকা যাঞ্জিক-এর গাওয়া ‘এক দো তিন’ গানের সঙ্গে নৃত্যে অভিনয় করা বলিউডের সুপার হিরোইন মাধুরী দীক্ষিত। সেই ‘রোজা’ থেকেই তাঁর সুরের জাদু সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। এ রহমানই ‘বন্দে মাতরম’ এবং ‘জয় হো’ সৃষ্টি করেছেন।

তারপরও প্রশ্ন থাকে, উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও সুর¯্রষ্টা এ আর রহমান কেন বাঙালির সুর দেশাত্মবোধক এবং নজরুল ঐতিহ্যের এমনভাবে পিন্ডি চটকালেন ? তিনি কেন বাঙালিদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য না জেনে না বুঝে এমন কাজটি করেছেন ? কেন তিনি বুঝতে চেষ্টা করলেন না, যেনতেন করে লম্ফ ঝম্ফ দিয়ে গেয়ে দিলেই গানের স্বীকৃতি পায় না। এমন একজন সঙ্গীত জগতের লিজেন্ড হয়ে তিনি কী নজরুলের এ গানটি বুঝতে অক্ষম ছিলেন? না-কি তিনি ভেবেছিলেন, তাঁর তৈরি সুর মানেই চমক! কিন্তু তা যে সঙ্গীতপ্রেমীদের বিরক্তির কারণ হতে পারে তাও বোঝা উচিত ছিল এ ব্যক্তিত্বের।

তাঁর মত বিজ্ঞ ব্যক্তিত্বের জানা এবং বোঝা উচিত ছিল, বিশ্বভারতীর স্বরলিপির বাইরে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলগীতিকে বাঙালিরা মনে-প্রাণে মেনে নেন না। এখানে বিশ্বভারতীর স্বরলিপি ছাড়া রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলগীতি গান নয়, কেবলমাত্র আওয়াজ। এ আর রহমানদের বোঝা উচিত, রবীন্দ্র-নজরুল সঙ্গীত কাটা লাগা বা এক দো তিন-এর মত গান নয় যে, যেমন-তেমন করে রিমেক করে দিলেই নতুনত্ব সৃষ্টি হবে। সুতরাং এ দুই প্রকার গানের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। বাঙালিদের শিরায়-উপশিরায় স্ফুলিঙ্গ তোলা ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’-এর প্রতিটা সুরকে বিকৃত করা হয়েছে। এক কথায় বলা যায়-তিনি কবি নজরুলকে বুঝতে পারেননি বা কবির সৃষ্টি সম্পর্কে কোনও প্রকার গবেষণা না করেই তিনি বাংলার বিপ্লবীদের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া গানটির সুর কাটা-ছেঁড়া করার সাহস দেখিয়েছেন। তিনি কেন জানার চেষ্টা করেননি যে, এ গানের পিছনে রয়েছে এক দীপ্ত ইতিহাস ? বৃটিশ সরকারের নিপীড়ন ও অত্যাচার থেকে সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য লেখনীর মাধ্যমে বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন আমাদের বিদ্রোহী কবি। এ গানের মাধ্যমে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে এ জনপদের প্রতিটা সংকটে মানুষকে উজ্জীবিত করেছে এ গান। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও অনুপ্রেরণার অন্য নাম হয়ে ওঠেছিল ‘কারার ঐ লৌহ কপাট।’

বৃটিশ সরকারের ত্রাস কবি নিজেই লিখেছিলেন, ‘রাজার বাণী বুদ্বুদ, আমার বাণী সীমাহারা সমুদ্র।’ সেই সমুদ্র বাঙালির চেতনায় জেগে রয়েছে এ অন্ধকার সময়েও। তাই বলা যায়, একশ বছরেরও বেশি আগে লেখা এ গান এখনও একই রকম ‘জীবন্ত’্। এ গানের বাণী ও সুর আমাদের সম্পদ। বাঙালি জাতির মন-মানসিকতাকে উপেক্ষা করে এ আর রহমান এমন একটি দেশাত্মবোধক গানকে এমন রোমাণ্টিক মেজাজে কেন ব্যবহার করলেন, সেটা ভাবতেই এতদিন ধরে শ্রদ্ধায় মাথা নত হওয়া লোকটার প্রতি ঘৃণা এসে যায়। ‘এক দো তিন’ কিংবা ‘ছ্যাঁইয়া ছ্যাঁইয়া’ গানের সঙ্গে বিদ্রোহী কবির দেশাত্মবোধক গানকে মিলিয়ে ফেলায় ছিল তাঁর মারাত্মক ভুল। শুধু বিদ্রোহী কবিই নন, তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য’ কবিতাটিতেও সুর দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন।

তাহলে কী তিনি বাঙালির সম্পদ কবিগুরু ও বিদ্রোহী কবির সৃষ্টিকে ইচ্ছে করেই বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন ? এতদিন জানতাম, সুর চুরি হয়, ভুল হয়, বেসুর হয়। কিন্তু সুরকে বিকৃতও করা যায়, তা আমাদের দেখিয়েছেন অস্কার বিজয়ী ও সুরের জাদুকর এ আর রহমান। তাঁর জানা উচিত ছিল যে, এটা একজন জাতীয় কবির গান। শিল্পী গিরীণ চক্রবর্তীর সুরে কবি নিজেই গানটি গেয়েছিলেন। এটা রহমান সাহেবের নিজস্ব গান ও সুর নয় যে, এ গান নিয়ে তিনি যা ইচ্ছে তাই করবেন। এ গান অসংখ্য মানুষের বেঁচে থাকার রসদ। এ গান বাঙালি জাতির অহঙ্কার। এ গান নিয়ে খেলা মানে একটা জাতি অর্থাৎ বাঙালির আবেগ নিয়ে খেলা।

অথচ এই রহমানই একটা সময় রিমেকের বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর মাসাকলি রিমেক হতেই তিনি বিরক্ত ও উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন, ‘যারা রিমেক করে তারা কখনও স্থায়ী আসন পাননা।’ তাঁর বিচারে সেদিন বিকৃতই ছিল তাঁর সুর দেওয়া মাসাকলি গানটির রিমেক। প্রশ্ন জাগে, সেই রহমান কেন এবং কোন বিচারে বাঙালিদের সম্পদ কবি নজরুলকে অপমান করলেন? তাঁর উত্তর কী তাঁর কাছে পাওয়া যাবে? যদিও এখনও পর্যন্ত তিনি ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’-এর সুর বিকৃতির ব্যাপারে মুখই খোলেননি। মাসাকলির রিমেক যদি তিনি মেনে নিতে না পারেন তাহলে আমরা কীভাবে আমাদের শরীরের প্রতি শিরায় তরঙ্গ সৃষ্টি করা ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’-এর বিকৃত সুর মেনে নেব?

তিনি যেমন মাসাকলির রিমেক সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন, তেমনি আমরাও বলতে পারি, আত্মম্ভরিতা, আত্মশ্লাঘা এবং অহঙ্কারে নিমজ্জিত ব্যক্তি আর যাই হোক, একজন জাত শিল্পী হতে পারেন না। এর আগেও বলিউডে নজরুলগীতি নিয়ে কাজ হয়েছে। কবি পরিবারের কল্যাণী কাজী মুম্বাইয়ে গিয়ে মহম্মদ রফি, অনুপ জলোটাকে দিয়ে গান চয়ন করিয়েছেন। তখন কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ তাঁরা দায়িত্ব নিয়ে গানগুলো গেয়েছিলেন।

এ আর রহমানের এমন গর্হিত কাজের জন্য কবি পরিবারের পাশাপাশি দু’বাংলার সঙ্গীতশিল্পী ও সঙ্গীতপ্রেমিরা মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা এর জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও রীতিমত সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সবার দাবি-এ আর রহমান ক্রাইম করেছেন। তাঁর অপরাধের কোনও ক্ষমা নেই। গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে নজরুল চর্চা কেন্দ্র-বাঁশরী আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় সভাপতি ড. ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান, ড. লীনা তাপসী খান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জন ঘোষাল এবং অন্য এক প্রতিবাদ সভায় সুজিত মোস্তফা, শাহীন সামাদ, খায়রুল আনাম শাকিল এ আর রহমানের এমন হীন কাজের প্রতিবাদ জানান। তাঁরা বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই গানটি শুনলে রক্ত টগবগিয়ে ওঠে। সম্প্রতি ভারতের ‘পিপ্পা’ চলচ্চিত্রে গানটির সুর বিকৃত করে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়, যা শুধু কবির প্রতি অসম্মানই নয়, বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বাঙালি জাতির প্রতি অবজ্ঞা। তাঁরা আরও বলেন, তিনি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকর্মকে চরমভাবে অসম্মান করেছেন। এই গানটি যেন বাংলাদেশের কোথাও প্রচার-প্রসার না হতে পারে, সেইভাবে একটি রিট পিটিশন হওয়া উচিত বলে মনে করেন।

সুতরাং গত ১৬ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, ১৩ বছর পর আমাদের কাছ থেকে তাঁর (কাজী নজরুল) যাবতীয় কপিরাইট চলে যাবে। তার আগে সরকারের তরফে একটা বোর্ড গঠন করার আর্জি জানান। খিলখিল কাজীর প্রত্যাশা, ওই বোর্ডই যাবতীয় বিষয় দেখবে। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেবে, তাঁদের হাত থেকে কপিরাইট গেলেও এইভাবে গানের সুর বদলে দেওয়া যাবে না। তা নাহলে যে যার ইচ্ছেমত গানের সুর বসিয়ে কাজ করবে। তখন আর কিছুই করার থাকবে না।

কবির নাতনির মত আমাদেরও দাবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ খ্যাতিমান যে কারও সাহিত্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারি অনুমোদন নিতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হোক। নাহয়, জাতীয় সঙ্গীত ও রণসঙ্গীতের মত সঙ্গীতেরও সুর বিকৃতি রোধ করা একদিন অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ, কপি করার আইনি নিরাপত্তার নাম রিমেক। এছাড়া আমাদের দেশের এক শ্রেণির মানুষ মাঝে-মধ্যে দাবি তোলেন, জাতীয় সঙ্গীত ও রণসঙ্গীত বদলে দেওয়ার। সেটাও মাথায় রাখতে হবে।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test